আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ইমারত সামগ্রীর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা।
ইমারত সামগ্রীর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা
ইমারত সামগ্রির মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা
১৩.১ ইটের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষার বর্ণনা
* একটি ইট নিয়ে তার গায়ে নখের আঁচড় কাটার চেষ্টা করলে তাতে আঁচড় পড়বে না। যদি আঁচড় পড়ে তাহলে বুঝতে হবে ইটটি ভালো নয়।
* একটি ইটকে অন্য একটি ইট দিয়ে আঘাত করলে যদি ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয় তাহলে বুঝতে হবে ইটটি ভালো।
* দুইটি ইটকে টি (” T “) আকৃতিতে ধরে ২মিটার উঁচু হতে ফেলে দিলে ভাঙবে না। যদি না ভাঙে তবে বুঝতে হবে ইটটি ভালো।
* একটি পাত্রে যদি ইট ভেজানো হয় এবং বুঁদবুঁদ সহকারে বেশ পরিমাণ পানি শোষণ করে নেয় এবং পানি ঘোলাটে হয় তবে এটি ভালো ইট নয়।
* ইট ভেঙে টুকরা করা হলে যদি টুকরাগুলোর রং দেখতে একই রকম হয় তবে এটি ভালো ইট।
১৩.২ বালুর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষার বর্ণনা
* বালু খালি চোখে পরীক্ষা করলে যদি বালুর আকার কোণাকার ও ধারালো দেখা যায় তাহলে ঐ বালি উত্তম বালু
* জিহ্বায় লাগিয়ে স্বাদ নিলে সহজেই লবণের উপস্থিতি বোঝা যাবে।
* বালুর রং দেখতে সাদা হলে এবং কোয়ার্টেজ খনিজের কণা লাল হলে লৌহ অক্সাইডের উপস্থিতি বুঝতে হবে।
* গ্লাসে পানি মিশ্রিত বালি ঝাঁকিয়ে রেখে দিলে তলায় বালি তার উপরে পলি এবং সর্ব উপরে ঝাঁদা দেখা যাবে।
* একক আয়তনের বালি শুকনো অবস্থায় ওজন নিয়ে পরে পানিতে ধৌত করে নিতে হবে। ধৌত বালির পুনরায় ওজন নিতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বারের ওজনের পার্থক্য থেকে অপদ্রব্যের পরিমাণ জানা যাবে।
১৩৩ সিমেন্টের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষার বর্ণনা
* সিমেন্টের রং ধূসর না হয়ে লাল বা কালচে হলে বুঝতে হবে অপদ্রব্য মিশ্রিত আছে। * দুই আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে ঘষা দিলে যদি আঠালো মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে ভালো সিমেন্ট।
* কিছু পরিমাণ সিমেন্ট পানিতে ছেড়ে দিলে যদি আঠালো ডুবে যায় তাহলে বুঝতে হবে ভালো সিমেন্ট ।
* সিমেন্টে বস্তার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলে ভালো সিমেন্ট ঠাণ্ডা অনুভূত হবে।
* নাকে শুঁকলে মাটি বা পলি থাকলে মাটির গন্ধ পাওয়া যাবে।
* গ্লাস প্লেটের উপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে না ফেটে জমাট বাঁধলে বুঝতে হবে ভালো সিমেন্ট।

১৩.৪ চুনের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষার বর্ণনা
* অগলিকৃত চুন শক্ত পিণ্ডাকারে থাকবে।
* পাউডার হলে চুনের গুণাগুণ নষ্ট হয় ।
* চুনের কোনো প্রকার জ্বালানি ছাই থাকবে না ।
* জুনে পানি দিলে হিসহিস শব্দ হবে এবং তাপ উৎপন্ন হবে ।
১৩.৫ বিভিন্ন ধরনের কাঠ শনাক্ত করার উপায় বর্ণনা
* ভালো কাঠের রঙের সাম্যতা থাকবে।
* ভালো কাঠে কোনো প্রকার ফাটল থাকবেনা। কোনো প্রকার গিট থাকবে না ।
* মোচড় বা দুমড়ানো আঁশ দেখা যাবে না।
* আঁশগুলো সরল মসৃন হবে।
* কাঠ থেকে কোন প্রকার দুর্গন্ধ বের হবে না।
* হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে স্পষ্ট শব্দ হবে।
* কাঠ ওজনে ভারী হলে শক্ত ও মজবুত হবে।
১) সেগুন : স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তার দিক থেকে এটি অসাধারণ কাঠ। প্রাকৃতিকভাবেই সবচেয়ে ভালো কাঠ। এর স্থায়িত্বকাল সবচেয়ে বেশি। এতে পোকামাকড় ধরে না। এর টেক্সার বা পৃষ্ঠ খুব সুন্দর। সাধারণত … ফার্নিচার বা আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। এই কাঠের দামও বেশি।
২) দেবদারু : এটিও বেশ ভালো কাঠ। এর ওজন সেজন থেকে ২০ শতাংশ কম। এই কাঠের পলিশ হয় না। তাই এই কাঠ দিয়ে আসবাব তৈরি করা হয়না। তবে কাঠের বাড়ি নির্মাণে এই কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৩) শাল : শাল কাঠ সেগুন থেকে ৩০ শতাংশ ভারি এবং ৫০ শতাংশ শক্ত। বীম, ফ্লোর ইত্যাদিতে এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। ভারী মালামাল ওঠা-নামাতে এই কাঠ অনেক সময় ব্যবহার করা হয়। এর স্থায়িত্বকাল অনেক বেশি এবং পানিতেও খুব বেশি নষ্ট হয় না। তাই বিভিন্ন রাফ কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।
৪) ঝাউ : এটি অত বেশি ভালো কাঠ না। তবে কাটা-কাটি, রান্না করা এবং কাজ করা সহজ। এই কাঠ বেশ মসৃন তল পাওয়া যায়। তবে পলিশের চেয়ে রঙ করা ভালো। হালকা আসবাব তৈরিতে এর ব্যবহার হয়।
৫) প্লাই বোর্ড : একাধিক পাতলা কাঠের পাত আঠা দিয়ে প্রবল চাপে লাগিয়ে এই বোর্ড তৈরি করা হয়। বিভিন্ন পুরুত্বের এবং বিভিন্ন কাঠের সমন্বয়ে এই বোর্ড তৈরি হয়ে থাকে। কাঠের নাম এবং গুরুত্ব অনুযায়ী এর নাম হয়।
৬) পার্টিকেল বোর্ডঃ কাঠ, কৃষি বা অন্যান্য বর্জ্য উপাদান দিয়ে এই বোর্ড তৈরি করা হয়। বর্জ্যগুলো ছোট ছোট টুকরা বা গুড়া করে আঠার সাহয্যে লাগানো হয়। এবং মসৃন পাতের মতো করা হয়।
অনুশীলনী – ১৩
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
১। প্লাই বোর্ড কী?
২। পার্টিকেল বোর্ড কী? ৩। সেগুন কাঠের বর্ণনা লেখ ।
৫। ইটের “T” পরীক্ষা কী?
৬। সিমেন্টে অপদ্রব্য মিশে আছে কিনা, তা কীভাবে বোঝা যায় ? ৭। কত ঘণ্টা ডুবানোর পর বুঝা যায় ভালো সিমেন্ট?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১। সিমেন্টের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা বলতে কী বোঝ?
২। বালুর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা বলতে কী বোঝ?
৩। ইটের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা বলতে কী বোঝ?
৪। চুনের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা বলতে কী বোঝ?
৫। কাঠের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা বলতে কী বোঝ? ৬। বিভিন্ন ধরনের কাঠ শনাক্ত করার উপায় বর্ণনা কর।
রচনামূলক :
১। সিমেন্টের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা কর।
২। বালু মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা কর।
৩। ইটের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
৪। চুনেরমাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা কর।
৫। কাঠের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
আরও দেখুনঃ