দালানের প্রধান অংশসমূহ

দালানের প্রধান অংশসমূহ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং – ১ [ Civil Engineerng Drawing – 1 ]” এর  “একতলা দালান” অধ্যায় এর পাঠের অন্তর্ভুক্ত।

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

Table of Contents

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ (The main parts of a building) :

 

নিম্নে একটি দালানের ছেদিত দৃশ্যের মাধ্যমে প্রধান অংশগুলো দেখানো এবং বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো—

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

ফাউন্ডেশন (Foundation)ঃ

এটা ভূমিতলের (Ground level সংক্ষেপে GL) নিচের গাথুনি। চলিত ভাষায় এটাকে “ভিত’ বলা হয়। এটাই সমগ্র দালানের ভার বহন করে। যে উপরিভাগের উপর এ বুনিয়াদ তৈরি করা হয়, তাকে ফাউন্ডেশন বেড (Foundation bed) বলে।

বুনিয়াদের উপরই সমগ্র দালানের ভার বা ওজন ন্যস্ত হয় বলে এটাকে ইট, কংক্রিট, পাথর, লৌহ ইত্যাদি দ্বারা উপযুক্ত পরিমাণ মজবুত বা ভারবাহী ক্ষমতাসম্পন্ন করে তৈরি করা হয়ে থাকে। বুনিয়াদের গ্রন্থ যত বেশি হয়, দালানের ভার বা ওজন অধিক ক্ষেত্রফলের উপর বিস্তৃত হয়। ফলে এর ভার বহন ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বাড়ে এবং মাটির মধ্যে ডেবে যাওয়ার আশংকা কমে। এ কারণে পাদদেশের প্রস্থকে যথাসম্ভব বেশি রেখে উপরের অংশের গ্রন্থকে কয়েকটি ধাপে ক্রমশ কমানো হয়ে থাকে। এ ধাপগুলোকে ফুটিং (Footing) বলে (চিত্র : ২.৩)। নিচের ফুটিংকে উপরের ফুটিং হতে উভয়দিকে সমপরিমাণ বর্ধিত রাখার নিয়ম। ফুটিং এর এ বর্ধিত অংশকে অফসেট (Offset) বলে।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

অফসেটের মাপকে ফুটিং এর উচ্চতা হতে সর্বদা কম রাখার নিয়ম। সাধারণত প্রত্যেক ফুটিংকে দুই স্তর ইটের সমান উচ্চতা বিশিষ্ট (অর্থাৎ প্রচলিত ইটের ক্ষেত্রে ১৫ সেমি এবং মেট্রিক ইটের ক্ষেত্রে ২০ সেমি) এবং প্রত্যেক দিকের অফসেটকে ৬.২৫ সেমি (প্রচলিত ইটে) বা ৫ সেমি (মেট্রিক ইটে) রাখা হয়ে থাকে। কারণ এতে ইটকে খণ্ড করার প্রয়োজন হয় না।

ফলে প্রত্যেকটি ফুটিং এর প্রন্থ সন্নিহিত নিচের প্রস্থ অপেক্ষা ১২.৫ সেমি অথবা ১০ সেমি কম হয়। সর্বনিম্ন ফুটিংকে এক স্তর পাতানো ইট (Flat soling) এর উপর সিমেন্ট কংক্রিট ঢালাই করে ভূমি সমান্তরালে পৃষ্ঠতলের উপর স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে কংক্রিট স্তরের অফসেটের পরিমাণ ১০ সেমি অথবা ১৫ সেমি রাখা হয়। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে সোলিং না দিয়ে কংক্রিট ঢালাই করে ফুটিং স্থাপন করা হয়ে থাকে।

 

প্লিন্থ (Plinth) :

ভূমিতল হতে দালানের মেঝে (Floor) পর্যন্ত গাথুনিকে প্লিস্থ (Plinth) বলে। চলিত ভাষায় এটাকে ‘পোতা’ নামে অভিহিত করা হয়। প্রিস্থ এর উচ্চতা এমন মাপের করা উচিত যাতে বৃষ্টির পানি কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। দালানের নিকাশি পানি রাস্তার সিউয়ার (Sewer) এর মধ্যে আসার উপযোগী পর্যাপ্ত ঢাল (Slope ) পায়। সাধারণ দালানে নিকটতম রাস্তার মধ্যবিন্দু হতে এর উচ্চতার প্রায় ৪৫ সেমি হতে ৬০ সেমি রাখা উচিত।

প্রিস্থের উচ্চতা কম রাখা হলে দালানের রুক্ষ স্যাঁতসেঁতে (Damp) হওয়ার আশংকা থাকে। তা ছাড়া দালান মজবুত করতেও এর প্রয়োজনীয়তা আছে। এ প্লিন্থ হতেই দেওয়ালের প্রত্যেকটি দিকে অফসেট দিয়ে বাড়ির নিচের তলার দেওয়াল গাঁথা হয়। যে স্থানে এ অফসেট দেওয়া হয় এর সর্বোচ্চ তলকে প্লিছ লেভেল (Plinth level সংক্ষেপে PL) বলে (চিত্র ঃ ২.৩)। বর্তমানে খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে গ্রিন্থ লেভেলে কোনো অফসেট প্রদান করা হয় না। এ ক্ষেত্রে অফসেট ভূমিতল বরাবর বা ভূমিতলের নিচে প্রদান করা হয়। দালানের নিচের তলার কক্ষের মেঝে (Ground floor) সমতলে থাকে।

আর্দ্রতা প্রতিরোধক স্তর (Damp proof course) মাটির জলীয় অংশ গাঁথনির ইটের মধ্য দিয়ে অথবা ইটের জোড়ার মধ্যে কোথাও সামান্যতম ফাঁক থাকলে, এর মধ্য দিয়ে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে। এতে দেওয়াল, ঘরের মেঝে ইত্যাদি স্যাঁতসেঁতে হয়, গাঁথনিতে পোনা ধরে এবং গাঁথনির দুর্বল অংশ ফেটে যাওয়ার বা বসে পড়ার আশংকা থাকে। এটা প্রতিরোধ করার জন্য ঐ জলীয় অংশ যাতে প্লিস্থ এর উপরে উঠতে না পারে তার জন্য গ্রিস্থের উপরিভাগে অর্থাৎ প্লিজ লেভেলে আর্দ্রতা প্রতিরোধক স্তর প্রদান করা হয়।

শতকরা ১ ভাগের বেশি হারে মিশ্রিত সিকো (Cico), পাডলো (Pudio) ইত্যাদি পানি নিরোধক পদার্থসহ সিমেন্ট, কংক্রিট, পাথর, অ্যাসফাল্ট (Asphalt) ইত্যাদি ২.৫ সেমি পুরু করে এবং দেয়ালের সমান প্রস্থবিশিষ্ট প্রলেপ দেয়া হয়। এটাকে ড্যাম্প লুফ কোর্স (Damp proof course) বা সংক্ষেপে DPC (চিত্র : ২,৩) বলে। এ ড্যাম্প প্রুফ কোর্স থেকেই প্রকৃতপক্ষে দালানের দেওয়াল গাঁথনির কাজ শুরু হয়।

 

সুপারস্ট্রাকচার (Super structure) :

গ্রিস্থ হতে দালানের উপরের সমগ্র গাধুনিকে সুপারস্ট্রাকচার বলে । 

 

মেঝে (Floor) :

কক্ষের বা বারান্দার যে সমতল স্থানের উপর দিয়ে চলাচল করা হয়, তাকে মেঝে বলে। পাপানের প্রত্যেক তলাতেই মেষে থাকে।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

নিচের তলার মেঝে প্লিন্থ এর সমতলে অর্থাৎ গ্রাউন্ড লেভেল বা ভূমিতল হতে ৪৫ সেমি হতে ৬০ সেমি উচ্চতায় তৈরি করা । প্রথমে প্রিস্থ তল হতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৮ সেমি নিচ পর্যন্ত মাটিকে উত্তমরূপে পিটিয়ে (Well rammed earth) শক্ত করার # এক স্তর ইট (৭.৫ সেমি বা ১০ সেমি) পাতানো হয় (Flat soling)। পরে ৭৫ সেমি বা ৮ সেমি পুরু সিমেন্ট কংক্রিট বা লাইম ক্রিট ঢালাই করা হয়। এর উপর ১.২ সেমি পুরু সিমেন্ট প্লাস্টার করে নিট সিমেন্ট ফিনিশিং করা হয়। অনেকে মোজাইক (Mosaic), মার্বেল (Marble) পাথর ইত্যাদি দ্বারাও মেঝে তৈরি করে থাকেন। উপরে সিমেন্ট কংক্রিটের ত্রুটি মেঝের ছেদন চিত্র দেখানো হলো।

 

দরজা ও জানালা (Doors and windows) :

কক্ষের মধ্যে প্রচুর আলো আসা এবং বাতাস চলাচলের সুবিধার জন্য সাধারণ * জানালা উত্তর-দক্ষিণে মুখোমুখিভাবে এবং শয়নকক্ষে জানালা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাখা হয়। এক কক্ষের সাথে অন্য কক্ষের পেনীয়তা রক্ষার জন্য শয়নকক্ষে একাধিক দরজা থাকা বাঞ্ছনীয় নয় ।

দরজা এবং জানালাকে প্রয়োজনমতো খোলা বন্ধ করার জন্য পাল্লা (Shutter) কে কব্জার (Winge) সাহায্যে ফ্রেম বা চৌকাঠের সাথে যুক্ত করে। চৌকাঠকে দেওয়ালের সাথে আটকাতে ফার্স্ট (Hold Fast) নামক একটি পাতলা পাহার পাত ব্যবহার করা হয়। মেঝে ধোয়া, মোছা, পরিষ্কার করা এবং চলাচলের সুবিধার জন্য বর্তমানে রে অনুভূমিক কাঠবিহীন চৌকাঠ ব্যবহার করা এরা কাঠ দুই দিকে কিছু বড় রেখে মেঝের মধ্যে  প্রবেশ করানো হয়।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

দরজা-জানালার চৌকাঠ সাধারণত ১০ সেমি x ৮ সেমি হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেকে দেওয়ালের গ্রস্থ বরাবর দরজার চৌকাঠ অবহার করে থাকেন। জানালাকে প্রায় মেঝে হতে ১৫ থেকে ৯০ সেমি উপরে এবং পাল্লাগুলো যাতে বাইরের দিকে খোলা যায় এ কানে থাকে।

সাধারণ শয়নকক্ষে অধিক বায়ুচলাচলের সহায়তার জন্য জানালাকে লম্বভাবে অর্থাৎ এর দৈর্ঘাকে ঘরের উচ্চতার দিকে রূপ (১৫০ সেমি x ৯০ সেমি) জানালার স্থলে, লিন্টেল হতে নিচের দিকে ১৫০ সেমি রেখে একে বসানো হয়। জানালাকে এই মোর হাতে ১৫ সেমি উঁচুতে এবং জানালার পাল্লাগুলো যাতে বাইরের দিকে খোলা যায় সেভাবে বসানো হয়। বর্তমানে বায় কানের জন্য অনেক স্কুলে দুটি জানালাকে স্বতন্ত্রভাবে না বসিয়ে জোড়া লাগানো একটি জানালা বসানো হয়ে থাকে। কোনো ঘরে দুটি দরজা থাকলে সেগুলোকে কোনাকুনিভাবে না বসিয়ে মুখোমুখিভাবে অর্থাৎ বিপরীত দিকে বসানো উচিত।

এতে ঘরের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য মেঝে অপেক্ষাকৃত বেশি পাওয়া যায়। নিচে পাল্লার বিবরণসহ বিভিন্ন প্রকার দরজার অর্থোগ্রাফিক দৃশ্য দেওয়া হলো—

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

সিল (Sill) :

গাঁথনির যে অংশের উপর জানালার চৌকাঠের নিচের অনুভূমিক কাঠটিকে বসানো হয়, তাকে জানালার সিল বলে (চিত্র-২.১০)। এটা ইট, পাথর বা কংক্রিটের দ্বারা তৈরি। কোনো কোনো সময় এ সিলের উপরিভাগ ঢালু করাও থাকে। এ প্রকার বর্ধিত তাকায় বৃষ্টির পানি দেওয়াল বেয়ে না পড়ে দূরে পড়ে।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

লিন্টেল (Lintel) :

সাধারণ গাঁথনির ক্ষেত্রে উপরের গাঁথনির ভার নিচের গাঁথনি বহন করে থাকে। কিন্তু যেখানে দরজা ও জানালা বসানো হয় ঐ স্থানে এদের জন্য ফাঁকা (Opening) রাখার প্রয়োজন হয় বলে উপরের গাঁথনি নিচে এমন কোনো জায়গা পায় না, যার উপর এর ভার ন্যস্ত হতে পারে।

এ কারণে দরজা ও জানালার ফাঁকা স্থানের উপর অর্থাৎ এদের চৌকাঠের ঠিক উপরে অ্যাংগেল, টি-আয়রন, কাঠ, পাথর ইত্যাদির খণ্ডকে স্থাপন করে অথবা কংক্রিট ঢালাই করে এর উপর গাঁথনি করা হয়ে থাকে। এ প্রকার খণ্ডকে লিন্টেল বলে । রিইনফোর্সড কংক্রিট দ্বারা তৈরি লিন্টেল (চিত্র : ২.১১) সর্বাপেক্ষা মজবুত ও স্থায়ী হয় বলে বর্তমানে অধিকাংশ স্থলে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

সানশেড (Sunshade) বা ছাজা (Chujja) :

 রৌদ্র বা বৃষ্টির পানির ছাঁট যাতে দরজা অথবা জানালার মধ্য দিয়ে কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে, এ উদ্দেশ্যে এদের ঠিক উপরে ‘তাক’ এর ন্যায় রিইনফোর্সড কংক্রিটের তৈরি গাঁথনির দেওয়াল হতে ৩০ সেমি বা 45 সেমি বর্ধিত করে রাখা হয়। এটাকে সানশেড (Sunshade) বা ছাজা (Chujja) বলে। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ার জন্য এর উপরিভাগ অল্প ঢালু করা থাকে। এটা সাধারণত রিইনফোর্সড কংক্রিট লিন্টেলের সাথে একযোগে ঢালাই করে তৈরি করা হয় (চিত্র : ২.১২)।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

 

ভেন্টিলেটর (Ventilator) :

স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কক্ষের মধ্যস্থিত মানুষের উষ্ণ নিঃশ্বাস বা দূষিত বায়ু যাতে বের হবার পথ পায় এবং অন্য পথে বিশুদ্ধ বায়ু ঘরে প্রবেশ করতে পারে, এর সহায়তার জন্য সিলিং (Ceiling) এর ঠিক নিচে দেওয়াল গাঁথনি করার সময় একাধিক চতুষ্কোণ ফোকর (Opening) রাখা হয়। একে ভেন্টিলেটর বলে।

কক্ষের আয়তন (কক্ষের মেঝের ক্ষেত্রফল x কক্ষের উচ্চতা) ৮৫ ঘনমিটার বা এটা অপেক্ষা কম হয়, তাহলে প্রতি ১৭ ঘনমিটারের জন্য ০.৫ বর্গমিটার ভেন্টিলেটর ছিদ্র রাখা হয়। বর্তমানে ভেন্টিলেটরের পরিবর্তে অনেক স্থলে দরজা-জানালার উপরে ফ্যান লাইট (Fan light) এর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এটা বায়ুচলাচলে বিশেষ সহায়তা করে।

 

কার্নিশ (Cornice) ঃ

বৃষ্টির পানি দেওয়াল বেয়ে নামলে দেওয়ালে শেওলা জমে, স্যাঁতসেঁতে হয় এবং গাঁথনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকে। এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য ছাদের চারিদিকে ৪৫ সেমি বা ৬০ সেমি বর্ধিত রাখা হয়। এটাকে কার্নিশ (Cornice) বলে (চিত্র : ২.১৩)। এটা দালানের সৌন্দর্যকেও কিছু বৃদ্ধি করে। কার্নিশের উপরিভাগ অল্প ঢালু এবং পানি যাতে দেওয়ালের দিকে অগ্রসর না হয়ে নিচে মাটিতে পড়ে এ উদ্দেশ্যে এর প্রান্ত নিচের দিকে সামান্য বর্ধিত করা থাকে। এ বর্ধিত অংশকে ড্রিপ মোল্ডিং (Drip Moulding) বলে (চিত্র : ২.১৩)।

 

ছাদ (Roof) :

ঝড়, বৃষ্টি, শীত, রৌদ্র ইত্যাদির প্রকোপ হতে গৃহবাসীকে রক্ষা করার জন্য দালানেরউপরে যে আচ্ছাদন দেয়া হয়, একে ছাদ বলে।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

ছাদের প্রকারভেদ (Classification of roof) :

 

ছাদ বা রুফ প্রধান তিন প্রকার, 

যথা- ১। চালু ছাদ (Sloped roof)

২। সমতল ছাদ (Flat roof) 

৩। বাঁকানো ছাদ (Curved roof)

 

(১) চালু ছাদ (Sloped roof) :

গঠন পদ্ধতি অনুসারে Sloped roof ৩ প্রকার, যথা-

 

(ক) সিঙ্গেল রুফ (Single roof)

 

(i) লিন-টু-রুফ (Loan-to-roof) 

(ii) কাপল রুফ (Couple roof)

(iii) কাপল ক্লোজ রুফ (Couple close roof)

(iv) কালার বিষ বা কালার রুফ (Colour beam or color lie roof)

(v) সিজারস রুফ (Scissors roof)

 

(খ) ডাবল রুফ (Double or purlin roof)

 

(গ) ট্রাসড রুফ (Triple membered or framed or trussed roof).

 

(i) কিং পোস্ট রুফ ট্রাস (King post roof truss )

(ii) কুইন পোস্ট রুফ ট্রাস (Queen roof truss )

(iii) মানসার্ড রুফ ট্রাস (Mansard roof truss ) 

(iv) বেলফাস্ট রুফ ট্রাস (Belfast roof truss )

(v) কম্পোজিট রুফ ট্রান্স (Composit roof truss )

(vi) লেমিনেটেড রুফ ট্রাস (Laminated roof truss )

(vii) ট্রানকেটেড রুফ ট্রাস (Trancated roof truss )

(viii) স্টিল রুফ ট্রাস (Steel roof truss )

 

(২) সমতল ছাদ (Flat roof) : 

এ ধরনের ছাদ সাধারণত ৩ প্রকার হয়ে থাকে, যেমন—

(ক) টালির ছাদ (Tiled roof)

(খ) ঝুলন্ত খিলানোর ছাদ (Jach arch roof) 

(গ) ঢালাই ছাদ বা আরসিসি ছাদ (Reinforced concrete roof)

 

(৩) বাঁকানো ছাদ (Curved roof) ঃ 

এ ধরনের ছাদ প্রধানত দুই প্রকার, যেমন-

 

(ক) শেল ছাদ (Shell Roof)

(খ) ডোম (Dome)

 

ছাদের উদ্দেশ্য বা কাজ (Function of a roof) :

ছাদ ব্যতীত একটি ভবন অসম্পূর্ণ এবং এটি একটি দালানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিম্নে ছাদের উদ্দেশ্য ও কাজ উল্লেখ করা হলো- 

(১) ঝড়-বৃষ্টি, ঠান্ডা, তাপ এবং তুষারপাত ইত্যাদির হাত হতে ভবন এবং এতে বসবাসকারীদেরকে রক্ষা করে।

(২) আগুন এবং শব্দ প্রতিরোধসহ ভবনের স্থায়িত্বতা বৃদ্ধি করে।

(৩) ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

(৪) ভবনের নিরাপত্তা প্রদান করে।

 

উত্তম ছাদের গুণাবলি (Essential requirement of a good roof) :

উত্তম ছাদের গুণাবলিসমূহ নিম্নরূপ— 

 

(১) শক্তি এবং স্থায়িত্বতা (Strength and stability) :

এটিকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে শক্ত ও মজবুত হতে হবে, যেন আপতিত লোডসমূহ (লাইভ লোড, ডেড লোড এবং এনভায়রনমেন্টাল (লোড) সহজে বহন করতে পারে।

 

(২) আবাহাওয়া রোধিতা (Meteorological resistance) ঃ

বৃষ্টি, ঝড়-বাতাস, রোদ, তুষার ইত্যাদি প্রতিরোধক্ষম 

 

(৩) আর্দ্রতা প্রতিরোধক (Damp Proofing) :

পানি নিরোধক এবং পানি নিকাশি গুণসম্পন্ন হবে।

 

(৪) তাপ প্রতিরোধক (Heat or thermal resistance) :

তাপ কুপরিবাহী হবে। 

 

(৫) অগ্নিরোধতা (Fire resistance) :

এর অগ্নি নিরোধক গুণ থাকবে।

 

(৬) শব্দ প্রতিরোধক (Sound insulation) :

বাইরের শব্দ প্রতিরোধী গুণ সম্পন্ন হবে।

 

যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে:

টালির ছাদের ক্ষেত্রে বিপরীত দুইটি দেওয়ালের উপর স্টিলের জয়েস্ট (Rolled steel joist) বা কাঠের বিম (Beam) (চিত্র ২.১৪) অর্থাৎ কড়িকে কক্ষের প্রন্থের দিকে ২ বা ৩ মিটার পর পর বসিয়ে এর উপরে কাঠের বরগা (Batten) অথবা লোহার টি আয়রনকে টাইলের দৈর্ঘ্যের সমান দূরত্বে কক্ষের দৈর্ঘ্যের দিকে বসানো হয়। পরে এর উপর দুই স্তরে টালি বসিয়ে এর উপর চুন সুরকীর কংক্রিট দ্বারা পানিনিরোধক ছাদ তৈরি করা হয়ে থাকে।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

আগুন লাগা, উইপোকা লাগা, মরিচা পড়া ইত্যাদির ক্ষতি ও অসুবিধা বিবেচনা করে টালির ছাদের তুলনায় রিইনফোর্সড কংক্রিটের ছাদ স্থায়ী এবং অধিকতর গুণসম্পন্ন হয়। এ কারণে বর্তমানে অধিকাংশ স্থলে রিইনফোর্সড কংক্রিটের ছাদ তৈরি করা হয়ে থাকে।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

রিইনফোর্গড কংক্রিট স্থানের ক্ষেনো কক্ষের গ্রন্থের দিকে দু’টি দেওয়ালের ইটের গাঁথনিতে 3 মিটার পর পর দেওয়ালের পর মাপের ৪৩ সেমি কংক্রিট জমিনো এর উপর নিমকে সরাসরি স্থাপন করা হয়। এ কংক্রিট খণ্ডকে বেড ব্লক (Bed block) বলে। বিমের দৈর্ঘ্যের উপর বেড রক্তের পুরুত্ব নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি মিটারে ৩ থেকে ৪ সেমি ধরা হয়ে থাকে। এ বিমের উপর এবং ঘরের দৈর্ঘ্য বরাবর কতকগুলো রড গখানো হয়য়। তারপর এর উপর আড়াআড়ি আর এক স্তর অপেক্ষাকৃত সরু রড বসানো হয়ে থাকে। পরে সিমেন্ট কংক্রিট ফেলে একযোগে জমাট বাঁধানো হয়। (চিত্র । ২,১৫)।

আরসিসি ছাদের নিম স্টিলের না হয়ে কোনো কোনো হলে কংক্রিটের হনো থাকে। এ ক্ষেত্রে ছাদের সাথে নিমকে একযোগে জমাট বাঁধানো হয়ে থাকে। এ প্রকার বিমকে টি-বিম (T. Beam) পদে (চিত্র । ২.৫) । मরণত ১৩ সেমি এর অধিক পুরু হয় না এবং ঢালাই-এর পর এর উপরে ৮ সেমি পুরু লাইম কংক্রিট (Lime concrete) এর জগদাদ (Terracing) তৈরি করা হয়ে থাকে।

কংক্রিটের ছাদকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেওয়াল হতে অনেক বর্ণিত করে রাখা হয়। ছাদের এ বর্ধিতাংশকে ঝুল ছাদ বা ক্যান্টিলিভার স্থান (Cantilever roof) বলে।

অপদান (Terracing) । ছাদের টালি ইট বা কংক্রিটের উপর বৃষ্টির পানি প্রত্যক্ষভাবে পড়লে বা এ পানি এদের উপরে জমলে এটা টুইনো ঘরের মেঝের উপর পড়ার আশংকা থাকে। তা ছাড়া, রিইনফোর্সড কংক্রিটের মধ্যস্থ রডকে মরিচা ধরে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটা প্রতিরোধ করার জন্য ছাদের সিমেন্ট কংক্রিটের প্ল্যান এর উপরে খোয়া-চুন সুরকীর কংক্রিটকে (Lime concrete) বিছিয়ে৷ অন্তত ৮ সেমি পুরু রেখে ঢালু (Slope) করে দেয়া হয়। এটাকে জলছাদ বা টেরাসিং বলে (চিত্র ঃ ২.১৬)। এটা রৌদ্রের তাপকে প্রতিহত করে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।

জলছাদের ঢাল সাধারণত ১ in ৬০ রাখা হয়। এটা তৈরি করার পূর্বে প্যারাপেট (Parapet) বা আলিসার ধারে ১২.৫ সেমি অফসেট রেখে তিন স্তর ইটকে গেঁথে নেওয়া হয়ে থাকে। জলছাদকে এ গাঁথনি পর্যন্ত বিস্তৃত করে এবং ১০ সেমি ব্যাসার্ধের গোল করে প্যারাগেটের সাথে মিলানো হয়। এটাকে হ্যালর (Hallor) বা মুভি বলে (চিত্র ঃ ২,১৬)। জলছাদের পানিনিকাশি পথ (Drain) ন্যূনপক্ষে ১০ সেমি ব্যাসের রাখা নিয়ম ।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

প্যারাপেট (Parapet) ঃ

ছাদ এবং এর চারিপার্শ্বের দেয়ালের জোড়াকে ঢেকে রাখতে, চলাফেরা কালীন দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে এবং বাড়ির সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করতে ছাদের উপরে চারদিকে স্বল্প উচ্চতায় যে প্রাচীর গাঁথা হয়, তাকে প্যারাপেট বলে (চিত্র ঃ ২.১৭)। এর গ্রন্থ ১২.৫ সেমি এবং উচ্চতা ৭৫ সেমি বা ৯০ সেমি হয়ে থাকে। এতে ৩ মিটার পর পর ২৫ x ২৫ সেমি মাপের পিলার (Pillar) গেঁথে এটাকে সুদৃঢ় করা হয়।

 

ব্লকিং কোর্স (Blocking course)ঃ

প্যারাপেটের ন্যায় উঁচু প্রাচীর না গেঁথে কোনো কোনো স্থলে এর পরিবর্তে কেবল দুই বা তিন স্তর ইটকে ছাদের চারদিকে গাঁথা হয়য়। এটাকে ব্লকিং কোর্স বলে (চিত্র ৪ ১.১৬)। 

 

কোপিং (Coping) :

বৃষ্টির পানি যাতে প্যারাপেটের গাত্র বেবো না পড়ে অথবা এর মধ্যে প্রবেশ না করে এ উদ্দেশ্যে প্যারাপেট বা এ জাতীয় খোলা প্রাচীরের শীর্ষকে প্রায়ই উভয়দিকে ঢালু করে গাঁথনি করা হয়। এটাকে কোপিং বা পটি বলে (চিত্র ঃ ২.১৭)।

 

সিঁড়ি (Stair) :

দালানের একতলা থেকে অন্য তলায় বা এক মেঝে থেকে অন্য মেঝেতে নিরাপদে ও অনায়াসে যাতায়াতের জন্য কতকগুলো ধাপের সাহায্যে যে পথ নির্মাণ করা হয়, তাকে সিঁড়ি বা স্টেয়ার (Stair) বলে। অর্থাৎ কোনো দালানের একতলা থেকে অন্য তলায় যাতায়াত করার জন্য এক সেট ধাপ (Step) কে সিঁড়ি বলা হয়। এটা একটি স্থায়ী কাঠামো।

সুতরাং একে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে অতি সহজে উপরে ও নিচে উঠানামা করা যায়। এ সিঁড়ি দালানের যে জায়গায় থাকে তাকে সিঁড়িঘর (Staircase) বলে। দালান, ওভারব্রিজ, টাওয়ার, বিভিন্ন ধরনের কাঠামোতে নিচু স্থান থেকে উঁচুতে বা উঁচু স্থান থেকে নিচে ওঠানামার জন্য বিভিন্ন ধরনের সিঁড়ি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

দালানের এমন জায়গায় সিঁড়ি নির্মাণ করা উচিত যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যায়। তবে আবাসিক দালানের ক্ষেত্রে সিঁড়ি ক্রন্দ্রস্থলে এবং পাবলিক বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে সিঁড়ি রাস্তার দিকে থাকা বাঞ্ছন সিঁড়িতে চলাচলের জন্য তা পর্যাপ্ত প্রশস্ত হওয়া উচিত । আবাসিক দালানে সিঁড়ির প্রস্থ ৯০ সেমি এবং পাবলিক বিল্ডিং এর জন্য ৩৫ মিটার থেকে ১.৮ মিটার হওয়া উচিত। আর উঠানামার সুবিধার জন্য প্রতিটি ফ্লাইটে ১০ থেকে ১২ টি ধাপ রাখা শ্রেয়। তবে টর কম ধাপ রাখা উচিত নয়। সিঁড়ির হেডরুম কমপক্ষে ২.১০ মিটার থেকে ২.৩০ মিটার হওয়া উচিত। আর চাতাল (Landing) এর -গুড়া ফ্লাইটের (Flight) চওড়ার চেয়ে কম হওয়া উচিত নয়। = (ab সিঁড়ি সম্পর্কিত কারিগরি শব্দ (Technical terms) 1

১। ট্রেড (Tread) ঃ

এটা ধাপের (Steps) অনুভূমিক ও সমতল অংশ। অর্থাৎ সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করার সময় সিঁড়ির যে== সমতলে পা রেখে উঠানামা করা হয়, তাকে ট্রেড বলে। এর গ্রন্থ ২২ সেমি থেকে ৩০ সেমি এর মধ্যে রাখা হয়, সাধারণত ২৫ সেমি রাখা হয় । 

 

২। রাইজ (Rise) ঃ

পর পর দু’টি ট্রেডের মধ্যবর্তী খাড়া দূরত্বকে রাইজ বা ধাপের উচ্চতা (Rise) বলে। রাইজ এর পরিমাণ ১২ সেমি থেকে ১৯ সেমি রাখা হয়। তবে সাধারণত ১৫ সেমি রাখা হয়।

 

৩। নোজিং (Nosing) ঃ

৭অনেক সিঁড়িতে প্রতিটি ধাপের সামনে যে অংশটুকু বাড়তি থাকে অর্থাৎ ট্রেডের সম্মুখস্থ বর্ধিতাংশকে -নাজিং বলে। এ নোজিং এর পরিমাণ ২.৫সেমি থেকে ৩.৭ সেমি এর মধ্যে রাখা হয়। এর মধ্যে না রাখলে নোজিং পায়ের চাপে ভেঙে যেতে পারে। এর সামনের দিক গোলাকার করা হয়।

 

৪। গোয়িং বা রান (Going or run) ঃ

যে সিঁড়িতে প্রতিটি ধাপের সাথে নোজিং যুক্ত থাকে, সেই সিঁড়ির ক্ষেত্রে পর পর দু’টি প্রাইজারের মধ্যবর্তী অনুভূমিক দূরত্বকে গোয়িং বলে। ট্রেড এবং গোয়িং মূলত একই। তবে যেখানে ট্রেডের সামনে নোজিং থাকে না, সেখানে ট্রেড এবং গোয়িং সমান হয়। আর যেখানে নোজিং থাকে সেখানে ট্রেড = গোয়িং + নোজিং।

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

৫। ল্যান্ডিং বা চাতাল (Landing) :

কয়েকটি ধাপ পর অর্থাৎ দুটি ফ্লাইট (Flight) এর মধ্যবর্তী স্থানে চওড়া সমতল যে প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করা হয়, তাকে ল্যান্ডিং বা চাতাল বলে। সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করার সময় দিক পরিবর্তন এবং মধ্যবর্তী স্থানে সামান্য বিশ্রামের জন্য ল্যান্ডিং ব্যবহার করা হয়। এ ল্যান্ডিং যদি ধাপের সম্পূর্ণ চওড়া জুড়ে থাকে, তবে তাকে Half space landing এবং যদি অর্ধেক জুড়ে থাকে, তবে তাকে Quart space landing বলে। ল্যান্ডিং এর গ্রন্থ সিঁড়ির গ্রন্থের চেয়ে কম হওয়া উচিত নয় ।

 

৬। ফ্লাইট (Flight) ঃ

পর পর দুটি ল্যান্ডিং এর মধ্যবর্তী একসারি ধাপকে ফ্লাইট বলে। উঠানামার সুবিধার জন্য প্রতিটি ফ্লাইটে ১১ থেকে ১২ টির বেশি ধাপ রাখা উচিত নয়। তবে এক ফ্লাইটে ১৫ টির বেশি এবং ওটির কম ধাপ যেন না থাকে।

 

৭। সফিট (Soffit) ঃ

সিঁড়ির নিম্নতলকে সফিট (Soffit) বলে। 

 

৮। চাল (Pitch or Slope) :

ল্যান্ডিং বা মেঝের সাথে লাইন অব নোজিং যে কোণ করে থাকে, তাকে ঢাল (Slope) বলে। উঠানামার সুবিধার জন্য সিঁড়ি যেন বেশি খাড়া না হয়, সেজন্য ঢাল ৪০° এর বেশি এবং ৩০° এর কম হওয়া উচিত নয়। 

 

৯। লাইন অব নোজিং (Line of nosing ) ঃ

নোজিং সম্মুখস্থ বিন্দুগুলোকে যদি একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তবে

 

১০। হ্যান্ড রেই (Hand rail) ঃ

সিড়ি হতে পড়ে যাওয়া রক্ষা করে রেইলিং। এ রেইলিং এর মাথায় কংক্রিটের ঢালাইযুক্ত যে তির্যক রেইল আবদ্ধ করে ব্যবহার করা হয়, তাকে Hand rail বলে। এটা ধরে সিঁড়িতে উঠানামা করা এর আকৃতি সাধারণভাবে গোলাকার বা অর্ধগোলাকার হওয়া উচিত। হ্যান্ড রেইলের উভয় প্রান্তে স্থাপিত দুটি খাড়া গুটির সাথে যুক্ত ।

 

১১। ব্যালাস্টার (Baluster) :

হ্যান্ড রেইল এবং স্ট্রিংগার এর মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশে ব্যবহৃত মেম্বারকে ব্যালাস্টার কাঠ অথবা মেটালের হতে পারে। এটা হ্যান্ড রেইলকে সুদৃঢ় করে।

 

১২। ব্যালাডে (Balustrade) :

ঢালু হ্যান্ড রেইল এবং স্ট্রিংগার এর মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশে সারিবদ্ধভাবে যদি ব্যাপা বসানো হয়, তবে তাকে ব্যালাস্ট্রেড বলে। এটা সিঁড়ির ফাঁক দিয়ে মানুষ পড়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে।

 

১৩। নিউয়েল এবং নিউয়েল পোস্ট (Newel and newel post) :

একসারি সিঁড়ির উপরে অর্থাৎ ল্যান্ডিং এর মুখে এবং সিড়ির পাে অবস্থিত যে খাড়া মেম্বারটি স্ট্রিংগার এবং হ্যান্ড রেইলের প্রাপ্তকে সংযোগ করে, তাকে নিউয়েল বা নিউয়েল পোস্ট বলে । 

 

১৪। স্ট্রিং বা ফিংগার (String or stringer) :

কাঠের সিঁড়ির ক্ষেত্রে, সিঁড়ির ধাপগুলো ধরে রাখার জন্য যে ভাৰ্যক বিম বা মো ব্যবহার করা হয়, তাকে স্ট্রিং বা স্ট্রিংগার বলে । প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য সাধারণভাবে দুটি স্ট্রিং ব্যবহার করা হয় ।

 

১৫। ওয়ার্কিং লাইন (Walking line or line of travel) :

এটা একটি কাল্পনিক রেখা। হ্যান্ড রেইলের কেন্দ্র থেকে ৪৫ of দূরে সিঁড়ির ধাপ বরাবর যে রেখা থাকে অর্থাৎ সিঁড়িতে যে লাইন দিয়ে মানুষ চলাচল করে, তাকে ওয়াকিং লাইন বলে। স জুড়েও মানুষ চলাচল করতে পারে, তবে এ লাইনে সহজেই হ্যান্ড রেইল ধরে চলাচল করা যায়।

 

১৬। হেডরুম (Head room) :

সিঁড়ির ধাপের সমতলে ট্রেড থেকে ঠিক উপরে সফিট বা স্ট্রিংগার সফিট পর্যন্ত খাড়া উচ্চতারে হেডরুম বলে। সোজা হয়ে সিঁড়িতে উঠানামার সময় যাতে উপরস্থ সফিট মাথায় ঠেকে না যায়, সেদিকে খেয়াল রেখে হেডরুম ি করা হয়। সাধারণত হেডরুম২.১০ মিটার ধরা হয়।

 

১৭। ক্যারিয়ার বা রাফ স্ট্রিং (Carrier or rough string) :

কাঠের সিঁড়ির ক্ষেত্রে, ফ্লাইট যদি অতিরিক্ত চওড়া হয়, তাহলে মাঝখানে স্ট্রিং ব্যবহার করতে হয়। এরূপ মাঝখানের স্ট্রিংকে ক্যারিয়ার বলে।

 

১৮। ধাপ (Step) ঃ

সিঁড়িতে উঠানামা করার জন্য একটি অনুভূমিক স্থানের প্রয়োজন, যার উপর পা রাখা হয়। এ অংশকে বলা হয়। দুটি ট্রেডের মধ্যবর্তী দূরত্বকে রাইজার বলে। একটি ট্রেড ও একটি রাইজারের সমন্বয়ে গঠিত অংশকে ধাপ (Step) বঙ্গ এর সাহায্যে একতলা থেকে অন্যতলায় উঠানামা করা হয়। একসেট ধাপের সমন্বয়ে স্টেয়ার (Stair) গঠিত।

 

সিঁড়িঘর (Stair case) :

পানি পড়া বা রৌদ্র লাগাকে প্রতিরোধ করার জন্য সিঁড়ির আচ্ছাদন হিসেবে ছাদের উপর ২.১০ নি বা ২.৪০ মিটার উঁচু ছোট ঘরকে সিঁড়িঘর বা চিলেকোঠা বলে। একতলা বাড়িতে ছাদে উঠার প্রয়োজন না থাকলে সিঁড়িঘর না করালে। চলে। কিন্তু যে স্থলে ছাদে উঠার থাকে, অর্থাৎ দুই বা ততোধিক তলাবিশিষ্ট দালানের ক্ষেত্রে সিঁড়িঘর থাকা একান্ত আবশ্যক। সিঁড়িঘরের জন্য সাধারণ বসতবাড়িতে অন্তত ১.৮০ মিটার x ৪.৩৫ মিটার স্থান ব্যবহৃত হয়। দালানের সম্মুখদিকেই সিঁড়িঘরে অবস্থান হওয়া উচিত।

 

সিঁড়ির শ্রেণিবিভাগ (Classification of stairs) :

 

সিঁড়িকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। তবে নিম্নের সিঁড়িগুলো বেশি ব্যবহা হয়, যথা-

১। একমুখী সিঁড়ি (Straight flight stair) 

২। ডগ্‌ লেগড় সিঁড়ি (Dog-legged stair)

৩। ওপেন নিউয়েল বা ওপেন ওয়েল সিঁড়ি (Open newel or open well stair) 

৪। জিওমেট্রিক্যাল সিঁড়ি (Geometrical stair)

৫। বৃত্তাকার সিঁড়ি (Circular stair)

৬। বাইফারকেটেড সিঁড়ি (Bifurcated stair)

 

এদের মধ্যে ডগ্‌ লেগড় এবং ওপেন নিউয়েল প্রকারের সিঁড়িই অধিকাংশ বসতবাড়িতে বা অধিকাংশ স্থলে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সিঁড়ি কাঠ, পাথর, ইট, লোহা, রিইনফোর্সড কংক্রিট ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। তবে এদের মধ্যে রিইনফোর্সড কংক্রিট দ্বারা তৈরি সিঁড়িই সর্বাপেক্ষা বেশি প্রচলিত। কারণ, এটা দীর্ঘস্থায়ী এবং অধিকতর শক্তিসম্পন্ন হয়। এ ছাড়াও একে ইচ্ছামতো ঢালাই করা যায়। নিম্নে ডগ লেগড় এবং ওপেন নিউয়েল সিঁড়ির চিত্র দেওয়া হলো

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

দালানের প্রধান অংশসমূহ

 

 

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment