জল ছাদ | অধ্যায়-৬ | সিভিল কন্সট্রাকশন ২

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – জল ছাদ যা অধ্যায়-৬ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

জল ছাদ

জল ছাদ (Lime terracing)

ইমারতের ছাদ থেকে পানি চুইয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ার আশঙ্কা হতে রক্ষা এবং রৌদ্রের তাপ প্রতিহত করার জন্য ছাদের স্লাবের উপরে যে আচ্ছাদন দেওয়া হয় তাকে জল ছাদ (lime terracing) বলে।

ইমারতের ছাদের টালি, ইট বা কংক্রিটের উপর বৃষ্টির পানি প্রত্যক্ষভাবে পড়লে বা ছাদে জমা হলে তা চুইয়ে ঘরের মেঝের উপর পড়ার আশঙ্কা থাকে। উপরন্তু রি-ইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিটের স্লাবের এম এস রড (M. S. rod) কে মরিচা ধরিয়ে ছাদকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য ছাদের সিমেন্ট কংক্রিট স্লাবের উপরে খোয়া, চুন, সুরকি কংক্রিটের (lime concrete) স্তর বিছিয়ে অন্তত ৭.৫ সে মি পুরু রেখে পানি গড়ানোর জন্য ঢালু করে দেওয়া হয়। একে জল ছাদ ( lime terracing) বা সংক্ষেপে ‘টেরাসিং’ বলে।

সংক্ষেপে বলা যায় চুন, সুরকি, খোয়া (২:২:৭) অনুপাতে মিশ্রিত করে কাঠামোর সর্বোপরি অংশ অর্থাৎ ছাদের উপর পানি ও তাপ প্রতিরোধের জন্য যে স্তর প্রয়োগ করা হয় তাকে জল ছাদ বলে। এটি রৌদ্রের তাপ প্রতিহত করে ঘরকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়তা করে। জল ছাদের ঢাল সাধারণত ৫ ফুটে ১ ইঞ্চি অর্থাৎ “1 in 60” রাখা হয়।

জল ছাদের মালামালের অনুপাত ২:২:৭ (চুনঃ সুরকিঃ খোয়া)। জল ছাদের চারপাশের কিনারায় ১০ সে মি ব্যাসার্ধের গোল করে প্যারাপেট এর সাথে মিলান হয়, একে ঘুন্ডি (ghundi) বলে।

 

জল ছাদ

 

জল ছাদের প্রয়োজনীয়তা

জল ছাদের প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপঃ

১) বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের কারণে পানি প্রবেশে বাধা দান করা। ২) রৌদ্রের তাপে ছাদ উত্তপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা।

৩) দালানকে অগ্নিপ্রতিরোধে সহায়তা করা।

৪) পানি নিরোধক করার কারণে ছাদের ভিতরকার রড মরিচা ধরার হাত থেকে রক্ষা করা।

৫) ছাদের পানিকে দ্রুত সরিয়ে দিয়ে উত্তম নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

৬) ইমারতের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।

জল ছাদ নির্মাণে ব্যবহৃত মালামালের তালিকা

জল ছাদ নির্মাণে ব্যবহৃত মালামালের তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১) চুন (lime)

২) খোয়া

৩) সুরকি (surki)

৪) মোলাসেস (molasis)

৫) তেঁতুল (tamarind)

জল ছাদ নির্মাণের কৌশল

জল ছাদ নির্মাণের কৌশল ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো।

  • পৃষ্ঠ তলের অবস্থানঃ জল ছাদ নির্মাণের পূর্বে পৃষ্ঠদেশ ভালোভাবে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দেখতে হবে যেন তাতে কোন প্রকার তৈল কিংবা শেওলা জাতীয় পদার্থ না থাকে।
  • পৃষ্ঠদেশ প্রস্তুতঃ তৈল কিংবা শেওলা জাতীয় পদার্থ থাকলে তা ব্রাশের সাহায্যে ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে। পৃষ্ঠতল পরিস্কার না করে ঢালাইয়ের কাজ আরম্ভ করা যাবে না।
  • মিশ্রণ প্রস্তুতকরণ ও প্রয়োগঃ প্রথমে নির্দিষ্ট অনুপাতে (২:২:৭) চুন, সুরকি, ও খোয়া (১ম শ্রেণির ইটের) শুকনো অবস্থায় ভালভাবে কোদাল বা বেলচা দ্বারা মিশ্রিত করে নিতে হবে। মিশ্রণ সুষম রংয়ের না হওয়া পর্যন্ত ওলট পালট করতে হবে। সুষম রং ধারণ করার পর তাতে প্রয়োজন অনুপাতে পানি মিশ্রিত করে ভিজা মসলা বানাতে হবে। এই মসলাকে ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কোদাল দ্বারা ওলট পালট করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চুন পানি সহযোগে বের হয়ে না যায়। তারপর ছাদের উপর ডিজাইন মোতাবেক উচ্চতায় ছড়িয়ে স্থাপন করে কায়িক শ্রমের দ্বারা পিটিয়ে দুরমুজ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ভালোভাবে জমাটবদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পিটানোর কাজ চালিয়ে যেতে হবে। মিশ্রণের সাথে পানি প্রয়োগের সময় তাতে তেঁতুল মিশাতে হবে।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

১:১ অনুপাতে চুন ও সিমেন্ট মিশিয়ে মসলা তৈরি করে কর্ণি দ্বারা জল ছাদের উপর প্রলেপ দিতে হবে। এতে জলছাদ সম্পূর্ণরূপে পানিরোধী হবে বলে আশা করা যায়।

ছাদের পানি নিষ্কাশন

ছাদ পিটিয়ে যতই নিশ্ছিদ্র করা হোক না কেন চুল সাদৃশ্য ফাটল থাকলেও পানি অনুপ্রবেশ করতে পারবে। অতএব যত দ্রুত ছাদে জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যাবে ততই মঙ্গল। তাই প্যারাপেট (Parapet) দেওয়ালের দিকে ছাদকে ক্রমশ ঢালু করতে হবে। প্যরাপেট (Parapet) দেওয়ালের ছিদ্র দিয়ে পানি উলম্বতলে স্থাপিত খাড়া পাইপের মাধ্যমে দালানের আশে পাশে নর্দমা বা ড্রেনে ফেলতে হবে।

খাড়া এই পাইপটিকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন পাইপ (Rain water down pipe) বলে। এটি কাস্ট (Cast iron) বা সিমেন্ট কংক্রিটের, ইউপিভিসির তৈরি হতে পারে। শহর এলাকায় ড্রেনের পানি রাস্তার নিচে স্থাপিত সিউয়ার লাইনের মাধ্যমে নিষ্কাশন করা হয়।

জল ছাদের বিকল্প দ্রব্যাদি

১। লিকুইড অ্যাপ্লাইড মেমব্রেন (Liquid-applied membranes)

  • বিটুমিন বেইজড – পলিমার বেইজড (চিত্র ৬.১)

২। প্রিফরমড শিট মেমব্রেন (Pre-formed sheet membranes)

  • SBS (চিত্র ৬.২), APP, PVC (চিএ ৬.৩) ইত্যাদি।

৩। মাইক্রোফাইবার রিইনফোর্সড এক্রিলিক বেজড ফ্লেক্সিবেল ওয়াটার প্রুফ কোটিং (চিএ ৬.৪) (microfibre reinforced acrylic based flexible waterproof coating)

৪। ওয়াটার বেজড ওয়াটার রেপ্লেন্ট প্রায়মার

 

জল ছাদ
চিত্রঃ লিকুইড অ্যাপ্লাইড মেমব্রেন

 

জল ছাদ
চিত্রঃ প্রিফরমড শিট মেমব্রেন (SBS)

 

জল ছাদ
চিত্রঃ প্রিফরমত শিট মেমব্রেন (পিভিসি)

 

জল ছাদ
চিত্রঃ মাইক্রোফাইবার রিইনফোর্সড এক্রিলিক বেজড ফ্লেক্সিবেল ওয়াটার প্রুফ কোটিং

অনুশীলনী

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। জলছাদ কাকে বলে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। জলছাদের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।

রচনামূলক প্রশ্ন

১। জলছাদ নির্মাণে ব্যবহৃত মালামালের তালিকা তৈরি কর। জলছাদ নির্মাণ কৌশলের বিস্তারিত বিবরণ দাও। জলছাদের বিকল্প দ্রব্যাদি কি কি উল্লেখ কর।

আরও দেখুন :

Leave a Comment