গভীর ভিত্তি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং – ১ [ Civil Engineerng Drawing – 1 ]” এর “পাইলের গঠন” অধ্যায় এর পাঠের অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
গভীর ভিত্তি
৫.০ গভীর ভিত্তি (Deep foundations) :
যে সকল ভিত্তির গভীরতা প্রস্থের তুলনায় অনেক বেশি হয়, তাদেরকে গভীর ভিত্তি বলে। সাধারণভাবে খাদ বা গর্ত খনন করে গভীর ভিত্তি নির্মাণ করা হয় না। ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি যদি উত্তম ভারবহন ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো স্তর না পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনীয় ভারবহন ক্ষমতাসম্পন্ন স্তর পাওয়ার জন্য মাটির অনেক গভীরে কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করা হয়। তা ছাড়াও কাঠাম্বোর দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য অনেক সময় গভীর-ভিত্তির প্রয়োজন হয়। যেমন- ব্রিজের পিয়ার (Pier) অনেক গভীরে স্থাপন করা হয়।
গভীর ভিত্তির শ্রেণিবিভাগ (Classification of deep foundations ) : সাধারণত নির্মাণকৌশল অনুযায়ী গভীর-ভিত্তি তিন
প্রকার, যথা—
(ক) পাইল ভিত্তি (Pile foundation)
(খ) কফার ড্যাম (Coffer dams )
(গ) কেইশন বা ওয়েল ভিত্তি (Caisson or Well foundation)।
ভিত্তি (Foundations) :
যে-কোনো কাঠামোর প্রধানত দুটি অংশ থাকে, একটি সাবস্ট্রাকচার (Substructure) এবং অপরটি সুপারস্ট্রাকচার (Superstructure) । সাবস্ট্রাকচার, সুপারস্ট্রাকচারের লোডকে মাটির শক্ত স্তরের উপরে ছড়িয়ে দেয়। এজন্য একে ভিত্তি (Foundation) হিসাবে অভিহিত করা হয়। এটি সুপারস্ট্রাকচারের বেস (Base) হিসাবে কাজ করে। কাঠামোর নিজস্ব ওজন এবং এর উপরস্থ অন্যান্য ওজনকে মাটির শক্ত স্তরে স্থানান্তর করার জন্য কাঠামোর যে ভূনিম্নস্থ অংশ কংক্রিট ব্লক, পাইল, র্যাফট, গ্রিলেজ ইত্যাদির সমন্বয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা ”হয়, তাকে বুনিয়াদ বা ভিত্তি বলে।
কাঠামোর সমস্ত ভর বুনিয়াদ বা ভিত্তির মাধ্যমে শক্ত মাটির উপর ন্যস্ত করা হয়। তাই শক্ত ভূমিতলকে বিশেষ যত্নের সাথে তৈরি করতে হয়। সুতরাং বিশেষভারে তৈরি বুনিয়াদের নিম্নস্থ শক্ত ভূমিতলকে ভিত্তি তল (Foundation bed) বলে (চিত্র ঃ ৪.১)।
ভিত্তির কাজ (Function of foundations ) :
নিম্নলিখিত উদ্দেশ্য বা কার্য সাধনের জন্য ভিত্তি প্রদান করা হয় ঃ
(i) লোডের তীব্রতা হ্রাস (Reduction of load intensity)
(ii) লোডের সুষম বণ্টন (Even distribution of load)
(iii) সমতল পৃষ্ঠ প্রদান (Provision of level surface)
(iv) কাঠামোর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি (Increase the stability of the structure)
(v) বন্যপ্রাণী এবং মাটিতে বসবাসকারী প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা (Safety against undermining )
(vi) মাটির সরণ প্রতিরোধ (Protection against movement)।
ভিত্তির প্রকারভেদ (Types of foundations)ঃ
স্থানের (Site) নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে ভিত্তির ধরন নির্বাচন করা হয় ।
(i) সাব-সয়েলের অবস্থা (Nature of sub-soil)
(ii) প্রতিবন্ধকতার ব্যাপ্তি এবং প্রকৃতি (Nature and extent of difficulties)
(iii) দক্ষ লোক এবং যন্ত্রপাতির সুবিধা (Availability of expertise and equipment)। উ
পরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে ভিত্তিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় ঃ
১। অগভীর ভিত্তি (Open or shallow foundation)
২। গভীর -ভিত্তি (Deep foundation)।
৩। অগভীর ভিত্তি (Shallow foundations )
8। Tarzaghi এর বর্ণনা অনুসারে, যে সকল ভিত্তির গভীরতা এর প্রস্থের সমান বা কম, তাকে অগভীর ভিত্তি বলে। অগভীর ভিত্তিকে মুক্ত ভিত্তিও (Open foundation) বলে। অর্থাৎ যে সকল ভিত্তি খনন করে নির্মাণ করা হয়, তাকে মুক্ত বা অগভীর -ভিত্তি বলে। সুতরাং ভিত্তির গভীরতা প্রস্থের তুলনায় বড় হলেও যদি মুক্তভাবে খনন করে ভিত্তি নির্মাণ করা হয়, তবে তাকেও অগভীর ভিত্তি বলা হয়।
অগভীর -ভিত্তির সাথে ফুটিং (Footing) শব্দটি সম্পর্কযুক্ত। অগভীর ভিত্তির পরিবর্তে সাধারণত ফুটিং শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অতএব ফুটিং হলো ভিত্তির অংশ, যা ইট, পাথর বা কংক্রিটের তৈরি দেওয়াল বা কলাম। এর উদ্দেশ্য হলো, কাঠামোর লোডকে ভূপৃষ্ঠের বৃহত্তর ক্ষেত্রের উপর ছড়িয়ে দেয়া। ডিজাইনের উপর নির্ভর করে অগভীর ভিত্তি বা ফুটিংকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন—
১। স্প্রেড ফুটিং (Spread footing)
২। কম্বাইন্ড ফুটিং (Combined footing) .
৩। স্ট্রাপ ফুটিং (Strap footing)
৪ । ম্যাট বা র্যাফট ভিত্তি (Mat or Raft foundation ) ।
আরও পড়ুন:
- নির্দেশক ভগ্নাংশ [Representative fraction]
- স্কেলের সংজ্ঞা