আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের ওয়্যারিং যা অধ্যায়-১৫ এর বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষা ম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের ওয়্যারিং
ওয়্যারিং এর সংজ্ঞা
সাধারণ অর্থে ওয়্যারিং হলো তারের সুশৃঙ্খল সাজানো ব্যবস্থা। বৈদ্যুতিক লোডসমূহ যেমন-বৈদ্যুতিক পাখা, বাতি, মোটর ইত্যাদিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসমূহে যেমন-সুইচ, হোল্ডার, তার ইত্যাদির মাধ্যমে যে সুশৃঙ্খল বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাকে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং বলে। বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং বা তারের সংযোগ সহকারে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করা হয়।
ওয়্যারিং-এর সময় লক্ষণীয় বিষয়
১। ওয়্যারিং মজবুত হওয়া চাই যাতে দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়।
২। ওয়্যারিং এমন হওয়া চাই যাতে গ্রাহকের কোনোরূপ বিপদের আশঙ্কা না থাকে।
৩। ক্যাবল, সুইচ, হোল্ডার প্রভৃতির বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা উপযুক্ত হতে হবে।
৪। আর্থিং ব্যবস্থা ভালো হতে হবে।
৫। ওয়্যারিং সুদৃশ্য হতে হবে।
৬। বাতি, পাখা প্রভৃতির অবস্থান যথাস্থানে বজায় রেখে ওয়্যারিং-এর নকশা এমন হতে হবে যাতে সবচেয়ে কম তার বা ক্যাবল প্রয়োজন হয়।


ওয়্যারিং-এর সাধারণ নিয়ম
১। গ্রাহক ও সাপ্লাই লাইনের মধ্যে মেইন সুইচ সংযোগ করতে হবে। যাতে রিপিয়ার (repair) ও রক্ষণাবেক্ষণ খুব সহজে করা যায়।
২। এমন সাইজের পরিবাহী স্থাপন করতে হবে যাতে ফুল লোড কারেন্ট বহন করতে পারে।
৩। মেঝে হতে সুইচ বোর্ডের উচ্চতা ১.৩ হইতে ১.৫ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং ডিবি-এর উচ্চতা মেঝ হতে ১.৮ মিটার হতে ২.১ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৪। থ্রি-পিন সকেটের জন্য অবশ্যই পৃথক সুইচ (কন্ট্রোলিং) লাগাতে হবে এবং আর্থিং তারও সংযোগ করতে হবে।
৫। ইনক্যান্ডিসেন্ট ল্যাম্পের উচ্চতা মেঝে হতে ২.৫ মিটার এবং সিলিং ফ্যানের উচ্চতা ২.৭৫ মিটার হওয়া প্রয়োজন।
৬। লাইটিং ও পাওয়ার সকেট বাড়িতে ব্যবহার করা হলে অবশ্যই লাইটিং ও পাওয়ার সকেট পৃথক করে ওয়্যারিং করতে হবে।
৭। মোটরকে যাতে কন্ট্রোলিং সার্কিট দিয়ে সহজে পরিচালনা করতে পারে তার বন্দোবস্ত করতে হবে।
৮। নিকেল ইনসুলেশন এবং বৈদ্যুতিক আঘাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকল মেটালিক বডি, কভার কন্ডুইট, মেইন সুইচ ও অ্যাপ্লায়েন্স ইত্যাদি অবশ্যই আর্থিং করতে হবে।
৯। ইলেকট্রিক্যাল বিপজ্জনক নোটিশ দিতে হবে।
১০। প্রতিটি মোটরের সুইচ মোটরের নিকটে বসাতে হবে।
১১। সকল মোটরের ক্ষেত্রে স্টার্টিং ও স্টপিং সুইচ থাকতে হবে।
১২। থ্রি-ফেজ ৪-তার পদ্ধতিতে লোডগুলো সমানভাবে করতে হবে অর্থাৎ ব্যালেন্স করতে হবে।
১৩। শক ট্রিটমেন্ট চার্ট ঝুলাতে হবে এবং আর্থিং টেস্ট করতে হবে।
লে-আউট চিত্রের প্রয়োজনীয়তা: ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং-এর কাজ বড় আকারে না করে অল্প খরচে, কম সময়ে, সহজে এবং সংক্ষেপে প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য লে আউট চিত্রের প্রয়োজনীয়তা আছে।
সার্কিট চিত্রের প্রয়োজনীয়তা: ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়্যারিং এর কাজ সঠিক ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সার্কিট চিত্রের প্রয়োজনীয়তা আছে।
ব্লু প্রিন্ট : ব্লু প্রিন্ট হলো নীল ছাপা বা নকশা বুঝায়। এর মধ্যে কতগুলি বৈদ্যুতিক প্রতীক সংকেত দিয়ে লে-আউট ডায়াগ্রাম করা হয়। যার মাধ্যমে ওয়ার্কসম্যান, ড্রাফটসম্যান, এস্টিমেটর, সুপারভাইজার ও ইঞ্জিনিয়ারগণ সহজে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
ওয়্যারিং-এর ব্লু প্রিন্টের প্রয়োজনীয়তা: কারখানা, আবাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, প্লাজা, টাওয়ারসমূহের ইলেকট্রিক নক্সার স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি ও স্পষ্ট করণের লক্ষ্যে ব্লু প্রিন্ট-এর প্রয়োজন আছে। বৈদ্যুতিক এস্টিমেট করতে হলে ব্লু প্রিন্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কেননা সামান্য ভুলের জন্য সময়, অর্থ এবং শ্রম অপচয় হয়ে যেতে পারে। কাজেই বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং-এর কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নক্সা ব্লু প্রিন্টের একান্ত প্রয়োজন রয়েছে।

ওয়্যারিং-এর শ্রেণিবিভাগ
বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। ওভারহেড ওয়্যারিং (Overhead Wiring)
২। আন্ডারগ্রাইড ওয়্যারিং (Underground Wiring) ও
৩। অভ্যন্তরীণ ওয়্যারিং (Internal Wiring)
ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়্যারিং ঘরের বাইরের উচ্চ ভোল্টেজ সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয় কিন্তু অভ্যন্তরীণ ওয়্যারিং বা হাউজ ওয়্যারিং বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা, অফিস-আদালত প্রভৃতি ছাদবিশিষ্ট জায়গার ভিতরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হয়।
হাউজ ওয়্যারিং প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১। সারফেস ওয়্যারিং (Surface Wiring) ও
২। কনসিন্ড ওয়্যারিং (Conceald Wiring)।
১। সারফেস ওয়্যারিং: যে ওয়্যারিং দেয়ালের সারফেস দিয়ে নেয়া হয়, অর্থাৎ যে ওয়্যারিং দেখা যায় তাকে সারফেস ওয়্যারিং বলে।
সারফেস ওয়্যারিং আবার ৬ প্রকার। যথা-
১। ব্যাটেন ওয়্যারিং (Batten Wiring)
২। চ্যানেল ওয়্যারিং (Channel Wiring)
৩। কন্ডুইট ওয়্যারিং (Conduit Wiring)
৪। ক্লিট ওয়্যারিং (Cleat Wiring)
৫। কেসিং ওয়্যারিং (Casing Wiring)
৬। এমএস ওয়্যারিং (M.S Wiring)
২। কনসিন্ড ওয়্যারিং: দেয়ালের মধ্যে খাঁজ বা চ্যানেল (Channel) কেটে গ্যালভানাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের অথবা পিভিসি কন্ডুইট বা পাইপ বসিয়ে এর ভিতর দিয়ে তার টেনে অথবা শুধু উন্নতমানের পিভিসি তার ব্যবহার করে যে ওয়ারিং করা হয় তাকে কনসিন্ড ওয়্যারিং বা লুকানো ওয়্যারিং বলে।
কনসিন্ড ওয়্যারিং দুই প্রকার। যথা-
১। কনসিন্ড কন্ডুইট ওয়্যারিং (Concealed Conduit Wiring) ও
২। কনসিন্ড ওয়্যারিং (Concealed Wiring)
ব্যবহারের স্থান ও প্রকার অনুযায়ী ওয়্যারিং নির্বাচন:
(১) আবাসিক বিল্ডিং,
(২) ওয়ার্কশপ,
(৩) সিনেমা হল/ অডিটোরিয়াম,
(৪) অস্থায়ী শেডে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ওয়্যারিং
(১) আবাসিক বিল্ডিং (Residential Building): আবাসিক ঘর-বাড়িতে সাধারণত ব্যাটেন ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে শৌখিন অথচ মধ্যম আয়ের কিছু কিছু লোকজন বাড়ি-ঘরে কনসিন্ড ওয়্যারিং বা প্লাস্টারে নিমজ্জিত ওয়্যারিং এবং চ্যানেল ওয়্যারিং ব্যবহার করছেন। আর শৌখিন ও ব্যয়বহুল বাসগৃহে কনসিল্ড কন্ডুইট ওয়ারিং ব্যবহৃত হয়।
(২) ওয়ার্কশপ (Workshop): ওয়ার্কশপ এবং কলকারখানা বা মিল ফ্যাক্টরিতে সাধারণত কনসিল্ড কন্ডুইট ওয়ারিং ব্যবহৃত হয়। এ সমস্ত জায়গায় ওয়্যারিং-এর তারে আঘাত বা আগুন লাগার আশঙ্কা থাকে বলে কনসিন্ড কন্ডুইট ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়।
(৩) সিনেমা হল/অডিটোরিয়াম (Cenema Hall/Auditorium): সিনেমা হল,
অডিটোরিয়াম প্রভৃতি জনসাধারণের জমায়েত স্থানে কনসিন্ড কন্ডুইট ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়। অফিস-আদালতে ব্যাটেন এবং কনসিন্ড ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়।
(৪) অস্থায়ী শেড (Temporary shed): অস্থায়ী শেডে খুব কম সময়ের জন্য ওয়্যারিং করা হয়। কম সময়ের জন্য অস্থায়ীভাবে সাধারণত ক্লিট ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়।
অনুশীলনী-১৫
অতি সংক্ষিপ্ত:
১। ওয়ারিং কী?
২। ব্লু প্রিন্ট কী?
৩। লে-আউট কী?
সংক্ষিপ্ত:
১। ওয়্যারিং এর শ্রেণীবিভাগ উল্লেখ কর।
২। সারফেস ওয়্যারিং (Surface Wiring) কাকে বলে?
৩। কনসিল্ড ওয়্যারিং কাকে বলে?
৪। সারফেস ওয়্যারিং কত প্রকার?
৫। চ্যানেল, ওয়্যারিং, সংযোগ পদ্ধতি কত প্রকার?
রচনামূলক:
১। ওয়্যারিং সংযোগ প্রণালি বর্ণনা কর।
২। ওয়্যারিং বলতে কী বুঝায়? ওয়্যারিং-এর সময় লক্ষণীয় বিষয়সমূহ কী?
৩। ব্যবহারের স্থান ও প্রকার অনুযায়ী ওয়্যারিং নির্বাচন প্রণালি বর্ণনা কর।
আরও দেখুন :