বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি।

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

সিঁড়ি

সিঁড়ির সংজ্ঞা

সিঁড়ি দালানের একতলা থেকে পরবর্তী তলায় যাওয়ার জন্য কতক গুলো ধাপের সাহায্যে যে পথ নির্মাণ করা হয় তাকে সিঁড়ি বা স্টেয়ার বলে। বা বহুতল বিশিষ্ট দালানের এক তলা থেকে পরবর্তী তলায় যাতায়াতের জন্য যে চলার পথ তাকে সিঁড়ি বলে।

সিঁড়ি তৈরি করার উদ্দেশ্য।

সিঁড়ি দলানের একতলা থেকে পরবর্তী তলায় যাওয়ার জন্য কতকগুলো ধাপের সাহায্যে যে পথ নির্মাণ করা হয় তাকে সিঁড়ি বা স্টেয়ার বলে। 

সিঁড়ির উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা :

১। বহুতল বিশিষ্ট দালানের এক তলা থেকে পরবর্তী তলায় যাতায়াতের জন্য।

২। দালানের বিভিন্ন তলায় দ্রুত এবং নিরাপদে গমনাগমনের জন্য।

৩। প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী দালানের বিভিন্ন তলায় স্থানান্তরের জন্য ।

সানলাইটের প্রয়োজনীয়তা:

সিঁড়ি/সিঁড়িঘর যে কোনো অবকাঠামোর একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। সিঁড়ি/সিঁড়িঘর চলাচলের একটি পথ। কাঠামোগতভাবে সিঁড়ি ধাপ বিশিষ্ট হয় বিধায় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সানলাইটের প্রয়োজন। সিঁড়িঘরের একটি দেয়াল অবশ্যই বাইরের দেয়ালে হওয়া উচিত। যার মাধ্যমে সানলাইটের ব্যবস্থা করা যায়। যে স্থানে প্রচুর আলো-বাতাস পাওয়া যায় সে স্থানে সিঁড়ি ঘরের ব্যবস্থা হওয়া উচিত।

সিঁড়ি সম্পর্কে কিছু তথ্য :

১। সকল ধাপের চওড়া এবং উচ্চতা এক হতে হবে। অর্থাৎ ট্রেড ও রাইজার একই হতে হবে।

২। ছাদের সাথে দরজার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৩। হ্যান্ড রেইলের সাপোর্টের দূরত্ব ২৫০ মিমি এর বেশি হওয়া উচিৎ নয়। এতে বাচ্চারা পড়ে যেতে পারে।

৪। এক ফ্লাইটের উচ্চতা সর্বোচ্চ ২৪০০ মিমি হওয়া বাঞ্চনীয়। এর বেশি হলে উঠতে কষ্ট হবে। বিশেষ

করে বৃদ্ধ মানুষজনের সমস্যা হবে।

৫। এক ফ্লাইটে ১৫টির বেশি ধাপ থাকা উচিত নয়।

৬। ট্রেড-এ নোজিং ব্যবহার করা উত্তম।

৭। পিচ্ছিল করা যাবে না। এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন পিছলা না হয় ।

৮। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এবং ইলেক্ট্রিক লাইট এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

উত্তম সিঁড়ির বৈশিষ্ট :

১. অবস্থান : দালানের যে স্থানে প্রচুর আলো-বাতাস পাওয়া যায় ও যাতায়াতে সুবিধা পাওয়া যায় সেখানে নির্মাণ করা উচিত।

২. সিঁড়ি গ্রহ সিঁড়ি প্রয়োজনীয় পরিমাণ চওড়া হতে হবে।

৩. ফ্লাইটের দৈর্ঘ্য ওঠানামার সুবিধার জন্য প্রতিটি ফ্লাইটে ধাপের সংখ্যা ১০-১২টি হওয়া উচিৎ। 

৪. সিঁড়ির ঢাল : আনুভূমিক পথের চেরে উল্লখিক পথে চলার জন্য বিকন পরিশ্রম হয়। তাই সিঁড়ির ঢাল অনুভূমিক তলের সাথে ৩০-৪৫ ডিগ্রী কোণে থাকবে। 

৫. হেডরুম : যথেষ্ট পরিমাণ হেডরুম থাকা উচিত যাতে ওঠা-নামার অসুবিধা না হয়।

৬. নির্মাণ সামগ্রী সিঁড়িতে এমন মালামাল ব্যবহার করতে হবে যাতে সহজে আগুন না ধরে এবং য শক্তিশালী হয়।

৭. ল্যান্ডিং ল্যান্ডিং-এর চওড়া ফ্লাইটের চওড়া অপেক্ষা কম হবে না।

৮. ব্যালাষ্ট্রেড সিঁড়িতে ওঠানামার সুবিধার জন্য হ্যাডরেইল থাকতে হবে।

১. স্টেপ আকার দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ট্রেড ও রাইজের অনুপাত ঠিক রাখতে হবে।

সিঁড়ির প্রকারভেদ

নির্মাণ উপকরণের উপর ভিত্তি করে সিঁড়ি বিভিন্ন প্রকার, যেমন-

১) ব্রিক সিঁড়ি

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

ইটের তৈরি সিঁড়িকে ব্রিক সিঁড়ি বলে। এ সিঁড়ি তৈরির মুল উপাদান ইট। এই সিঁড়ি সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক নয়।

২) মেটাল সিঁড়ি

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

বিভিন্ন প্রকার মেটাল যেমন মাইকীল (পথ) ষ্টেইনলেস স্টীল (বক্স) রট আয়রণ ফ্লাট বার ইত্যাদি দিয়ে তৈরি সিঁড়ি। এধরনের সিঁড়ি জন্য অল্প পরিসরে করা যায় এই সিঁড়ি স্থায়ীত্ব বেশী হয়।

 ৩।স্টোন সিঁড়িঃ  দিয়ে তৈরি সিঁড়িকে টোন সিঁড়ি বলে। যেখানে টোন সহজ লভ্য সেখানে এই সিঁড়ি তৈরি করা হয়। 

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

৪) কাঠের সিঁড়িঃ

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

এই সিঁড়ি নির্মাণের প্রধান উপাদান কাঠ। এই সিঁড়ি সৌন্দর্য বর্ধন করে নির্মাণ ব্যায় বেশী। আগুনে সহজে পুরে যেতে পারে।

৫) আরসিসি সিঁড়ি

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

রেইন ফোর্স মেন্ট, সিমেন্ট কংক্রিট দিয়ে তৈরি সিঁড়ি কে আর সি সি সিঁড়ি বলে। এই সিঁড়ির স্থায়ীত্ব বেশী হয়। নির্মাণ কৌশল সহ এই সিঁড়ি ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।

নির্মাণ কৌশলের উপর ভিত্তি করে সিঁড়ি বিভিন্ন প্রকার, যেমন-

১) সোজা সিঁড়ি (Straight Stair)। ফেট বা সোজা সিঁড়ি এক অভিমুখে তলার মেঝে থেকে উঠে একটি অন্তবর্তী অবতরণসহ (ল্যান্ডিং) অথবা ছাড়া। এই সোজা সিঁড়ির সবচেয়ে লাভজনক ব্যবহার যেখানে একাধিক মেৰে প্রসারিত হয় না। এই সিঁড়ি জন্ম পরিসরে নির্মাণ করা যায়।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

(২) কোয়ার্টার টার্ন সিঁড়ি (Quarter turn stairs)। যখন ফ্লাইট অভিমুখে হয় এক-চতুর্থাংশ স্থান অবতরণ প্রবর্তনের দিয়ে অথবা সংযোগস্থলের এ winders প্রদানের মাধ্যমে ১০ নিয়ে দিক পরিবর্তন করা হয়। এই সিঁড়ি কে কোয়ার্টার টার্ন সিঁড়ি বলে।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

৩) হাফ টার্ম সিঁড়ি (Half turn stairs) ধারাবাহিক এ যাওয়ার জন্য একে অপরের সমান্তরাল এবং এক বা একাধিক অবতরণের যারা পৃথক করা হয়। এই সিঁড়িতে দুটি ফ্লাইট একটি ল্যান্ডিং নিয়ে সংযোক্ত থাকে।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

৪) সার্কুলার সিঁড়ি (Circular stairs) এ সিঁড়ি যখন উপরে থেকে দেখা হয়, বক্রতা এবং বৃহৎ ব্যাসার্ধের একটি একক কেন্দ্র দিয়ে বৃত্ত অনুসরণ করতে দেখা যায়। এই সিঁড়ি যেখানে স্থানের স্বল্পতা আছে সেখানে ব্যবহারকরা হয়।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

৫) স্পাইরাল সিঁড়ি (Spiral stairs) : এই সিঁড়ি যে বক্রতা ব্যাসার্ধ ছোট এবং সিঁড়ি একটি কেন্দ্র পোস্ট দিয়ে সমর্থিত হতে পারে। যেমন সিঁড়ি সামগ্রিক ব্যাস ১ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

৬) কার্ভড সিঁড়ি (Curved stairs) এই সিঁড়ি যখন উপরে থেকে দেখা হয় তখন উপবৃত্ত হিসাবে বক্রতার দুই বা ততোধিক কেন্দ্র, সঙ্গে একটি বক্ররেখা অনুসরণ করতে দেখা যায়।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

৭) জ্যামিতিক সিঁড়ি (Geometric stairs) এই সিঁড়ি কোনো ঘোরানো সিঁড়ির কেন্দ্রীয় জন্তু পোস্ট আছে এবং কোনো জ্যামিতিক আকৃতি হয়। এই সিঁড়ি মধ্যে দিক পরিবর্তন winders মাধ্যমে অর্জিত হয়। সিঁড়ি নির্মাণের জন্য আরও দক্ষতা প্রয়োজন এবং খোলা ঘোরানো সিঁড়ির কেন্দ্রীয় অন্ত সিঁড়ির চেয়ে দুর্বল।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

৮) বাইফোরকাটেড সিঁড়ি (Bifurcated stairs) সিঁড়ি সাজানো হয় না মাঝামাঝি সময়ে অবতরনে দুই সংকীর্ণ চালনা মাঝামাঝি অতরণ উত্তর পাশ থেকে শুরু। সাধারণত এই সিঁড়ির আধুনিক পাবলিক বিল্ডিং-এর জন্য আরো উপযুক্ত।

১৯.৪ সিঁড়ি সম্পর্কিত বিভিন্ন কারিগরি শব্দের সং সিঁড়িতে বিভিন্ন অংশের পরিমাপ ও তার অবস্থান

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

সিঁড়িতে বিভিন্ন অংশের তালিকা :

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

সিঁড়ির চাল বা প্রোপঃ ঢাল ২৬ থেকে ৪৫ ডিগ্রির মধ্যে হতে হবে। তবে ৩০ ডিগ্রি একটি সঠিক পরিমাপ ।

সিঁড়ির ট্রেডঃ স্টেপের উপরিস্থ যে অনুভূমিক অংশের উপর পা রেখে সিঁড়িপথে ওঠানামা করা হয় তাকে ট্রেড বলে। এর প্রস্থ ২২ সে.মি. হতে ৩০ সে.মি. এর মধ্যে, সাধারণত ২৫ সে.মি রাখা হয়।

সিঁড়ির রাইজাইর : এটি স্টেপের ভার্টিক্যাল অংশ। যা ট্রেডকে সাপোর্ট প্রদান করে। দুটি ট্রেডকে যে উল্লখ দিয়ে যুক্ত করা হয় তাকে রাইজার বলে। এটাকে ১২-১৯ সে.মি. এর মধ্যে রাখা হয়। সাধারণত ১৫ সে.মি. রাখা হয়।

সিঁড়ির স্টেপ : আবাসিক গৃহের স্টেপ, ১৬× ২৬ সে.মি. এবং হাসপাতালের স্টেপ ১০ x ৩০ সে.মি. ধরা হয়। তবে, পাবলিক বিল্ডিং-এ সিঁড়ির প্রচলিত মাপ হবে ৩০ x ১৪ সে.মি.। বসত বাড়ির প্রচলিত মাপ ২৫ x ১৬ সে.মি. হয়।

সিঁড়ির চওড়া : সিঁড়ির গ্রন্থ কমপক্ষে ৭৫ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত, আর যদি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ -এর বেশি হয় সেই ক্ষেত্র ৯৫ সেন্টিমিটার। দুই বা এর অধিক পরিবার হলে ১০০ সেন্টিমিটার এবং একাধিক পরিবার এবং ১০ -এর অধিক ব্যবহারকারী হলে ১২৫ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। হোটেল, অফিস, সিনেমা ইত্যাদি পাবলিক জায়গাসমূহতে এর চওড়া হলে ১৫০ সেন্টিমিটার।

ল্যান্ডিং-এর চওড়া ল্যান্ডিং-এর চওড়া কমপক্ষে সিঁড়ির মতো হবে। ৩০০ এর অধিক ব্যবহারকারি হলে দুইটি সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত।

সিঁড়ির হ্যান্ডরেইল : এর উচ্চতা ৮০০ মিমি থেকে ১০০ মিমি এর মধ্যে থাকতে হবে।

সিঁড়ির হেডরুম বা উচ্চতা এর উচ্চতা ২১০০ মিমি -এর উপরে থাকতে হবে। কেননা না হলে ফার্নিচার ওঠা-নামা করার সমস্যা হতে পারে

সিঁড়ির ট্রেড ও রাইজারের মধ্যে পার্থক্য

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

সিঁড়ির ট্রেড ও রাইজা-এর মধ্যে পরিমাপের সম্পর্ক :

সূত্র- ১ ট্রেড + ২ x রাইজ = ৬০ সে.মি.

সূত্র- ২ ট্রেড x রাইজ = 800 800 বর্গ সে.মি.

সূত্র : ট্রেড + রহিল 80 ৪৫ সে.মি.

সুত্র- ৪ : রাইজ = ১৪ সে.মি. এবং ৩০ সে.মি. ধরে প্রতি ট্রেড থেকে ২ সে.মি. কমালে রাইজ ১ সে.মি. বাড়াতে হবে।

সিঁড়ি ও সিঁড়িপরের মধ্যে পার্থক্য

সিঁড়ি। সিঁড়ি দশানের একতলা থেকে অন্যজনার যাওয়ার জন্য কতগুলো ধাপের সাহায্যে যে পথ নির্মাণ করা হয় তাকে সিঁড়ি বা স্টেয়ার বলে।

সিঁড়ির কোনো ইমারতের যে স্থানে বা কক্ষে স্টেয়ার স্থাপন করা হয়, তাকে সিঁড়িঘর বা স্টেরারকেস বলে।

লিফট ও চলন্ত সিঁড়ির পার্থক্য

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিঁড়ি

 

অনুশীলনী – ১৯

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১। সিঁড়ি কাকে বলে?

২। সিঁড়ির ট্রেড কাকে বলে?

৩। সিঁড়ির রাইজার কাকে বলে?

৪। সিঁড়িঘর কাকে বলে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। সিঁড়ি তৈরি করার উদ্দেশ্য কী?

২। সানলাইট কী? সানলাইট কেন দরকার?

৩। সিঁড়ি কত প্রকার ও কী কী?

৪। সিঁড়িতে বিভিন্ন অংশের তালিকা লেখ।

৫। সিঁড়ির ট্রেড ও রাইজের মধ্যে পরিমাপের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

৬। লিফট ও চলন্ত সিঁড়ির পার্থক্য।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

রচনামূলক প্রশ্ন

১। সিঁড়ি তৈরির ব্যাপারে কী কী বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়?

২। উত্তম সিঁড়ির বৈশিষ্ট্য লেখ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment