সিভিল কন্সট্রাকশনের পয়েন্টিং | অধ্যায়-৮ | সিভিল কন্সট্রাকশন ২

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – সিভিল কন্সট্রাকশনের পয়েন্টিং যা অধ্যায়-৮ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প- ২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।

সিভিল কন্সট্রাকশনের পয়েন্টিং

পয়েন্টিং (Pointing)

পয়েন্টিং একটি কৌশল যার সাহায্যে দেওয়ালের বাইরের পাশের জোড়াগুলো ১ থেকে ২ সে মি গভীরতায় ‘রেকিং’ করে ভালো গুণ সম্পন্ন মসলা দ্বারা কাঙ্ক্ষিত আকারে ঢেকে দেয়া হয়। ফলে জোড়াগুলো আবহাওয়াজনিত কারণে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।

পয়েন্টিং এর ফলে দেওয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। সিমেন্ট মসলা দ্বারা পয়েন্টিং করার ক্ষেত্রে মসলার অনুপাত হবে ১:২ এবং লাইম মসলার ক্ষেত্রে ১:১। পয়েন্টিং কাজ শুরু করার ২৪ ঘণ্টা পূর্ব থেকে দেওয়ালকে ভিজা রাখা হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে মসলার সাথে রং মিশানো হয়। নিম্ন বর্ণিত জায়গাগুলোতে পয়েন্টিং করা হয়। যথাঃ-

১) যেসব ক্ষেত্রে কাঠামোর পাথর বা ইটের স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সে সব ক্ষেত্রে পয়েন্টিং করা হয়।

২) আবহাওয়া বা অন্য কোন কারণে যদি কাঠামোর জোড়ায় ফাটল ধরার সম্ভবনা থাকে তাহলে পয়েন্টিং করা হয়।

৩) যে সব স্থানে দেওয়ালের অসমরূপ প্রদর্শন করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা দরকার সে সব স্থানে পয়েন্টিং করা হয়।

পয়েন্টিং এর প্রকারভেদ (Types of pointing)

পয়েন্টিং আট প্রকার। যথাঃ

১) ফ্লাশ পয়েন্টিং (Flash pointing)

২) গ্রুভড পয়েন্টিং (Grooved pointing)

৩) রেসেসেড পয়েন্টিং (Recessed pointing)

৪) বিডেড পয়েন্টিং (Beaded pointing)

৫) টাক পয়েন্টিং (Tuck pointing)

৬) স্ট্রাক পয়েন্টিং (Struck pointing)

৭) ওয়েদারড পয়েন্টিং (Weathered pointing)

৮) ভি-পয়েন্টিং (Vee-pointing)

 

সিভিল কন্সট্রাকশনের পয়েন্টিং
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকার পয়েন্টিং

নিয়ে বিভিন্ন প্রকার পয়েন্টিং এর বর্ণনা দেওয়া হলো:

ফ্লাশ পয়েন্টিং (Flash pointing)

এ ধরনের পয়েন্টিং সর্বাধিক প্রচলিত সাধারণ পয়েন্টিং। ইটের মুখ বরাবর সমতল করে যে পয়েন্টিং করা হয় তাকে ফ্লাশ পয়েন্টিং বলে। পাঁধুনির কাজ চলাকালীন সময়ে জোড়ের ভিতর কর্ণি বা উষা দিয়ে রেকিং করে নিতে হয়। তারপর ঊষা দিয়ে চেপে জোড়ে মসলা ঢুকিয়ে দিতে হবে। মসলা ঢুকানোর পর জোড় স্থান ঘষে মেজে দেওয়ালের সমান করে নিলে কাঙ্ক্ষিত পয়েন্টিং হয়ে যাবে। জোড়ের মসলাকে চাপ প্রয়োগ করে কমপক্ষে ৫ মি মি গভীরতায় প্রবেশ করা হয়।

রেসেসেড পয়েন্টিং (Recessed pointing)

ইটের আকার ও আকৃতি সমান হলে এ ধরনের পয়েন্টিং করা যেতে পারে। এক ধরনের বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পয়েন্টিং এর ফেস (Face) খাড়া রাখা হয়। প্রথমে জোড়ের মধ্যে চাপে মসলা প্রবেশ করাতে হবে। তারপর খাঁজকাটা যন্ত্রটি জোড়ে ঢুকিয়ে তার সমান্তরাল করে নিলে এ প্রকার পয়েন্টিং হবে। এটি দেখতে আয়তাকার এবং পানি নিরোধে সম্পূর্ণ কার্যকর নয়।

গ্রুভড পয়েন্টিং (Grooved pointing)

এটি মূলত ফ্লাশ পয়েন্টিং এর উন্নত সংস্করণ। উত্তলাকার পয়েন্টিং যন্ত্র দ্বারা ক্লাশ পয়েন্টিং এর মধ্য বরাবর অবতল শুভ বা খাঁজ কাটা হয়। একটি কাঠের পাট্টাকে জোড় লাইন বরাবর রেখে তার উপর কাঠের উত্তল (Convex) ছাঁচটি বসিয়ে সমান্তরাল ভাবে ডানে-বামে টেনে এ প্রকার পয়েন্টিং করা হয়। এ ধরনের পয়েন্টিং দালানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে প্রয়োগ করা হয়।

স্ট্রাক পয়েন্টিং (Struck pointing)

এটি সর্বাধিক প্রচলিত পয়েন্টিং। এ পয়েন্টিং-এ সাধারণত জোড়ের মসলার নিম্নাংশ ক্রম ঢালু এবং উপরের প্রান্ত দেওয়ালের মাঝে কমপক্ষে ১০ মি মি ঢুকানো থাকে। পয়েন্টিং এ উপর যে পানি পড়ে তা ক্রমশ ঢাল বেয়ে নিচের দিকে চলে যায়। ফলে পানি প্রবেশ করতে পারে না। কর্ণি দিয়ে ৬০০ (ষাট ডিগ্রী) কোণে মসলা চেপে এ পয়েন্টিং করা হয়। ইটের মাপ সমান না হলে এই পয়েন্টিং এ সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় না।

বিডেড পয়েন্টিং (Beaded pointing)

এ পয়েন্টিং বিশেষ ধরনের উন্নতমানের সৌন্দর্য বর্ধক পয়েন্টিং তবে সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অবতল আকৃতির স্টিল (Steel) প্রান্ত দ্বারা উত্তলাকার পয়েন্টিং করা হয়।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

টাক পয়েন্টিং (Tuck pointing)

রেকিং আউট করার পর জোড়ে চাপে মসলা প্রবেশ করিয়ে ফ্লাশ করে নিতে হয়। মসলা কাঁচা থাকতেই ৫ মি মি প্রন্থ ও ৩ মি মি গভীর করে চ্যানেল বা খাঁজ ভর্তি করতে হয় যাতে বাইরের দিকে ৬ মি মি গভীর করে চ্যানেল বা খাঁজ তৈরি করতে হয়। সাদা সিমেন্ট দ্বারা তৈরি পুটি (Putty) দিয়ে এমনভাবে খাঁজ ভর্তি করতে হয় যাতে বাইরের দিকে ৬ মি মি বাড়তি থাকে। এ পয়েন্টিংকে টাক পয়েন্টিং বলে। ইটের জোড়গুলো এ্যাবড়ো থ্যাবড়ো থাকলে জোড় থেকে মসলা বের করে এনে পরে কর্ণির সাহায্যে প্রবেশ করানো হয়। এ পয়েন্টিং বাইরের দিকে আয়তাকার দেখায় এবং জোড়ের ত্রুটি ঢাকতে ব্যবহার করা হয়।

ডি-পয়েন্টিং (Vee-pointing)

এ প্রকার পয়েন্টিং এর প্রচলন খুব বেশি। এটি দেখতে ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো। ফ্লাশ ফিনিশিং জোড়ের পৃষ্ঠতলে ‘V’ আকৃতির খাঁজ কেটে এ প্রকার পয়েন্টিং করা হয়।

ওয়েদারড পয়েন্টিং (Weathered pointing)

জোড়ের স্থানে ‘V’ পৃষ্ঠ আকৃতির বর্ধিতাংশ নির্মাণ করে এ পয়েন্টিং করা হয়। এটি দেখতে ‘V’ পয়েন্টিং এর বিপরীত। ইটের জোড় থেকে পয়েন্টিং এর মসলা বাইরের দিকে ‘V’ পৃষ্ঠের মতো বর্ধিত থাকে।

বিভিন্ন প্রকার পয়েন্টিং এর উপাদান ও অনুপাত

সাধারণত সিমেন্ট মসলা বা চুন মসলা পয়েন্টিং এর কাজে ব্যবহার করা হয়। এ মসলার মিশ্রণ পলেস্তরার (Plaster) মসলা থেকে সমৃদ্ধশালী বা অধিক শক্তিশালী করতে হয়। সিমেন্ট মসলা হলে অনুপাত হবে ১:২ (সিমেন্ট-বালি) এবং চুন মসলা হলে অনুপাত হবে ১:১ (চুন-বালি)। এ কাজে ব্যবহৃত বালি অপদ্রব্য মুক্ত হতে হবে।

পয়েন্টিং কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির তালিকা

নিম্নের যন্ত্রপাতিগুলো পয়েন্টিং কাজে ব্যবহৃত হয়।

১) কর্মি (Javell-bell nose or pointed nose)

২) ধাতব ফ্লোট (Metal float)

৩) কাঠের ফ্লোট (Wooden float)

৪) বিভিন্ন প্রকার পয়েন্টার যেমন- হক (hawk), স্ট্রেইট অর ফেদার এজ (straight or feather edges), ডার্বি (darby)

 

 

সিভিল কন্সট্রাকশনের পয়েন্টিং

 

পয়েন্টিং করার কৌশল

তিন ধাপে পয়েন্টিং কাজ সমাধা করা যায়।

১) জোড়ের স্থানগুলো কাটা (Racking out of joint)

২) মসলা তৈরিকরণ (Preparation of mortar)

৩) মসলা প্রয়োগ (Application of mortar)

 

সিভিল কন্সট্রাকশনের পয়েন্টিং
চিত্রঃ পয়েন্টিং কাজে যন্ত্রপাতির ব্যবহার।

১) জোড়ের স্থানগুলো কাটা

গাঁধুনির জোড়ের মসলা কিছুটা নরম থাকতে পয়েন্টিং করা সুবিধাজনক। নতুন বা পুরাতন যে কাজেই হোক না কেন পয়েন্টিং করার পূর্বে জোড়ের মসলা ১২ থেকে ২০ মি মি গভীরতায় কেটে নিতে হবে। তারপর তারের ব্রাশ দ্বারা ধুলাবালি পরিস্কার করে নিতে হবে। পরিস্কার করার পর পৃষ্ঠদেশ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সংযোগস্থল থেকে মসলা তুলে নেওয়াকে ‘রেকিং আউট ‘(Racking out) বলে।

২) মসলা তৈরিকরণ

পয়েন্টিং এ ব্যবহৃত মসলা দুই প্রকার। ১) সিমেন্ট মসলা ও ২) লাইম বা চুন মসলা। ১:৩ অনুপাতের সিমেন্ট মসলা এবং ১:১ অনুপাতে লাইম মসলা ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টারিং কাজে ব্যবহৃত মসলা অপেক্ষা পয়েন্টিং কাজে ব্যবহৃত মসলা অধিকতর শক্তিশালী হওয়া উচিৎ।

৩) মসলা প্রয়োগ

দেওয়ালের পাত্রতল তৈরি, পরিস্কার ও ভিজানোর পর নির্ধারিত অনুপাতের মসলার সাহায্যে পয়েন্টিং করা হয়। সাধারণত ছোট কর্ণিতে মসলা নিয়ে সজোরে সংযোগ (Joint) এর মধ্যে স্থাপন করা হয়। স্থাপিত মসলায় এমনভাবে চাপ দিতে হবে যাতে সংযোগ পুরোপুরিভাবে মসলা দ্বারা ভরাট হয়ে যায় এবং কোন ফাঁক না থাকে। নির্ধারিত পয়েন্টার দ্বারা সংযোগ চাপ প্রয়োগ করে পয়েন্টিং করলে কাঙ্ক্ষিত রূপ দেওয়া যায়। পয়েন্টিং করার পর থেকে ৭ দিন কিউরিং করতে হয়।

অনুশীলনী

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। পয়েন্টিং কাকে বলে?

২। পয়েন্টিং এর কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির তালিকা তৈরি কর।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। বিভিন্ন প্রকার পয়েন্টিং এর উপাদান ও অনুপাত লেখ।

২। পয়েন্টিং করার কৌশল লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন

১। পয়েন্টিং কত প্রকার ও কি কি? বিভিন্ন প্রকার পয়েন্টিং এর বিবরণ দাও।

আরও দেখুন :

Leave a Comment