কাঠ ও টিম্বার | অধ্যায়-১ | বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – কাঠ ও টিম্বার যা অধ্যায়-১ এর বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২ এ অন্তভুক্ত।  শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষা ম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

কাঠ ও টিম্বার

কাঠ ও টিম্বার

যুগ সুপ ধরে মানুষ কাঠকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তাছাড়া ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি, অস্ত্রশস্ত্র প্রভৃতি তৈরি করার কাজে, জিনিসপত্র প্যাকেটজাতকরণে, কাগজ শিল্পে কাঠ অনেককাল আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শিল্পকলার ক্ষেত্রে কাঠ একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।

 

কাঠ ও টিম্বার

 

কাঠ ও টিম্বার

 

কাঠ বা কাষ্ঠ একটি জৈবপদার্থ। প্রধানত গাছের মাধ্যমিক (Secondary ) জাইলেম (Xylem) থেকে উৎপন্ন হয়। কাঠ মূলত পাছের অভ্যন্তরীণ অংশ বা সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও লিগনিন দিয়ে গঠিত। জীবন্ত গাছের এই অংশটি মাটি থেকে গাছের পাতা ও অন্যান্য বর্ধনশীল অংশে পানি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি বহন করে সরবরাহ করে।

কাঠে লিগনিনের প্রাচুর্য থাকায় কাঠ গাছকে দৃঢ়তা প্রদান করে। যার ফলে সহজেই গাছের বৃদ্ধি ঘটতে পারে এবং গাছ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে সরাসরি গাছ থেকে পাওয়া কাঠ ছাড়াও একই রকম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্যান্য বৃক্ষজাত বন্ধু এবং কাঠ, কাঠের চিলতে বা আঁশ থেকে প্রযুক্তিগত উপায়ে পাওয়া বন্ধুকেও কাঠ বলা হয়।

আমরা বৃক্ষ হতে টিম্বার পাই। সাধারণত প্রকৌশল কাজে ব্যবহার উপযোগী কমপক্ষে ৬০ সেন্টিমিটার বেড়ের বৃদ্ধেরা কাও হতে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট আকার-আকৃতির কাঠকে টিম্বার বলে। টিম্বার বহি বর্ধিষ্ণু গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। গাছের প্রায় সকল অংশেই অল্পবিস্তর কাঠ থাকে, কিন্তু সকল অংশের কাঠই কাজের উপযোগী হয় না। যে কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, যানবাহন, সেতু ইত্যাদি তৈরি করা হয়, তাকে টিয়ার বলে।

 

কাঠ ও টিম্বার

 

কাঠ ও টিম্বার-এর মধ্যে পার্থক্য

কাঠ

  • সরাসরি গাছ থেকে পাওয়া কাঠ ছাড়াও একই রকম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্যান্য বৃক্ষজাত বন্ধু কাঠ।
  • কাঠের চিলতে বা আঁশ থেকে প্রযুক্তিগত উপায়ে পাওয়া বন্ধুকেও কাঠ বলা হয়।
  • গাছের সকল অংশে কাঠ থাকে, কিন্তু সকল অংশের কাঠ কাজের উপযোগী হয় না।
  • গাছের সকল অংশে কাঠ থাকে, যা সব সময় কাঠ নামেই পরিচিত।

টিম্বার

  • প্রকৌশল কাজের উপযোগী কাঠই টিম্বার।
  • সাধারণত প্রকৌশল কাজে ব্যবহার উপযোগী কমপক্ষে ৬০ সেন্টিমিটার বেড়ের বৃদ্ধের কাজ হफে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট আকার-আকৃতির কাঠকে টিম্বার বলে।
  • যে কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, যানবাহন, সেতু ইত্যাদি তৈরি করা হয়, তাকে টিম্বার বলে।
  • টিম্বার যখন জীবন্ত গাছের মধ্যে থাকে তখন তাকে Standing timber বলে। যখন গাছ | থেকে কাটা হয় তখন তাকে Rough timber বলে। Rough timber থেকে কার্পেন্টার যখন | কাজের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট মাপের কাঠ কাটে তখন তাকে Converted timber বলে।

ভালো কাঠের গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য

যে কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বানবাহন, সেতু ইত্যাদি তৈরি করা হয় সে কাঠই ভালো কাঠ। ভালো কাঠের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :

  • ভালো কাঠ সম্পূর্ণ সার হতে হবে।
  • কাঠ কাটলে কোনোরূপ দুর্গন্ধ হবে না।
  • ভালো কাঠ সিঁট ফাটা ইত্যাদি দোষযুক্ত হবে।
  • ভালো কাঠ হল কাঠ হতে সংগৃহীত হতে হবে।
  • ভালো কাঠে আঘাত করলে সুস্পষ্ট আওয়াজ হবে
  • ভালো কাঠ ওজনে ভারী হবে।
  • কাঠের আঁশগুলো সরল, মসৃণ ও সুদৃশ্য হবে।
  • ভালো কাঠ দিয়ে কাজ করা সুবিধাজনক এবং পৃষ্ঠদেশ ভালোভাবে মসৃণ হবে।
  • ব্যবহারের পর আকার, আকৃতি ও রং-এর তারতম্য ঘটবে না।
  • বার্ষিক বলয়গুলো কম প্রশস্ত ও কাছাকাছি হবে।
  • যতটুকু সম্ভব অগ্নিরোধক হবে।
  • প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দোষমুক্ত হবে।
  • কালো কাঠের উত্তম কার্যকারিতা থাকবে।
  • কাঠের সর্বত্রই রংয়ের সম্যতা থাকবে।

টিম্বারের দোষ-ত্রুটি

কাঠের দোষ-ত্রুটিসমূহ নিম্নরুপ –

ক) পিট।

খ) ফাটল।

গ) উল্টা বা মোচড়ানো আঁশ।

ঘ) বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি।

 

কাঠ ও টিম্বার

 

কাঠ ও টিম্বার

 

কাঠের খুঁজ প্রধানত দুই প্রকার। যথা –

১. প্রাকৃতিক খুঁত।

২. রূপান্তরিত বা ব্যবহারজনিত খুঁত।

প্রাকৃতিক খুঁত আবার নিম্নরূপ –

KNOTS পিট একটি সাধারন খুঁত বিশেষ। কাঠে খুঁত থাকলে সে কাঠ রানদা (প্লেন) করা বা চেরাই করা কষ্টকর। গিটের স্থানে গজাল, পেরেক ইত্যাদি বসালে কাঠ ফেটে যেতে পারে।

কার্ট বা ফাটল : চিড়, আঘাত বা ঝড়ো হাওয়ার কারণে কাঠের আঁশগুচ্ছ পৃথক হয়ে পেলে তাকে ফাটল বলে। ফাটল বিভিন্ন প্রকার। যেমন- তারকা আঘাত বা ঝড়ো হাওয়ার কারণে কাঠের আঁশগুচ্ছ পৃথক হয়ে পেলে তাকে ফাটল বলে । ফাটল বিভিন্ন প্রকার। যেমন- তারকা ফাটল, পুরো ফাটল, ফাগ ফাটল, আঙ্গুরি ফাটল, ব্যাসার্ধীয় ফাটল ইত্যাদি।

ত্বক ফেটিক বা কাঠে পোদ : যদি গাছের শাখা অসম্পূর্ণভাবে কেটে নেয়া হয় তাহলে শাখা অবশেষের উপর ক্ষতিকর স্তর সতি হয়ে ঐ স্থান স্ফীত হয়ে ওঠে। একে ডুক ফোটক বা কাঠে গোদ বলে।

উল্টানো আঁশ বা মোচড় : পাছের বৃদ্ধি বা পরিপক্বতা লাভকালে অধিক চাপজনিত কারণে যে খুঁজ দেখা দেয় তাকে উল্টানো আঁশ বলে। এ জুটির ফলে চেরাইকাশে লম্বালম্বি আঁশ কাটা পড়ে এবং কম চাপে কাঠ ভেঙে যেতে পারে।

পাটকিলে বর্ণ ধারণ : বিন্যাসের প্রাথমিক পর্যায়ে টিম্বারের মজ্জার চারপার্শ্বে ফাটল সৃষ্টি হয়ে কাঠকে বিবর্ণ করে এবং হলুদ বা লাল দাগ দেখা দেয় একে পাটকিলে বর্ণ ধারণ বলে। সাধারণত মহার আশপাশে এ বর্ণ ধারণ দেখা দেয়। এ থেকে বোঝা যায় গাছের পচন শুরু হতে যাচ্ছে।

রূপান্তর বা ব্যবহার জনি কাঠ সহকরণ ও ব্যবহারজনিত কারণে নিজের খুঁতগুলো দেখা যায়।

ভোবান : গাছের বৃদ্ধিকালে অসম সংকোচনের ফলে ভক্তার সমতল পৃষ্ঠদেশে যে বিকৃতির সৃষ্টি হয় তাকে তোবড়ান বলে।

ধনুকের মতো ভোবান: তার পৃষ্ঠদেশ লম্বালম্বিভাবে বেঁকে গেলে অনেকটা ধনুকের মতো দেখায় এবং একে ধনুকাকৃতির তোরস্থান বলে। তাকে উল্টিয়ে রাখলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

ষষ্ঠি আকৃতির ডোবড়ান : তার প্রাতদেশ বেঁকে গেলে অনেকটা বাঁকা লাঠির মতো দেখায় একে ষষ্টি আকৃতির ডোবড়ান বলে। এক্ষেত্রে যে অবস্থায় কাঠ ঋতুসহকরণ করা হয়েছে তার উল্টা অবস্থায় রাখলে এ তোবড়ানোর পরিমাণ কমে যায়।

কাপ আকৃতির কোবড়ান : এ আড়াআড়ি বা গ্রন্থের দিকে বেঁকে গেলে একে কাপ আকৃতির তোবড়ান বলে। এক্ষেত্রে তা সংকোচনের দিকে উল্টিয়ে নিচের দিকে রেখে উপরে স্বাভাবিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের তোবড়ানোর পরিমান হ্রাস করা যায়।

মোচড় খাওয়া ভাষান : এ ধরনের তোবড়ানোর ফলে কাঠ খন্ড বা ভক্তার চারকোণ একই তলে না থেকে ভিন্ন ভিন্ন তলে থাকে। এ ধরনের জুটির জন্য কাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী হরে পড়ে।

চিড় ধরা বা পন্ড খণ্ড হওয়া : শুরু ভক্তাকে সঠিকভাবে ঋতুসহকরণ না করলে তার বাহিরের নিক ভিতরের দিকের চেয়ে আগে শুকায়। ফলে অসম সংকোচনের দরুণ ভক্তার চিড় ধরে এবং প্রস্থচ্ছেদে আঁশের সমাজরানে ফেটে যায়। এতে কাঠের কার্যোপযোগিতা কমে যায় এবং বাণিজ্যিক মূল্য হ্রাস পায়।

কাঠের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ (pests of wood): কতিপয় কাঠ ছিদ্রকারী পোকা সদ্য কাটা গাছ আক্রমণ করে এবং প্রায়ই কাঠের গভীর পর্যন্ত ছিল বানায়। এ পোকা কাঠভুক নয়, তবে এদেরই তৈরি ছিদ্রের মধ্যে অন্যানো এন্তোসিয়া নামক ছত্রাক এদের খাদ্য।

 

কাঠ ও টিম্বার

 

কাঠের পোকা : ঘুণপোকা শুল্ক কাঠ আক্রমণ করে। এগুলো শুধু শ্বেতসারপ্রধান কোমল কাঠ ছিদ্র করে এবং কাঠ ময়দার মতো মিহি গুঁড়োয় পরিণত হয়। Hoplocerambyx spinicornish Batocera নামের লম্বা এন্টিনা বিশিষ্ট কতিপয় বিটল কাঠের ভিতরে ছিদ্র করে এবং এ সুড়ঙ্গগুলো সাধারণত কাঠের গুঁড়োয় ভরে থাকে।

পোকা বাসা তৈরির জন্য কাঠে সুড়ঙ্গ বানায়। বেশ কিছু প্রজাতির উইপোকা মাটিতে ফেলে রাখা, গুদামজাত অথবা ব্যবহৃত হচ্ছে এমন কাঠ আক্রমণ করে প্রচুর ক্ষতি করে। কাঠে পোকার ক্ষতিসাধন থেকে প্রতিরোধের উপায় কাঠে সংরক্ষণমূলক ঔষুধ প্রয়োগ, কীটনাশক ছিটানো, পালিশ লাগিয়ে ভৌত বাধা সৃষ্টি, কাঠ দ্রুত কেটে নিয়ে শুকানো, পানিতে জাগ দেয়া, কীটপ্রতিরোধক কাঠ ব্যবহার ইত্যাদি।

প্রতিষেধক হিসেবে বিষাক্ত গ্যাস, ধোঁয়া প্রয়োগ, চুল্লিতে তাপের সাহায্যে ও ফ্রিজে শৈত্যের সাহায্যে নির্বীজন ইত্যাদিও যথেষ্ট কার্যকর।

কাঠের প্রিজারভেশন বা প্রক্রিয়াকরণের উপকারিতা নিম্নরূপ-

i. কাঠ পোকায় আক্রান্ত হয় না।

ii. পানিতে সহজে নষ্ট হয় না।

iii. কাঠের দীর্ঘ স্থায়িত্বতা বৃদ্ধি পায়।

iv. বৈদ্যুতিক খুঁটি, রেলওয়ের স্লিপার ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা যায়।

সিজনিং-এর সংজ্ঞা ও পদ্ধতি

সদ্য চেরাই করা বা ভিজা কাঠ থেকে পানিকে কমিয়ে আবহাওয়ার সমপরিমাণ করাকেই কাঠের সিজনিং বা মৌসুমিকরণ বলে। ভেজা কাঠে ৪০% থেকে ৬০% পানি থাকে। এ পানিকে রৌদ্রে শুকিয়ে বা সিজনিং প্লান্টের সাহায্যে কমিয়ে ৮% ১৪% এ নিয়ে আসাকে কাঠের সিজনিং বলে।

কাঠ যখন কাটা হয় তখন তাতে প্রচুর রস বিদ্যমান থাকে। রসসহ কাঠ কাজে লাগালে পরবর্তীতে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে কাঠ সংকুচিত হয় বা সম্প্রসারিত হয়। তাই কাঠ ব্যবহারের পূর্বে তা থেকে পলরস বের করে নিতে হয়। আর্দ্রতা কাঠের অভ্যন্তরে মুক্ত পানি হিসেবে অথবা কোষ প্রাচীরে রাসায়নিকভাবে আবদ্ধ পানি হিসেবে থাকে।

আর্দ্রতার পরিমাণ ৩০ শতাংশের বেশি হলে সে কাঠকে সাধারণত কাঁচা কাঠ বলা হয়। কাঠের কোষ এবং কোষ প্রাচীরে অবস্থিত পলরস ও জলীয় কণা কাঠের সিজনিং (ঋতুসহকরণ প্রক্রিয়ায় অপসারন করা হয়।

কাঠের সিজনিং এর উপকারিতা বা সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ :

ক) কাঠকে সাম্য আর্দ্রতায় আনয়ন করে। আয়ুষ্কাল বা স্থায়িতৃতা বৃদ্ধি, সহজে ব্যবহার ও রূপান্তর করা যায়।

খ) ভালো মানের পালিশ করা ও রংকরণের উপযোগী হয়।

গ) আর্দ্রতা হ্রাসকরণ ও স্যাপ শুকিয়ে সংরক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী হয়।

ঘ) ছত্রাকের আক্রমণ হতে রক্ষা করা।

ঙ) স্থানান্তর ও উত্তোলন সুবিধার জন্য ওজন হ্রাস করা।

চ) সংকোচন ও প্রসারণ হওয়ার সম্ভাবনা দূর করা।

ছ) কাঠের শক্তি বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ আর্দ্রতা ১০% হতে ১২% হলে কাঠের শক্তি বিবশ এবং ৫% হলে তিন গুণ বৃদ্ধি পায়।

কাঠ সংরক্ষণ (Wood preservation) : কাঠ ব্যবহারের পূর্বে বা পরে বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ বা পঁচন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাঠকে বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গে আক্রমণের কারণে এবং পঁচনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাকে কাঠ সংরক্ষণ বলে ।

সংরক্ষনকে প্রক্রিয়াকৃত কাঠের জিনিসপত্রের আয়ু ব্যবহৃত সংরক্ষকের কাঠের গভীরে প্রবেশ্যতা, রক্ষণশক্তি ও আটকে থাকার ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। তবে এগুলি সবই নির্ভর করে সংরক্ষণ পদ্ধতির ওপর। বাংলাদেশে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ধৌতকরণ, প্রলেপন, ছিটানো ও তরলে ডুবানো, ভিজানো, গরম-ঠান্ডা অবগাহ, ব্যাপনক্রিয়া ও চাপপ্রয়োগ।

গোটা কোষের উপর চাপপ্রয়োগ সংরক্ষকের ভেদ্যতা বা রক্ষণক্ষমতার দিক থেকে সর্বোৎকৃষ্ট এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে কাঠের অভ্যন্তর প্রথমে বায়ুশূন্য করে সংরক্ষক দ্রবণে চাপ দিয়ে তা কাঠের শূন্য কোষগুলোতে ভরাট করা হয়। বাংলাদেশে ভূমি ও পানির সংস্পর্শে থাকা কাঠসামগ্রী সংরক্ষণের জন্য CCA C এবং সারকাঠ ও বাঁশসহ অভ্যন্তরীণ সামগ্রীর জন্য CCB সংবন্ধক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়।

রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে কাঠ, কাঠজাত দ্রব্যাদি ও আসবাবের কাঠের ক্ষয়, পঁচন বা ক্ষতি রোধ করা যায়। কাঠ সাধারণত ছত্রাক (সাদা পঁচন, বাদামি পঁচন ও কোমল পঁচন ছত্রাক), কীটপতঙ্গ (উইপোকা, বিটল, ঘুণপোকা), সামুদ্রিক এক ধরনের ঝিনুক এবং অন্যান্য নানা প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমন কোনো একক সংরক্ষক নেই যা সংরক্ষণের সবকটি চাহিদা মেটাতে পারে। কাঠসংরক্ষক হতে পারে তৈলজ, তরল বস্তু অথবা একটি মিশ্রণ।

বিভিন্ন পত্রিয়ায় কাঠ সংরক্ষণ করা যায়। সংরক্ষণের পূর্বে কাঠ অবশ্যই ঋতুসহকরণ করে নিতে হবে। সংরক্ষণের কয়েকটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো :

রং বা বার্নিশ প্রয়োগ : কাঠের তৈরি দরজা-জানালা বা কম দামি আসবাবপত্রে তিসির তেলে তৈরি বিভিন্ন প্রকার রং এবং মূল্যবান আসবাবপত্রে স্পিরিট দিয়ে তৈরি বার্নিশ প্রয়োগে সংরক্ষণ করা যায়। রং ও বার্নিশ ব্যবহারের কারণে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পোকামাকড়ের হাত থেকেও রক্ষা করা যায়।

আলকাতরার প্রলেপ : গ্রামগঞ্জে এর ব্যবহার বেশি। আলকাতরা দামে সস্তা এবং ব্যবহারেও সহজ। ব্রাশ দিয়ে দুই বা চার প্রলেপ আলকাতরা প্রয়োগ করলে তা সহজেই একটি আস্তরণ সৃষ্টি করে। সাধারনত ঘরের বেড়া, কাঠের খুঁটি, ঘরের চালের রুরা ও নৌকা ইত্যাদিতে আলকাতরা ব্যবহার করা হয়।

ক্রিয়োজোট তেলেসিক্তকরণ : ক্রিয়োজোট তেল ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত এবং কীটপতঙ্গনাশক। এটি সহজেই পচন রোধ করতে পারে। কাঠের গায়ে ব্রাশের সাহায্যে এ তেল প্রয়োগ করলে বা গরম ভেলে কাঠ সিদ্ধ করে নিলে তা পোকামাকড়ের আক্রমণ ও পচনরোধে যথেষ্ট সহায়ক হয়। ক্রিয়োজোট তেল প্রয়োগের ফলে কাঠ খুবই দীর্ঘস্থায়ী হয়।

জলজ অজৈব সংরক্ষক হিসেবে ক্রোমিয়ামযুক্ত তাম্র-আর্সেনেট টাইপ সি (CCA-C) বাংলাদেশে কাঠের বৈদ্যুতিক খাম্বা, নোঙর- বাঁধার খাম্বা ও কড়িকাঠে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ক্রোমিয়ামযুক্ত তাম্র বোরন (CCB) আরেকটি সংরক্ষক যা বৈদ্যুতিক মিটারবোর্ড, কাঠের প্যাকেজিং, দরজা, জানালা, আসবাবপত্র ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়। তৃতীয়টি হলো সংরক্ষক রং যা তৈল ও পানিযুক্ত এক ধরনের মিশ্রণ, যেমন ক্রিয়োজোটযুক্ত বোরন (HCR)।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অনুশীলনী – ১

অতি সংক্ষিপ্ত :

১. কাঠ কী?

২. টিম্বার কী?

৪. কাঠ কোথা থেকে উৎপন্ন হয়।

৫. কাঠ কী নিয়ে গঠিত?

৬. টিম্বার কোথা থেকে পাওয়া যায়?

৭. টিম্বারের খুঁত কত প্রকার?

৮. পলরস কাকে বলে?

৯. কাঠের সিজনিং কাকে বলে?

১০. কাঠের সংরক্ষণ কাকে বলে?

১১. ক্রিয়োজোট ও পেন্টাক্লোরোফেনল (PCP) কী ধরনের কাঠ সংরক্ষক?

সংক্ষিপ্ত:

১. কাঠের গঠন ব্যাখ্যা কর।

২. টিম্বারের খুঁত কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ দাও।

৩. কাঠ ব্যবহারের আগে পলরস বের করে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।

৪. কাঠের সিজনিং ব্যাখ্যা কর।

৫. কাঠের সিজনিং কত প্রকার ও কী কী?

৬. প্রাকৃতিক সিজনিং কত প্রকার ও কী কী?

৭. কৃত্রিম সিজনিং কত উপায়ে করা যায় এবং কী কী?

৮. কাঠ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?

৯. কয়েকটি কাঠ সংরক্ষক এর নাম লেখ।

১০. কাঠ সংরক্ষক হিসেবে ক্রোমিয়ামযুক্ত তায় বোরন (CCB) কী ভূমিকা পালন করতে পারে?

১১. সংরক্ষকের প্রক্রিয়াকৃত কাঠের জিনিসপত্রের আয়ু কিসের উপর নির্ভর করে ব্যাখ্যা কর।

১২. বাংলাদেশে কাঠ সংরক্ষণে কী ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়?

১৩. বাংলাদেশে কাঠ সিজনিং-এ যেসব পদ্ধতি পালন করা হয় তাদের তালিকা তৈরি কর।

রচনামূলক

১. একটি গাছে কাঠের ভূমিকা আলোচনা কর।

২. কাঠ ও টিম্বারের পার্থক্য ছকের মাধ্যমে দেখাও।

৩. ভালো কাঠের গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

৪. কাঠের সিজনিং পদ্ধতিগুলো বর্ণনা কর।

আরও দেখুন :

Leave a Comment