আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সিভিল কন্সট্রাকশনের হ্যামার । শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
সিভিল কন্সট্রাকশনের হ্যামার
নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হ্যামার
হাতুড়িকে ইংরেজিতে হ্যামার বলা হয়। কোনো শক্ত বন্ধুর উপর আঘাত করতে হ্যামার ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ০.৬% কার্বন স্টিল দিয়ে হ্যামার তৈরি। এটি যথাক্রমে মুখ (face), মাথা (head) এবং আই (eye) ও বাতল (handle) নিয়ে পঠিত। হ্যামার বিভিন্ন ওজনের ও আকৃতির হয়ে থাকে। নির্মাণকাজে সাধারণত কাঠের কাজে, সাটারিং কাজে ও স্ক্যাফোন্ডিং এবং দেয়ালে পেরেক ঢুকাতে হ্যামার বেশি ব্যবহৃত হয়।
A. স্লিপ, হাতল (grip, handle)
B. হাতল, স্যাফট (handle, shaft)
C. হ্যামারহেড, মাথা (hammerhead)
D. পিন (peen/pein/pane)
E. চেক (choek)
F. নেক (neck)
G. বেল (bell)
H. স্ট্রিকিং ফেস, ফেস (striking face)
K. আই (eye)
নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হ্যামারের প্রকারভেদ
নির্মাণকাজের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার হ্যামার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন-
১। ক্রস পিন হ্যামার (cross peen hammer)
২। ক্ল বা থাবা হ্যামার (claw hammer)
৩। ডেড এন্ড হ্যামার (dead end hammer)
৪। স্প্রে হ্যামার (slodge hammer)
৫। স্ট্রেইট পিন হ্যামার (stright peen hammer)
৬। রিভিটিং হ্যামার (riveting hammer)
৭। চিপিং ব্যামার (chipping hammer)
৮। ব্রিক হ্যামার (brick hammer)
৯। ম্যালেট (mallet)
১. জল পিন হ্যামার: এই হ্যামারে পিন হাতলের সাথে সমকোণে থাকে বলে একে ক্রস পিন হাতুড়ি বলে। এর ওজন ০.২৫ থেকে ০.৯ কেজি হয়ে থাকে। এটি কাস্ট স্টিলের তৈরি। এর প্রধান অংশগুলো হলো-
ফেন্স: হাতুড়ির মাথার দিকে যে অংশ দিয়ে আঘাত করা হয়।
শিন: এটি কেসের বিপরীত দিকে থাকে।
আই: মাখুড়ির মাখার মাঝখাদে যে ডিম্বাকৃতির একটি হিত্র থাকে তাকে অহ বলে। এতে হাতল আটকানো থাকে।
ব্যবহার:
- অপেক্ষাকৃত ছেটি পেরেক বসানো যায়।
- পিন দ্বারা পাতলা কাঠের টুকরা এবং ভিনিয়ার বসানো যায়।
- কেবিনেট তৈরির কাজে বেশি উপযোগী।
- রিভিটের মাথা উঠাতে বাটালের মতো ব্যবহৃত হয়।
- খাজু বাঁকা বা পাতলা করতে ব্যবহার করা হয়।
২. ক্ল বা খাবা হ্যামার: এই হাতুড়িয় পিন পাখির খাবার মতো বাঁকানো। তাই একে ফ্ল হ্যামার বলে। সাধারণত এর ওজন বা সাইজ ০.৩ কেজি থেকে ০.৭ কেজি হয়ে থাকে।
ব্যবহার:
- বেঁকে যাওয়া পেরেক তুলতে এবং পেরেক ঢুকাতে ব্যবহার করা হয়।
- কাঠের বাটালির উপর হালকা আঘাত দিতে ব্যবহৃত হয়।
- ফেস দ্বারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যায়।

৩. ডেড এন্ড হ্যামারঃ (Dead End Hammur) এদের মাথা এবং পিন দুই দিকেই ভোঁতা থাকে। প্রয়োজনে দুই দিক ব্যবহার করা যায়। তবে বল পিন হাতুড়ি অনেকটা ক্রস পিন হাতুড়ির অনুরূপ। তবে পার্থক্য হলো ক্রস পিনের পরিবর্তে এর স্থলে একটি গোলাকার বল খাকে।
ব্যবহার:
- আষাত করার ক্ষমতা বেশি।
- হ্যান্ডেলে গ্রিপ জড়ান থাকে ফলে ধরতে সুবিধা
- তাঙা মাখা এবং আলাদা হ্যান্ডেল দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
- কাঠে পেরেক ঢুকাতে ব্যবহার করা হয়।
৪. প্লেজ হ্যামার: এটি অত্যন্ত ভারী এবং ভারী কাজে ব্যবহৃত হয়। দুই হাত দিয়ে ধরে এটি ব্যবহার করতে হয়। এর ওজন সাধারণত ৩ থেকে ৫ কেজি।
ব্যবহার:
- এটি অত্যন্ত ভারী এবং ভারী কাজে ব্যবহৃত হয়। দুই হাত দিয়ে ধরে এটি ব্যবহার করতে হয়। এর ওজন সাধারণত ৩ থেকে ৫ কেজি।
- লোহা কাটতে এবং পাথর ও কংক্রিট ভাঙতে ব্যবহার বেশি।
- লোহার রড কাটা, সোজা করার কাজে বাটালি বা পানচে আঘাত করতে।
- কামারশালায় রড পেটাতে ব্যবহার হয়।
৫. স্ট্রেইট পিন হ্যামারঃ এর মাথা ও মুখ ক্রস পিন হাতুড়ির মতো। তবে মাথা হাতলের অক্ষের সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। তাই একে স্ট্রেইট পিন হাতুড়ি বলে।
ব্যবহারঃ
পেটানো বস্তুর সাখে হ্যামারের ব্যান্ডেল সমান্তরালে রেখে পেটাতে ব্যবহার হয়।
ধাতু বাঁকা এবং প্রসারিত করতে ব্যবহার করা হয়।
৬. রিভিটিং হ্যামার: এ বাতুড়ির মুখ বর্গাকার ও সামান্য উত্তল হয়ে থাকে পিন পার্শ্ব দুই দিক থেকে এমনভাবে ঢাল করা হয় যে শেষ প্রান্ত সুচালো ও প্রায় গোলাকার আকার ধারণ করে।
ব্যবহারঃ
- রিভিট লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
- রিভিটের মাখা তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।
- বাটালির মতো অংশ রিভিট তোলার কাজেও ব্যবহৃত হয়।
৭. চিপিং বা নিশিং হ্যামার
ব্যবহার:
স্টোন সারফেসকে চিপিং করতে ব্যবহৃত হয়।
রাস্তা নির্মাণে বা একই ধরনের পাথরের কাজে পাথর গঠনে।
৮. ব্রিক হ্যামার: এক মাখা বেশ পাতলা ধারালো থাকে যা ইট কাটকে সহায়তা করে।
ব্যবহার:
ইট বা ফ্লাট পাথর কাটতে ম্যাশনারি কাজে ব্যবহৃত হয়।
৯. ড্রিলিং হ্যামার:
ব্যবহার:
ড্রিলিং কাজে মৃদু আঘাত করতে ব্যবহৃত হয়।
১০. বাম্পিং বডি হ্যামার (bumping body hammer):
ব্যবহার:
- ধাতু সোজা করতে এবং গঠন ঠিক করতে ব্যবহৃত হয়।
১১. জুয়েলার্স হ্যামার
ব্যবহার:
- সূদ্ধ যন্ত্রপাতিতে পিন এবং স্যাফট ঢুকাতে ব্যবহার করা হয়।
১২. সমেকারস হ্যামার:
ব্যবহার:
- করাতের দাঁত বাস সেট করতে ব্যবহৃত হয়।
১৩. সেটিং হ্যামার:
ব্যবহার:
- সিট মেটাল কাজে লেভেলিং এবং বেন্ডিং, জয়েন্ট সেটিং-এ ব্যবহৃত হয়।
১৪. সফন্ট ফেসড জ্যামার
ব্যবহার:
- ভালোমতো গলিস করা পৃষ্ঠে বা নরম পৃষ্ঠের কোনো ক্ষতি না করে।
১৫. লেড বা কপা হ্যামার
ব্যবহার:
- স্টিল সারফেস সোজা করতে ব্যবহার করা হয়।
১৬. ইনসারটেড সফট ফেসড হ্যামার:
ব্যবহার:
- ব্যবহারকারীকে ভিন্ন ভিন্ন দুটো ফেস দিয়ে কাজ করার সুবিধা দেয়।
১৭. ট্রিমমার হ্যামার
ব্যবহার:
- ট্যাক এবং ব্রাড (এক ধরনের পিন বা পেরেক) স্থাপনে ব্যবহৃত হয়।
১৮. ওয়েন্ডার হ্যামার
ব্যবহার:
- ওয়েল্ডিং চিপিং এ ব্যবহার করা হয় এবং এক দিকের ব্রাশ ওয়েন্ডিং পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়।
১৯. ম্যাকানিস্ট পিন হ্যামার
ব্যবহার:
- নরম ধাতু গঠনে
- রিভিটের মাথা পিনিং করতে।
- ধাতুকে সংকীর্ণ জায়গা হতে আঘাত করতে।
ম্যালেট:
কাঠের বা প্লাস্টিকের হাতুড়িকে ম্যালেট বলে। এটি এক প্রকার নরম হাতুড়ি। রাবারের তৈরি ম্যালেটও পাওয়া যায়। কোনো বস্তুর উপর যদি ধাতু নির্মিত হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করলে দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ম্যালেট ব্যবহার করা হয়। মোজাইক করার সময় টাইলকে শক্ত বেডে প্রবিষ্ট করানো এবং একের সাথে অপরের ফাঁক কমিয়ে আনার জন্য মৃদু আঘাত করতে হয় বলে এক্ষেত্রে ম্যালেট ব্যবহার করা হয়।
কারপেন্টার ম্যালেট
ব্যবহার:
- ভাইয়েল, ছোট স্ট্যাক এবং কাঠের হাতলযুক্ত চিজেল ঢুকাতে ব্যবহৃত হয়।
- শিট মেটাল সঠিক আকার আকৃতি করতে ব্যবহৃত হয়।
রহাইড ম্যালেট
- শিট যেটাল সঠিক আকার আকৃতি করতে ব্যবহৃত হয়।
খাবায় ম্যালেট
ব্যবহার:
- শিট যেটাল সঠিক আকার আকৃতি করতে, ডাউয়েল এবং স্ট্যাক ঢুকাতে ব্যবহৃত হয়।
টিনার ম্যালেট
ব্যবহার:
- শিট মেটাল সঠিক আকার আকড়ি দিতে ব্যবহৃত হয়।
আরও দেখুনঃ