পুরকৌশল সামগ্রী : কোনো প্রকৌশল স্ট্রাকচার (Structure) নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যে গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তা হলো সৌন্দর্য, শক্তি, উপযোগিতা ও ব্যয় স্বল্পতার সুসামঞ্জস্য সমাহার। প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচনে সুলভ প্রাপ্যতা, চালনা ও সংযোজন সরলতা, স্থায়িত্ব ও শক্তি ইত্যাদি গুণাবলি বিবেচনা করতে হয়। প্রকৌশলীগণ ইমারত, সড়ক, রেলপথ, সেতু, কালভার্ট, সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, জেটি, পোতাশ্রয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, যন্ত্রযান, বাঁধ ইত্যাদি যাবতীয় প্রকৌশল কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা, ডিজাইন ও নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রকৌশল সামগ্রীর গুণগত মান যত বেশি উন্নত হবে।
এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের নির্মাণের মানও তত বেশি উন্নত হবে। সে জন্য সকল প্রকৌশলীকেই যাবতীয় প্রকৌশল সামগ্রীর প্রস্তুত বা আহরণ প্রণালি এবং এদের ভৌত, রাসায়নিক ও যান্ত্রিক ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই অধ্যায় প্রকৌশল সামগ্রী শ্রেণিবিভাগ বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি,ও ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
Table of Contents
১.১ পুরকৌশল সামগ্রীর সংজ্ঞা [ Define Civil Engineering Materials ]
শক্তি, সৌন্দর্য, উপযোগিতা ও ব্যয় স্বল্পতার সঠিক সমাহারে সংযুক্তি (Structure) গড়ে ওঠে। সুলভ প্রাপ্যতা চালনা ও সংযোজন সরলতা, স্থায়িত্বতা, শক্তি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচন করা হয়। পুরকৌশল নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীকে পুরকৌশল সামগ্রী বা সিভিল ম্যাটেরিয়ালস্ বলে। প্রকৌশলীগণ নির্মাণের জন্য স্বল্প ব্যয়, নিরাপদ, নিরাপত্তা, সৌন্দর্য ও স্থায়িত্বশীলতার দিক বিবেচনা করে থাকেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস্-এর যথাযথ নির্বাচনের উপরই নির্মাণের উৎকর্ষতা নির্ভর করে। তাই এগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে এগুলোর মৌলিক স্বভাবের উপর (Engineer-এর) সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
যেকোনো প্রকৌশল নির্মাণে প্রকৌশল সামগ্রীর শক্তি, স্থায়িত্ব, উপযোগিতা, সহজলভ্যতা, সৌন্দর্য, ব্যবহার ও সংযোগ সরলতা ইত্যাদি দিক বিবেচনায় আনতে হয়। যেকোনো নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান এর বৈশিষ্ট্যের উপর নির্মাণের মাদ, স্থায়িত্ব, সৌন্দর্য, নিরাপত্তা ইত্যাদি নির্ভর করে। আবহাওয়া, পরিবেশ, পরিস্থিতি ইত্যাদির ভিন্নতায় একই ধরনের নির্মাণে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সামগ্রী নির্বাচন করতে হতে পারে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির উন্নয়নে নবতর পরিবেশ পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রকৌশল নির্মাণ ও এতদসংক্রান্ত কার্যাদি দিন দিন জটিলতার দিকে অগ্রসরমান।
তাই প্রকৌশল সামগ্রীর ধর্ম, গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যের উপর প্রকৌশলীর যথাযথ জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। বিল্ডিং, ব্রিজ, বিমান বন্দর, সড়ক, জেটি, যন্ত্রযান, পোতাশ্রয় ইত্যাদি যাবতীয় প্রকৌশল প্রকল্পের পরিচালনা, ডিজাইন, নির্মাণ, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সার্বিকভাবে প্রকৌশলীর দায়িত্বে পড়ে বিধায় পরিবেশ, পরিস্থিতি ব্যবহার ক্ষেত্র ইত্যাদি বিবেচনায় নির্মাণ সামগ্রী নির্বাচন, বিকল্প সামগ্রীর ব্যবহার সামগ্রীর মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিও পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আধুনিককালে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে বিভিন্ন শাখার প্রকৌশলীগণ বিজ্ঞানের আবিস্কৃত প্রায় সকল সামগ্রীই (কঠিন, তরল, বায়বীয়) কার্যক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে।
সুতরাং প্রকৌশল নির্মাণে কাঠামো বা যন্ত্রাংশের জন্য মান, শ্রেণি, কাজের ধরন, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে প্রকৌশল সামগ্রীর ইন্দিত ধর্মাবলি অনুযায়ী প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচন করতে হয়। বিষয়ে প্রকৌশলীগণকে নতুন উদ্ভাবিত সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় এবং প্রচলিত সামগ্রী সম্ভাব্য নতুন নতুন ক্ষেত্রে ব্যবহারের মানসিকতা রাখতে হয় যেন প্রচলিত সামগ্রীর বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে এর সর্বাধিক উপযোগিতা গ্রহণ করা যায়।
প্রকৌশলীগণকে দেশীয় সামগ্রীর ব্যবহার, অর্থনৈতিক দিক হতে সাশ্রয়ী ও সামগ্রীর সহজ প্রাপ্ততার প্রতি সবিশেষ নজর দিয়ে প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচন করতে হয় এবং স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত সামগ্রীকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। উপযুক্ত সামগ্রী স্থানীয়ভাবে পাওয়া না গেলে এবং উপযুক্ত সামগ্রীর জন্য খরচের পরিমাণ অত্যধিক হলে ক্ষেত্র বিশেষে অনেক সময় স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীকে নির্বাচন করতে হয়। সুতরাং নির্দিষ্ট কাজের জন্য সঠিক মাল-মসলা এবং কর্মী নিয়োগ করলে নিঃসন্দেহে এর মান বৃদ্ধি পাবে। মানুষ আজ প্রকৌশল সামগ্রীর সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য গর্বিত। রকেট হতে আরম্ভ করে আণবিক চুল্লি পর্যন্ত সর্বত্রই প্রকৌশল সামগ্রীর নানাবিধ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
১.২ পুরকৌশল সামগ্রী শ্রেণিবিভাগ (Classification of Civil Engineering Materials in Civil Technology)
নির্মাণের জন্য স্বল্পসময়ে স্বল্পব্যয়ে নিরাপদ, নিরাপত্তা সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে প্রকৌশলীগণ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস সিলেকশন করে থাকেন। সড়ক, দালানকোঠা, কালভার্ট, ব্রিজ, বিমান বন্দর ইত্যাদি নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের ঋণ, মান ও শক্তি সম্পন্ন সামগ্রী ব্যবহৃত হয়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালসকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক. কাঠামো সামগ্রি (Strucural materials ):
কাঠামো সামগ্রিকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
ক.ক – ধাতু (Metals)
ক.ক.ক. লৌহক ধাতু
- কার্বন ইস্পাত
- সংকর ইস্পাত
- ঢালাই লোহা
- মৃদু ইস্পাত
- অন্যান্য সংকর ইস্পাত
ক.ক.খ – অলৌহক ধাতু
- অ্যলুমিনিয়াম সংকর।
- ম্যাগনেশিয়াম সংকর ইত্যাদি।
ক.খ. অধাতু (Nonmetals)
- ইট
- পাথর
- বালি
- সুরকি
- চুন
- মিনারেল এগ্রিগেইটস
- সিমেন্টিং ম্যাটেরিািলস্
- কংক্রিট
- মসল্লা
- বাঁশ
- রবার
- ফরমিকা
- প্লাস্টিক
- বিটুমিন
- পারটেক্স
- কাঠ
- টিম্বার এবং সাম্বার ইত্যাদি
- কাদাজাত সামগ্রী
- জিপসামজাত সামগ্রী
ক.গ. অযান্ত্রিক কার্যের সামগ্রি (Materials of nonmechanical purposes) :
- প্রিজারেশন সামগ্রী
- ডেকোরেশন সামগ্রী
- ইনসুলেশন সামগ্রী
সিভিল, সিভিল (উড-স্পেশাল), আর্কিটেকচার, কনস্ট্রাকশন, এনভায়রমেন্টাল, গ্লাস, সিরামিক, আর্কিটেকচার ইনটেরিয়র ডিজাইন, সার্ভে, মাইনিং অ্যান্ড মাইন সার্ভে এবং সাদৃশ্য টেকনোলজির প্রকৌশল সামগ্রী : যেমন :
(i) সিমেন্ট (Cement)
(ii) বালি (Sand)
(iii) ইট (Bricks)
(iv) পাথর (Stone)
(v) কাচ (Glass)
(vi) মৃত্তিকা (Soil)
(vii) কাঠ (Timber)
(viii) চুন ( Lime)
(ix) মৃৎ সামগ্রী (Ceramics)
(xi) বিটুমিন ও বিটুমিনজাত সামগ্রী
(x) কাঠ সদৃশ সামগ্রী (Allied wood)
(xi) বিটুমিন ও বিটুমিনজাত সামগ্রী
(xii) বাঁশ (Bamboo)
(xiii) প্লাস্টিক (Plastica)
(xiv) লোহা ও ইস্পাত (Iron & Steel)
(xv) রবার (Rubber)
(xvi) লৌহ সংকর (Alloy Steel)
(xvii) লৌহমুক্ত ধাতু (Non-ferrous metal)
(xviii) লৌহমুক্ত ধাতু সংকর (Non-ferrous Metal Alloy)
(xix) প্লাস্টার অভ পেরিস (Plaster of parin)
(xx) স্যান্ড পেপার (Sand Paper)
(xxi) রঙ ও ভার্নিশ (Paint & Varnish)
(xxii) এমারি পেপার (Emary Cloth Paper)
(xxiii) উলের সুতা
(xxiv) ফটো ফ্লিম (Photo Flim)
১.২.১ মেকানিক্যাল, অটোমোবাইল, পাওয়ার, মেরিন, শিপ বিল্ডিং, মেকাট্রনিকস্ ও অন্যান্য সাদৃশ্য টেকনোলজির প্রকৌশল সামগ্রী :
(1) ইট
(ii) বালি
(iii) সিমেন্ট
(iv) চুন
(v) ইনসুলেটিং ম্যাটিরিয়ালস, যেমন- পর্সিলিন, মাইকা, অ্যাসবেসটস, বেকেলাইট, মাইকানাইট, কাগজ, রথার, গঢ়িাপার্চা, পণিতিনাইল ক্লোরাইড, কাচ, ফাইবার গ্লাস, রেয়ন, ট্রান্সফরমার তেল, পাইরামল, তরল বিটুমিন, ব্রেখন জাতীয় কৃত্রিম গ্যাস।
(vi) পাথর
(vii) টিম্বার
(viii) ধাতু ও এদের সংকর, যেমন- লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, সীসা, সপ্তা, টিন, নিকেল, ক্রোমিয়াম, এন্টিমনি, ম্যাঙ্গানিজ, ট্যাংস্টেন ইত্যাদি।
(ix) শব্দ শোষক সামগ্রী, যেমন- উচ্চ বোর্ড (বিভিন্ন ধরনের), চুন-সুরকি, বালি মিশ্রিত মাটি, কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি।
(x) কাচ
(xi) জ্বালানি সামগ্রী, যেমন- কাঠ, কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল, জ্বালানি গ্যাস, পারমাণবিক জ্বালানি ইত্যাদি। (xii) শব্দ অন্তরক সামগ্রী, যেমন- ছিদ্রহীন দৃঢ় সামগ্রী, নমনীয় ছিদ্রযুক্ত সামগ্রী, ছিদ্রযুক্ত দৃঢ় সামগ্রী ইত্যাদি।
(xiii) সিরামিক সামগ্রী।
(xiv) সংরক্ষণ প্রলেপনের সামগ্রী, যেমন- বড়, ভার্নিশ ইত্যাদি।
(xv) দুর্গল সামগ্রী
(xvi) পানিরোধী সামগ্রী, যেমন- প্লাস্টিক (বিভিন্ন ধরনের), অ্যাসবেসটস, বিভিন্ন ধাতর সামগ্রী, কাচ ও রবার জাতীয় সামগ্রী।
(xvii) পিচ্ছিলকারক সামগ্রী, যেমন- মিজ, তেল, সাবান, গ্রাফাইট, মাইক্য ইত্যাদি।
(xviii) অগ্নিরোধী সামগ্রী, যেমন- অ্যাসবেসটস, সিমেন্ট শীট, অগ্নিরোধী ইউ, লিসাম, কাচ, পাথর, কনক্রিট, বিশেষ ধাতব পদার্থ, খনিজ উল ইত্যাদি।
১.২.২ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস্ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, ডাটা কমিনেকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং, কম্পিউটার, ইলেকট্রোমেডিকেল, ইনস্ট্রুমেন্টশন অ্যান্ড প্রসেস কন্ট্রোল, টেলিকমিউনিকেশন অন্যান্য সাদৃশ্য টেকনোলজির প্রকৌশল সামগ্রী:
(i) কনটাক্ট ম্যাটেরিয়ালস, যেমন- সিলভার, ট্যাংস্টেন, কার্বন, কপার ইত্যাদি।
(ii) ব্রাস ম্যাটিরিয়ালস, যেমন- কপার, কার্বন, গ্রাফাইট ইত্যাদি।
(iii) পরিবাহী পদার্থ, যেমন- তামা, অ্যালুমিনিয়াম, ট্যাংস্টেন ইত্যাদি।
(iv) অপরিবাহী পদার্থ, যেমন- মাইকা, অ্যাসবেসটস ইত্যাদি।
(v) অর্ধপরিবাহী পদার্থ, যেমন- কার্বন, সিলিকন, জারমেনিয়াম ইত্যাদি।
(vi) লো অ্যান্ড হাইটেনসাইল স্টীল।
(vii) ফিউজ ম্যাটিরিয়ালস, যেমন- সীসা, টিন, তামা, রুপা, অ্যালুমিনিয়াম, টিন-লিভ সংকর, কপার-সিলভার সংকর ইত্যাদি।
(viii) গ্যালিয়াম আর্সেনাইট ম্যাটিরিয়ালস্।
(ix) হাই-রেজিস্টিভিটি ম্যাটিরিয়ালস্, যেমন- নাইক্রম, ইউরেকা, ম্যাংগানিজ, জার্মান সিলভার ইত্যাদি।
(x) চৌম্বক পদার্থ, যেমন- বিশুদ্ধ লোহা, ঢালাই লোহা, কার্বন ইস্পাত, সিলিকন ইস্পাত, ম্যাংগানিজ এবং নিকেল ইস্পাত, পারম্যালয়, পারমিনভার, হাইপারসিক, হাই কার্বন ইস্পাত, ট্যাংস্টেন ইস্পাত, ক্রোমিয়াম ইস্পাত, এলনিকো সংকরসমূহ ইত্যাদি।
(xi) ইনসুলেটিং ম্যাটিরিয়ালস্, যেমন- অ্যাসবেসটন, বেকেলাইট, বিটুমিন, কটন ক্লথ, অ্যামপিয়ার ক্লথ, এবোনোইট, গ্লাস, গাটাপার্চা, মার্কেল, মাইকা, পর্সেলিন, পেপার, মিনারেল ইনসুলেটিং ওয়েল, পাইরানল, ইনারটিন, নাইট্রোজেন, ফ্রোন, সিরামিক প্লাস্টিক ইত্যাদি।
(xii) অপটিক্যাল ফাইবার ইত্যাদি।
১.২.৩ প্রকৌশল সামগ্রীর ধর্মাবলি বর্ণনা (Properties of Engineering Materials) [ See in Link ]
আরও দেখুন: