আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – পেইন্ট ও পেইন্টিং যা অধ্যায়-৫ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
পেইন্ট ও পেইন্টিং
পেইন্ট ও পেইন্টিং
পেইন্ট বা রং হলো বিভিন্ন অস্বচ্ছ রঞ্জক পদার্থের তরল মিশ্রণ, যা বিভিন্ন বস্তুর পৃষ্ঠদেশে। গাত্রতলে প্রয়োগ বা লেপন করা হয়। এই তরল উদ্বায়ী পদার্থ কোন বস্তুর গাত্রতলে প্রয়োগ করার পর জলীয় অংশটুকু বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে গিয়ে বাকি শক্ত পদার্থ প্রলেপ প্রাপ্ত গাত্রতলকে সমপুরুত্বে ঢেকে পাতলা আবরণ হিসাবে বস্তুর গায়ে লেগে থাকে। এটাই বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত রং। কালারিং পিগমেন্ট বা বর্ণদায়ি উপাদানের উপর পেইন্টের রং নির্ভরশীল, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির নামে কৌটায় ভর্তি বিভিন্ন প্রকারের পেইন্ট বা রং পাওয়া যায়। এগুলোর পায়ে ব্যবহার বিধি লেখা থাকে।

বিভিন্ন প্রকার পেইন্টের নাম
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার পেইন্টের নাম উল্লেখ করা হলো।
১) তৈল রং (oil paint)
২) জল রং (water paint)
৩) এ্যালুমিনিয়াম পেইন্ট (aluminum paint)
৪) সেলুলজ পেইন্ট (ceallulose paint)
৫) সিমেন্ট পেইন্ট (cement paint)
৬) এনামেল পেইন্ট (enamel paint)
৭) সিনথেটিক রাবার পেইন্ট (synthetic rubber paint)
৮) এন্টি করোসিভ পেইন্ট (anti corrosive paint)
৯) এ্যাসবেস্টস সিমেন্ট পেইন্ট (asbestos cement paint)
১০) বিটুমিনাস পেইন্ট (bituminous paint)
১১) ব্রোঞ্জ পেইন্ট (bronze paint)
১২) কোজিন পেইন্ট (cousin paint)
১৩) কলোয়ডাল পেইন্ট (colloidal paint)
১৪) ইমালশন পেইন্ট (emulsion paint)
১৫) গ্রাফাইট পেইন্ট (graphite paint)
১৬) প্লাস্টিক পেইন্ট (plastic paint)
১৭) সিলিকেট পেইন্ট (silicate paint)
বিভিন্ন প্রকার পেইন্টের উদ্দেশ্য
সিন আন্ডারকোটঃ কাঠ, লোহা, স্টিল ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
রেড অক্সসাইড এন্টি করোসিভঃ সকল প্রকার লোহায় মরিচা প্রতিরোধে আস্তর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ওয়াল সিলার (এ্যাঙ্কালি রেজিস্টিং): নতুন ও পুরনো প্লাস্টার করা দেয়ালে কংক্রিট কাঠামো, কাঠ ও হার্ডবোর্ড ইত্যাদিতে ব্যবহার হয়।
এসপিডি (ডিসটেম্পারঃ) ঘরের ভিতরের দেয়ালে, সিলিং, নতুন তৈরি বিল্ডিং যেখানে খুব দ্রুত রং করার প্রয়োজন হয়। মূলত সাধারণ কাজে ব্যবহার উপযোগী সবচেয়ে মূল্য সাশ্রয়ী পেইন্ট।
ইমালশন পেইন্টঃ এক্রিলিক ইমালশন দিয়ে তৈরি গ্রের ভিতর ও বাইরে ব্যবহার উপযোগী একটি আধুনিক বৈশিষ্ট্যময় পেইন্ট। এছাড়া সিমেন্ট, সিমেন্ট প্লাস্টার, কংক্রিট কাঠামো এবং সফট ও হার্ডবোর্ডে ব্যবহার যোগ্য।
ওয়েদার প্রুফ কোটঃ আবহাওয়া প্রতিরোধক দীর্ঘস্থায়ী এই দেয়ালের বাইরের অংশে ব্যবহার করা হয়। সিমেন্ট পেইন্ট (স্নো-সেম): বিল্ডিং এর বাইরের দিকে ব্যবহার করা হয়। এই পেইন্ট সৌন্দর্যবর্ধক ও পানি প্রতিরোধক।
সিনথেটিক এনামেল পেইন্টঃ সবধরনের লোহা, ইস্পাত, কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্র, বাঁশ, বেত, সিমেন্ট প্লাস্টার এবং কংক্রিটে ব্যবহারযোগ্য।
এ্যালুমিনিয়াম পেইন্ট (সিলভার): পাইপ, ট্যাংক, টাওয়ার, ব্রিজ, ওয়েল ট্যাংকার, সি আই সিট (টিনের চাল), ডাইজ ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
ক্লিয়ার ভার্নিশঃ সকল প্রকার কাঠ জাতীয় আসবাবপত্র, বাঁশ, বেত ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। সিল্ক ইমালশনঃ ১০০% এক্রিলিক ইমালশন দিয়ে তৈরি অভিজাত ইন্টেরিয়র পেইন্ট যা ছত্রাক, ক্ষার, কার্বোনেশন ও উঠে যাওয়া রোধে খুব কার্যকর।
পেইন্টিং কাজে মালামালের পরিমাণ
পেইন্টের নাম | মালামালের পরিমাণ (এরিয়া কভারেজ মিটার/প্রতি লিটার) |
সিন আন্ডারকোট | ১৬ বর্গ মিটার। |
রেড অক্সসাইড এন্টি করোসিভ | ১৬/১৭ বর্গ মিটার |
ওয়াল সিলার (এ্যাঙ্কালি রেজিস্টিং) | ১০ বর্গ মিটার |
এসপিডি (ডিসটেম্পার) | ১৫ বর্গ মিটার |
ইমালশন পেইন্ট | ১৫/১৬ বর্গ মিটার |
ওয়েদার প্রুফ কোট | ১৪ বর্গ মিটার |
সিমেন্ট পেইন্ট (স্নো-সেম) | ২.৮-৪.৫ বর্গ মিটার |
সিনথেটিক এনামেল পেইন্ট | ১৭-২০ বর্গ মিটার |
এ্যালুমিনিয়াম পেইন্ট (সিলভার) | ১৭-২০ বর্গ মিটার |
ক্লিয়ার ভার্নিশ | ১৭-২২ বর্গ মিটার |
সূত্রঃ পেইলাক হ্যান্ডবুক
পেইন্ট প্রয়োগের পূর্বে গাত্রতল প্রস্তুতকরণ
পাত্রতল প্রস্তুতকরণ (preparation of surface): পেইন্ট করার পূর্বে যে গাত্রতলে পেইন্টের প্রলেপ দিতে হবে সে গাত্রতল প্রস্তুত করার বর্ণনা করা হলো।
১) নতুন কাঠের পৃষ্ঠদেশ প্রস্তুতকরণঃ
পেইন্ট প্রয়োগ করার জন্য কাঠের পৃষ্ঠকে উত্তমরূপে তৈরি করা দরকার। পেইন্ট প্রয়োগের পূর্বে কাঠকে এমনভাবে সিজনিং বা ঋতুসহ্যকরণ (seasoning) করা উচিত যেন সেখানে শতকরা ১৫ ভাগের বেশি জলীয় অংশ না থাকে। যদি বস্তুটি উপর কোন লোহা জাতীয় পেরেক বা স্তু বর্ষিত অবস্থায় থাকে তাহলে হাতুড়ি ও পাঞ্চের মাধ্যমে তা ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তারপর স্যান্ড পেপার দ্বারা ঘষে কাঠের পৃষ্ঠকে মসৃণ করতে হবে। মসৃণ করার পর পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মুছে ধুলা বালি পরিষ্কার করে পেইন্ট লাগাতে হবে।
২) পুরাতন কাঠের পৃষ্ঠদেশ প্রস্তুতকরণঃ
পুরাতন পেইন্ট অবশ্যই সম্পূর্ণ তুলে ফেলতে হবে যেন পেইন্ট করা গাত্রতলে ফাটল, ফোসকা বা বিবর্ণরূপ ধারণ করে। পুরাতন পেইন্ট তুলে ফেলার কয়েকটি পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হল। এদের যে কোন একটি প্রয়োগ করে পুরাতন পেইন্ট তোলা যাবে।
(ক) এক লিটার পানির সঙ্গে ২০০ গ্রাম কস্টিক সোডা মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে তা দিয়ে পৃষ্ঠতল ভিজাতে হবে। পৃষ্ঠদেশ নরম হলে তা ঘষে পেইন্ট তুলে ফেলা যায়।
(খ) একভাগ সাবান ও দুইভাগ পটাশের মিশ্রণের সঙ্গে বিদাহী চুন মিশিয়ে দ্রবণ প্রস্তুত করে তা উত্তপ্ত অবস্থায় কাঠের উপর প্রয়োগ করতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর পানি দ্বারা ধৌত করলে পুরাতন পেইন্ট উঠে যাবে।
(গ) সমপরিমাণ কাপড় ধোয়ার সোডা ও বিদাহী চুন পানির সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কাঠের গায়ে লাগিয়ে একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। এক ঘন্টা পর পানি দ্বারা ধৌত করলে পুরাতন পেইন্ট উঠে যাবে।
(ঘ) ভাঙ্গা কাঁচ দ্বারা ঘষে পুরাতন পেইন্ট তোলা যায়। এটি একটি সাধারণ ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।
(ঙ) স্যান্ড পেপার বা শিরিষ কাগজ দ্বারা ঘষে পুরাতন পেইন্ট তোলা হয়। এরপরও যদি গাত্রতলে কোন গর্ত থাকে তা পুটি দ্বারা পূর্ণ করে ঘষে সমান করে নিতে হবে।
নতুন লোহা ও ইস্পাতের পৃষ্ঠতল প্রস্তুতকরণঃ
যে লোহা বা ইস্পাতের পৃষ্ঠে পেইন্ট করতে হবে তা অবশ্যই নোংরা, ময়লা, গ্রিজ বা তেল মুক্ত হতে হবে। চুন বা কস্টিক সোডা পানির সঙ্গে মিশিয়ে পৃষ্ঠতল ধুয়ে নিলে তেল, গ্রিজ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ উঠে যাবে। এরপর ফসফরিক (phosphoric) এসিডের একটি হালকা প্রলেপ দিলে তা পরবর্তীতে পেইন্ট প্রয়োগের সময় আঠার মতো (adhesive) কাজ করে।
পুরাতন লোহা বা ইস্পাতের পৃষ্ঠতল প্রস্তুতকরণঃ
পুরাতন পৃষ্ঠতলকে সাবান পানির সাহায্যে ধুয়ে নিতে হবে। তেল, গ্রিজ বা চর্বি থাকলে চুনের পানি দ্বারা ধুয়ে নিলে চলবে। তাছাড়া হিটার দ্বারা তাপ প্রয়োগ করলেও পুরাতন পেইন্ট উঠে যাবে।
কংক্রিট বা প্লাস্টারের পৃষ্ঠতল প্রস্তুতকরণঃ
কংক্রিট বা প্লাস্টার করা পৃষ্ঠতল তৈরি করতে হলে পুরাতন তলের বেলায় ওয়্যার ব্রাশ বা সাধারণ ব্রাশ দ্বারা ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর শিরিষ কাগজ (sand paper) দ্বারা ঘষলেও চলবে। নতুন পৃষ্ঠতলে হলে অনেক সময় শুধুমাত্র শিরিষ কাগজ দ্বারা ঘষাই যথেষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে গাত্রতলে কোন গর্ত বা ফাটল থাকলে তা প্লাস্টার করে পূর্ণ করে নিতে হবে।

পেইন্টিং কাজের কলাকৌশল
ব্রাশ পেইন্টিং ও স্প্রে পেইন্টিং এই দুই পদ্ধতিতে পেইন্ট প্রয়োগ করা হয়।
ক) উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে গাত্রতল প্রস্তুত সম্পন্ন করতে হবে।
খ) পেইন্টের প্রলেপ প্রয়োগ (Application of paint) কাঠে পেইন্ট প্রয়োগঃ
পুরাতন বা নতুন যে কোন গাত্রতলই হোক না কেন উপর্যুক্ত পদ্ধতিতে গাত্রতল তৈরি করে পেইন্ট প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমে প্রস্তুতকৃত পৃষ্ঠতলের উপর রেড লিড চূর্ণ ও গ্লু-সাইজ মিশ্রিত পানি দ্বারা উত্তপ্ত অবস্থায় প্রথম কোট দিতে হবে। প্রথম কোট প্রয়োগের ১০ মিনিট পর দ্বিতীয় কোট দিতে হবে। একে নোটিং বলে।
প্রস্তুতকৃত পৃষ্ঠতলের উপর নোটিং প্রয়োগ করার পর পুনরায় শিরিষ কাগজ দ্বারা ঘষে মসৃণ করে নিতে হয়। অতঃপর পেইন্টের একটি পাতলা প্রলেপ প্রয়োগ করে ছোটখাট গর্ত বা ফাটল বন্ধ করতে হয়। একে প্রাইম কোট বলে।
প্রাইম কোট শুকাবার পর পৃষ্ঠতলকে গ্লাস পেপার দ্বারা ঘষে মসৃণ করে নিতে হয়। একে স্টপিং বলে। স্টপিং করার পূর্বে পেরেকের গর্ত, ফাটল ইত্যাদি তিসির তেল ও চকপাউডারের তৈরি পুটিং দ্বারা বন্ধ করে দিতে হয়। উন্নত মানের স্টপিং এর জন্য ২/৩ অংশ পুটি এর সাথে ১/৩ অংশ হোয়াইট লেড মিশ্রণ করা হয়। একে হার্ড (heard) স্টপিং বলে। স্টপিং করার পর এবং চূড়ান্ত প্রলেপ প্রয়োগের পূর্বে যতগুলোস্তর (coat) প্রয়োগ করা হোক না কেন এগুলোকে আন্ডার কোটিং বলে। যে পেইন্ট দ্বারা চূড়ান্ত প্রলেপ দিতে হবে সেই একই পেইন্ট আন্ডারকোটিং এ ব্যবহার করতে হবে।
আন্ডার কোটিং প্রয়োগের পর এটি শুকিয়ে গেলে প্রয়োজন অনুসারে চূড়ান্ত (finishing) কোট প্রয়োগ করা হয়। পেইন্ট যদি শুকিয়ে যায় বা ঘন হয়ে উঠে তাহলে তারপিন তেল মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মাঝে মাঝে যে ব্রাশ দ্বারা পেইন্ট প্রয়োগ করা হয় তাকেও তারপিন তেলে ভিজিয়ে নিলে ঝরঝরে হয়ে উঠবে এবং পেইন্ট লাগাতে সুবিধা হবে। প্রতি স্তর (coat) শুকানোর ২৪ ঘন্টা পর পরবর্তী কোট প্রয়োগ করা উচিত।
পুরাতন বা নতুন লৌহ পৃষ্ঠে পেইন্ট প্রয়োগ
পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতিতে পৃষ্ঠতলে প্রস্তুত করার পর নির্বাচিত পেইন্ট থিনার মিশিয়ে পাতলা করে ব্রাশ দ্বারা প্রলেপ করতে হবে। প্রথমে ব্রাশ দ্বারা হালকা একটি স্তর (coat) দিতে হবে। এ স্তর শুকানোর পর চূড়ান্ত কোট দিতে হবে। প্রলেপ প্রদান পদ্ধতি কাঠ বা লোহায় একই প্রকার হয়।
পেইন্টিং কাজ চলাকালীন সতর্কতা
পেইন্টিং কাজ করার সময় নিম্নের সতর্কতা গুলো মেনে চলতে হবে।
১) হাত দ্বারা পেইন্টের দ্রবণ প্রস্তুত করা যাবে না।
২) যে পাত্রে পেইন্ট তৈরি করবে তার তলায় যেন তলানি না পড়ে।
৩) মাঝে মাঝে কাজ চলাকালীন সময়ে কাঠি দ্বারা পেইন্ট নেড়ে দিতে হবে।
৪) পেইন্টের পাত্রটির ঢাকনা কখনই খোলা রাখা উচিত হবে না।
৫) পেইন্ট শুকিয়ে ঘন হয়ে গেলে তা প্রয়োগ না করে তারপিন তেল মিশিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে নিতে হবে।
৬) অবশ্যই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পেইন্টিং এর দোষত্রুটি
নিম্নে পেইন্টিং এর ত্রুটিগুলো উল্লেখ করা হলো
১) ফোসকা পড়া (blistering) : রং করা কোন তল যদি জলীয় কনার উপস্থিতির কারণে বুদবুদ আকারে ফুটিয়ে উঠে তাকে ফোসকা পড়া বলে। ফোসকা পড়া রংয়ের একটি ত্রুটি।
২) বিবর্ণতা (bloom): পেইন্টের দোষ বা বায়ু বদ্ধতার কারণে যদি গাত্রতলের কোন অংশ জুড়ে বিবর্ণ দাগ সৃষ্টি হয় তাকে বিবর্ণতা বলে।
৩) ফেডিং (fading) : রোদ্র বা বৃষ্টির প্রভাবে যদি রংয়ের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় তাকে ফেডিং বলে।
৪) ফ্লেকিং (flaking): পেইন্ট করা তলের কোন একটি অংশের প্রলেপ ঝরে অথবা খসে পড়াকে ফ্লেকিং বলে। পৃষ্ঠদেশ বা তলের সংঙ্গে আসঞ্জনের অভাবে এরূপ ঘটে থাকে।
৫) গ্রাইনিং (grinning): চূড়ান্তস্তর পেইন্ট প্রয়োগের পর পর্যাপ্ত অস্বচ্ছতা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলে অর্থাৎ যদি পৃষ্ঠদেশ সম্পূর্ণ ভাবে না ঢাকে তাহলে তাকে গ্রাইনিং বলে। এ ত্রুটির ফলে মূল পৃষ্ঠই দেখা যায়।
৬) ফ্লাশিং (flashing): সস্তা পেইন্ট ব্যবহার, আবহাওয়া ক্রিয়া বা প্রয়োগকারীর নিপুণতার অভাবে পৃষ্ঠদেশের কোথাও কোথাও অধিক চকচকে দেখায় একে ফ্লাশিং বলে।
৭) সেন্সিং (sagging): খাড়াভাবে পেইন্ট করার সময় কিছু পেইন্ট নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে স্থানে স্থানে জমা হয় তাকে সেগিং বলে। বেশি পুরু স্তরে পেইন্ট ব্যবহারের ফলে এ ত্রুটি দেখা যায়।
৮) রানিং (running): যখন পৃষ্ঠদেশ খুব মসৃণ থাকে তখন পেইন্ট করলে পৃষ্ঠদেশে ভাজ পড়ে এবং এ ত্রুটিকে রানিং বলে।
৯) রিংক্রিং (wrinkling): অনুভূতিক তলে অধিক পুরু পেইন্ট করলে পৃষ্ঠদেশে ভাঁজ পড়ে এবং এ ত্রুটিকে রিংক্লিং বলে।
১০) স্পনিফিকেশন (saponification) : এ ত্রুটির ফলে পেইন্ট করা পৃষ্ঠতলে সাবানের দাগের মত দাগ পড়ে। ক্ষার জাতীয় পদার্থের উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এরূপ দোষের সৃষ্টি হয়।
অনুশীলনী
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পেইন্ট কি?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পেইন্টি কাজের মালামালের পরিমাণ লেখ।
২। পেইন্টিং কাজ চলাকালীন সতর্কতা সম্পর্কে লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বিভিন্ন প্রকার পেইন্টের উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
২। পেইন্ট প্রয়োগের পূর্বে গাত্রতল প্রস্তুতকরণের বিস্তারিত বিবরণ দাও।
৩। পেইন্টিং কাজের দোষত্রুটি উল্লেখ কর।
৪। পেইন্টিং কাজের কলাকৌশল আলোচনা কর।
আরও দেখুন :