সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার I অধ্যায় ৮ I সিভিল কন্সট্রাকশন-১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার । শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

যে কোনো ধরনের ইমারত (যেমন-আবাসিক, বাণিজ্যিক বা অফিস ভবন) ইত্যাদি হোক না কেন এদের স্ট্রাকচারাল অংশগুলো একই রকম। যেমন- ফাউন্ডেশন, কলাম, বিম, লিন্টেল, সানসেড, প্যারাফেট, সিঁড়ি, ছাদ ইত্যাদি। এগুলো হলো একটি ইমারতের মূল কাঠামো। এ অধ্যায়ে স্ট্রাকচার সম্পর্কিত বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ভিত্তিতল প্রস্তুত পদ্ধতি

মাটির নিচে কাঠামোর ভার বহনযোগ্য ফাউন্ডেশন স্থাপনের স্থানকে ভিত্তিতল বলে। এটা ভিত্তির সর্বনিম্নস্থ শক্ত ভূমিতল। ভিত্তিতল প্রস্তুতের উদ্দেশ্য দুটি। যথা- ১. ভিত্তিতলের উপর আরোপিত ভর যদি তার বহন ক্ষমতার সমান বা কম হয় তাহলে শুধু সমান ও সমতল করে ভিত্তিতল প্রস্তুত করলেই চলে। ২. ভিত্তিতলের উপর আরোপিত ভর যদি তার বহন ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয় তাহলে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে ভিত্তিতলের ভার বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।

ধাপ-১: ড্রইং বা প্লান মোতাবেক মাটিতে ভিত্তির দাগ দিতে হবে।

ধাপ-২: ভিত্তির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা অনুযায়ী পরিখা খনন করতে হবে। পরিখা সম্পূর্ণ গভীরতায় খনন না করে মোট গভীরতা থেকে ৫ সে. মি. কম খনন করতে হবে। পরে কোদাল দ্বারা চেঁছে ঐ ৫ সে. মি. গভীরতাকে কেটে নিতে হবে। খনন কাজ দুই প্রকার। যথা-

ক. সাধারণ খনন (যখন পরিখার গভীরতা ১.৫ মিটার পর্যন্ত)

খ. গভীর খনন (পরিখার গভীরতা ১.৫ মিটারের বেশি)

সাধারণ খননকাজ অপেক্ষাকৃত সহজ। আর গভীর খননকাজ করার সময় পরিখায় পানি প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে বিধায় পরিখার পাশ ভেঙে পড়া এবং পানি চুয়ানো প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ধাপ-৩: পরিখা খনন শেষে তলদেশ স্পিরিট লেভেল দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে।

ধাপ-৪: যথেষ্ট ভার বহনে অক্ষম ভিত্তিতলের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন- ক. ভিত্তির গভীরতা বৃদ্ধি। খ. মাটির পানি নিষ্কাশন করে। গ. মাটিকে সীমাবদ্ধ করে। ঘ. মাটিকে কম্প্যাকশন করে। ঙ. পাইলিং করে। এদের মধ্যে মাটির কম্প্যাকশন তুলনামূলক সহজ এবং কম ব্যয় সাপেক্ষ।

ধাপ-৫: ভিত্তিতলে অবস্থিত মাটিকে পানি দ্বারা ভিজিয়ে হ্যান্ড র‍্যামার বা যন্ত্রচালিত র‍্যামার দ্বারা কম্পাকশন
করে ভিত্তিতল প্রস্তুত করা যায়। অথবা ৩০ থেকে ৩৫ সে.মি. পুরুত্ব উৎকৃষ্ট মানের রাবল ভিত্তিতলে ছড়িয়ে দিয়ে র‍্যামার দ্বারা র‍্যামিং করেও ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।

ধাপ-৬: কাদা মাটির ক্ষেত্রে ভিত্তি নির্মাণের পূর্বে ভার প্রয়োগ করেও তাকে কম্পাকশন করা যায়। আলগা গ্রাভেল ও ছিদ্রযুক্ত পাথরের স্তরে সিমেন্ট গ্রাউট অধিক চাপে প্রবেশ করালেও মাটির ভার বহন ক্ষমতা বাড়ে।

 

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

 

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

ভিত্তিতল বা ফুটিং গভীরতা

ভিত্তিতল বা ফুটিং গভীরতা মূলত ফাউন্ডেশনের প্রকার, মাটির ভার বহন ক্ষমতা, কাঠামোর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন প্রকার বিল্ডিং কোড, স্ট্যান্ডার্ড এবং থাম রুল ব্যবহার করে এই গভীরতা নির্ণয় করা যায়। ভিত্তিতল বা ফুটিং গভীরতা ডিজাইনের সময় নিম্নলিখিত মূলনীতি অনুসরণ করতে হবে।

১। ভিত্তিতল বা ফুটিং গভীরতা মাটির নিচে ভূমিতল হতে এমন গভীর স্তরে হবে যা কাঠামোর উপর আগত ভারকে সহজেই মাটির গভীরে স্থানান্তরিত করতে পারে। অর্থাৎ মাটির ভার বহন ক্ষমতা (bearing capacity) যথেষ্ট হবে।

২। এই গভীরতা কাঠামোর দেবে যাওয়া কমাবে এবং সুষম দেবে যাওয়া (uniform settlement) নিশ্চিত করবে।

৩। কাঠামো থেকে আগত ভার যেন ভিত্তির উপর লম্বভাবে পড়ে।

৪। যথাসম্ভব কলামের বা দেয়ালের কেন্দ্র এবং ভিত্তির কেন্দ্র একই হবে।

৫।ভিত্তিতলের আকারও গভীরতায় প্রভাব ফেলে।

৬। ভিত্তি এবং ভিত্তিতল উভয়ের উপাদান স্থায়ী প্রকৃতির হতে হবে।

র‍্যানকিনের মতে, উপরের মাটি যদি ভালো হয় এবং অনুমোদিত ডিজাইন লোড বহনে সক্ষম হয় তাহলে ফুটিং-এর ন্যূনতম গভীরতা হবে-

D=P/W (1+signθ/1+signθ)²

এখানে,

D = ফুটিং-এর ন্যূনতম গভীরতা, মিটার

P = ফুটিং-এর নিচে লোডের মাত্রা (স্ট্রেস), (মাটির ভার বহন ক্ষমতা নয়), কেজি/বর্গমিটার

W = মাটির একক ওজন, কেজি/ঘনমিটার

θ = মাটির স্থিতি কোণ, ডিগ্রি।

উদাহরণ: কোনো এলাকায় বালিযুক্ত মাটির স্থিরতা কোণ ৩০ ডিগ্রি, মাটির ফুটিং-এর নিচে লোডের জনের মাত্রা ১৬,০০০ কেজি/বর্গমিটার এবং মাটির ওজন ১,৬৮০ কেজি/ঘনমিটার। তাহলে ওয়াল ফুটিং-এর গভীরতা নির্ণয় কর।

সমাধান:

র‍্যানকিনের সূত্রমতে,

D=P/W (1+signθ/1+signθ)²

এখানে,

D = ফুটিং-এর ন্যূনতম গভীরতা, মিটার = ?

P = মাটির ভার বহন ক্ষমতা= ১৬,০০০ কেজি/বর্গমিটার

W = মাটির একক ওজন= ১,৬৮০ কেজি/ঘনমিটার

θ = মাটির স্থিতি কোণ= ৩০ ডিগ্রী

অতএব, ফুটিং গভীরতা

D = ১৬০০/১৬৮০    (১+signθ/১+signθ)²

D = ১৬০০/১৬৮০  (১-০.৫/১+০.৫)²

D = ১৬০০/১৬৮০  x  ০.২৫/২.২৫

= ১.০৫৮ মিটার (ধরি ১.১ মিটার)

প্রধান দেয়াল, পার্টিশন দেয়াল এবং প্যারাফেট-এর নির্মাণ কৌশল

প্রধান দেয়াল:

১। প্রধান দেয়াল এমন প্রস্থ বিশিষ্ট হবে যাতে এটা ইমারতের কিছু অংশ যেমন লিনটেল, জানালা এবং ভার বহনকারী দেয়ালের ক্ষেত্রে ইমারতের ভার বহন করতে পারে।

২। প্রধান দেয়াল এত মজবুত হবে যা বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা যেমন ঝড়, বন্যা ও শত্রুর হাত হতে রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে।

৩। আমাদের দেশে সাধারণত ব্রিক দিয়ে প্রধান দেয়াল নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব যেমন ১০ ফুট পর পর একটু চওড়া করে পিলার নির্মাণ করতে হয়। এতে দেয়ালের ভার বহন ক্ষমতা বাড়ে।

৪। সাধারণত গ্রেট বিমের উপর প্রধান দেয়াল নির্মাণ করা হয়।

৫। প্রান্তের প্রধান ভারবাহী দেয়ালের নিচে ওয়াল ফুটিং অবশ্যই দিতে হবে।

৬। প্রধান দেয়াল নির্মাণে গুণগত মানসম্মত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।

৭। প্রথমে দেয়ালের কেন্দ্ররেখা নিরূপণ করতে হবে। এরপর গ্রেট বিমের উপর গ্রাউটিং করে এক স্তর মসলা দেয়ালের প্রন্থ সমান চওড়া করে কুর্নি দ্বারা বিছিয়ে দিতে হবে।

৮। দেয়ালের দুই প্রান্তে ২টি ইট রেখে তাতে এমনভাবে সুতা টান টান করে বাঁধতে হবে যেন তা দেয়ালের এক পাশে থাকে। সুতার গা ঘেঁষে ইট বিছিয়ে প্রথম স্তর ইট গাঁথুনি করতে হবে যাতে দেয়াল সোজা হয়।

৯। ইট সমান মাপের থাকে না তাই দেয়ালের পুরুত্ব কম বেশি হলে প্লাস্টার করার সময় সমান করতে হয়।

১০। প্রতি স্তর গাঁথুনি শেষে পরের স্তর শুরুর আগে এক স্তর মসলা বিছাতে হবে।

১১। সাধারণত মসলা ১: ৬ অনুপাতে হবে এবং এক দিনে ৪ থেকে ৬ ফুটের অধিক উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা যাবে না।

১২। ২৪ ঘণ্টা পর কিউরিং করতে হবে। কিউরিং সময় শেষ হলে প্লাস্টার করা উচিত।

১৩। দুই ইটের মাঝখানের জোড়ে কুর্নি দ্বারা মসলা কালোভাবে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্ট্রেচার বন্ধ ব্যবহার করা উচিত।

 

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

 

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

 

পার্টিশন দেয়াল: ইট, কাঠ, গ্লাস বা অনুরূপ দ্রব্যাদি দিয়ে নির্মিত ঘরের কক্ষকে ছোট কক্ষে ভাগ করতে যে অভ্যন্তরীণ দেয়াল তৈরি করা হয় তাই পার্টিশন ওয়াল। এটি ভার বহনকারী বা অভার বহনকারী দু’রকমের হতে পারে। নির্মাণ উপকরণ অনুযায়ী পার্টিশন ওয়াল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। নিচে কয়েকটি পার্টিশন ওয়াল নির্মাণ কৌশল বর্ণনা করা হলো। যথা-

ক. প্লেইন ব্রিক পার্টিশন ওয়াল: স্ট্রেচার বন্ড ব্যবহার করে প্রধান দেয়ালের বর্ণিত কৌশল ৬ থেকে ১৩ অনুসরণ করে এ ধরনের ওয়াল নির্মাণ করা হয়। দেয়ালের পুরুত্ব সাধারণত ১০ সে.মি. এবং উভয় পাশে প্লাস্টার থাকে।

খ. রি-ইনফোসড্ ব্রিক ফাউন্ডেশন: এতে রি-ইনফোসড্ ম্যাটারিয়াল হিসেবে এক্সপান্ডেড মেটাল (যেমন- স্টিলের পাতলা জাল) ব্যবহৃত হয়। ইট গাঁথুনির সময় প্রতি তৃতীয় কোর্সে এটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে প্লেইন ব্রিক অপেক্ষা এটি বেশি মজবুত হয়।

গ. ব্রিক নগিং পার্টিশন: নগিং পার্টিশন হচ্ছে কাঠের বিমের মধ্যে ইটের গাঁথুনি করা। ১৫ সে.মি x ১৫ সে.মি অথবা ১০ সে. মি x ১০ সে. মি মাপের কাঠের পোস্টকে প্রথমে খাড়াভাবে রেখে এর সাথে ভূমি সমান্তরালে কাঠের নগিং বিমকে ১ মিটার অন্তর অন্তর বসানো হয়। কাঠের ফ্রেমের যে পাশগুলো ইটের সাথে স্পর্শ করে থাকবে সেখানে আলকাতরা লাগাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন, নগিং, স্টার্ড-এর চওড়ার পরিমাণ এবং পার্টিশন ওয়ালের পুরুত্ব সমান থাকে। সব শেষে গাঁথুনির উভয় দিকের পৃষ্ঠকে প্লাস্টার করে দিতে হবে।

প্যারাফেট:

১। ছাদের উপর সীমানার চারপাশের দেয়ালের উপর প্যারাফেট নির্মাণ করা হয়।

২। এর প্রন্থ বা পুরুত্ব সাধারণত ৫ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ২ ফুট ৬ ইঞ্চি বা ৩ ফুট হয়ে থাকে।

৩। ইটের প্যারাফেটের ক্ষেত্রে মূল দেয়ালের মতো বন্ড গাঁথুনি করা হয়।

৪। প্রতি ১০ ফুট অন্তর অন্তর ১০ ইঞ্চি x ১০ ইঞ্চি মাপের পিলার স্থাপন করে প্যারাফেট দেয়ালকে মজবুত করা যায়।

৫। আর, সি. সি ছাদ বানানো শেষ হলে প্যারাফেট দেয়াল নির্মাণ করতে হয়।

৬। বর্তমানে এই উচ্চতার কংক্রিটের, ঢালাই লোহা বা স্টেইনলেস স্টিলের প্যারফেটও তৈরি করা হয়।

লিন্টেল, সানসেড, ড্রপওয়াল, আর্চ (খিলান) এর নির্মাণ কৌশল

লিন্টেল নির্মাণ:

পাথর বা ইটের যে কোনো দেয়াল হোক না কেন প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য লিন্টেল নির্মাণে কাঠ, স্টিল এবং আর. সি. সি. ব্যবহার করতে হয়। শক্তি, স্থায়িত্ব ইত্যাদির বিচারে বর্তমানে

আর. সি. সি লিন্টেলই বেশি ব্যবহৃত হয়।
যদি আর্চ ৪ ফুটের চেয়ে ছোট হয় তাহলে কাঠের লিন্টেল ব্যবহার করা যায়। ৩ ফুটের চেয়ে বেশি হলে স্টিল আই বিম, চ্যানেল বা এঙ্গেল অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। ৬ ফুটের বেশি হলে লিন্টেলের সাপোর্টিং বিয়ারিং প্লেট ব্যবহার করা উচিত।

তবে আর.সি.সি লিন্টেল যে কোনো স্প্যানের জন্য তৈরি করা যায়। এই লিন্টেলের গ্রন্থ দেয়ালের প্রন্থের সমান এবং গভীরতা ৩ গুণ ধরা হয়। তবে লোড বর্ধিত হলে এর গভীরতা বাড়াতে হয়। বন্ড বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহৃত রডের প্রান্তে হুক তৈরি করা হয়। কম স্প্যানের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রি কাস্ট লিন্টেল ব্যবহৃত হয়। অন্য ক্ষেত্রে কাস্ট ইন সিটু ব্যবহৃত হয়।

সানসেড লিন্টেল:

সানসেড বিল্ডিং-এর দরজা-জানালার উপর স্থাপিত হতে পারে অথবা বিল্ডিং-এর চারপাশেও থাকতে পারে। এর প্রধান রি-ইনফোরসমেন্টের এক প্রান্ত লিন্টেলের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে। আর ডিস্ট্রিবিউশনের রি- ইনফোর্সমেন্টগুলো থাকে প্রধান রি-ইনফোর্সমেন্টের নিচে সমকোণে। লিন্টেলের সাথে ফর্ম ওয়ার্ক তৈরি করে সানসেড ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। কংক্রিট জমাট বেঁধে গেলে পর্যাপ্ত কিউরিং করতে হয়।

আর্চ বা খিলানের নির্মাণ কৌশল

যে কোনো ধরনের আর্চ নির্মাণের সমস্ত কাজকে তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা যায়। যথা-

১। সেন্টারিং বা ফর্ম ওয়ার্ক নির্মাণ ও স্থাপন

২। আর্চ নির্মাণ

৩। সেন্টারিং বা ফর্ম ওয়ার্ক অপসারণ।

১। সেন্টারিং বা ফর্ম ওয়ার্ক নির্মাণ ও স্থাপন সেন্টারিং হলো এক ধরনের অস্থায়ী কাঠামো যা ব্যবহার করে ইট, পাথর এবং কংক্রিটের আর্চ নির্মাণ করা যায়। আর্চের গাঁথুনি বা ঢালাই কাজ শক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেন্টারিং আর্চকে ধরে রাখে। সেন্টারিং তৈরি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি প্রয়োজনমতো শক্ত ও মজবুত হয় এবং কাজ শেষে সহজে খোলার ব্যবস্থা থাকে। সেন্টারিং কাঠ বা ধাতু নির্মিত হতে পারে। সফিটের প্রন্থ ১০ সে.মি. পর্যন্ত হলে চিত্রের ন্যায় সেন্টারিং তৈরি করা যায়।

এ ক্ষেত্রে দুটি খুঁটির উপর সফিটের জন্য যে কাঠের টুকরা বসানো থাকে তাকে গোলাই কাঠ বা টার্ন পিস (Turn Piece) বলে। খুঁটি দুটিকে দৃঢ় বা ঢিলা করার জন্য কাঠের খিল (Wedge) ব্যবহার করা হয়। ১০ সে. মি. অধিক চওড়া সফিটের জন্য চিত্রের ন্যায় সেন্টারিং তৈরি করতে হয়।

এক্ষেত্রে টার্ন পিসের ন্যায় দুইটি রিব (Ribs) কে খুঁটির উপর বসানো হয়। খুঁটির উপর খিল বসিয়ে এর উপর সাপোর্ট দেওয়ার জন্য যে কাঠের টুকরা বসানো হয় তাকে বিয়ারার (Bearer) বলে। চওড়া সফিট এবং বর্ধিত স্প্যানের ক্ষেত্রে রিবগুলোকে ধরে রাখার জন্য স্ট্রাট (Strut) এবং ব্রেস (Brace) ব্যবহার করা হয়। আবার রিবগুলোর আড়াআড়ি কতগুলো ব্যাটনকে পেরেক দ্বারা আটকানো হয়।

 

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

 

২. আর্চ নির্মাণ: সেন্টারিং নির্মাণ ও স্থাপনার কাজ শেষ হওয়ার পরে আর্চ নির্মাণের জন্য প্রথমে স্কিউব্যাক (Skewbacks) তৈরি করে যথাস্থানে বসাতে হবে। দুদিকের স্কিউব্যাক থেকে শুরু করে ভসৌর (Voussoirs) গুলোকে বসিয়ে যেতে হবে। আর ভসৌরগুলোর মাঝখানে বসাতে হবে কিস্টোন (Key stone) নির্মাণকাজ শেষ হলে ভসৌরগুলো পরস্পর চেপে বসতে পারে সে কারণে কাঠের খিলকে ২-৩ মি. মি. নিচে নামিয়ে দিতে হবে।

৩. সেন্টারিং বা ফর্ম ওয়ার্ক অপসারণ: সদ্য নির্মিত আর্চ জমাট বেঁধে পুরোপুরি শক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেন্টারিং খোলা যাবে না। খোলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে আর্চ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বিম, কলাম ও সিঁড়িঘরের নির্মাণ কৌশল

বিম নির্মাণ কৌশল:

উপকরণ এবং আকৃতির উপর ভিত্তি করে বিম বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। এখানে সাধারণভাবে স্থাপিত একটি আয়তাকার বিমের নির্মাণ কৌশল বর্ণনা দেওয়া হলো:

ক. ফর্ম ওয়ার্ক তৈরি: স্ট্রাকচারাল ড্রইং পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত মাপ ও তথ্য অনুসারে ফর্ম ওয়ার্ক যথেষ্ট মজবুত ও সমতল হতে হবে।

খ. রি-ইনফোর্সমেন্ট স্থাপন স্ট্রাকচারাল ড্রইং ও প্রদত্ত মাপমতো রড কেটে সোজা করতে হবে এবং হুক ক্রাংক ও স্টিরাপ তৈরি করতে হবে। অতঃপর সেগুলোকে ড্রইং অনুযায়ী জি. আই, তার দিয়ে বেঁধে ফর্ম ওয়ার্কের ভিতর স্থাপন করতে হবে। রডের তলায়, উপরে ও পাশে বক বসিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন সাটারিং বা ফর্ম ওয়ার্ক ঠিক থাকে।

গ. কংক্রিট ঢালাই: রড স্থাপন যথাযথ হলো কি না পরীক্ষা করে দেখার পর ঢালাই কাজ শুরু করা যাবে। সঠিক অনুপাতে কংক্রিট ঢালাই করতে হবে। পানি-সিমেন্ট অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। ঢালাই কাজ বিমের যে কোনো এক প্রান্ত থেকে শুরু করতে হবে। নতুন কংক্রিটের মধ্যে ভাইব্রেটর দিয়ে বা ১৬ মি.মি. ব্যাসের রড দিয়ে কম্পাকশন করতে হবে। বিমের গভীরতার ছাদের পুরুত্ব পরিমাণ ঢালাই দেওয়া যাবে না যা পরে ছাদ ঢালাইয়ের সময় একত্রে ঢালাই করতে হবে। অনেক সময় বিম এবং ছাদ একত্রে মনোলিথিকভাবেও ঢালাই দেওয়া হয়।

ঘ. কিউরিং: যে কোনো কংক্রিটের কাজে কিউরিং অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিকভাবে ৬-২৪ ঘণ্টা পর থেকে কমপক্ষে ৭ দিন কিউরিং করতে হবে। তবে ২৮ দিন কিউরিং করা সবচেয়ে ভালো।

ঙ. ফর্ম ওয়ার্ক অপসারণ: ফর্ম ওয়ার্ককে সাবধানতার সাথে সরাতে হবে যাতে বিম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কংক্রিট ঢালাইয়ের তিন দিন পর বিমের দুইদিকের তক্তা খুলে ফেলা যাবে। আর ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে সমস্ত ফর্ম ওয়ার্ক খুলে ফেলা যাবে।

কলামের নির্মাণ কৌশল:

গঠন পদ্ধতি, আকার ও দৈর্ঘ্য অনুসারে কলাম বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। মূলত ফুটিং-এর সাথে সাথে কলামের রডগুলো স্থাপন করতে হয়। একটি কলাম নির্মাণের সময় যে সমস্ত কৌশল অবলম্বন করতে হয় তা নিম্নরূপ:

১। কাজ শুরু করার আগে সম্পূর্ণ স্ট্রাকচারাল ড্রইং-এর কলাম শিডিউল দেখে নিতে হবে।

২। ফুটিংকে যথাযথভাবে নির্মাণ করতে হবে।

৩। ভিত্তিতলে রড স্থাপনকালে এর নিচে ব্লক দিয়ে এর ক্লিয়ার কাজার দিতে হবে।

৪। ভিত্তিকলের ফুটিং-এয় হন্ডের সাথে কলাফের জন উত্তমরূপে বাঁধতে হবে।

৫। রড বাঁধাই শেষ হলে সাটারিং তৈরি করতে হবে।

৬। প্রথমে ৬ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট ঢালাই দিয়ে কলাম কিক অফ তৈয়ি করতে হবে যাতে কলাম সোজা হয়।

৭। কলামের পুরোটা একবারে সাটারিং না করে প্রতিবারে ১.৫ থেকে ২ মিটায় পর্বক করা উচিত।

৮। ডিজাইনে নিদের্শিত অনুপাতে (যেমন- ১:১.৫:৩ বা ১: ২: ৪) কংক্রিট ঢালাই করে ৩ দিন পর সাটারিং খুলে কিউরিং করতে হবে।

৯। প্রথম দফা ঢালাইয়ের লত্তত ৭ দিন পর দ্বিতীয় দফা চালাই করতে হবে।

 

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

 

একটি সিঁড়িম্বরের নির্মাণ কৌশল

বিভিন্ন উপকরণ অনুসারে সিঁড়ি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এখানে বর্তমানে আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত আর. সি. সি রূপ লেগড (এক ফ্লাইট হতে অন্য ফ্লাইটে যেতে বিপরীতমুখী দিক পরিবর্তন করতে হয়)। মিয়ে সিঁড়িঘরের নির্মাণ কৌশল বর্ণনা দেওয়া হলো:

১. অন্যান্য আর, সি, সি অবকাঠামোর মতো সিল্কি নির্মাণের প্রধান ধাপগুলো হলো: ক. ফর্ম ওয়ার্ক বা সাটারিং তৈরি করা খ. রড স্থাপন করা গ. কংক্রিট মিশ্রণ এবং ঢালাই করা ঘ. কিউরিং করা ড. ফর্ম ওয়ার্ক খুলে খেওয়া।

২। দুটো ল্যান্ডিং এবং এর মধ্যে একটি ফ্লাইটের জন্য একত্রে সাটারিং বা মাচা তৈরি করতে হবে।

৩। মাচা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সিঁড়ির ক্লাবের ঢাল ৪০° থেকে ৬০° কোণে থাকে।

৪। ল্যান্ডিং এবং ফ্লাইটের দুই পাশে তক্তা দিয়ে এবং তক্তার ফাঁক জি. আই. শিট দিয়ে বন্ধ করতে হবে।

৫। সাধারণত ইমারতের কলাম, বিম এবং ছাদ ঢালাইয়ের পর সিঁড়ি ঢালাই দেওয়া হয়।

৬। সিঁড়ির প্রথম তলার ল্যান্ডিং সাধারণত প্রথম তলার দুটি কলামের উপর ভর দেওয়া হয়। এছাড়া বিপরীত দিকে আরও দুটো কলামের উপর সিঁড়ি দিয়ে উঠার পর প্রথম ল্যান্ডিং ভর দেওয়া হয়। মূলত সিঁড়িসহ এই চার কলাম বেষ্টিত ঘরই সিঁড়িঘর।

৭। স্ট্রাকচারাল ড্রইং অনুযায়ী রড কেটে প্রথমে ফ্লাইটের দৈর্ঘ্য বরাবর এবং পরে ডিস্ট্রিবিউশন রডগুলোকে আড়াআড়িভাবে মাচার উপর স্থাপন করা হয়।

৮। ক্লিয়ার কাতার দেওয়ার জন্য রডের নিচে বক বসাতে হবে।

৯। নির্দিষ্ট অনুপাতে গুণগত মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করে কংক্রিট মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।

১০। ঢালাইয়ের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাইব্রেটর ব্যবহার করে কম্পাকশন করতে হবে।

১১। ঢালাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর হতে ২১-২৮ দিন পর্যন্ত কিউরিং করে সাটারিং খুলতে হবে।

 

সিভিল কন্সট্রাকশন স্ট্রাকচার

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment