আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ । শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ
হ্যামারের রক্ষণাবেক্ষণ
- হাতলে (handle) কোনো ফাটল আছে কিনা চেক করতে হবে। ফাটল থাকলে হাতল পরিবর্তন করতে হবে।
- খিল বা ওয়েজ দিয়ে হেড বা নেক (neck) শক্তভাবে যুক্ত আছে কিনা তা চেক করতে হবে। প্রয়োজনে ওয়েজ পরিবর্তন করতে হবে।
- নিয়মিতভাবে কাঠের হাতলে অল্প পরিমাণে তিশির (linseed) তেল দিয়ে মালিশ করতে হবে যাতে কাঠ শুকিয়ে বাঁকিয়ে না যায়।
- যদি ফেস (face) বা ক্ল (claw) ক্ষয় বা ভেঙে যায় তাহলে পরিবর্তন করতে হবে।
- দীর্ঘদিন পর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বা কাজ শেষে মাঝে মাঝে লোহার অংশগুলো ভালোমতো তেল দিয়ে মালিশ করে যত্ন সহকারে রেখে দিতে হবে।
- রাবার ম্যালেটগুলো যাতে ক্ষয় না হয় সেজন্য তেল বা গ্রিজ লাগাতে হবে।

বিভিন্ন প্রকার ‘স’ এর রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- ব্যবহার ক্ষেত্র অনুযায়ী করাত ব্যবহার করা উচিত।
- কাঠ কাটার স দিয়ে কখনও লোহা বা কোনো ধাতু কাটা যাবে না।
- কাজ শুরুর পূর্বে স’ তে উত্তমরুপে ধার দিয়ে নিতে হবে।
- স’ এমন ভাবে ধরে কাটতে হবে যাতে এর দাঁতের ক্ষতি না হয়।
- ভারী টুলস বা বন্ধু বেডের উপর রাখা যাবে না যাতে বেডের ক্ষতি হয়।
- স’ বেধে গেলে স’ তে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা যাবে না। প্রয়োজনে কাটা অংশ ফাঁক করতে ওয়েজ বা মিল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যখন দরকার পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত স-এর হাতল পরিবর্তন করতে হবে।
- স’ এর দাঁত ভাল রাখতে ফাইল দিয়ে মাঝে মাঝে ঘষতে হবে।
- হ্যাক স’ এর কাজ শেষে বেড ঢিলা করে রাখতে হবে।
- যথাস্থানে সংরক্ষণের জন্য কাজ শেষে বেড় খুলে রাখতে হবে।
- মাঠের সাথে কৌণিকতাবে ধরে কাঠ কাটতে হবে।
- মরিচার হাত হতে রক্ষার জন্য মাঝে মাঝে মোম পালিশ দিয়ে স’ এর দাঁতে মালিশ করতে হবে।
- হ্যান্ড ড্রিল ও হ্যান্ড পাওয়ার ট্রিলের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
হ্যান্ড ড্রিল
- সকল ধাতু দিয়ে তৈরি পৃষ্ঠে হালকা তেল লাগাতে হবে।
- গিয়ারের দাঁত একটি ছোট কাপড়ের টুকরা দিয়ে মুছে তেল লাগতে হবে।
- হ্যান্ড ড্রিল কোনো নিরাপদ শুষ্ক স্থানে বা র্যাকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
- ছিল বিটের উপর কখনও হাতুড়ি বা চিজেল দ্বারা আঘাত করা যাবে না।

হ্যান্ড পাওয়ার ড্রিল:
- সঠিক মাপের বিট ব্যবহার করতে হবে।
- ড্রিল বিট সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং মসৃণ রাখতে হবে। বিট মসলা বা মরিচাযুক্ত থাকলে চিপস আটকা পড়ে।
- তার ও প্লাগ সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
- তাপ, ধারালো বস্তু ইত্যাদি হতে তারকে দূরে রাখতে হবে।
- ব্যাটারি চালিত পাওয়ার ড্রিল হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যাটারি মজুদ রাখতে হবে।
- কাজ শেষে ড্রিল মেশিনকে হালকা কাপড় দ্বারা মুছে নির্দিষ্ট বাক্সে তুলে রাখতে হবে।

মেজারিং টেপসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- কাপড়ের টেপ বা ফিতা যেন পানিতে ভিজে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- কাপড়ের ফিতার উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করা।
- ইস্পাত বা স্টিলের তৈরি টেপকে কখনো পাক দেওয়া বা উল্টা দিকে ভাঁজ করা নিষেধ।
- ব্যবহার শেষে টেপসমূহকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে যত্নসহকারে উঠিয়ে রাখা উচিত।
- সম্ভব হলে প্রতিদিন স্টিল টেপের উভয় দিকে মোম লাগতে হবে।
বিভিন্ন প্রকার কাটিং টুলের রক্ষণাবেক্ষণ
- ক্ষয়প্রাপ্ত কাটার প্রয়োজন মাত্র পরিবর্তন করতে হবে।
- কাটিং টুলসগুলোকে ধারালো করে রাখতে হবে।
- কাটিং প্রান্তে হাতুড়ি বা অনুরূপ কিছু দিয়ে আঘাত করা যাবে না।
- পানি বা আর্দ্র পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে।
- ঘূর্ণায়মান অংশগুলোতে তেল লাগাতে হবে।
- কাজ শেষে রাখার সময় ময়লা সরিয়ে কাটারে গ্রিজ লাগাতে হবে এবং ধাতব অংশে তেল দিতে হবে যাতে মরিচা না পড়ে।
- টুল বক্সের বিশেষ অংশে কাটার রাখতে হবে বা কোনো সেলফে রাখতে হবে যাতে পড়ে না যায়।
কংক্রিটের মিক্সচার মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- প্রতিদিনের কাজের শেষে মিক্সচার মেশিন ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- নিয়মিতভাবে ব্রেড এবং ক্রেপার পরিবর্তন করতে হবে।
- মেশিনের কোনো রকম ক্ষতি হলে সাথে সাথে মেরামত করতে হবে।
- মেশিনের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ যত্নসহকারে রাখতে হবে।
- দক্ষ কর্মী দিয়ে মেশিন চালাতে হবে।
- ড্রামের ভিতর কংক্রিট জমে পিও তৈরি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- মেশিনকে খোলা স্থানে, রোদ-বৃষ্টিতে না রেখে নিরাপদ শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে।
- লোহার তৈরি অংশগুলোতে রং করে রাখতে হবে যাতে মরিচা না পড়ে।
ভাইব্রেটর রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- ভাইব্রেটরের হেডে যদি কোনো কংক্রিট লেগে থাকে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- একটি নরম কাপড় দিয়ে হেড এবং যন্ত্রের অন্যান্য অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে।
- পরিষ্কারের সময় ইঞ্জিনের ভিতর যেন তরল পদার্থ ঢুকতে না পারে।
- সঠিক এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে কাজে ব্যবহার করতে হবে।
- প্রতিবার কাজ শুরুর পূর্বে এবং পরে ভাইব্রেটিং হেডসহ সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
- ইঞ্জিন তেল কম বা না থাকা অবস্থায় ইঞ্জিন চালানো যাবে না। এতে পুরো ইউনিট স্থায়ীভাবে নষ্ট হতে পারে।
- পরিষ্কার স্থানে আগুন জাতীয় জিনিস, ইউটিলিটিস লাইন হতে নিরাপদ দূরত্বে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইত্যাদি হতে নিরাপদ স্থানে ভাইব্রেটর ব্যবহার করতে হবে যাতে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
বিভিন্ন প্রকার স্পিরিট লেভেলের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- হালকা এবং স্পর্শকাতর যন্ত্র এজন্য সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
- কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে অন্য কোনো বস্তু দ্বারা এটি আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।
- কোন রকম ময়লা লাগলে সাথে সাথে পরিষ্কার করতে হবে।
- কাজ শেষে টুল বক্সে যত্নসহ রেখে দিতে হবে।

ট্রাইস্কয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- ট্রাইস্কয়ার দ্বারা কোনো বস্তুর উপর আঘাত করা উচিত নয় এবং হাতুড়ির মতো ব্যবহার করা উচিত নয়।
- একে কার্যক্ষেত্রে যত্নের সাথে ব্যবহার করতে হবে অন্যথায় এর সুক্ষ্মতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- কাজ করার সময় যেন হাতল বা বেডে কোনোরূপ চাপ না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- কাজ শেষে পানি দিয়ে ধৌত করে নরম কাপড় দ্বারা মুছে টুল বক্সে রেখে দিতে হবে।
ফ্লোটিং মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুতকারক কর্তৃক সরবরাহকৃত সকল প্রকার নির্দেশনা এবং সতর্কতা পড়ে নিতে হবে।
- উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি (appropriate personal protective equipment (PPE) যেমন-
- নিরাপত্তা চশমা, কান রক্ষা, বুট হ্যাট ইত্যাদি পরিধান করে ব্যবহার করতে হবে।
- কোনো রকম মেরামতের প্রয়োজন পড়লে সাথে সাথে মেরামত করতে হবে।
- বাতাস চলাচল করে এরকম জায়গায় গ্যাসচালিত মেশিন চালাতে হবে।
- অপারেটর ছাড়া অন্য কেউ চালানো বা ব্যবহার করা উচিত হবে না।
- তেল বা গ্যাস ভালোমতো রিফিল করে ব্যবহার করতে হবে।
- মোটামুটিভাবে জমাট বাঁধা কংক্রিট যেখানে অপারেটরের পা এর ছাপ খুব বেশি পড়বে না তখন ফ্লোটিং মেশিন ব্যবহার করতে হবে।
- ব্যবহার করার পর ভালোমতো পরিষ্কার করে শুষ্ক স্থানে রেখে দিতে হবে।
আরও দেখুনঃ