প্রকৌশল সামগ্রীর ধর্মাবলি বর্ণনা (Properties of Engineering Materials)
১.২.৩ প্রকৌশল সামগ্রীর ধর্মাবলি বর্ণনা (Describe the Properties of Engineering Materials)
বস্তু বা সামগ্রীর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে ঐ সামগ্রীর ধর্ম বলে। কোনো নির্দিষ্ট সামগ্রীর ধর্মাবলি অবস্থাভেদে ঐ সামগ্রীর প্রকৃতি ও আচরণের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন অবস্থায় সামগ্রীর আচরণ কিরূপ হবে তা সামগ্রীর ধর্মাবলি দ্বারা পূর্বাহে অনুধাবন করা যায়। এ ধর্মাবলির উপর ভিত্তি করেই প্রকৌশলীগণ কোনো কাঠামো, যন্ত্রাংশ ইত্যাদির জন্য সামগ্রী নির্ধারণ করে
থাকে। নিচে প্রকৌশল সামগ্রীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মাবলি উল্লেখ করা হলো:
(১) ভৌত ধর্মাবলি (Physical Properties) :
আকার, আকৃতি, ঘনত্ব, স্বচ্ছিন্নতা, সংযুক্তি ইত্যাদি।
(২) যান্ত্রিক ধর্মাবলি (Mechanical Properties)
শক্তি, স্থিতিস্থাপকতা, নম্যতা, অনম্যতা, প্রসার্যতা, ভঙ্গুরতা, কাঠিন্য, ঘাতসহত্য, কাঠিন্য, মন্থর বিকৃতি ইত্যাদি।
(৩) রাসায়নিক ধর্মাবলি (Chemical Properties):
ক্ষয়রোধিতা, অম্লত্ব, ক্ষারত্ব, রাসায়নিক গঠন ইত্যাদি।
(8) বৈদ্যুতিক ধর্মাবলি (Electrical Properties):
তড়িৎ সঞ্চালন শক্তি, তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা, তড়িৎ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি।
(৫) তাপীয় ধর্ম (Thermal Properties) :
আপেক্ষিক তাপ, তাপীয় প্রসারণ, তাপ পরিবাহিতা ইত্যাদি।
(৬) চুম্বকীয় ধার্মাবলি (Magnetic Properties) :
ভেদন শক্তি, চৌম্বকীয় ভেদ্যতা, চুম্বকীয় আবেশ, হিস্টিরিসিস ইত্যাদি। প্রাথমিকভাবে কোনো সামগ্রীর গুণাবলি উক্ত সামগ্রীর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। এটি ব্যতিত সামগ্রী যে পরিবেশে ব্যবহৃত হয়। তার অবস্থার উপর এটির গুণাবলি বহুলাংশে প্রভাবান্বিত হয়। সামগ্রীর উপরোল্লেখিত গুণাবলি ল্যাবরেটরির আদর্শ পরিবেশ ব্যতিরেকে যাচাই করা সম্ভব হয় না। প্রকৃত ব্যবহারিক ক্ষেত্র ল্যাবরেটরির আদর্শ পরিবেশের মতো হয় না বলেই সামগ্রীর কাঙ্খিত গুণাবলি যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সামগ্রীর ধর্মাবলি ল্যাবরেটরি পরীক্ষার দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়।
কতগুলো নির্দিষ্ট পরিবেশে সামগ্রীর ধর্মাবলি পরিমাপ করা হয়। এ পরিমাপ পদ্ধতিই হলো টেস্ট বা পরীক্ষণ। পরীক্ষা রিপোর্ট কাঠামো ডিজাইন এবং সামগ্রীর মান সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। টেস্ট -এর প্রক্রিয়া পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি বিশেষ সংস্থা কর্তৃক আদর্শায়িত করা থাকে। ফলে কোনো সামগ্রী সম্পর্কিত সঠিক তথ্যাদি সংগ্রহ করা সহজ হয় এবং চেষ্টাসমূহের ফলাফল সহজেই তুলনা করা যায়।
সাধারণত দেশের কোনো জাতীয় সংস্থা টেস্টের আদর্শায়ন করে থাকে। ফলে নির্মাণ সামগ্রী প্রকৌশল নির্মাণ কাজে এবং শিল্পে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামগ্রীর উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। নিচের সংস্থাগুলো বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীর টেস্টের প্রক্রিয়া/পদ্ধতি ও নিয়মাবলির আদর্শায়ন, বিনির্দেশ ও বিভিন্ন পরিভাষায় সংজ্ঞা প্রদান করে থাকেন।
(১) BSI (British Standard Institute)
(২) ASTM (American Society of Testing & Materials )
(৩) AASHO ( American Association of State Highway Official)
(৪) ACI (American Concrete Institute)
(৫) ASM (American Society for Metals)
(৬) ASME (American Society Mechanical Engineers)
(৭) API (American Petroleum Institution)
(৮) SAE ( Society of Automotive Engineers)
নিচে প্রকৌশল সামগ্রীর গুরুত্বপূর্ণ যান্ত্রিক ধর্মাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
(1) শক্তি (Strength):
বস্তুর উপর বাইরে থেকে প্রযুক্ত বলের কারণে এর অভ্যন্তরে অনুগুলোর আকর্ষণ ও বিকর্ষণজনিত কারণে প্রতিরোধী বলের সৃষ্টি হয়। এ প্রতিরোধী বল বস্তুর আকার-আকৃতি অপরিবর্তিত রাখতে চেষ্টা করে। বন্ধুর এ ধর্মকে শক্তি বলে। বস্তুর মৌলিক শক্তি তিন প্রকার। যথা:
(i) টান শক্তি (Tensile Strength),
(ii) চাপ শক্তি (Compressive Strength) ও
(iii) শীয়ার শক্তি (Shear Strength)
(২) পীড়ন (Stress) : কোনো প্রকৌশল সামগ্রীর উপর বাহির হতে প্রযুক্ত বলের প্রভাবে এর অভ্যন্তরে সৃষ্ট বলের তীব্রতা (Intensity)-কে পীড়ন বলা হয়।
অর্থাৎ, পীড়ন (S) = প্রযুক্ত বল (P) / বল প্রয়োগকৃত পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল (A)
পীড়ন প্রধানত তিন প্রকার। যথা:
(1) টান পীড়ন (Tensile stress)
(ii) চাপ পীড়ন (Compressive stress)
(iii) শীয়ার পীড়ন (Shear stress)।
(1) টান পীড়ন :
কোনো প্রকৌশল সামগ্রীর উপর টান বল ক্রিয়াশীল হলে টান পীড়নের সৃষ্টি হয়।
অর্থাৎ টান পীড়ন = টান বল / বল প্রয়োগকৃত পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল
(II) চাপ পীড়ন :
কোনো সামগ্রীর উপর চাপ বল প্রযুক্ত হলে চাপ পীড়নের উদ্ভব হয়।
অর্থাৎ চাপ পীড়ন = চাপ বল / বল প্রয়োগকৃত পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল
(III) শীয়ার পীড়ন :
কোনো সামগ্রীর উপর প্রযুক্ত বলের প্রভাবে বস্তুর কোনো সেকশনে এক অংশ অপর অংশ হাইড করার ফলে শীয়ার পীড়নের উদ্ভব হয়।
অর্থাৎ শীয়ার পীড়ন = শীয়ার বল / শীয়ার এলাকার ক্ষেত্রফল
(৩) বিকৃতি (Strain):
কোনো বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগের ফলে এর অভ্যন্তরে পীড়ন সৃষ্টির সাথে সাথে বস্তুর আকার-আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। কোনো বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগের কারণে বস্তুর একক দৈর্ঘ্যের পরিবর্তনই হলো বিকৃতি। ধরা যাক, কোনো বস্তুর আদি দৈর্ঘ্য L, বস্তুটির উপর P বল প্রয়োগের ফলে পরিবর্তিত দৈর্ঘ্য x হলো। দৈর্ঘ্যের কমতি (Shortening) অথবা বাড়তি (Extension) এর পরিমাণ।
এক্ষেত্রে বিকৃতি, e=x/L
এবং x = L=1 বা 1- L
চিত্র-১.৩
বিকৃতি বিকৃতি আবার তিন প্রকার। যথা :
(i) টান বিকৃতি (Tensile Strain) :
টান পীড়নের প্রভাবে এ ধরনের বিকৃতি হয়ে থাকে।
(ii) চাপ বিকৃতি (Compressive Strain):
চাপ পীড়নের প্রভাবে এ ধরনের বিকৃতি হয়ে থাকে।
(iii) শীয়ার বিকৃতি (Shear Strain):
শীয়ার পীড়নের প্রভাবে এ ধরনের বিকৃতি হয়ে থাকে।
(1) টান বিকৃতি : বস্তুর উপর টান বল ক্রিয়াশীল হলে টান বিকৃতির সৃষ্টি হয়।
টান বিকৃতি = ( পরিবর্তিত দৈর্ঘ্য (1) – আদি দৈর্ঘ্য (L)) / আদি দৈর্ঘ্য (L) = x/L
(II) চাপ বিকৃতি : বস্তুর উপর চাপ বল ক্রিয়াশীল হলে চাপ বিবৃতির সৃষ্টি হয়। আদি দৈর্ঘ্য (L) – পরিবর্তিত দৈর্ঘ্য (1)
চাপ বিকৃতি। আদি দৈর্ঘ্য (L)
(LLE) শীয়ার বা কৃষ্ণন বিকৃতি : বাইরে হতে প্রযুক্ত বলের প্রভাবে যদি বস্তুর আকৃতির পরিবর্তন ঘটে তবে এ পরিবর্তনকে শীয়ার বা কৃত্তন বিকৃতি বলে। ধরি, ABCD ঘনকটির DC তলটি আটকিয়ে রেখে AB তলে বের হতে P বল প্রয়োগ করা হলো। এর ফলে এর আকার ৪ কোণে পরিবর্তিত হয়ে A’B’CD রূপ ধারণ করল। এক্ষেত্রে শুধু আকৃতির যে পরিবর্তন হয়েছে তাই শীয়ার বিকৃতি। এর মান খুবই ক্ষুদ্র বিধায় শীয়ার বিকৃতি,
8 রেডিয়ান।
১৬
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস (৪) স্থিতিস্থাপকতা বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে তার আকার-আকৃতির পরিবর্তন ঘটে, আবার প্রযুক্ত বল সরিয়ে নিলে
বস্তু তার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। বস্তুর যে ধর্মের কারণে এরূণ ঘটে তাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে। স্থিতিস্থাপকতা বস্তুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম। কোনো বস্তুতে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ প্রযুক্ত বলের কারণে সৃষ্ট পীড়নে স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে ঐ পরিমাণ পীড়নকে ঐ বস্তুর স্থিতিস্থাপক সীমা বলা হয়।
1678 সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী রবার্ট হুক আবিষ্কার করেন যে, স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোনো বস্তুতে সৃষ্ট পীড়নের ফলে
সৃষ্ট বিকৃতির সমানুপাতিক।
অর্থাৎ, পীড়ন
• বিকৃতি
এ ধ্রুবকটিকে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক (Modulus of Elasticity) বলে। একে E দ্বারা প্রকাশ করা হয়। স্থিতিস্থাপক
গুণাঙ্কের এ সূত্রটি বিজ্ঞানী টমাস ইয়ং 1802 সালে প্রথম সংজ্ঞায়িত করেন। এজন্য একে ইয়ং-এর গুণাঙ্ক (Youngs দৃঢ়তা গুণাঙ্ক (Modulus of Rigidity) : শীয়ার পীড়ন এবং শীয়ার বিকৃতির অনুপাতকেই দৃঢ়তা গুণাঙ্ক বলা হয়।
Modulus)-ও বলা হয়।
একে G দ্বারা সূচিত করা হয়।
• শীয়ার পীড়ন অর্থাৎ দৃঢ়তা গুণাঙ্ক (G) = শীয়ার বিকৃতি
শীয়ার পীড়ন ও শীয়ার বিকৃতির ক্ষেত্রে দৃঢ়তা গুণাঙ্ক ব্যবহার করা হয়। বাচ্চ মডুলাস (Bulk Modulus) আয়তন পরিবর্তনে প্রযুক্ত প্রত্যক্ষ বলের প্রভাবে সৃষ্ট পীড়ন ও আয়তনিক বিকৃতির
অর্থাৎ, K = আয়তন পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ পীড়ন আয়তনিক বিকৃতি
আড়াআড়ি বিকৃতিও ঘটে থাকে। এ বিকৃতিকে আড়াআড়ি বিকৃতি (Lateral Strain) বলা হয়। বিজ্ঞানী পক্ষসনের
পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী বস্তুতে বলের ক্রিয়ায় আড়াআড়ি বিকৃতি ও বস্তুতে বলের ক্রিয়ামুখী বিকৃতি বা লম্বালম্বি
বিকৃতি এর অনুপাত একটি ধ্রুবক। এ ধ্রুবককে পয়সনের ধ্রুবক বলা হয়। আর এ অনুপাতকে পয়সনের অনুপাত বলে।
একে ॥ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
অনুপাতকে বাঙ্ক মডুলাস বলা হয়। একে K দ্বারা প্রকাশ করা হয়। পয়সনের অনুপাত (Poisson’s Ratio) বস্তুর উপর বাহির হতে বল প্রয়োগ করলে বলের ক্রিয়ার দিকে (Direction of force) বস্তুর যে বিকৃতি ঘটে তাকে লম্বালম্বি বিকৃতি বলে। বস্তুতে লম্বালম্বি বিকৃতি ঘটলে এর
পয়সনের অনুপাত আড়াআড়ি বিকৃতি লম্বালম্বি বিকৃতি।
(৫) নমনীয়তা (Plasticity): বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট বিকৃতি, তার উপর প্রযুক্ত বাহ্যিক বল অপসারণ করলেও বস্তু তার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে না তাকে নমনীয়তা বলে। স্থিতিস্থাপকতা ধর্মের বিপরীত ধর্ম হলো নমনীয়তা। সীসা নমনীয় ধাতব পদার্থের উদাহরণ।
(৬) অনমনীয়তা (Stiffness) : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর বিকৃতি প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বস্তুর অনমনীয়তা বলা হয়, অর্থাৎ যে ধর্মের জন্য বস্তু উল্লেখযোগ্য বিকৃতি ব্যতিরেকেই যথেষ্ট পরিমাণে পীড়ন নিতে পারে, তাকে অনমনীয়তা বলা হয়। যে বস্তুর স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক যত বেশি তার অনমনীয়তাও তত বেশি। ইস্পাত অনমনীয় বস্তুর একটি উত্তম উদাহরণ।
(৭) প্রসার্য (Ductility) : কোনো বস্তুর নম্যতা সীমার মধ্যে ছেঁড়া ব্যতিরেকে বিকৃতি হওয়ার সামর্থ্যকে প্রসার্থতা বলা
হয়। অর্থাৎ কোনো বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুকে টান বল প্রয়োগ করলে উক্ত বস্তু লক্ষণীয় সীমার মধ্যে না ছিঁড়ে ক্রমাগত
লম্বা হতে থাকে, তাকে প্রসার্যতা বলে। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের নমুনায় টান প্রয়োগে ছিড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত লম্বা হওয়ার শতকরা
হার দ্বারা প্রসায়তার পরিমাপ করা হয়। তামা প্রসার্য ধাতুর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
(৮) স্নাতসহতা (Malleability) : বস্তুর যে ধর্মের কারণে বস্তুতে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করলে তার নমনীয় বিকৃতি ঘটতে থাকে অর্থাৎ চাপের কারণে বস্তু বিচূর্ণ না হয়ে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। বস্তুর এ ধর্মকে ঘাতসহতা বলা হয়। যে বস্তুর প্রসার্যতা বেশি তার ঘাতসহতাও অত্যধিক। এ ধর্মের জন্য পেটা লোহাকে হাতুড়ি দ্বারা পিটিয়ে পাতলা শীটে পরিণত করা হয়।
বিভিন্ন পুরকৌশল সামগ্র (3) ভঙ্গুরতা (Brittleness) : বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুর উপর চাপ প্রয়োগ করলে বিকৃতি ব্যতিরেকে বা সামান্য বিকৃতিতে ভেঙে যায় বা চূর্ণ হয়ে যায়, বস্তুর এ ধর্মকে ভঙ্গুরতা বলে। এটি বস্তুর ঘাতসহতা ধর্মের বিপরীত ধর্ম। ঢালাই লোহা, কাচ ইত্যাদি ভঙ্গুর ধাতুর উদাহরণ।
(১০) কাঠিন্য (Toughness) : যে ধর্মের জন্য বস্তু আঘাতে অবিচল থাকে তাকে কাঠিন্য বলে। বস্তুতে আঘাতের পর আঘাতে কিছু শক্তি বস্তুতে শোষিত হয়। ফলে কিন্তু কাজ হয় এবং এ কাজ গড় পীড়ন ও বিকৃতির গুণফলের সমান। যে বস্তু অধিক পীড়ন নিতে পারে তার অধিক বিকৃতি ঘটতে পারে, তার কাঠিন্যও অধিক হয়। (১১) ফেটিগ (Fatigue) : বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুর পুনঃপুন ক্রিয়ারত পীড়ন প্রতিরোধে সক্ষম হয় তাকে বস্তুর ফেটিগ বা ফেটিগ স্ট্রেস্থ বলে। একটি তারকে সরাসরি টেনে ছেড়া খুবই কষ্টকর কিন্তু তারটিকে কয়েকবার এদিক সেদিক
মোচড়ানোর ফলে সহজেই ছেড়া সম্ভব। ফেটিগ ধর্মের কারণেই এক্ষপ হয়ে থাকে। (১২) স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা (Resilience): স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোনো বস্তুর শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষমতাকে স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা বলে। আনুপাতিক সীমা পর্যন্ত প্রতি একক আয়তনের পীড়ন ও বিকৃতির গুণফল দ্বারা প্রাপ্ত কাজকে বস্তুর স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা বলা হয়। অর্থাৎ স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা = প্রয়োগকৃত বল x বিকৃতি।
(১৩) মন্থর বিকৃতি (Creep): কতকগুলো প্রকৌশল সামগ্রী দীর্ঘকাল যাবৎ স্থির লোড বহন করতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে ঐ সামগ্রীর বিকৃতি ঘটতে থাকে। এরূপ বিকৃতিকে মন্থর বিকৃতি বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আর.সি.সি কলাম, বীম, রুফ স্ল্যাব ইত্যাদির উপর দীর্ঘকাল যাবৎ স্থির লোড চাপানো থাকে। ফলে এগুলোতে ধীরে ধীরে বিকৃতি ঘটতে থাকে। এ বিকৃতিকে মন্থর বিকৃতি বলা হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ এরূপ বিকৃতি ঘটতে থাকলে কাঠামোর স্থায়িত্বতা কমে যায়। কাঠামোর উপর স্থির লোভ অর্পণের পর যে বিকৃতি দেখা দেয় তা স্থির বিকৃতিতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘসময় অতিক্রান্তের পর অপরিবর্তনীয় স্থির লোডের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিকৃতির পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং এর প্রভাবে কাঠামো বিনষ্ট হয়। দ্বিতীয় বিকৃতির হারকে মন্থর বিকৃতি বলা হয়।
(১৪) তাপীয় পীড়ন (Temperature Stress): সকল বস্তুই তাপে প্রসারিত এবং ঠাণ্ডায় সংকুচিত হয়। এ ধরনের বিকৃতি বস্তুতে কোনো পীড়ন ঘটায় না। কিন্তু ঐ বিকৃতি প্রতিরোধ করলে বস্তুতে পীড়নের সৃষ্টি হয়। একে তাপীয় পীড়ন এবং বিকৃতিকে তাপীয় বিকৃপ্তি বলা হয়। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে বিকৃতির পরিবর্তনের হারকে তাপীয় প্রসারণ সহগ বলা হয়।
১.২.৪ প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় বর্ণনা
(State the Factors to Considered During Selection of Engineering Materials) কোনো প্রকৌশল স্ট্রাকচার (Structure) নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যে গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তা হলো সৌন্দর্য, শক্তি, উপযোগিতা ও ব্যয় স্বল্পতার সুসামঞ্জস্য সমাহার। প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচনে সুলত প্রাপ্যতা, চালনা ও সংযোজন সরলতা, স্থায়িত্ব ও শক্তি ইত্যাদি গুণাবলি বিবেচনা করতে হয়। প্রকৌশলীগণ ইমারত, সড়ক, রেলপথ, সেতু, কালভার্ট, সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, জেটি, পোতাশ্রয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, যন্ত্রযান, বাঁধ ইত্যাদি যাবতীয় প্রকৌশল কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা, ডিজাইন ও নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রকৌশল সামগ্রীর গুণগত মান যত বেশি উন্নত হবে এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের নির্মাণের মানও তত বেশি উন্নত হবে। সে জন্য সকল প্রকৌশলীকেই যাবতীয় প্রকৌশল সামগ্রীর প্রস্তুত বা আহরণ প্রণালি এবং এদের ভৌত, রাসায়নিক ও যান্ত্রিক ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচন করতে হয়।
(4) সামগ্রীগুলোর ধর্মাবলি।
(খ) ঈন্নিত ধর্ম পরিমাপের জন্য নিরীক্ষা (Testing) ও পরিদর্শনের পদ্ধতি। (গ) বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরিকরণের পদ্ধতি এবং এতে সামগ্রীর বৈশিষ্ট্যের উপর প্রভাব।
(খ) সামগ্রীগুলোর মধ্যে সাম্যতা সমস্বয়নের ক্ষেত্রে স্পেসিফিকেশনের পদ্ধতি। (ঙ) নির্দিষ্ট সামগ্রী কী কী ধরনের হবে এবং এর জন্য অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা।
(চ) সামগ্রী ব্যবহারে কী কী বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। (ছ) সামগ্রীর সহজলব্ধতা ও অর্থনৈতিক সাশ্রয়তা।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস্
১.২.৫ বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রকৌশল সামগ্রীর তালিকা
(List the Engineering Materials Commonly Used in Bangladesh) নিচে সাদৃশ্য টেকনোলজির প্রকৌশল সামগ্রীসমূহ দেওয়া হলো। যেমন
(i) বিটুমিন ও বিটুমিনজাত সামগ্ৰী
(ii) বালি (Sand)
(iii) মৃৎ সামগ্রী (Ceramics) (iv) পাথর (Stone)
(v) রবার (Rubber)
(vi) মৃত্তিকা (Soil)
(vii) কাঠ (Timber)
(viii) চুন (Lime)
(ix), ইট (Bricks)
(x) কাঠ সদৃশ সামগ্রী (Allied Wood)
(xi) সিমেন্ট (Cement)
(xii) কাচ (Glass) (xiii) প্লাস্টিক (Plastics)
(xiv) লোহা ও ইস্পাত (Iron & Steel)
(xv) বাশ (Bamboo)
(xvi) গৌছ সংকর (Alloy Steel)
(xvii) স্যান্ড পেপার (Sand Paper)
(xviii) উলের সুতা।
(xix) প্লাস্টার অভ পেরিস (Plaster of Paris)
(xcx) লৌহমুক্ত ধাতু (Non-ferrous Metal)
(xoxi) রঙ ও ভার্নিশ (Paint & Varnish)
(xoxii) এমারি ক্লথ পেপার (Emary Cloth Paper)
xxiii) লৌহমুক্ত ধাতু সংকর (Non-ferrous Metal Alloy)
(xoxiv) ফটো ফ্লিম (Photo Flim) ইত্যাদি।