বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি।

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

মাটির সংগা

মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম ও লামানার আবরণ। পাচ্চর ড়ো হয়ে সৃষ্ট নানালার কণা এবং জৈব পদার্থ মিশ্রিত হয়ে মাটি গঠিত হয়। জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে ভূমি ক্ষয় আবহবিকার, বিছুর্ণিভবন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পাথর থেকে মাটির উদ্ভব হয়েছে। ভূ-ত্বক, ভাল কর, বায়ু জ্বর এবং জৈব স্তরের মিথকিরার মাধ্যমে পাথর থেকে মাটি তৈরি হয়। শুকনো গুঁড়ো মাটিকে সাধারণভাবে ধুলো বা হয়।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

মাটিতে খনিজ এবং জৈব পদার্থের মিশ্রণ রয়েছে। এর উপাদানগুলো কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থার মাটিতে বিদ্যমান। মাটির কণাগুলো আলগাভাবে যুক্ত, ফলে এর মধ্যে বাতাস ও জল চলাচলের পথের জায়গা রয়েছে। এজন্য মাটিকে বিজ্ঞানীরা ত্রিদশা পদার্থ (Three state system) বলে অভিহিত করেন। অধিকাংশ এলাকার মাটির অনত্ব ১ থেকে ২ গ্রাম/খন সে.মি.। পৃথিবীর উপরিভাগের অধিকাংশ মাটিই Tertiary যুগের পরে পঠিত হয়েছে, তাই আর কোনো স্থানেই Pleistocene যুগের পুরনো মাটি নেই।

মাটি হলো ভূপৃষ্ঠের উপরিতলের নরম খনিজ এবং জৈব উপাদানের মিশ্রণ যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মাটি প্রধানত ৪টি প্রধান উপাদান সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো নিচে উল্লিখিত হলো:

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

মাটির শ্রেণিবিভাগ এবং গুণাগুণ

বিভিন্নভাবে মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা মাটির প্রকারভেদ করেছেন। তন্মধ্যে বেলে, এঁটেল দো-আঁশ এবং পলিমাটি অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের মাটির মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে এবং কোনো বিশেষ কাজে মাটির উপযোগিতা যাচাই করার জন্য মাটির বিভিন্ন রকমের শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। পূর্বে এরকম একটি ধারণা ছিল যে, মাটি তৈরির উপকরণ এবং কারণগুলিই মাটিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বহির্গঠন দান করে। এই ধারণা অনুযায়ী বানানো প্রথম দিককার শ্রেণিবিভাগ গুলির মধ্যে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক Dokuchaev ( দকুচেভ)- এরটি উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী কালে অনেক আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ান গবেষক এটিকে উন্নত করে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ একটি গ্রহণযোগ্য শ্রেণিবিভাগ তৈরি করেন। ষাটের দশকে একটি অন্য ধরনের শ্রেণিবিভাগ তৈরি হয়, যেখানে মাটি তৈরির উপকরণ ও কারণের থেকে মাটির বহির্গঠনের উপর বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে এটি ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে । World Reference Base for Soil Resources (WRB) নামের সংস্থাটি মাটির আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিভাগের কাজে ব্যাপৃত ।

বালু, পলি ও কাঁদা-এই তিনটি স্বতন্ত্র মাটিকণার তুলনামূলক অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে মাটির বুনটসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাটি বিভিন্ন অনুপাতে বালু, পলি ও কাঁদাকণা ধারণ করে থাকে। কোনো মাটিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি, আবার কোনোটাতে কাঁদাকণার পরিমাণ বেশি। এই পরিবর্তনের নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে মাটিকে ১২টি গ্রুপ বা দলে বিভক্ত করা হয়। এই দলগুলোই বুনট-ভিত্তিক শ্রেণি বলে পরিচিত। এই শ্রেণিগুলোর একটি হতে অন্যটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

মাটির বুনট শ্রেণি (আন্তর্জাতিক) :

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

কাঁদা মাটি : যে মাটিতে অধিক পরিমাণ কাদা থাকে তাকে কাঁদা মাটি বলে।

পলি মাটি : যে মাটি অধিক পরিমাণ পলি কণা ধারণ করে তাকে পলি মাটি বলে।

বালু মাটি : যে মাটিতে বালু কণার পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বালু মাটি বলে।

দোআঁশ মাটি : যদি কোনো মাটি এই তিনটি শ্রেণির একটিরও প্রভাব বিস্তারকারী ভৌত বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন না করে (যেমন ৪০% বালু কণা, ২০% কাঁদা কণা ও ৪০% পলি-কণা যুক্ত মাটি) তবে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। দোআঁশ মাটিতে বালু, পলি ও কাদা ফলার শতকরা পরিমাণ সমান থাকে না। কিন্তু এ বালু, পলি ও কাঁদা কণাসমূহের কাছাকাছি প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম প্রদর্শন করে।

মাটির গুণাগুণ :

নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত মাটি নবন যুক্ত হবে।

উৎকৃষ্ট মানের মাটিতে কাঁদা এবং বালুর পরিমান সুষম থাকবে যাতে সহজে মন্ডিং করা যায়।

মাটিকে লাইম, আয়রন অক্সাইড এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকা উচিত।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

মাটির পুষ্টিমান ও পিএইচ অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাসঃ

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

অঞ্চলভেদে মাটির গুণাগুণ : মাটির গঠন, বর্ণ, পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মাটিকে সাধারণভাবে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এ ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটির শ্রেণিবিন্যাস প্রাকৃতিক নিচের সারণিতে দেয়া হলো :

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

মাটির বিভিন্ন গুণাগুণের অনুকূল মাত্রা দেয়া হলো-

পিএইচ: ৬.৫ – ৯.০

জৈব কার্বন: ১.৫ – ২০%

জৈব পদার্থ: ২.৫ – ৪.৩ (মি.গ্রা./১০০গ্ৰা.)

নাইট্রোজেন : ৮ – ১০ মি.গ্রা./ ১০০গ্ৰা.

ফসফরাস : ১০ – ১৫ মি. গ্রা./১০০গ্ৰা.

মাটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা

পদ্ধতিগতভাবে বিচার করলে সয়েল টেস্ট বা মাটি পরীক্ষা ছাড়া ইমারতের ভিত্তির ডিজাইন করা উচিত নয়। যে স্থানে কাঠামো গড়ে উঠবে সেখানে মাটির প্রকৃত ভার বহন ক্ষমতা যাচাই করেই ভিত্তি নির্ধারণ হওয়া বাঞ্ছনীয় । সয়েল টেস্ট করতে গিয়ে যে খরচ হয় দেখা গেছে উক্ত খরচ উপকারের তুলনায় কিছুই নয়। মনে করা যাক মাটি পরীক্ষা না করেই প্রতি বর্গফুটে ১ টন ভার বহন ক্ষমতা ধরে ডিজাইন করা হল। কিন্তু সয়েল টেস্ট করে দেখা গেল প্রকৃতপক্ষে ভার বহন ক্ষমতা ১ টনের পরিবর্তে ২ টন। সেক্ষেত্রে ভিত্তির খাতে খরচ ৪০% থেকে ৫০% কমে যেতে পারে। অপরপক্ষে, ভারবহন ক্ষমতা কম হলেও ক্ষতি নেই। কারণ দুর্বল ভিত্তিজনিত বিপর্যয় এতে এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। সেজন্য একজন প্রকৌশলীর উচিত পদ্ধতিগত- ভাবে মাটি পরীক্ষা করানো। সঠিক ব্যয়ে সঠিক আকারের ভিত্তি নির্ধারণে তা অত্যাবশ্যক।

১.৪ মাটি পরীক্ষার পদ্ধতিসমূহ

(১) মাটি পরিচিতি এবং বিভাগ:

ক) ফিল্ড ক্লাসিফিকেশন টেস্ট :

  1. i) চোখের দেখায় বিবেচনা, যেমন-

ক) গ্রেইন সাইজ, গ্রেইন আকৃতি, কোর্স এগ্রিগেটের গ্রেডিয়েশন, কোহেশনলেস মাটি। (খ) চিকন দানার মাটির টেক্সার এবং রং। রং, টেক্সার এবং সাইজ দেখে অর্গানিক মাটি আলাদা

করা যায়।

গ) আর্দ্রতা

  1. ii) ডাইলাটেন্সি টেস্ট

iii) ফীল্ড টেস্ট

  1. iv) ড্রাই স্ট্রেংথ টেস্ট v) শাইন টেস্ট

খ) ল্যাবরেটরি শিয়ার টেস্ট:

  1. i) আটারবাগ লিমিট:

ক) প্লাস্টিক লিমিট টেস্ট,

খ) লিকুইড লিমিট টেস্ট,

গ) শ্রিঙ্কেজ লিমিট টেস্ট,

  1. ii) গ্রেইন সাইজ অ্যানালাইসিস টেস্ট:

ক) মেকানিক্যাল এনালাইসিস (সিভ অ্যানালাইসিস)

খ) আর্দ্রতা অ্যানালাইসিস (হাইড্রোমিটার অ্যানালাইসিস টেস্ট)

২) টেছ বৈশিষ্ট্য টেস্ট:

  1. A) ফিল্ড শিয়ার টেস্ট:
  2. i) ভেন শিয়ার টেস্ট,
  3. ii) স্ট্যান্ডার্ড পেনিট্রেশন টেস্ট,

iii) পিনেট্রোমিটার টেস্ট

  1. B) ল্যাবরেটরি শিয়ার টেস্ট:
  2. i) ডাইরেক্ট শিয়ার টেস্ট,
  3. ii) প্রাই-এক্সিয়াল টেস্ট

iii) আন-কনফাইনড কম্প্রেশন টেস্ট iv) ল্যাবরেটরি ভেন শিয়ার টেস্ট

(৩) পারমিয়াবিলিটি টেস্ট:

  1. i) কনস্ট্যান্ট হেড পারমিয়ামিটার
  2. ii) ফলিং হেড পারমিয়ামিটার, iii) ইন সিটু পারমিয়াবিলিটি টেস্ট

৪) কমপ্যাকশন টেস্ট:

  1. i) প্রকটার কমপ্যাকশন টেস্ট,
  2. ii) মোডিফাইড AASHO টেস্ট,

iii) সি.বি.আর, কমপ্যাশন

৫) ফিল্ড ডেনসিটি টেস্টঃ

৬) ক্যালিফোরনিয়া বিয়ারিং রেশিও টেস্ট

৭) স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি অব সয়েল (৮) ইগনিশন টেস্ট

১.৫ মাটি পরীক্ষার ধাপসমূহ

মাটি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যাদি প্রতিবেদন আকারে সাজানোর লক্ষ্যে নির্মিতব্য স্থানের মাটি যুগপৎ সরেজমিন ও গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হবে। সরেজমিন পরীক্ষাকে বলা হয় ফিল্ড টেস্ট (Field Test গবেষণাগারের পরীক্ষাকে বলা হয় ল্যাবরেটরি টেস্ট (Laboratyroy Test)। উভয় প্রকার পরীক্ষার ফলাফল পুস্তককারে বেঁধে ক্লায়েন্টকে সরবরাহ করা হয়। কাজের পরিধি বা কাজের পরিধিকে স্কোপ বলা হয়। ফিল্ড টেস্ট ও ল্যাবরেটরি টেস্টের আওতায় নিম্নবর্ণিত কাজগুলো সম্পাদন করা হয় :

১। নির্মাণ সাইট পরিদর্শন ও জরিপ করা।

২। বোরিংয়ের স্থান চিহ্নিতকরণ।

৩। অনুসন্ধানমূলক বোরিং কাজ সম্পন্ন করা ও ভূগর্ভস্থ স্তরের অবস্থান ও পুরুত্ব নির্ণয় করা।

৪। ৫ ফুট অন্তর মাটির এসপিটি ভ্যালু নির্ধারণ করা ও নিরাপদ ভারবহন ক্ষমতা বের করা। ৫। মাটির অক্ষত নমুনা ও বিক্ষত নমুনা সংগ্রহ করা ও গবেষণাগারে এর কারিগরি পরীক্ষা সম্পন্ন করা।

৬। রিপোর্ট প্রণয়ন ও সরবরাহ করা।

নির্মাণ সাইট পরিদর্শন ও জরিপ কাজ

কোনো একটি নির্দিষ্ট নির্মাণ সাইটে সয়েল টেস্ট পরিচালনার পূর্বে জায়গাটি পরিদর্শন করা প্রয়োজন। এতে মাটি সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা এবং কীভাবে বোরিং কাজ সম্পন্ন হবে তার পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হয়। সাইটের একটি ম্যাপ তৈরি করে তাতে বোরিং হোলের (ছিদ্র) স্থান চিহ্নিত করতে হয়। এসব রিকনেইস্যান্স (Reconnaisance) সার্ভে বা প্রাথমিক জরিপের পর্যায়ে পড়ে। যদিও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত জরিপ করার মতো কিছু থাকে না। সরেজমিন পরিদর্শনে যদি দেখা যায় মাটি মূল স্তরে বিন্যস্ত, তবে এক বা দোতলা বাড়ির জন্য মাটি পরীক্ষার প্রয়োজন তেমন একটা হয় না। অভিজ্ঞ চোখই বলে দেয় সেখানে নিরাপদ ভার বহন ক্ষমতা আনুমানিক কত হতে পারে। কম গভীরতায় এলাকাভিত্তিক মূল স্তরযুক্ত মাটির ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গফুটে এক টন থেকে তিন টন পর্যন্ত হতে পারে।

বোরিংয়ের স্থান চিহ্নতকরণ :

অনুসন্ধানমূলক কাজ ও ভূ-গর্ভস্থ স্তরের বিন্যাস ও মাটির প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ ছিদ্র করার নাম বোরিং (Boring)। বোরিং পরিচালনার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন-

* অগার বোরিং (Auger Boring)

* ওয়াশ বোরিং (Wash Boring )

* ডিসপ্লেসমেন্ট বোরিং (Displancement Boring )

* রোটারি ড্রিলিং (Rotary Drilling )

* পারকিউশান ড্রিলিং (Percussion Drilling)

এসবের মধ্যে অগার বোরিং কম গভীরতায় ও অন্যান্য পদ্ধতি বেশি গভীরতার জন্য ব্যবহৃত হয়। পারকিউশান ড্রিলিং পদ্ধতি অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে সুবিধাজনক। ড্রিলিং রড বা ক্যাবলের সাথে যুক্ত একটি ড্রিলিং বিটের ওঠানামার সাহায্যে খনন কাজ চালানো হয়। প্রথমে ওপরের দিকে ৬” ডায়া কেসিং পাইপ ঢুকানো হয়। হোজ পাইপের সাহায্যে চাপযুক্ত পানি সরবরাহ ও ড্রিলিং ধাক্কায় মাটি বিদীর্ণ হয় এবং পানির সাথে বাইরে নীত হয়। বিভিন্ন পাত্রে মাটির নমুনা সংগৃহীত হয়। মাটির স্তর ও পুরুত্ব অনুযায়ী তা চার্টে অয়ন করা হয়। একে বোরিং লগ বলে। যেকোন ভরাট মাটি হোক না কেন তাতে অবশ্যই বোরিং টেস্ট করতে হবে। কারণ ভবনের ভিত্তি মাটির মূল স্তরে পৌঁছাতে হবে অথবা পাইলিং বা বিকল্প পন্থায় মাটির ভারবহন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সাধারণত ভরাট মাটির ভারবহন ক্ষমতা ০.৮ টন প্রতি বর্গফুটে ধরা হয়ে থাকে।

বোরিং স্থান নির্ধারণ

জমির আকার ও পরিমাণ, ভবন কত তলা বিশিষ্ট হবে ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে কয়টি বোরিং কত দূরত্বে করতে হবে নিম্নের ছকে তা দেখানো হলোঃ

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

একই ধরনের মাটির জন্য দূরত্ব ২৫মিঃ (৮০) পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ভরাট পুকুর পাড় ইত্যাদির ক্ষেত্রে দূরত্ব ২৫ ফুটের নিম্নে সংগ্রহ হতে পারে।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

এলপিটি (SPT Standard Penetration Test) ভ্যালু নির্ণয়

প্রতিটি বোরিংয়ে ৫ ফুট পরপর এন ভ্যালু (N-Value) নির্ণয় করা হয়, যা মাটির ভার বহন ক্ষমতার প্রতি সরাসরি দিক নির্দেশনা দেয়। একাছে যে স্পুন (Spoon) ব্যবহৃত হয় তার ভিতর ও বাইরের ডায়া যথাক্রমে ১.৭৫” ও ২” এবং লম্বায় ৩০”। ড্রিলিং রডের প্রাপ্ত থাকে ১৪০ পাউন্ড ওজনের একটি হ্যামার নির্ধারিত ৩০” উচ্চতা থেকে স্পুনটিকে ক্রমাগত আঘাত করতে থকে। আঘাতের উচ্চতা একই রকমের থাকে। কয়েকটি আঘাতে স্পুনের নিম্ন প্রান্তকে প্রথমে ৬ মাটিতে প্রবেশ করানো হয়। পরবর্তী ১২” মাটিতে প্রবেশ করতে যে কয়টি আঘাত (Blow) লাগে তাকে এন-ভ্যালু (N-Value) বা এসপিটি ভ্যালু ৰলে । এ স্পুনটিকে মৃত্তিকা প্রযুক্তির ভাষার Split spoon sampler বলে। এতে যেমন এন ভ্যালু নির্ধারণ করা সম্ভব হয় তেমনি সংগৃহীত মাটির নমুনা ল্যাবরেটরি টেস্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

এসপিটি ভালুর সাহায্যে ফিল্ডে সরাসরি মাটির ভার বহন ক্ষমতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ঘন সন্নিবেশ (compacty) যুক্ত মাটির আপেক্ষিক ঘনত্ব বেশি এবং তার এসপিটি ভ্যালু বেশি। অপরপক্ষে হালকা নরম ও কম আপেক্ষিক ঘনত্ব বিশিষ্ট মাটিতে উরু ভ্যালু কম। অনলন্নিবেশ বিশিষ্ট ৰাণু সংকুচিত হয় না, তাই বালু ভিত্তির একটি নির্ভরযোগ্য স্তর হিসাবে কাজ করে। এর এসপিটি ভ্যালু অনেক বেশী। দেখা গেছে বালুর স্তরের গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে এসপিটি ভ্যালু দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এক পর্যায়ে তা ১০০ পর্যন্ত ওঠে। তখন খুন আর ঢুকানো যায় না। এ অবস্থাকে Refusal বা প্রত্যাখ্যান অবস্থা বলে।

নিম্নের ছকে কর্দমাক্ত মাটি ও বালুস্তরের এসপিটি ভ্যালু ও তার বিপরীতে ভারবহন ক্ষমতা দেখানো হলো:
ছক ১ কর্দমময় মাটির এন-ভ্যালুর ও ভারবহন ক্ষমতা :

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

ছক ২ বালুর এন ভ্যালু ও ভারবহন ক্ষমতা :

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

লোড টেস্ট :

ছোট ও মাঝারি ধরনের ভবনের জন্য সরাসরি মাঠে লোড টেস্ট করা হয়ে থাকে। ২৫ (১) মি.লি. পুরু ও ৩০০ মি.লি. x ৩০০ মি.লি. বর্গাকৃতি একটি লোহার প্লেটের ওপর ওজন চাপানোর ব্যবস্থা থাকে। প্লেটটি নির্ধারিত গভীরতায় একটি গর্ত বসানো হয় এবং ক্রমান্বয়ে ওজন বৃদ্ধি করে ডায়ালে সংকোচন মাপা হয়। ওজন অন্ততঃ ২৪ ঘন্টা রাখা নিয়ম। এতে করে চূড়ান্ত ভারবহন ক্ষমতা ও মাটির সংকোচন মাপা হয়।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা:

ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুযায়ী মৃত্তিকার কণা মোটা অথবা সরু হয়ে থাকে। বিভিন্ন কণার তথা উপাদানের শতকরা হারের উপস্থিতি অনুযায়ী মাটির নামকরণ করা হয়। আমেরিকান সিস্টেম অনুযায়ী বিভিন্ন কণার (Grain) মাপা হয়।

গ্রাভেল -৪.৭৫ মিলিমিটার হতে বড়।

মোটা বালু -৪.৭৫-২.০০ মিলিমিটার।

মাঝারি বালু -২.০০-০.৪২৫ মিলিমিটার।

মিহি বালু -০.৪২৫-০.০৫ মিলিমিটার।

পলল -০.০৭৫ মিলিমিটার এর কম।

তাছাড়া সংগৃহীত ও মাটির নমুনার প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত গুণাবলিও পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষা সাধারণত

১। অ্যাটারবার্গ লিমিটস (Afterberg limits)।

২। কণার আকৃতি নির্ধারণ (Grain size analysis)।

৩। আপেক্ষিক গুরুত্ব নির্ণয় (Speific gravity test)।

৪। আর্দ্র ও শুকনা অবস্থার ঘনত্ব নির্ণয় (Wet and dry density)।

৫। সিয়ার টেস্ট (Direct shear test)। ৬। প্রাকৃতিক আর্দ্রতা (Natural moisture content ) |

৭। সংকোচন পরীক্ষা (Unconfined compressing test)।

৮। ঘনীকরণ পরীক্ষা (Consolidation test) ইত্যাদি।

উপরোক্ত পরীক্ষাগুলো মাটির ভারবহন ক্ষমতা ও সঠিক ভিত্তি নির্ণয়ে সহায়তা করে। একজন ডিজাইন প্রকৌশলীর জন্য এসব পরীক্ষার তত্ত্বগত মূল্য রয়েছে। সয়েল টেস্ট রিপোর্ট এসবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকে। রিপোর্ট প্রদত্ত ভারবহন ক্ষমতা আমরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারি।

সয়েল টেস্ট রিপোর্ট (Soil test report) :

সয়েল টেস্ট রিপোর্ট ডিমাই ফুলস্কেপ সাইজের পুস্তিকাকারে স্পাইরাল বাইন্ডিং করে ক্লায়েন্টকে দেয়ার নিয়ম। এতে জমির অবস্থান, যত তলা ভবনের জন্য উক্ত টেস্ট করা হলো তার উল্লেখসহ টেস্টের তারিখ ও ক্লায়েন্টের নাম লিখে দেয়া হয়। যে ফার্ম উক্ত পরীক্ষা সম্পাদন করেছে তাঁর পূর্ণ ঠিকানা ও উপযুক্ত ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরযুক্ত সার্টিফিকেট থাকে। উক্ত রিপোর্টের সূচীপত্রের একটি নির্ঘন্ট নিয়ে দেয়া হলোঃ

১। ভূমিকা

২। উদ্দেশ্য

৩। কাজের পরিধি ৫। বোরিং কাজ সম্পাদন

৪। মাঠে যেসব কাজ হবে তার বিবরণ

৬। এসপিটি পরীক্ষা সম্পাদন

৭। মাটির নমুনা সংগ্রহ

৯। মাটির উপাদান সংক্রান্ত তথ্য

৮। গবেষণাগারে পরীক্ষার বিবরণ

১০। আলোচনা

১১। সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ ইত্যাদি

১.৬ মাটির ভারবহন ক্ষমতার সংজ্ঞা

সাব-সয়েলের ব্যর্থতা ব্যতিরেকে প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর মাটি যে পরিমাণ ভার বহন করতে পারে তাকে মাটির ভারবহন ক্ষমতা (Bearing capacity of soil) বলে। ভারবহন ক্ষমতা মাটির কণার বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। ভারবহন ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর নাম নিম্নরূপ :

১। প্লেট লোড পরীক্ষা (Plate Load Test)

২। আদর্শ পেনিট্রেশন পরীক্ষা (Standard Penetration Test )

এস.পি.টি বা স্ট্যান্ডার্ড পেনিট্রেশন টেস্ট থেকে মাটির বিয়ারিং ক্যাপাসিটি নির্ণয় করা যায়। এর জন্য দুইটি ফর্মুলা প্রচিলত আছে, যথা :

1) Meryerhof’s সূত্র:

ফুটিং এর চওড়া চার ফুট বা এর চেয়ে কম হলে,

Qa = (N/4) *K

ফুটিং এর চওড়া চার ফুটের বেশি হলে

Qa = (N/6)[(B+1)/B]2*K

2) Bowle’s:

চওড়া চার ফুটের কম হলে

Qa = (N/ 2.5) * K

ফুটিং এর চওড়া চার ফুটের বেশি হলে

Qa = (N/4)[(B+1)/B]2* K

যেখানে,

Qa: এলাওয়াनল বিয়ারিং ক্যাপাসিটি (ডিপস বা পাউন্ড/ স্কয়ার ফুট (১ কিপ – ১০০০ পাউন্ড) | Kips/1

N: ফুটিং এর তলার এস.পি.টি সংখ্যা

B: ফুটিং এর চওড়া (ফুট হিসাবে)

K = 1 + ০.৩৩ (D/B) ১.৩৩

D: মাটির উপরিভাগ থেকে ফুটিং এর তলার দূরত্ব বা গভীরতা (ফুট হিসাবে)

উদাহরণ ০১ এস.পি.টি নম্বর ২০, ফুটিং এর চওড়া আট ফুট এবং ফুটিং এর তলা মাটির উপরিভাগ থেকে চার ফুট নিচে আছে। তাহলে বিয়ারিং কত?

Meryerhof’s সূত্র অনুসারে :

K = 1+0.33(D/B) = 1+0.33*(4/8) = 1.17

Q (N/6)[(B+1)/B] 2 K = (20/6)[(8+1)/8]2 * 1.174.94 kips/ft

Bowle’s সূত্র অনুসারে:

Qa = (N/4)[(B+1)/B] 2 + K = (20/4 ) [(8+1) / 82 * 1.17 = 7.40 kips/ft

এখান থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে কমটা নেয়াই ভালো, সুতরাং ক্যাপাসিটি = ৪.৯৪ kips/ft

বিভিন্ন প্রকার মাটির ভারবহন ক্ষমতা

বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল, পুরাতন পলল গঠিত চত্বরভূমি ও পলল গঠিত সমভূমিতে মাটির ভারবহন ক্ষমতা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝর্ণা ও নদীবাহিত পলিতে গঠিত ভূমির ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গফুটে কম হয়। পাঁচ, ছয় ফুট গভীরতায় তা ০.৫-০.৭ টন হয়ে থাকে। টিলার ওপরের ভূমিতে ভবনের ওজন পড়ার পর তা স্মলিত (SLIDING) হতে দেখা গেছে। তবে বহন ক্ষমতা ১ থেকে ১.৫ টন হতে পারে। ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়ার মূল লাল মাটিতে ১ থেকে ২ টন ভারবহন ক্ষমতা ধরা হয়। পক্ষান্তরে বাকি সমস্ত মূল পল্লভূমিতে তা এক টন ধরা যেতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের মাটির বিয়ারিং ক্যাপাসিটি বা ভারবহন ক্ষমতা বিভিন্ন রকম। সয়েল টেস্ট করে এই ক্ষমতা পাওয়া যায়। বাড়ি নির্মাণের জন্য ফাউন্ডেশনের জন্য এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন তথ্য থেকে সাধারণভাবে মাটির ভারবহন ক্ষমতার চার্ট নিচে দেয়া হলো :

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মাটি

 

অনুশীলনী – ১

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১. মাটি কাকে বলে?

২. ফিল্ড টেস্ট ও ল্যাবরেটরি টেস্ট কাকে বলে?

৩. ক্ষোপ কাকে বলে?

৪. বোরিং কাকে বলে?

৫. এসপিটি ভ্যালু কাকে বলে?

৬. মাটির ভারবহন ক্ষমতা কাকে বলে?

৭. মাটি পরীক্ষা কাকে বলে?

৮. বোরিং কাকে বলে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১.মাটির প্রকারভেদ লিখ।

২. কর্দমাক্ত মাটি ও বালুস্তরের এসপিটি ভ্যালু ও তার বিপরীতে ভারবহন ক্ষমতা ছকের মাধ্যমে দেখাও। ৩. বালুর এন-ভ্যালু ও ভারবহন ক্ষমতা ছকের মাধ্যমে দেখাও।

৪. লোড টেস্ট ব্যাখ্যা কর।

৫. ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় মাটির বিভিন্ন মাপের তালিকা প্রদান কর।

৬. ল্যাবরেটরি পরীক্ষাসমূহের তালিকা প্রদান কর।

৭. সয়েল টেস্ট রিপোর্ট ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।

৮.সয়েল টেস্ট বা মাটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা লেখ।

৯. মাটির ভার বহন ক্ষমতার চার্ট প্রদান কর।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

রচনামূলক প্রশ্ন :

১। মাটি পরীক্ষার পদ্ধতি উল্লেখ কর।

২। এসপিটি (SPT Standard Penetration Test) ভ্যালু নির্ণয় কর। 

৩। সয়েল টেস্ট রিপোর্ট (Soil test report) এর বর্ণনা কর।

৫। একটি সয়েল টেস্ট রিপোর্ট তৈরি কর।

৬। ছকে কর্দমময় মাটি ও বালু স্তরের এসপিটিভ্যালু ও তার বিপরীতে ভারবহন ক্ষমতা দেখাও।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment