আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – বৈদ্যুতিক তার ও ক্যাবল যা অধ্যায়-১৩ এর বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষা ম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
বৈদ্যুতিক তার ও ক্যাবল
বৈদ্যুতিক তার ও ক্যাবল
তার : তার হলো অল্প কারেন্ট পরিবহনের উপযোগী পরিবাহী। এর উপর হাল্কা ইনসুলেশন থাকে।
ক্যাবল: বেশি কারেন্ট বহনযোগ্য পরিবাহীকে ক্যাবল বলে। এর উপর যথোপযুক্ত মানের ইনসুলেশন থাকে। তার অপেক্ষা ক্যাবলের কারেন্ট বহন ক্ষমতা ও ভোল্টেজ গ্রেড বেশি হয়ে থাকে।
বৈদ্যুতিক তারের সাইজ ও পরিচিতি উল্লেখ করতে পারবে
সাধারণত তারকে দুইভাগে ভাগ করা হয়-
সাধারণ তার বা গুহার (Wire ) :
ইনসুলেশন বিহীন কিংবা ইনসুলেশন আচ্ছাদিত এক থেই বা বহু খেই বিশিষ্ট অল্প কারেন্ট বহনকারী পরিবাহীকে তার বলে। তারের তালিকা নিম্নরূপ:
১। পিভিসি তার (P.V.C Wire)
২। ভিজাইয়ার তার (V.I.R Wire)
৩। সিটি এস ভার (C.T.S Wire)
৪। টিআরএস তার (T.R.S Wire)
৫। নিড শিখেড তার (Lead Sheathed Wire)
৬। ওয়েদার প্রুফ ইনসুলেশন ওয়ালা তার (Weather Proof Insulation Wire)
৭। ফ্লেক্সিবল তার (Flexible wire),
৮। প্লাস্টিক ইনসুলেটেড ভাৱ (Plastic Insulated Wire)
৯। ইউরেকা তার (Eureka Wire),
১০। নাইক্রোম তার (Nichrome Wire).
১১। সুপার এনামেল তার (Supper Bnameled Wire)
ক্যাবল (Cable) বা রজ্জু (খেইযুক্ত)
ইনসুলেশনযুক্ত এক খেই বা বহু খেই বিশিষ্ট বেশি কারেন্ট বহনকারী পরিবাহীকে ক্যাবল বা রজ্জু (খেইযুক্ত) বলে। বিভিন্ন সাইজের এবং প্রস্থচ্ছেদীয় ক্ষেত্রফলের ক্যাবল হয়ে থাকে। যেমন- ১.৫, ২.৫, ৪, ৬, ১০, ১৬, ২৫, —- ১০০০ বর্গ মিলিমিটার।
একাধিক তার যখন মোড়ানো থাকে, তখন তাকে খেই বিশিষ্ট তার বা রজ্জু তার বা ক্যাবল বলে। আবার পৃথক প্রতিটি পরিবাহীকে খেই বলে। ক্যাবলের তালিকা নিম্নরূপ :
১। পিডিসি ক্যাবল (PVC Cable)
২। ভিআইআর ক্যাবল (V.1.R Cable)
৩। সিটি এস ক্যাবল (CTS Cable)
৪। লীড শীথেড ক্যাবল (Lead Sheathed Cable)
৫। পেপার ইনস্যুলেটেড লিড কভার ক্যাবল (Paper Insulated Lead Covered Cable),
৬। প্লাস্টিক ইনস্যুলেটেড লিড ক্যাবল (Varnish Cambrix Cable
৭। ভার্নিস কেমব্রিক ক্যাবল (Varnish Cambric Cable)
বিভিন্ন কোরের (Core) তার কোর (Core)
এক বা একাধিক মোড়ানো তারকে কোর বলে। এটা মালটি কোর হতে পারে; যেমন- এক কোর, দুই কোর, তিন কোর, চার কোর ও পাঁচ কোর হতে পারে। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার খেইযুক্ত তারের পার্থক্য দেয়া হলো :-
১। এক খেই তারের চাইতে বহু খেই বিশিষ্ট তারের সুবিধা বেশি।
২। বহু খেই বিশিষ্ট তার নমনীয় হয়। সামান্য বাঁকালেও এর কোনো ইনসুলেশন নষ্ট হয় না। তা ছাড়া সহজে মাটিতে পাতানো যায় এবং তুলনামূলকভাবে এক হারা (খেই) তারের চাইতে বহু খেই বিশিষ্ট তার ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
৩। বহু খেই বিশিষ্ট তারের সংযোগ খুব শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৪। এক খেই বিশিষ্ট তার ওভার হেড লাইনে কম্পনের ফলে ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু বহু খেই বিশিষ্ট তার কখনও কম্পনের ফলে ভেঙে যায় না।
৫। বহু খেই বিশিষ্ট তারের ইনসুলেশন খুব মজবুত হয়।
৬। বহু খেই বিশিষ্ট তারের মধ্যে তৈল ভর্তি থাকে। যা ক্যাবলকে ঠান্ডা এবং ইনসুলেটেড করে রাখে।
তারের সাইজ বলতে তারের কোর সংখ্যা, সেই সংখ্যায় প্রতি খেইয়ের ব্যাস বা গেজ নং এবং ভোল্টেজ গ্রেড বা ইনসুলেশন কেমন ইত্যাদি বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, তারের সাইজ ১/১/0088 (250 / 440Volts), 2×3/0.029 (250/440v) পিভিসি তার বলতে বোঝায় ২৫০ / ৪৪০ volt গ্রেডের পিভিসি টুইন কোর তার, যার প্রতি কোরের মধ্যে তিনটি করে খেই আছে এবং প্রতিটি খেই-এর ব্যাস 0.029″ আবার,
1×3/0.036″ (250/440v) পিভিসি তার বলতে ১ স্টান্ডের ০.০৩৬” ব্যাসের পিভিসি তার বোঝায়, যার কোর ১টি এবং ভোল্টেজ গ্রেড ২৫০ / ৪৪০ volts ৭/০.০৩৬” বা ৭/২০ তার বলতে ৭ গাঁথা খেই পাকানো কন্ডাক্টর যার প্রতি খেইয়ের ব্যাস ০.০৩৬ বা ৭ খেই বিশিষ্ট ২০ গেজের তার বোঝায়।

তার ও ক্যাবল এর পার্থক্য
তার
১। তারের উপর ইনসুলেশন থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে।
২। তার সাধারণত কম কারেন্ট বহণ করতে পারে।
৩। তার সাধারণত ওভারহেড লাইনে, আর্থিং, মোটর ট্রান্সফরমার, ইলেকট্রিক কয়েল, হিটিং কয়েল এবং ডায়নামো ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪। তার সাধারণত মাঝারি ভোল্টেজ-এ ব্যবহার করা হয়।
৫। তার সাধারণত এক খেই বা স্ট্র্যান্ডেড হতে পারে।
ক্যাবল
১। কিন্তু ক্যাবল এর উপর অবশ্যই ইনসুলেশন থাকবে।
২। কিন্তু ক্যাবল তুলনামূলকভাবে উচ্চ কারেন্ট বহন করতে পারে।
৩। ক্যাবল সাধারণত আন্ডারগ্রাউন্ড ও ওভারহেড লাইনে ব্যবহার করা হয়।
৪। ক্যাবল সাধারণত মাঝারি ও উচ্চ ভোল্টেজ, উভয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫। ক্যাবল সাধারণত বহু খেই বা স্ট্র্যান্ডেড হতে পারে।
তারের ইনসুলেশনের কালার অনুযায়ী ব্যবহার :
মাইকা (Mica) : এটা খনিজ ধাতু। এটা সিট আকারে বাজারে পাওয়া যায়। একে যখন বাঁকানো হয়, তখন সহজে ভেঙে যায়। ডাই ইলেকট্রিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ছোট ক্যাপাসিটরে এবং হিটিং এলিমেন্টেও ব্যবহার হইয়া থাকে।
মাইকা নাইট (Mica Nite) : এটা মাইকা কিন্তু ভার্নিস কাপড় অথবা কাগজ দিয়ে মাইকা নাইট তৈয়ারি করা হয়। এটা কাম্যুটেটর সেগমেন্ট হাই ভোল্টেজ বুশিং এবং আর্মেচার এর ওয়াইন্ডিং-এ ব্যবহার হয়ে থাকে।
গ্লাস (Glass) : এটা খুব ভালো ইনসুলেটিং পদার্থ। এটা ওভারহেড লাইনে ইনসুলেটর হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। গ্লাস ট্যাপ ও গ্লাস কাপড় সূক্ষ্ম গ্লাস সুতা হতে তৈরি করা হয়ে থাকে। এটা যান্ত্রিক শক্তি নমনীয়তা ও তাপ সহনশীল। সুতরাং এটা মোটর ওয়াইন্ডিং-এ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
চিনামাটি (Porcelain) : এটা ওভারহেড লাইনের ইনসুলেটর হোল্ডার বুশিং এবং ক্লিট হিসাবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
রাবার (Rubber & Rubber Products): বিশুদ্ধ রাবার হিট এবং আর্দ্রতা দিয়ে কৃত্রিম ভাবপূর্ণ হয়। রাবার থেকে (VIR) ভি.আই.আর ইনসুলেশন তৈরি হয়। এই (VIR) ভি.আই. আর ইনসুলেশন, লো ভোল্টেজ এবং মাঝারি ভোল্টেজের ক্যাবলেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
কাগজ (Paper): এটা অত্যন্ত ভাল ইনসুলেশন। যখন কাগজকে ক্যাবল এর ইনসুলেশন হিসাবে ব্যবহার করা হয় তখন রেজিন (Regin ) তৈলের মধ্যে কাগজ অনুপ্রবেশ করানো হয়। আবার যখন মোটর ওয়াইন্ডিং এ ব্যবহার করা হয় তখন ভার্নিসের প্রলেপ দেয়া হয়। কাগজকে ক্যাপাসিটরে ব্যবহার করা হলে প্যারাফিন মোমের মধ্যে সিক্ত করানো হয়।
তুলা ও রেশন (Cotton and Silk): এটা আর্মেচার ওয়াইন্ডিং তারের উপর আবরণ হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন- সিংগেল কটন আবরণ (S.S.C) তার, ডাবল কটন আবরণ (D.C.C) তার এবং সিঙ্গেল সিল্ক আবরণ (S.S.C) ইত্যাদি। অ্যামপিয়ার টেপ, কটন টেপ, অ্যাডহিসাইন টেপ (adhesine) ইত্যাদি কটন টেপ ইনসুলেশন জয়েন্ট ও ওয়াইন্ডিং কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
ব্যাকেলাইট (Bakelite): ব্যাকেলাইট একটি ব্যবসায়িক নাম। যা সিনথেটিক রেসিন হতে তৈরি হয়। এই ব্যাকেলাইট দিয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্টের বেজ এবং বোর্ড তৈরি করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসও তৈরি করা হয়। যেমন- মেইন সুইচ, সুইচ, ল্যাম্প হোল্ডার, ওয়াল সকেট, সিলিং রোজ ও প্লাগ ইত্যাদি।
পলিভিনাইল ক্লোরাইড (Polyvinyl Chloride): একে সংক্ষেপে P.V.C বলে এবং এটা প্লাস্টিক হতে তৈরি। এটা তারের আবরণ ইনসুলেটিং স্লিভ ও ক্যাবলের স্লিভ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পি.ডি.সি উচ্চ রেজিস্ট্যান্সসম্পন্ন তাই আর্দ্রতা, রেদ্রতা, কেমিক্যাল ও অগ্নিশিখা হতে তারকে রক্ষা করে। এটা ভি.আই.আর ইন্স্যুলেশনের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।
এসবেস্টস (Asbestos ): এটা আঁশযুক্ত পদার্থ। আর্কশট (Are Chutes), বেরিয়ার, লো-ভোল্টেজ টার্মিনাল বোর্ড এবং সাপোর্ট হিসাবে এসবেস্টস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অ্যাসবেস্টস অল্প গরম জায়গায় আবরণ হিসাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এসবেস্টস কাগজের ট্যাপস পরিবাহীর আবরণ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তৈল (Oil): ভৈল ইনসুলেশন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যা ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ও হাই-ভোল্টেজ ক্যাবলকে ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। খনিজ তৈল ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপারটাস এ ইনসুলেটিং হিসাবেও ব্যবহার হয়।
ইনসুলেটিং পদার্থের শ্রেণীবিভাগ :
অনুশীলনী-১৩
অতি সংক্ষিপ্ত
১। তার কী?
২। ক্যাবল কী?
৩। কোর কাকে বলে?
৪। তারকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়?
সংক্ষিপ্ত
১। সাধারন তার কী? ব্যাখ্যা কর।
২। ক্যাবল কী? ব্যাখ্যা কর।
৩। কোর কী? ব্যাখ্যা কর।
৪। তারের সাইজ বলতে কী বোঝ ?
রচনামূলক
১। তার ও ক্যাবলের তালিকা তৈরি কর।
২। তার ও ক্যাবলের পার্থক্য ছকের মাধ্যমে লেখ।
৩। তারের ইনসুলেশনের কালার অনুযায়ী কীভাবে ব্যবহার করতে হয় বর্ণনা কর।
৪। ইনসুলেটিং পদার্থকে ছকের মাধ্যমে দেখাও।
আরও দেখুন :