আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – সিভিল কন্সট্রাকশনের সাটারিং যা অধ্যায়-৯ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প- ২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।
Table of Contents
সিভিল কন্সট্রাকশনের সাটারিং
সেন্টারিং ও সাটারিং
কংক্রিটকে জমিয়ে নির্দিষ্ট আকার ও আয়তনে আনার জন্য কাঁঠ, বাঁশ, লোহা বা প্লাস্টিক দ্বারা যে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হয় তাকে সেন্টারিং ও সাটারিং বলে। ঢালাই করা কংক্রিট যখন প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করে তখন প্রথমে সাটারিং এবং পরে সেন্টারিং খুলে ফেলা হয়। যে কোন মেম্বার যেমন বিম বা ব্লাবের সাথে যে অংশ লেগে থাকে ভাই শাটারিং এবং সম্পূর্ণ অস্থায়ী যে কাঠামো মূল কাঠামোকে ধরে রাখে তাকে সেন্টারিং বলে। শাটারিং খুলে অপসারণ করাকে স্ট্রিপিং বলে

সেন্টারিং ও সাটারিং এর প্রয়োজনীয়তা
নিম্নে পাটারিং এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলোঃ
১) নির্দিষ্ট আকার, আকৃতি ও আয়তনে কাঠামোতে কংক্রিট ঢালাই করা।
২) ঢালাইকৃত কংক্রিটকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঢালাই স্থানে ধরে রাখা।
৩) আর সি সি কাঠামোর জন্য নির্ধারিত সোহাকে (M.S. rod) ডিজাইন মোতাবেক ধরে রাখা।
৪) একই সময় একাধিক কাঠামো যথাঃ- বিষ, স্নান ঢালাই করা।
৫) আনুভূমিক ও উলম্ব উচ্চয় তলে সমতা রক্ষা করা।
সেন্টারিং ও সাটারিং-এ ব্যবহৃত মালামাল
সেন্টারিং ও সাটারিং তৈরিতে সাধারণত যে মালামাল ব্যবহার করা হয় লোহা ও কাঠ তার মধ্যে অন্যতম। তবে প্রাক ঢালাইকৃত কংক্রিট কাঠামো (Pre-cast concrete members) নির্মাণের জন্য এ্যালুমিনিয়াম, ফাইবার গ্লাস ও প্রি-কাস্ট কংক্রিটের সাটারিং ব্যবহার করা হয়।
সেন্টারিং ও সাটারিং এর কাজে ব্যবহৃত মালামালের মধ্যে কাঠ বহুল প্রচলিত। অধিক উচ্চতা সম্পন্ন ও গুরত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে স্টিল সাটারিংও ব্যবহার হয়।
সেন্টারিং ও সাটারিং তৈরির কৌশল
১) প্রপিং (খুঁটি স্থাপন) এবং সেন্টারিং (propping and centering)
২) সাটারিং (shuttering)
৩) ক্যাম্বার রাখা (provision of camber)
৪) পৃষ্ঠতল পরিষ্কার ও প্রস্তুত করা (cleaning & surface treatment)
প্রপিং এবং সেন্টারিং কাজে ব্যবহৃত প্রপস (খুঁটি) স্টিল, কাঠ, ইটের গাঁথুনি ইত্যাদির হতে পারে। প্রথমে খুঁটিগুলোকে ডিজাইন থাকলে সেই মোতাবেক না হলে যথা সম্ভব ঘন বর্গাকারে খাড়া করা হয়। কাঠামোর উচ্চতা বেশি হলে ব্রেসিং এর প্রয়োজন পড়তে পারে। মাটিতে খুঁটি খাড়া করার সময় মাটি সমতলে থাকা বাঞ্চনীয়। খুঁটি বাঁশের হলে অতিরিক্ত কাঠ দিয়ে লেভেলিং করতে হয়। স্টিল প্রপসের ক্ষেত্রে অবশ্য উচ্চতা কম বেশি করা তুলনামূলক সহজ।
সাটারিং
এটা কাঠের, কাঠের ফ্রেমে প্লাই দিয়ে অথবা স্টিল এঙ্গেলের সাথে স্টিল শিট ওয়েল্ডিং করে তৈরি করা হয়। সাটারিং লেভেল মেপে ফিটিং করতে হয়। এর ভিতরে রূপবান টিন বা পলিথিন শিট দেওয়া হয় যেন সাটার খুলতে সহজ হয়। স্টিল সাটারের ক্ষেত্রে সাটার রিলিজিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। কংক্রিটের ক্লিয়ার কাভার রাখার জন্য নিচে এবং প্রয়োজনমত পাশে সাইজ মত সিসি ব্লক বা চেয়ার ব্যবহার করতে হয়।
ক্যাম্বারিং
কংক্রিটের কাঠামোতে আনুভূমিক মেম্বারগুলোতে ডিফ্লেকশনের (পেট বরাবর বেঁকে যাওয়া) কারণে বেঁকে যাওয়া বা নিচু হওয়া রোধকল্পে কিছু ক্যাম্বারিং সেন্টারিং ও সাটারিং তথা ফর্ম ওয়ার্ক তৈরির সময়ে রাখতে হয়।
পৃষ্ঠতল পরিষ্কার ও প্রস্তুত করা
কংক্রিট ঢালার আগে ফর্ম ওয়ার্ক ভালোমত ধুয়ে ফেলতে হবে যাতে কোন বালি, পাতা, ছেড়া কাগজ, চিপিং করা টুকরা ইত্যাদি এর মধ্যে না থাকে। কংক্রিট ঢালার আগে ফর্ম ওয়ার্কের গায়ে রিলিজিং এজেন্ট যেমন-লিন্সেড তেল, সফট সোপ সল্যুশন ইত্যাদি লাগাতে হবে যাতে ফর্ম ওয়ার্কের গায়ে কংক্রিট লেগে না যায়।

সেন্টারিং ও সাটারিং অপসারন কৌশল
সেন্টারিং ও সাটারিং খোলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন প্রকার কাজের জন্য নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কোন অবস্থাতেই শাটারিং খোলা যাবে না। যদি খোলা হয় তাহলে কংক্রিটে ফাটল ধরা সহ বিভিন্ন প্রকার খুঁত দেখা দিবে। খোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন আঘাত না লাগে বা কম্পন সৃষ্টি না হয়। কাঠামোর তলা বা স্ট্রাট খোলার পূর্বে প্রয়োজনীয় গাত্রতল উন্মুক্ত করে শক্ত হওয়ার পরিমাণ নিশ্চিত হতে হবে।
খুঁটিগুলো এমনভাবে খুলতে হবে যেন টানবল (Tension) ও চাপবল (Compression) এলাকায় যথাযথভাবে বিদ্যমান থাকে। ক্যান্টিলিভার স্লাব বা বিমের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত (Free-end) প্রান্ত হতে খুঁটি অপসারণ করতে করতে বাঁধা প্রান্তের (Fixed-end) দিকে অগ্রসর হতে হবে।
সেন্টারিং ও সাটারিং অপসারণের সময়ঃ
ক্রমিক নং | সাটারিং এর স্থান | সময় |
১ | বিমের তলাC | ঢালাইয়ের ৭ দিন পর |
২ | স্লাবের পাশ | ঢালাইয়ের ৩ দিন পর |
৩ | দেওয়াল, কলাম ও বিমের খাড়া পাশ | ঢালাইয়ের ১ থেকে ২ দিন পর |
8 | স্লাবের তলাঃ ক) ৪.৫ মি স্প্যান পর্যন্ত | ঢালাইয়ের ৭ দিন পর |
খ) ৪.৫ মি স্প্যানের উর্ধ্বে | ঢালাইয়ের ১৪ দিন পর |
অনুশীলনী
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। সেন্টারিং কাকে বলে?
২। সাটারিং কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। সেন্টারিং ও সাটারিং এর প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
২। সেন্টারিং ও সাটারিং এর কাজে ব্যবহৃত মালামাল এর নাম উল্লেখ কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সেন্টারিং ও সাটারিং তৈরির কৌশলের বিস্তারিত বিবরণ দাও এবং এটি অপসারণের কৌশল বর্ননা কর।
আরও দেখুন :