আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সিভিল কন্সট্রাকশনের টিম্বার । শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
সিভিল কন্সট্রাকশনের টিম্বার
অনেক প্রাচীনকাল থেকে মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে কাঠ ব্যবহার করে আসছে। ঘর নির্মাণ থেকে শুরু করে সমুদ্রের জাহাজ পর্যন্ত নির্মাণ করা হতো। বর্তমানকালেও কাঠ নির্মাণকাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ অধ্যায়ে টিম্বার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
টিম্বার
টিম্বারকে লাম্বারও (Lumber) বলা হয়। যে কাঠ কাটা হতে চূড়ান্ত পর্যায় যে কোনো স্তরে নির্মাণসামগ্রী হিসেবে, কাঠের কাজে বা কাগজ উৎপন্ন শিল্পে পাল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাকে টিম্বার বলে। মূলত টিম্বারকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেমন-
১। লাম্বার করার উপযুক্ত যে কোনো গাছ বা লগকে টিম্বার বলে। (US)
২। কাঠ কেটে যে বাল্ক, ব্যাটেন (আড়াআড়ি তক্তা বিশেষ), বোর্ড ইত্যাদি তৈরি করা হয় যা আসবাবপত্র, কাঠের কাজে এবং সাধারণ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয় তাকে টক, Australia তে টিম্বার বলে।
৩। বর্গাকৃতির কাটা লাম্বার যার সবচেয়ে ছোট মাপ (dimension) ৫ ইঞ্চির চেয়ে কম নয়। (US)
৪। শোরিং বা ব্রাসিং সিস্টেমে মেম্বার হিসেবে যে ভারী কাঠের বিম ব্যবহার করা হয় তাকেও টিম্বার বলে।
বিভিন্ন প্রকার টিম্বার
বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্ত টিম্বার প্রধানত দুই প্রকার। যথা:
১। নরম কাঠ (Softwood)
২। শক্ত কাঠ (Hardwood)
১. নরম কাঠ
– দেবদারু
– পাইন (Pine)
– ফির (Fir)
– তুলা
– হেমলক (Hemlock)
– কেয়া (Kaya)
– রেডউড (Redwood)
– সীডার (Ceder)
– সাইপ্রেস (Cypress)
– লার্চ (Larch)
২. শক্ত কাঠ:
– শাল
– সেগুন
– সুন্দরী
– গামারি
– টিক
– রোজউড
– ওক
– স্যান্ডেল উড
– আয়রন উড
– জাম
টিম্বার শনাক্তকরণ
প্রাথমিকভাবে এটা একটি কঠিন কাজ তবে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে সহজেই পারা যায়। অনুশীলন করলে বিভিন্ন কাঠ স্পর্শ করে, ঘ্রাণ নিয়ে, রং এবং আঁশ দেখে সহজে শনাক্ত করা যায়। কাঠ শনাক্তকরণে নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে:
১। কাঠের রং দেখতে হবে। যদিও গাছ থেকে গাছে রং পরিবর্তন হয়। কিন্তু এক জাতীয় গাছের রং এ একটা মিল থাকে। রং-এর মাত্রা হয়তো পরিবর্তন হয় কিন্তু গুণগতমান পরিবর্তন হয় না।
২। কাঠের আঁশের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আঁশগুলো ঘন না হালকা, বড় না মিহি সহজে আলাদা করা যায় কি না ইত্যাদি। ছিদ্রগুলো দূরে দূরে না এক জায়গায়। আঁশগুলো সোজা না ঢেউয়ের মত। আঁশগুলো সুষম ডোরা কাটা না বুদবুদের মতো।
মূলত যে উদ্দেশ্যে কাঠ ব্যবহৃত হবে, স্থায়িত্ব এবং অর্থনৈতিক দিক ইত্যাদি বিবেচনায় এনে নির্দিষ্ট কোন কাজের জন্য কাঠ বাছাই করতে হবে। নিচে কাঠ শনাক্তকরণের জন্য বিভিন্ন কাঠের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো।
১. নরম কাঠ শনাক্তকরণ
– বার্ষিক রিং আলাদা স্পষ্ট।
– রং সর্বত্র হালকা
– সহজে আগুন ধরে।
– মডুলারি রে অস্পষ্ট একত্রে।
– গঠন আঁশযুক্ত এবং সহজে আঁশ ছাড়ানো যায়।
– নরম কাঠ দুর্বল, ভঙ্গুর এবং ওজনে হালকা
– সরাসরি টানে শক্তিশালী কিন্তু শিয়ার এবং টুইস্ট-এ দুর্বল।
– হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে মৃদু আওয়াজ হয়।
২. শক্ত কাঠ শনাক্তকরণ
– বার্ষিক রিং অস্পষ্ট এবং পার্থক্য করা যায় না।
– সহজে আগুন ধরে।
– রং অধিকতর গাড়।
– মডুলারি স্পষ্ট আলাদা।
– গঠন আঁশহীন বা আঁশগুলি মিহি এবং ঘন।
– গাছগুলো উঁচু এবং মোটা, শক্ত কাঠ ওজনে ভারী।
– টান, চাপ এবং সিয়ার সব বলেই সমান শক্তিশালী।
– হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে জোরে শব্দ হয়।
সেগুন বা টিক
– শক্তিশালী, টেকসই ও গাঢ় বাদামী রঙের হয়ে থাকে
– সহজে পোকা-মাকড় ধরে না
– সহজে মসৃণ করা যায়।
– বার্নিশ করলে আঁশগুলো সুদৃশ্যভাবে ফুটে ওঠে।
– প্রতি ঘনমিটারের ওজন ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি।
– চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, যশোর এবং পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে পাওয়া যায়।
গর্জন
– যথেষ্ট শক্তিশালী এবং টেকসই
– কাটা, চেরা বা মসৃণ করা সময় সাপেক্ষ এবং কষ্টকর।
– বেশি পরিমাণ সংকুচিত হয়।
– সহজেই পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন ১০০০ থেকে ১১০০ কেজি।
সুন্দরী
– অতিশয় মজবুত, শক্ত, ভারী ও সূক্ষ্ম আঁশযুক্ত ও ঘাতসহ।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন প্রায় ৮০০ কেজি
শাল
– অত্যন্ত শক্তিশালী, সোজা, লম্বা, শক্ত, টেকসই এবং ভারী।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন প্রায় ৮৬০ কেজি।
কাঁঠাল
– মাঝারি ধরনের শক্তিশালী ও মজবুত।
– কাটা, চেরা সহজ।
– পলিশ করলে রং সুন্দর ফুটে ওঠে।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন প্রায় ৮০০ কেজি।
আম
– মাঝারি ধরনের শক্তিশালী ও মজবুত।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন প্রায় ৬৫০ কেজি।
শিশু
– ঘাতসহ টেকসই ও শক্তিধর।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন প্রায় ৮০০ কেজি।
শিমুল
– হালকা ও নরম
বাবলা
– ঘাতসহ টেকসই ও শক্ত।
– সহজে পলিশ করা যায়।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন ৮৫০-৯০০ কেজি।
চাম্বল
– মাঝারি ধরনের শক্তিশালী।
শিল কড়াই
– শক্তিশালী, টেকসই এবং ঘাতসহ।
নিম
– বেশ শক্ত এবং টেকসই কাঠ।
– কাজে লাগানো সহজ এবং সহজে পলিশ করা যায়।
– পোকামাকড় বেশি আক্রমণ করে।
– এক ঘন মিটার কাঠের ওজন ৮০০-৮৫০ কেজি।
বিভিন্ন প্রকার টিম্বারের ব্যবহারিক ক্ষেত্র
ক্রমিক নং | কাঠের নাম | ব্যবহারিক ক্ষেত্র |
১. | সেগুন | ঘরবাড়ির দরজা-জানালা, রেলগাড়ির বগি, জাহাজের পাটাতন ও আসবাবপত্র তৈরিতে। |
২ | গর্জন | ঘরবাড়ি, রেলের স্লিপার, ইনটেরিয়র ডেকোরেশনে। |
৩ | সুন্দরী | পাইল, খুঁটি, বৈদ্যুতিক পোল, নৌকা তৈরিতে। |
৪ | শাল | সেতু, স্লিপার, পাইল, ঘরবাড়ি ও জাহাজ নির্মাণে। |
৫ | কাঁঠাল | দরজা জানালা ও আসবাবপত্র তৈরিতে। |
৬ | গজারি | ঘরের খুঁটি, পাইল, বৈদ্যুতিক খুঁটি। |
৭ | আম | কংক্রিটের ফ্রেমওয়ার্ক, শাটারিং, জুতার গোড়ালি, প্যাকিং বক্স, খেলনা তৈরিতে। |
৮ | শিশু | আসবাবপত্র, নির্মাণকাজ, বন্দুকের বাঁট, কৃষিকর্মে ও যন্ত্রপাতি ও ভিনিয়ার। |
৯ | শিমূল | দিয়াশলাইয়ের বক্স ও কাঠি এবং প্যাকিং-এর কাজে |
১০ | বাবলা | কৃষি কাজের সরঞ্জাম, গরুর গাড়ির চাকা, নৌকা। |
১১ | চাম্বল | দরজা-জানালার চৌকাঠ, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক পোল। |
১২ | শিল কড়াই | আসবাবপত্র, নৌকা ও গৃহনির্মাণ কাজে। |
১৩ | নিম | গৃহনির্মাণ ও আসবাবপত্র তৈরিতে। |
ভালো টিম্বারের বৈশিষ্ট্য
অবয়ব (Appearance): সদ্য চেরা কাঠের পৃষ্ঠদেশ দেখতে শক্ত এবং উজ্জ্বল অবয়বের হয়।
রং (Colour): রং খুব গাঢ় এবং সুষম হতে হবে।
ত্রুটি (Defects): ভালো কাঠ মারাত্মক কোনো দোষ যেমন-গিট, ফাট, বাঁকানো এবং আড়াআড়ি আঁশযুক্ত হবে।
মজবুতি (Durability): ভালো কাঠ টেকসই হবে এবং বিভিন্ন ছত্রাক, পোকামাকড়, রাসায়নিক দ্রব্য, ভৌত এবং যান্ত্রিক ক্রিয়াকে প্রতিহত করতে পারবে।
স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity) কাঠ ভার দেওয়ার পর সরিয়ে নিলে কাঠ পুনরায় তার নিজের আকার ফিরে পাবে।
আঁশ (Fibres): কাঠের আঁশগুলো সোজা হবে।
আগুন রোধক (Fire resistance): একটি ভালো ঘন কাঠ আগুনে ভালো প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।
কাঠিন্যতা (Hardness): একটি ভালো কাঠ শক্ত এবং কঠিন হবে।
যান্ত্রিক ক্ষয় (Mechanical wear): যান্ত্রিক ক্ষয় বা ঘর্ষণে ভালো কাঠ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
আকৃতি: একটি ভালো কাঠ চেরা বা ঋতুকরণের সময় এর আকার আকৃতিতে কোন পরিবর্তন হবে না।
ঘ্রাণ (Smell): একটি ভালো কাঠের ঘ্রাণ মিষ্টিজাতীয় হবে। উৎকট গন্ধ পাওয়া গেলে ক্ষয়িষ্ণু কাঠ বুঝতে হবে।
শব্দ (Sound): একটি ভালো কাঠকে আঘাত করলে বাজনার মতো শব্দ হবে।
গঠন (Structure): ভালো কাঠের গঠন সুষম (homogeneous) হবে।
ভার সহ্য করার ক্ষমতা (Strength): একটি ভালো কাঠ স্ট্রাকচারাল মেম্বার যেমন- জয়েস্ট (joist), বিম (beam), রাফটার (rafter) ইত্যাদি হিসেবে ব্যবহার করার মতো শক্তিশালী হতে হবে।
দৃঢ়তা বা টাফনেস (Toughness): একটি ভালো কাঠ ভাইব্রেশনের ফলে সৃষ্ট ঘাত সহ্য করার মতো টাফ বা দৃঢ় হবে।
পানি প্রবেশ্যতা (Water permeability): একটি ভালো কাঠের পানি প্রবেশ্যতা কম হবে।
আবহাওয়ার কারণে ক্ষয় (Weathering effects): আবহাওয়ার কারণ যেমন- শুল্ক বা ভেজা অবস্থায় ক্ষয় সহ্য করতে পারবে।
ওজন (Weight): ভারী কাঠকে সাধারণত নিখুঁত এবং শক্তিশালী বিবেচনা করা হয়।
কার্যোপযোগিতা (Working conditions): ভালো কাঠের উত্তম কার্যোপযোগিতা থাকবে এবং চেরার সময় করাতের দাঁত আটকাবে না।
বার্ষিক বলয় (Annual rings): বার্ষিক বলয়গুলো কম প্রশস্ত এবং কাছাকাছি হবে।
টিম্বারের দোষ-ত্রুটি (defects of timber):
কাঠে প্রকৃতিগতভাবে বা কৃত্রিমভাবে নানা রকম সমস্যা বা অসুবিধা হতে পারে। কিছু সমস্যা তেমন গুরুতর না হলেও কোনো কোনো সমস্যা কাঠের স্থায়িত্ব, নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে। কাঠের দোষ-ত্রুটি গুলোকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:-
ক. রূপান্তরের জন্য ত্রুটি:
টিম্বারকে রূপান্তর করে বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার সময় নিম্নলিখিত ত্রুটি ঘটতে পারে:
১। চিপ মার্ক (Chip mark): টিম্বারের মসৃণ করা পৃষ্ঠদেশে ছোট ফালি করে কোনো চিহ্ন বা মার্ক দেওয়া।
২। কর্ণ আঁশ-বিন্যাস (Diagonal grain): কাঠকে যথাযথভাবে চেরা না হলে।
৩। কাঁটা আঁশ-বিন্যাস (Torn grain): কোনো টুল পড়ার কারণে যে ছোট দাগ বা চোট পড়ে।
৪। ওয়েন: প্রস্তুতকৃত কাঠের খণ্ডে মূল কাঠের গোলাকার পৃষ্ঠের উপস্থিতি।
৫। চেকিং (Checking): কাঠ শুকানোর পর কাঠে যে ফাটল দেখা দেয় তাকে চেকিং বলে।
৬। শেক (Shake): কাঠ শুকানোর পর কাঠের রিংগুলো আলাদা হয়ে যায় যাকে শেক বলে।
খ. ছত্রাকের কারণে ত্রুটি:
টিম্বারের আর্দ্রতার পরিমাণ (moisture content) শতকরা ২০ ভাগের বেশি হলে টিম্বারে ছত্রাক আক্রমণ ঘটে। বাতাস ও ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য উপযোগী গরমের উপস্থিতিতে নিম্নলিখিত ত্রুটি দেখা দেয়।
১। নীল দাগ (Blue stain): কাঠের রস বিবর্ণ হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করে।
২। বাদামি পচন (Brown rot): টিম্বার হতে সেলুলোজ উপাদান দূর হয়ে কাঠে রোগ হয় বা ক্ষয় হয় এবং কাঠ বাদামি বর্ণ ধারণ করে।
৩। শুল্ক পচন (Dry rot): কাঠ রূপান্তর হয়ে শুষ্ক গুঁড়ায় পরিণত হয়।
৪। হৃদ পচন (Heart rot): এটা তখন ঘটে যখন গাছের কোনো শাখা বের হয় এবং গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে ফাঁকা আওয়াজ হয়।
৫। স্যাপ স্টেইন বা রস বিবর্ণ (Sap stain): স্যাপ উড তার রং হারিয়ে ফেলে কারণ তার কোষের খাবার কমে যায়।
৬। ভেজা পচন (Wet rot): টিম্বারের কাঠের রাসায়নিক বিয়োজনের কারণে ভেজা পচন হয় এবং টিম্বার ধূসর বাদামি রঙের গুড়ায় রূপান্তরিত হয়।
৭। সাদা পচন (White rot): কাঠের কাঠময় অংশে ছত্রাক আক্রমণ করে এবং কাঠ সাদা অবয়ব ধারণ করে।
গ. পোকামাকড়ের কারণে ত্রুটি:
১। বিটেলস (Beetles): ছোট পোকা যা ২ মিমি আকারের গর্ত করে এবং সকল প্রজাতির শক্ত কাঠের রস কাঠকে (sapwood) আক্রমণ করে ময়দার মতো গুঁড়াতে পরিণত করে। এরা বাকলকে আক্রমণ করে না ফলে মনে হয় নিখুঁত রয়েছে।
২। মেরিন বোরারস (Marine borers): এরা নিজেদের বসবাসের জায়গা করার জন্য কাঠে গর্ত বা টানেল করে এবং কাঠ বিবর্ণ হয় এবং শক্তিও হারায়।
৩। টারমাইটস (Termites): সাদা পিঁপড়া খুব দ্রুত কাঠের ভেতর খেয়ে ফেলে এবং টানেল তৈরি করে
যদিও ছালে কোনো প্রভাব পড়ে না।
ঘ. প্রাকৃতিক কারণে ত্রুটি:
প্রাকৃতিক কারণে ত্রুটির জন্য সবচেয়ে দায়ী গাছের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কলা (tissues) ভেঙে যাওয়া। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ত্রুটির আলোচনা করা হল।
১। বার্ল (Buris): ছোট অবস্থায় কলাতে কোনো আঘাত লাগার কারণে যে অনিয়মিত দাগ দেখা দেয়।
২। কলাস (Callus): কোমল কলা বা চামড়া যা গাছের কোনো আঘাত ঢেকে রাখে।
৩। রাসায়নিক দাগ (Chemical stain): রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে যে বিবর্ণতার সৃষ্টি হয়।
৪। বড় আঁশ-বিন্যাস (Coarse grain): বার্ষিক বলয়গুলো খুব বড় হয় এবং গাছগুলো দ্রুত বাড়ে ফলে শক্তি কম পায়।
৫। মোচড়ান আঁশ (Twisted fibres): কম বয়সী গাছে প্রচণ্ড বাতাসের ফলে মোচড়ান আঁশের সৃষ্টি হয়।
৬। মৃত কাঠ (Dead wood): মৃত গাছ থেকে যে কাঠ সংগ্রহ করা হয়।
৭। ড্রাক্সিনেস (Druxiness): ছত্রাকের কারণে সাদা যে ক্ষয় দাগ পড়ে।
৮। ফক্সিনেস (Foxiness): কাঠ জমা করার সময় যদি কম বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয় বা কাঠ যদি বেশি পূর্ণতা পায় ফলে কাঠে লাল বা হলুদ দাগ পড়ে।
৯। গিরা (Knots): শাখা বা লিম্বের গোড়া কাটলে বা ভেঙে গেলে দেখা দেয়।
১০। বাকলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (Rind galls): গাছের শরীরে বাকলের যে অদ্ভুত বাঁকানো বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়।
১১। আপসেট বা ভেঙে যাওয়া : কোনো চাপ বা বলের কারণে আঁশে যে আঘাতের চিহ্ন হয়।
টিম্বায় ও কাঠের মধ্যে পার্থক্য
মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে টিম্বার এবং কাঠকে বোঝানো হয়। কখনও কখনও দুটো এক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রকৌশল শিক্ষায় দুটোকে একটু আলাদাভাবে দেখা হয়। নিম্নে এদের পার্থক্য দেওয়া হলো:
টিম্বার | কাঠ |
টিম্বারের তিন প্রকার অর্থ পাওয়া যায়। যথা-
| বিম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাঠেরও তিন প্রকার অর্থ পাওয়া যায়। যথা-
|
টিম্বার নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার উপযোগী এবং নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হতে হয়। | সাধারণ অর্থে যে কোন গাছ থেকে যে কোনো ব্যবহার উপযোগী কাঠ পাওয়া যায়। |
কাঠ উত্তমরূপে নির্দিষ্ট আদর্শ মাপে কেটে বা চেরে তুকরণ/সিজনিং করে প্রকৌশল কাজে ব্যবহার উপযোগী টিম্বার পাওয়া যায়। | বন-জঙ্গল থেকে বা গাছ কেটে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার উপযোগী কাঠ সংগ্রহ করা হয়। |
কাঠের সিজনিং-এবং এর প্রয়োজনীয়তা
নতুন চেরা বা কাটা কাঠের ভিতর যে জলীয় অংশ থাকে তা দূরীভূত করে পরিবেশ এবং নির্দিষ্ট কাজের উপযোগী করে তোলাকে কাঠের সিজনিং বা ড্রাইং বলে। নিচে সিজনিং-এর প্রয়োজনীয়তা উলেখ করা হলো:
১। গাছ হতে কাঠকে আলাদা করার সাথে সাথে সিজনিং করে কাঠকে প্রাথমিক পচন ছত্রাক আক্রমণ এবং পোকামাকড়ের হাত হতে রক্ষা করা।
২। কাঠকে বিভিন্ন প্রকার দোষ-ত্রুটি যেমন- বাঁকানো হতে রক্ষা করা।
৩। স্যাপ মূলত ছত্রাক এবং কাঠের পোকার খাদ্য এটি কমে গেলে এদের আক্রমণের হার কমে যায়।
৪। সিজনিং কাঠকে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ক্ষতি হতে বাঁচিয়ে রাখে।
৫। শুষ্ক বা সিজনিং করা টিম্বার ওজনে হালকা তাই পরিবহন খরচও কম লাগে।
৬। সাধারণ কাঠের তুলনায় কাঠকে শক্তিশালী, নিরাপদ এবং টেকসই করতে সিজনিং করা হয়।
৭। কাঠকে সহজে কার্যোপযোগী, মসৃণ রং ও পলিশ করতে সহজ করা।
৮। কাঠের আঁশ বিন্যাস, বর্ণ সুষম ও আয়তন হ্রাস করা।
৯। কাঠের ইলেকট্রিক্যাল এবং থারমাল ইনসুলেশনের উন্নতি করা।
১০। কাঠের মূল্যমান (value add) বৃদ্ধি করা।
১১। কাঠের পচন রোধ করা এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা।

কাঠ সিজনিং-এর বিভিন্ন পন্থা
সাধারণত কাঠকে দুই উপায়ে সিজনিং করা হয়ে থাকে। যথা:
১। প্রাকৃতিক সিজনিং (natural seasoning)
২। কৃত্রিম সিজনিং (Artficial seasoning)
উভয় পদ্ধতিতেই কাঠকে নির্দিষ্ট নিয়মে আলাদা করা হয় এবং সাজানো হয় যাতে বাতাসের প্রবাহ কাঠের গ্রুপের গায়ে ঠিকমতো লাগে।
১. প্রাকৃতিক সিজনিং
কাঠকে যখন প্রাকৃতিক কোনো উপায় যেমন- বাতাস, পানি ইত্যাদির সাহায্যে সিজনিং করা হয়, তখন তাকে প্রাকৃতিক সিজনিং বলে। সুতরাং প্রাকৃতিক সিজনিং দুই প্রকার। যথা:
ক. বাতাসের সাহায্যে
খ. পানির সাহায্যে
ক. বাভাসের সাহায্যে: বাতাসের সাহায্যে সিজনিং-এ কাঠকে উন্মুক্ত বাতাসে রেখে দেওয়া হয়। এ জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়:
১। কাঠকে কমপক্ষে আনুভূমিকভাবে রেখে ২৫ মিমি দূরে দূরে রেখে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মজবুত এবং নিরাপদ মাচা তৈরি করা হয়।
২। উলম্বভাবে ৬০০-১২০০ মিমি দূরত্বে একই কাঠ বা নিষ্ক্রিয় কোনো জিনিস যেমন- প্লাস্টিক ইত্যাদি দ্বারা মাচা খাড়া করা হয়।
৩। মাচার উপরে কোনো বোর্ড দ্বারা ঢেকে দিতে হবে যাতে উপরের কাঠ দ্রুত গুকিয়ে না যায়।
৪। মাচাকে কোনো ছাউনির নিচে তৈরি করা হয় যাতে সরাসরি রোদ না লাগে।
৫। মাচাকে যথেষ্ট উঁচুতে তৈরি করতে হবে যাতে ভালোমতো বাতাস চলাচল করতে পারে এবং মাটি হতে কোন ড্যাম্প না হয়।
৬। দুই থেকে তিন মাস পরপর কাঠগুলোকে উল্টিয়ে দিতে হবে যাতে সব দিকে ঠিকমতো শুকায়। এ পদ্ধতিতে কাঠ সিজনিং করতে প্রায় এক থেকে দুই বছর লেগে যায়।
খ. পামিষ নাবাব্যে: এ সিজনিং-এ পানিতে রেখে কাঠকে সিজনিং করা হয়ে থাকে। এ জন্য নিম্নলিথিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১। কাঠের গুঁড়িগুলোকে হাল জড়িয়ে পাদিয় নিয়ে ৩ থেকে ৫ সপ্তাহ ভূষিয়ে রাখা হয়।
২। সূর্যের আলো যাতে ডুষও কাঠের পায়ে সা লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩। ধীরে ধীরে কাঠের স্যাপ বা তরুল উপাদান বের হয়ে পানির সাথে মিশে যায়।
৪। কাঠগুলোকে পয়ে পালি হতে স্কুলে হাউসিয় নিচে স্তরে ঘরে রেখে বাভাসে ফকালো হয়।
৫। কাঠের শক্তি কিছুটা কমে গেলেও এ পদ্ধতিতে সিজনিং-এ সময় অনেক কম লাগে।
কৃত্রিম সিজনিং
কৃজিম উপায়ে স্বল্প সময়ে কাঠ থেকে পলরস বা স্যাগ শুকিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াকে কৃত্রিম সিজনিং বলে। কাঠকে প্রশ্ন কোনো কাজে ব্যবহায়ের জন্য কৃত্রিম লিজাদিং-এর প্রয়োজন পড়ে। নিয়ে বিভিন্ন কৃগ্রিম সিজনিং-এয় সর্বক্ষপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো:
এ পদ্ধতিতে কাঠকে ফুটন্ত পানিতে ডুবিত্রে রাখা হয়।
– কাঠের লকারের উপর বুবিয়ে রাখার সময় নির্ভর করে।
-১০ মে.মি. সাইজে কাঠের জন্য ৪-৫ ঘণ্টাই যথেষ্ট।
– পালি থেকে ভূলে গয়ে বাতাসে গুফালে কাঠ ফাজেয় উপযোগী হয়।
-ব্যয় সাপেক্ষ কিন্তু সময় তুলনামূলক কম লাগে।
-কাঠের শক্তি কিছুটা কমে যায়।
খ. খুঁয়া ওড়করণ:
- আমাদের দেশে প্রচলিত একটি পুরাতন পদ্ধতি।
- খড়, শুকনো পাতা বা করাত গুঁড়া ইত্যাদি জ্বালিয়ে তার ধোঁয়ায় কাঠ শুকানো হয়।
- এ পদ্ধতিতে কাঠ শুকাতে অনেক সময় লাগে কিন্তু কাঠে চিড় ধরে না।
- এ পদ্ধতিতে কাঠ টেকসই এবং বিনাশ রোধী হয়।
- গ. রাসায়নিক সিজনিং-
- কাঠকে ইউরিয়া মিশানো পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হয়।
- এরপর কাঠকে চুল্লিতে সিজনিং করা হয়।
- এতে করে সিজনিং দ্রুত হয়।
- এ পদ্ধতিতে কাঠের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রং অপরিবর্তনীয় থাকে।
- এ পদ্ধতি ব্যয় সাপেক্ষ কিন্তু উৎকৃষ্ট পদ্ধতি।
ঘ. বৈদ্যুতিক সিজনিং-
- বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যবহার করেও কাঠকে সিজনিং করা হয়।
- এ পদ্ধতিতে কাঠ সিজনিং-এ অনেক কম সময় লাগে।
- কাঠের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে কাঠে সামান্য তাপের সৃষ্টি হয় এবং কাঠ শুকায়।
ক. ধারাবাহিক চুল্লি সিজনিং-
- এ পদ্ধতিতে অবিরাম কাঠ বোঝাই করা, বিশুদ্ধ করা এবং বিশুদ্ধ কাঠ নির্গমনের ব্যবস্থা থাকে।
- বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতি খুবই সুবিধাজনক।
- এ চুল্লি এমনভাবে নির্মিত যে, কাঁচা কাঠ চুল্লিতে বোঝাই ও বাহন-এর সরবরাহ পথে প্রবেশ করে ধীরে
- ধীরে নির্গমন পথের দিকে যত অগ্রসর হয়, কাঠগুলোও তত শুঙ্গ হতে থাকে।
নির্গমন পথ থেকে উত্তপ্ত বায়ু প্রবেশপথে পুনঃসঞ্চালন করা হয় ফলে অবিরাম সিজনিং প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
কাঠ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
কাঠকে দীর্ঘস্থায়ী, মজবুত ও টেকসই করতে যে সকল ব্যবস্থা, উপায় বা প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় তার সবগুলোকে কাঠ সংরক্ষণ বলে। এগুলো কাঠকে শক্তিশালী করে এর স্থায়িত্ব ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয় এবং কাঠকে ক্ষতিকারক পোকামাকড় (উইপোকা), ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক আক্রমণে পচনের হাত হতে রক্ষা করে। মূলত কাঠকে যখন বাইরের কোনো কাজে বা মাটিসংলগ্ন স্থানে ব্যবহার করা হয় তখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে কাঠে পচন বা ক্ষয় শুরু হয়।
কাঠ সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণে এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত অসুবিধা ও ক্ষতির হাত হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত কাঠে তুলনামূলক খরচ (যেমন-নির্দিষ্ট সময়ের আগে বার্নিশ করা, দ্রুত কাঠ পরিবর্তন করা) কম হয়। কাঠ সংরক্ষণে কাঠের প্রকার, প্রজাতি এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি, রাসায়নিক উপাদান এবং সংরক্ষণের সময়কালের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন মাত্রার শক্তিশালী এবং টেকসই কাঠ পাওয়া যায়।
কাঠ সংরক্ষণের প্রক্রিয়াসমূহ
কাঠ সংরক্ষণে যে প্রিজারভেটিভ (preservative) ব্যবহার করা হয় তা ভ্যাকুয়াম (vacuum) এবং প্রেসার (pressure) ট্রিটমেন্টের সাহায্যে প্রয়োগ করা হয়। রাসায়নিক প্রিজারভেটিভগুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১। পানিবাহিত প্রিজারভেটিভ (Water-borne preservatives)
২। তেলবাহিত প্রিজারভেটিভ (Oil-borne preservatives)
৩। পাতলা জৈব দ্রাবক প্রিজারভেটিভ (Light Organic Solvent Preservative (LOSPs)
১. পানিবাহিত প্রিজারভেটিভ (Water-borne preservatives): পানির সহজলভ্যতা এবং কম দামের
কারণে প্রিজারভেটিভ তৈরিতে দ্রাবক হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এই জাতীয় প্রিজারভেটিভ কাঠ ফুলে ওঠা, বেঁকে যাওয়া এবং আঁশ আলাদা হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। কয়েকটি পানিবাহিত প্রিজারভেটিভের নাম নিচে দেওয়া হলো।
- ক্রমেটেড কপার আর্সেনেট (Chromated copper arsenate (CCA)
- এলকালাইন কপার কোয়াটারনারি (Alkaline copper quaternary)
- কপার এজোল (Copper azole)
- অন্যান্য কপার উপাদানসমূহ (Other copper compounds)
- মাইক্রোনাইজড্ কপার প্রযুক্তি (Micronized copper technology)
- বোরেট প্রিজারভেটিভ (Borate preservatives)
- সোডিয়াম সিলিকেট প্রিজারভেটিভ (Sodium silicate-based preservatives)
- পটাশিয়াম সিলিকেট প্রিজারভেটিভ (Potassium silicate-based preservatives)
- বাইফেনথ্রিন স্প্রে প্রিজারভেটিভ (Bifenthrin spray preservatives)
- আগুন নিরোধক পরিশোধক (Fire retardant treated)
২. তেলবাহিত প্রিজারভেটিভ (Oil-borne preservatives):
- কোলটার (আলকাতরা) ক্রিয়োসোট (Coal-tar creosote)
- লিনসিড তেল (Linseed oil)
- নতুন প্রযুক্তি (New Technologies)
- কাঠ এসিটাইলেশন (Wood acetylation)
- প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ (Natural preservatives)
- প্রাকৃতিক পচন নিরোধক কাঠ (Naturally rot-resistant woods)
- টাং তেল (Tung oil)
- তাপ পরিশোধন (Heat treatments)
- মাটি পরিশোধন (Mud treatment)
প্রিজারভেটিভ প্রয়োগ পদ্ধতি
১. চাপহীন প্রক্রিয়া
বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ দিয়ে চাপহীন প্রক্রিয়ায় কাঠ সংরক্ষণের পদ্ধতিগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রিজারভেটিভ প্রয়োগের প্রচলিত কয়েকটি পদ্ধতি হচ্ছে ব্রাশিং বা স্প্রেইং (brushing or spraying), ডিপিং (dipping), চুয়ানো (soaking), স্টিপিং (steeping) বা ঠান্ডা বা গরম গোসল (hot and cold bath)। অন্য পদ্ধতিগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে চেরিং (charring), গর্ত করে প্রয়োগ (bored holes), ডিফিশন প্রক্রিয়া (diffusion processes) এবং স্যাপ দূরীকরন (sap displacement)
২. চাপযুক্ত প্রক্রিয়া
কাঠ সংরক্ষণে চাপযুক্ত প্রক্রিয়া বর্তমানে সবচেয়ে ব্যবহৃত এবং স্থায়ী পদ্ধতি। এ পদ্ধতি বন্ধ সিলিন্ডারের মধ্যে উচ্চ তাপে চাপ প্রয়োগ করা হয় বা শূন্যতা সৃষ্টি করে পরিশোধন করা হয়। কাঠগুলো বগিতে করে সিলিন্ডারে ঢোকানো হয়।
এ পদ্ধতি চাপহীন পদ্ধতির চেয়ে সুবিধাজনক। এ প্রক্রিয়ায় প্রিজারভেটিভ বেশি পরিমাণে অনেক গভীরে এবং সুষমভাবে পৌঁছায়। এ পদ্ধতিতে পরিশোধন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ফলে দরকার অনুযায়ী প্রিজারভেটিভ প্রয়োগ পরিবর্তন করা সহজ হয়। এ পদ্ধতি সাধারণত বড় রকম উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে প্রাথমিক যন্ত্রপাতির দাম এবং জ্বালানির খরচ অনেক বেশি। এ পদ্ধতি নিম্নলিখিত প্রকারের হয়ে থাকে।
ক. পূর্ণ কোষ প্রক্রিয়া
খ. চাপ তারতম্য প্রক্রিয়া
গ. উচ্চ চাপ স্যাপ পরিবর্তন প্রক্রিয়া
ইনসিজিং (Incising) এবং মাইক্রোওয়েভিং (Microwaving) নামে নতুন প্রক্রিয়ার উপরও গবেষণা চলছে।
দেশীয় পদ্ধতি:
রং বা বার্ণিশ প্রয়োগ: কাঠের তৈরি দরজা জানালা বা কম দামি আসবাবপত্রে তিসির তেলে বিভিন্ন রং এবং মূল্যবান আসবাবপত্রে স্পিরিট দ্বারা তৈরি বার্ণিশ প্রয়োগে এদের সংরক্ষণ করা হয়। রং ও বার্নিশের ব্যবহার আসবাবপত্রে সৌন্দর্যের পাশাপাশি পোকামাকড়ের হাত হতে রক্ষা করে।
আলকাতরার প্রলেপ: গ্রামাঞ্চলে এর ব্যবহার বেশি। আলকাতরা দামে সস্তা এবং ব্যবহার করা সহজ। ব্রাশের দ্বারা দুই বা চার প্রলেপ আলকাতরা প্রয়োগ করলে তা সহজেই একটি আস্তরণ সৃষ্টি করে। সাধারণত ঘরের বেড়া, কাঠের খুঁটি, ঘরের চালা ও নৌকা ইত্যাদিতে আলকাতরা ব্যবহার করা হয়।
আরও দেখুনঃ