আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – কালার ওয়াশিং যা অধ্যায়-১৪ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ শিক্ষাবর্ষ হতে সকলস্তরের পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আরও আগ্রহী, কৌতূহলী ও মনোযোগী করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল ও এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের পাঠ্যপুস্তকসমূহ চার রঙে উন্নীত করে আকর্ষণীয়, টেকসই ও বিনামূল্যে বিতরণ করার মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে; যা একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক রচিত ভোকেশনাল স্তরের ট্রেড পাঠ্যপুস্তকসমূহ সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। উন্নতমানের কাগজ ও চার রঙের প্রচ্ছদ ব্যবহার করে পাঠ্যপুস্তকটি প্রকাশ করা হলো।
Table of Contents
কালার ওয়াশিং
কালার ওয়াশিং বা রঙিন চুনকাম
ইমারতের রুমের ভিতরে চুনকাস, ডিস্টেম্পার যা প্রাষ্টিক পেইন্ট ইভ্যাদি রংয়ের প্রলেপ দেওয়া হয়। এ জাতীয় রং প্রয়োগের ফলে ঘর আলোকিত হয় এবং সুন্দর দেখায়। দালানের বাইরের দিকে চুনের দ্রবণের সাথে রঙের উপাদান সিশিয়ে যে প্রলেপ দেওয়া হয় তাকে কালার ওয়াশিং (Colour washing) বলে। আবহাওয়া ও ধুলাবালির কারণে সাধারণ চুনকাম যত তাড়াতাড়ি বিবর্ণ হয় কালার ওয়াশিং তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না। আমাদের দেশে সাধারণত চুনের দ্রবণের সাথে হালকা হলুদ রং (Buff colour) মিশিয়ে কালার ওয়াশিংই বেশি করা হয়।

কালার ওয়াশিং এর মালামালের তালিকা
১। ফ্যাট লাইম।
২। পৃষ্ঠতল প্রস্তুতির জন্য লোহার ব্রাশ।
৩। পৃষ্ঠতল প্রস্তুতির জন্য শিরিষ কাগজ।
৪। অসমান দেওয়াল বা দেওয়ালে কোন ছিদ্র বন্ধের জন্য আস্তর বা সিলার।
৫। পিগমেন্ট (ইয়োলো আর্থ, রেড ওচার, ব্লু ভিট্রিওল)। (৭% অনুপাতে)
৬। পানি (৫ লিটার প্রতি ১ কেজি চুনের জন্য)
৭। গাম (১কেজি প্রতি ১০ কেজি লাইম বা চুনের জন্য) অথবা ভাত (চাল)
৮। অল্প লবণ (চুনের দ্রুত বিক্রিয়ার জন্য)
৯। আল্টা মেরিন ব্লু (৩ গ্রাম প্রতি কেজি চুনের সাথে)
কালার ওয়াশিং এর পৃষ্ঠদেশ প্রস্তুত কৌশল
যে দেয়ালে রং লাগাতে হবে, সে দেয়ালের উপরিভাগ প্রথমে ধূলিকণা ও ময়লা আস্তরণ মুক্ত করতে হবে। পুরাতন দেয়াল যেখানে আগে কালার ওয়াশিং বা হোয়াইট ওয়াশিং করা আছে তা ঘষে মেজে পুরাতন রং তুলে পরিষ্কার ও মসৃণ করতে হবে। ছত্রাক, নোনা বা শেওলা লোহার ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলতে হবে।
প্রয়োজনে এমোনিক্যাল কপার সলিউশন (১৫ গ্রাম কপার কার্বনেট যা ৬০ মিলি তরল এমোনিয়া এবং ৫০০ মিলি পানিতে দ্রবীভূত হয়) দেওয়ালে ব্যবহার করে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া ১০% মিউরিয়েটেড এসিড দিয়ে দেওয়াল ওয়াশ করে ১০-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে দেওয়াল ধুয়ে ফেলতে হবে।
কালার ওয়াশিং ও হোয়াইট ওয়াশিং এর পার্থক্য
কালার ওয়াশিং | হোয়াইট ওয়াশিং |
১। হোয়াইট ওয়াশিং এর মধ্যে পিগমেন্ট মিশিয়ে কালার ওয়াশিং তৈরি করা হয়। | ১। কোন ধরনের পিগমেন্ট থাকে না। চুনের স্বাভাবিক রং সাদা হয় বলে এর নাম হোয়াইট ওয়াশিং |
২। চাহিদামত রঙ মেশানো হয়। | ২। এর রং সাদা। সামান্য মাত্রায় নীল মেশানো হয়। |
৩। নতুন পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রে তিন কোট রং প্রথম কোট হোয়াইট ওয়াশিং তারপর কালার ওয়াশিং। | ৩। সকল কোট হোয়াইট ওয়াশিং হয়। |
৪। পিগমেন্টের কারণে খরচ বেশি পড়ে। | ৪। হোয়াইট ওয়াশিং কালারের চেয়ে দামে সস্তা। |
৫। কালার ওয়াশিং এর উপর হোয়াইট ওয়াশিং করতে পুরাতন কালার ঘষে মেজে উঠিয়ে ফেলতে হয়। | ৫। হোয়াইট ওয়াশিং এর উপর কালার ওয়াশিং করতে গাত্রতলের সাদা রঙ থাকলে তেমন সমস্যা হয় না। |

কালার ওয়াশিং প্রয়োজনীয় সতর্কতা
১। এলামাটি মিশ্রিত করার পর কাঠি দিয়ে দ্রবণটি উত্তমরূপে নেড়ে দিতে হবে যাতে দ্রবণের রং সুষম হয়।
২। তারপর দ্রবণটিকে মোটা মশারির কাপড় বা চট দ্বারা ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে। এতে বালি, কাঁকর, ঘাস পাতা বা অন্য কোন অপদ্রব্য দ্রবণে থাকলে সেগুলো দূরীভূত হবে।
৩। রঙিন চুনকাম করার সময় দ্রবণকে মাঝে মাঝে উত্তমরূপে নেড়ে নিতে হবে। দ্রবণ সুষম রংয়ের হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য অল্প জায়গায় প্রলেপ প্রয়োগ করে শুকানোর পর দেখে নিতে হবে।
৪। শুকানোর পর রংয়ের উজ্জ্বল্য যদি কম হয় বা প্রয়োগের উপযুক্ত না হয় তাহলে চুড়ান্তভাবে প্রয়োগ না করে পুনরায় প্রয়োজনীয় উপাদান মিশ্রিত করে প্রয়োগ উপযোগী করে নিতে হবে।
৫। প্রথম পৌঁচ প্রয়োগের পর সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে গেলে দ্বিতীয় পৌঁচ প্রয়োগ করে রঙিন চুনকামের কাজ সমাধা করতে হবে। সাধারণত এক পোঁচ (One coat) করার পর প্রলেপটি শুকানোর পর এর উপর দুই পৌঁচ (Two coat) রঙিন চুনকাম করা হয়।
৬। প্রথম পৌঁচ উপর থেকে নিচে, পরের পোঁচ নিচ থেকে উপরে এবং তারপর তৃতীয় পৌঁচ সুষমভাবে দিতে হবে।
৭। প্রথমে সিলিং তারপর দেওয়ালে রং করতে হবে।
৮। পৃষ্ঠতল ভালোমত প্রস্তুত করতে হবে। নতুবা ভালো রং ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না।
অনুশীলনী
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। কালার ওয়াশিং কি?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। কালার ওয়াশিং এর মালামালের তালিকা তৈরি কর।
২। কালার ওয়াশিং ও হোয়াইট ওয়াশিং এর পার্থক্য লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কালার ওয়াশিং এর প্রয়োজনীয় সতর্কতা উল্লেখ কর।
২। কালার ওয়াশিং এর পৃষ্ঠদেশ প্রস্তুত কৌশল বর্ণনা কর।
আরও দেখুন :