আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – চ্যানেল ওয়ারিং যা অধ্যায়-১৬ এর বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষা ম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
চ্যানেল ওয়ারিং
চ্যানেল ওয়্যারিং-এর বর্ণনা
ইমারতে ওয়্যারিং কাজে পিভিসি দিয়ে তৈরি লম্বা ফাঁপা চ্যানেল ব্যবহার করে যে ওয়্যারিং করা হয়, তাকে চ্যানেল ওয়্যারিং বলে। চ্যানেলের দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ এক দিকে খোলা লম্বা বাক্সের মতো এবং অপরটি লম্বা পিভিসি, পাত বা ব্যাটেনের মতো। ব্যাটেনের মতো অংশটি রাওয়াল প্লাগের সাহায্যে স্কু দিয়ে দেয়ালে আটকে তার ওপর দিয়ে তার টেনে ওয়্যারিং করা হয়। এরপর বাক্সের মতো অংশটি দিয়ে ওয়ারিংকে ঢেকে দেওয়া হয়। এ ধরনের ওয়্যারিং দেখতে খুবই সুন্দর।
কারণ এক্ষেত্রে বাইরে থেকে কোনো তার দেখা যায় না। শুধু সাদা প্লাস্টিকের চ্যানেল দেখা যায়। তারের সংখ্যা ও সাইজ অনুযায়ী চ্যানেলের সাইজ ১, ১, ২ ইত্যাদি হয়। এই ধরনের ওয়্যারিং বাড়িঘর, হোস্টেল, অফিস-আদালত, দোকানঘর, আবাসিক বিল্ডিং ইত্যাদিতে করা যায়।

চ্যানেল ওয়্যারিং-এর সুবিধা ও অসুবিধা
চ্যানেল ওয়্যারিং-এর সুবিধাসমূহ:
১। এটা সহজে আবাসিক বিল্ডিং, হোটেল ইত্যাদিতে ওয়্যারিং করা যায়।
২। এটা ব্যাটেন ওয়্যারিং-এর চাইতে তুলনামূলক স্থায়িত্ব কম হয়।
৩। এটা উডেন কেসিং এবং ক্যাপিং এবং ব্যাটেন ওয়্যারিং-এর চাইতে সস্তা।
৪। সঠিকভাবে তার ডিস্ট্রিবিউশন করতে পারলে ওয়্যারিং দেখতে সুন্দর দেখায় বটে।
চ্যানেল ওয়্যারিং-এর অসুবিধাসমূহ:
১। এই ধরনের ওয়্যারিং করতে দক্ষ কারিগরের প্রয়োজন হয়।
২। এই ধরনের ওয়্যারিং সূর্যের আলোতে বা খোলা জায়গায় অর্থাৎ যেখানে বৃষ্টির পানি যাবে সেখানে করা যায় না।
৩। বেশি ঠান্ডা বা গরম এর দেশে এই ধরনের ওয়্যারিং- করা যায় না।
৪। এই ধরনের ওয়্যারিং-এর ভিতর ময়লা এবং চ্যানেল-এর উপর ময়লা জমে তারের ইনসুলেশন নষ্ট হয়ে যায়।
৫। এটা অ্যাসিড ও অ্যালকালি-এর সহিত রাসায়নিক বিক্রিয়া করে।
৬। চ্যানেলের উপর পেইন্ট করতে হয়।
৭। এটা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং কোখাও বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হলে অগ্নিস্ফুলিং-এর মাধ্যমে প্লাস্টিকে আগুন ধরতে পারে। কাজেই এই ধরনের ওয়্যারিং বিপজ্জনকও বটে।
চ্যানেল ওয়্যারিং করার প্রয়োজনীয় মালামাল ও যন্ত্রপাতির তালিকা
চ্যানেল ওয়্যারিং করার প্রয়োজনীয় মালামাল:


১। পিভিসি চ্যানেল : বিভিন্ন সাইজের এবং বিভিন্ন রং এর PVC চ্যানেল বাজারে পাওয়া যায়। যথা-১৩ মি.মি. × ১৩ মি.মি., ১৩ মি.মি x ১৮ মি.মি, ১৩ মি.মি x ২৫ মি.মি, ১৩ মি.মি x ৩১ মি.মি. ১৩ মি.মি x ৩৮ মি.মি এবং ১৩ মি.মি. x ৫০ মি.মি. এবং উল্লিখিত সাইজের রয়াল প্লাগ ও পাওয়া যায় এবং সাদা, খয়েরি, সবুজ ইত্যাদি রং-এর হয়।
২। সুইচ বোর্ড ও জংশন বোর্ড: P.V.C বা প্লাস্টিক দিয়ে সুইচ বোর্ড ও জংশন বোর্ড তৈরি করা হয়। বাজারে বিভিন্ন সাইজের এবং বিভিন্ন রং দেওয়া বোর্ড পাওয়া যায়। ৭৫ মি.মি x ৭৫ মি.মি. ১০০ মি.মি x ১০০ মি.মি., ১০০ মি.মি. x ১৫০ মি.মি., ১২৫ মি.মি x ২০০ মি.মি. ২০০ মি.মি. x ২৫০ মি.মি. এবং ২০০ মি.মি. x ৩০০ মি.মি. ইত্যাদি।
৩। জু: বাজারে বিভিন্ন সাইজের দেশি ও বিদেশি ক্রু পাওয়া যায়। এই ক্রুগুলো নম্বর অনুযায়ী চিকন ও মোটা হয়ে থাকে। যথা ৩নং, নেং, ৬নং, ৭নং ইত্যাদি। বর্তমানে চ্যানেল ওয়্যারিং রাওয়াল প্লাগের মাধ্যমে করা হয়। বাজারে পিভিসি জাতীয় সাদা বা রঙিন বিভিন্ন সাইজের রাওয়াল প্রাগ পাওয়া যায়। যেমন- ৬ নং, ৮ নং, ১০ নং এবং ১২ নং ইত্যাদি।
চ্যানেল ওয়্যারিং করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
১। কম্বিনেশন প্লায়ারস
২। কানেকটিং ক্রু ড্রাইভার
৩। ফিলিপস ন্তু ড্রাইভার
৪। ইলেকট্রিশিয়ান চাকু
৫। হ্যাকস রেডসহ
৬। হ্যান্ড ড্রিল মেশিন
৭। পোকার ইত্যাদি।
চ্যানেল ওয়্যারিং করার পদ্ধতি

১। প্রথমে বাড়ির লে-আউট প্লান দেখে ওয়্যারিং-এর প্লান অঙ্কন করতে হবে।
২। বাড়ি তৈরি শেষ হলে ওয়্যারিং লে-আউট প্লান অনুযায়ী বাড়ির সমস্ত দেয়ালে ও লিলিং-এ যেখানে ওয়্যারিং যাবে সেখানে মোটা সুতাতে রঙিন চক পাউডার-এর গুঁড়া লাগিয়ে দেয়ালে দাগ টানতে হবে এবং পয়েন্টের স্থানগুলি চিহ্নিত করতে হবে। তারপর ঐ দাগের উপর চ্যানেল-এর বেজ অটিকানোর জন্য ৬০ সেন্টিমিটার অন্তর অন্তর বেজ প্লাগ লাগাতে হবে।
৩। ওয়্যারিং যেখানেই বেঁকে যাবে, সেখানে চ্যানেলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মাপের কর্নার লাগিয়ে নিতে হবে এবং কর্নারের উপর কোনো তারকাঁটা লাগানো উচিত নয়।
৪। চ্যানেল দেয়ালে ফিটিং হয়ে গেলে প্রতি পয়েন্টের জন্য একটি একটি করে প্লাস্টিক বক্স বা প্রয়োজনীয় সাইজের বক্স লাগিয়ে প্রয়োজনীয় সাইজের ক্রু দিয়ে দেয়ালের সঙ্গে আটকে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে, বক্সের যে প্রান্ত দিয়ে ওয়্যারিং ভিতরে প্রবেশ করবে, সেই প্রান্ত চ্যানেলের সাইজ অনুযায়ী কর্তন করে চ্যানেল-এর মাথা সুখ করে চ্যানেল-এর প্রান্ত ঢুকিয়ে আটকে দিতে হবে। একই নিয়মে অন্য বক্সগুলো ও লাগাতে হবে।
৫। এক কক্ষ হতে অন্য কক্ষে তার নিতে হলে দেয়াল ছিদ্র করে পিভিসি পাইপের মাধ্যমে নিতে হবে।
৬। সমস্ত ব্যবস্থাসম্পন্ন হয়ে গেলে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুযায়ী লোড হতে তার টেনে ওয়্যারিং করে সমস্ত ফিটিংস লাগাতে হবে এবং চ্যানেল-এর কভার লাগিয়ে ওয়্যারিং-এর কাজ শেষ করতে হবে এবং শেষে ওয়্যারিং-এর অংশগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। চ্যানেল ওয়্যারিং করতে হলে প্রথমে বেজ ওয়ালের উপর রয়্যাল প্লাগ-এর মাধ্যমে আটকে নিতে হবে।
অনুশীলনী – ১৬
অতি সংক্ষিপ্ত:
১। চ্যানেল ওয়্যারিং কী?
২। তারের সংখ্যা ও সাইজ অনুযায়ী চ্যানেলের সাইজ কী?
সংক্ষিপ্ত:
১। চ্যানেল ওয়্যারিং-এর সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ কর।
২। সুইচ বোর্ড ও জংশন বোর্ড কাকে বলে?

রচনামূলক:
১। ওয়্যারিং সংযোগ প্রণালি বর্ণনা কর।
২। চ্যানেল ওয়্যারিং-এর ব্যবহারের স্থান বর্ণনা কর।
৩। চ্যানেল ওয়্যারিং-এর মালামাল ও যন্ত্রপাতির তালিকা বর্ণনা কর।
৪। চ্যানেল ওয়্যারিং করার পদ্ধতি বর্ণনা কর।
৫। চ্যানেল ওয়্যারিং-এর সুবিধা ও অসুবিধা বর্ণনা কর।
আরও দেখুন :