মেঝে ডিটেইল ড্রয়িং আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং – ১ [ Civil Engineerng Drawing – 1 ]” এর “ডিটেইল ড্রয়িং” অধ্যায় এর পাঠের অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
মেঝে ডিটেইল ড্রয়িং
মেঝে (Floor) :
দালানের যে অংশে মানুষ বসবাস করে অর্থাৎ থাকার জন্য, জিনিসপত্র রাখার জন্য, প্রয়োজনীয় ব্যবহারযোগ্য অনুভূমিক জায়গাকেই মেঝে (Floor) বলে। মেঝের দুটি অংশ (Component) আছে। যেমন—
১। সাব-ফ্লোর (Sub-floor) ঃ
ফ্লোর কভারিংকে শক্ত এবং টেকসই করতে সাপোর্ট প্রদান করা এবং উপর থেকে পতিত সব ধরনের লোড বহন করাই এর উদ্দেশ্য। একে বেস কোর্স বা সাব-গ্রেডও (Base course or sub-grade) বলে ।
২। ফ্লোর কভারিং (Floor covering) :
এটি সাব-ফ্লোরের উপরের কভারিং যা শক্ত, পরিষ্কার, মসৃণ, অপ্রবেশ্য, টেকসই এবং দেখতে সুন্দর।
মেঝের প্রকারভেদ (Types of floors) :
(ক) জাউন্ড ফ্লোর (Ground floor) :
ভূমিতলে অবস্থিত ভূমির উপর অর্থাৎ প্লিন্থ লেভেলে (Plinth Level) যে মেঝে নির্মাণ করা হয়, তাকে এক তলার মেঝে বা গ্রাউন্ড ফ্লোর বলে। অর্থাৎ যে মেঝে বা ফ্লোর সরাসরি মাটির উপর ভর করে থাকে, তাকে গ্রাউন্ড ফ্লোর বলে। এ জাতীয় ফ্লোরকে সলিড ফ্লোর (Solid floor) বলে।
(খ) বেসমেন্ট ক্লোর (Basement floor) :
মাটিতল (Ground level) থেকে বলে। অবস্থান ব্যতীত এটি গ্রাউন্ড ফ্লোরের মতই দেখতে। নিচের দিকে অবস্থিত ফ্লোরকে বেসমেন্ট
(গ) আপার ফ্লোর (Upper floor) :
মাটিতল থেকে উপরে অবস্থিত অন্য সব ধরনের ফ্লোরকে আপার ফ্লোর বলে। যেমন- দুই তলার মেঝে, তিন তলার মেঝে ইত্যাদি। ৫ (গ) স্তূপন্ত মেঝে (Suspended floor) বহুতলবিশিষ্ট দালানের গ্রাউন্ড ফ্লোর, বেসমেন্ট ফ্লোর এবং সর্ব উপরের মেঝে (ছাদ) বাদে সকল মেঝেই ঝুলন্ত মেঝে। ঝুলন্ত মেঝে সাধারণত কাঠের তৈরি হয়।
গ্রাউন্ড ফ্লোরের প্রকারভেদ (Types of ground floors):
নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার অনুযায়ী গ্রাউন্ড ফ্লোর বা ফ্লোর কভারিং – (Floor covering) বা ফ্লোর ফিনিশ (Floor finish) বা ফ্লোরিং (Flooring) সাধারণত নিম্নলিখিত প্রকারের হয়ঃ
১। মাও ফ্লোরিং (Mud flooring)
২। মুরাম ফ্লোরিং (Muram flooring)
৩। ব্রিক ফ্লোরিং (Brick flooring)
৪। ফ্লাগ স্টোন ফ্লোরিং (Flag stone flooring)
৫। সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং (Cement concrete flooring)
৬। গ্রানোলিথিক ফ্লোরিং (Granolithic flooring)
৭। টেরাজো ফ্লোরিং (Terrazzo flooring)
৮। মোজাইক ফ্লোরিং (Mosaic flooring)
৯। টাইল্ড ফ্লোরিং (Tiled flooring)
১০। মার্বেল ফ্লোরিং (Marble flooring)
১১। টিম্বার ফ্লোরিং (Timber flooring)
১২। অ্যাসফাস্ট ফ্লোরিং (Asphalt flooring)
১৩। রাবার ফ্লোরিং (Rubber flooring)
১৪। গ্লাস ফ্লোরিং (Glass flooring)
১৫। লিনোলিয়াম ফ্লোরিং (Linoleum flooring)
১৬। ম্যাগনেসাইট ফ্লোরিং (Magnesite flooring)
১৭। কর্ক ফ্লোরিং (Cork flooring)
১৮। প্লাস্টিক বা পিভিসি ফ্লোরিং (Plastic or PVC flooring)।
গ্রাউন্ড ফ্লোর বেস নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী (Materials used for construction of ground floor base) ঃ
গ্রাউন্ড ফ্লোর নির্মাণে নিম্নলিখিত মালসামগ্রী ব্যবহৃত হয়
১। সিমেন্ট কংক্রিট (Cement concrete)
২। লাইম কংক্রিট (Lime concrete )
৩। পাথর (Stone)
৪। ইট (Brick)
৫। কাঠের ব্লক (Wooden block)।
নিম্নে কয়েক ধরনের ফ্লোর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ঃ
কাঠের গ্রাউন্ড ফ্লোর (Ground floor of timber) :
কাঠের মেঝে সচরাচর তৈরি করা হয় না। তবে পাহাড়ি এলাকায়, যেখানে আবহাওয়া আর্দ্র, কাঠ সস্তা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, সেখানে কাঠের মেঝে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, কার্পেনটারি হল (Carpentary hall), নাচঘর, অডিটোরিয়াম ইত্যাদি জায়গায় কাঠের মেঝে ব্যবহার করা হয়। কাঠের মেঝেকে দুইভাবে তৈরি করা যেতে পারে ?
(ক) ঝুলন্ত বা সাপোর্টেড টিম্বার ফ্লোরিং (Suspender or supported timber flooring)
(খ) সলিড টাইপ (Solid type) –
১। কাঠের ব্লক মেঝে (Wooden block floor)
২। কাঠের স্ট্রিপ মেঝে (Wooden strip floor) |
নির্মাণ পদ্ধতি ঃ
ঝুলন্ত বা সাপোর্টেড টাইপ মেঝের ভর সরাসরি মাটির উপর পতিত হয় না। নিম্নে এ জাতীয় মেঝের চিত্র দেয়া 2 হলো। কংক্রিট বেড এবং মেঝের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে শুষ্ক এবং well ventilated রাখার জন্য বাইরের দেওয়ালে air brick ব্যবহার করা হয়। আর স্লিপার (Sleeper) দেওয়ালে ফাঁকা রাখতে হয়। ব্রিজিং অথবা ফ্লোর জয়েন্ট (Bridging or floor joist) এর সাহায্যে বোর্ডিং (Boarding) স্থাপন করতে হয়। ১.৮ মিটার থেকে ২ মিটার পর পর স্লিপার দেওয়াল নির্মাণ করা হয়।
অপরদিকে সলিড টাইপ ফ্লোর এর ভর ভূমির উপর সরাসরি পতিত হয়। অর্থাৎ যে সমতলে মেঝে নির্মাণ করা হয়, সেখানে ১৫ থেকে ২০ সেমি পুরু কংক্রিট ঢালাই করা হয়। এটি মেঝের বেস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তারপর এ কংক্রিট বেইসের উপরে এক স্তর ম্যাস্টিক অ্যাসফাল্ট বিছিয়ে ২ থেকে ৪সেমি পুরু এবং ২০ x ৮ সেমি থেকে ৩০ x ৮ সেমি আকারের কাঠের ব্লককে পাশাপাশি স্থাপন করে কাঠের ব্লক মেঝে (Wooden block floor) তৈরি করা হয়। তা ছাড়া কাঠের স্ট্রিপ মেঝের ক্ষেত্রে কংক্রিটের বেস প্রস্তুত করার সময় কাঠে স্ট্রিপ স্থাপন করতে হয়। এ স্ট্রিপকে ফিলেট (Fillet) বলে। পরে এর উপর আড়াআড়িভাবে তক্তা স্থাপন করে তারকাঁটা দ্বারা আটকানো হয়।
সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং (Cement concrete flooring) :
কংক্রিট ঢালাই মেঝে সর্বাপেক্ষা প্রচলিত মেঝে। বসতবাড়ি, অফিস-আদালত, বাণিজ্যিক এবং শিল্প ভবনসমূহে এ মেঝে ব্যবহার করা হয়। কারণ এটি স্বল্প ব্যয়ে, সহজে নির্মাণ করা যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। সিসি ফ্লোরিং তিনটি ধাপে করা হয় ৷
(ক) সাব-বেস প্রস্তুতকরণ ঃ
প্রথমে ভরাটকৃত মাটিকে ভালোভাবে দুশ করে দৃঢ়বদ্ধ ও সমতল করতে হবে। পরে ১০ থেকে ১৫ সেমি পুরুত্বে বালি বিছিয়ে দৃঢ়বদ্ধ করে প্রয়োজনীয় ঢালসহকারে সাব-বেস প্রস্তুত করতে হবে।
(খ) কংক্রিট বেস প্রস্তুত :
১:৩ : ৬ থেকে ১ : ৫ : ১০ অনুপাতের সিমেন্ট কংক্রিট অথবা লাইম কংক্রিট ৭.৫ থেকে ১০ সেমি পুরু করে বিছিয়ে কংক্রিট বেস প্রস্তুত করা হয়। লাইম কংক্রিটের ক্ষেত্রে ৪০% লাইম মর্টার ১:২ অনুপাতে (১ ভাগ লাইম ও ২ ভাগ বালি অথবা ১ ভাগ লাইম, ১ ভাগ সুরকী ও ১ ভাগ বালি) এবং ৬০% কোর্স অ্যাগ্রিগেট (৪০ মিমি আকার) থাকবে। ভালোভাবে কিউরিং করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বেস কোর্স হিসাবে ব্রিক ফ্লাট সোলিং ব্যবহার করা হয়। সোলিং ব্যবহার করলে বালি ছড়িয়ে এবং পানি ছিটিয়ে ভালোভাবে সংযোগগুলো পূরণ করতে হয়।
(গ) টপিং বা ওয়্যারিং সারফেস :
কংক্রিট বেস শক্ত হওয়ার পর ব্রাশ দ্বারা ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানি দ্বারা ভিজিয়ে রাখতে হবে। উত্তমরূপে ভিজানো শেষ হলে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে হবে। তারপর কাঠের ব্যাটেন বা গ্লাস বা প্লেইন অ্যাসবেস্টস (Plain asbestos) এর সাহায্যে কতকগুলো বর্গাকার বা আয়তাকার প্যানেলে বিভক্ত করতে হয়। প্যানেলের আকার ১ মি × ১ মি, ২
মি x ২ মি বা । মি × ২ মি হওয়া উচিত। প্রথমে অলটারনেট প্যানেলগুলোর টপিং ১:২:৪ অনুপাতের সিমেন্ট কংক্রিট দ্বারা ৪ সেমি. পুরুত্বে ঢালাই করা হয়। ঢালাই এর পূর্বে সিমেন্ট ফ্লারি (Slurry) দ্বারা গ্রাউটিং করতে হবে, যেন টপিং ও বেস কোর্স পরস্পরকে ভালোভাবে আবদ্ধ করে রাখতে পারে। কংক্রিটকে কর্নিকের সাহায্যে সমভাবে বিছিয়ে কাঠের ফ্লোট (Wooden float) বা পাট্টা দ্বারা টেম্পিং করে কংক্রিট এর নিচের জলীয় অংশকে উপরে আনয়ন করতে হবে। তারপর শুকনা বালি মিশ্রিত সিমেন্ট এর উপর ছড়িয়ে দিয়ে কর্নিকের সাহায্যে সমতল ও মসৃণ করে দিতে হয়। টপিং এর কংক্রিট শক্ত হলে পুনরায় শুধু সিমেন্ট ছড়িয়ে কর্নিকের সাহায্যে ফিনিশিং করতে হবে। একে নিট সিমেন্ট ফিনিশিং বলে।
প্রাথমিক সংকোচন শেষে অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা পরে অলটারনেট প্যানেলগুলোর কাজ একইভাবে শেষ করতে হবে। সদ্য ঢালাইকৃত কংক্রিটকে সূর্যরশ্মি, বর্ষা এবং অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে ১২ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত নিরাপত্তার সাথে রাখতে হবে। তারপর ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কিউরিং করা হয়।
আপার ফ্লোর (Upper floor) :
বহুতলবিশিষ্ট দালানে প্লিন্থ লেভেলে যে ফ্লোর নির্মাণ করা হয়, তাকে গ্রাউন্ড ফ্লোর বলে । আর দালানের সর্ব উপরে সমতল বা ঢালু কাঠামো, যা কক্ষকে আবৃত করে রাখে, তাকে ছাদ (Roof) বলে। এ গ্রাউন্ড ফ্লোর এবং ছদ বাসে দালানের সমস্ত মধ্যবর্তী ফ্লোরকে আপার ফ্লোর বলে। এ ফ্লোর দেওয়াল, বিম ইত্যাদি সাপোর্টের উপর অবস্থান করে বলে, সাপোর্টকে যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হয়।
আপার ফ্লোর এর প্রকারভেদ (Types of upper floors ) :
ফ্লোরিংকে সাপোর্টিং এর জন্য বিম, গার্ডার ইত্যাদির বিন্যাস এবং নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের উপর নির্ভর করে আপার ফ্লোরকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
১। টিম্বার ফ্লোর (Timber floor)
(ক) সিংগেল ফ্লোর (Single floor )
(খ) ডাবল ফ্লোর (Double floor )
(গ) ফ্রেইমড বা ট্রিপল ক্লোর (Framed or Triple floor )
২। স্টিল জয়েস্ট অ্যান্ড ফ্লাগ স্টোন ফ্লোর (Steel Joist and flag stone floor)
৩। স্টোন পাট্টি ফ্লোর (Stone patty floor)
৪। জ্যাক আর্চ ফ্লোর (Jack arch floor)
৫। আরসিসি ফ্লোর (Reinforced cement concrete (RCC )
৬। রিবড ফ্লোর (Ribbed or hollow tiled ribbed floor)
৭। প্রি-কাস্ট কংক্রিট ফ্লোর (Pre-cast concrete floor)
৮। স্টিল গার্ডার অ্যান্ড আরসিসি স্ল্যাব ফ্লোর (Steel girder and RCC slab floor )
৯। স্টিল গার্ডার অ্যান্ড আরবি ফ্লোর (Steel girder and RB Floor)
১০। ফ্লাট স্ল্যাব ফ্লোর অর বিমলেস স্ল্যাব ফ্লোর (Flat-slab Floor or Beamless slab Floor)
১১। আরসিসি বীম অ্যান্ড স্ল্যাব ফ্লোর (RCC Beam and slab Floor)
১২। ফিলার জয়েস্ট ফ্লোর (Filler joist Floor)
১৩। হাই-রিব ফ্লোর অর এক্সপ্যান্ডেড মেটাল রিব মেশ ফ্লোর (Hy-rib floor or expanded metal rib mesh Floor) |
আরসিসি ফ্লোর (RCC Floor) :
বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারের সুবিধার উপর নির্ভর করে বর্তমানে আরসিসি ফ্লোর এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কংক্রিট অধিক পরিমাণে চাপ সহ্য করতে পারে, কিন্তু কোন টান সহ্য করতে পারে না। তাই টানকে প্রতিহত করানোর জন্য কংক্রিটের মধ্যে এমএস রড (MS rod) ব্যবহার করা হয়। কংক্রিটের মধ্যে মাইল্ড স্টিলের রড ব্যবহার করে যে ফ্লোর নির্মাণ করা হয়, তাকে আরসিসি ফ্লোর বলে। আরসিসি ফ্লোর নিম্নলিখিত প্রকারের হয়-
১। আরসিসি সিম্পল স্ল্যাব ফ্লোরিং (RCC Simple slab flooring)
২। আরসিসি বিম অ্যান্ড স্ল্যাব ফ্লোরিং (RCC Beam and slab flooring)
৩। ফ্লাট স্ল্যাব ফ্লোরিং (Flat slab flooring)
৪ । আরবি ফ্লোরিং (Reinforced Brick (R.B.) flooring)
৫। রিবড ফ্লোরিং (Ribbed flooring or hollow tiled flooring)।
আরসিসি সিম্পল স্ল্যাব ফ্লোর (RCC Simple slab floor) :
এ জাতীয় মেঝেতে নিচের ফাইবার (Bottom fibre) এর টানজনিত কারণে আরসিসি স্ল্যাবটি নিচের দিকে বেঁকে যায়। এ কারণে রিইনফোর্সমেন্ট হিসাবে এমএস রডকে স্ল্যাবের নিচের দিকে স্থাপন করা হয়। রডের নিচের দিক থেকে ন্যূনতম মুক্ত কভারিং 15 মিমি রাখা হয়। নেগেটিভ বেন্ডিং মোমেন্টকে প্রতিরোধ করার জন্য অর্ধেক রডকে সাপোর্টের কিছু দূরত্ব থেকে বাঁকিয়ে (Bent up) উপরে উঠানো হয়। স্ল্যাবের স্প্যান বরাবর প্রধান রড স্থাপন করা হয়, অর্থাৎ কক্ষের প্রস্থের দিকে প্রধান রড ব্যবহার করা হয়। যখন স্ল্যাবের দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত 2 এর অধিক হবে, তখন উক্ত স্ল্যাবকে ওয়ান ওয়ে স্ল্যাব (One-way slab) বলে।
এক্ষেত্রে কক্ষের প্রস্থ বরাবর প্রধান রিইনফোর্সমেন্ট স্থাপন করা হয় এবং টেম্পারেচার বা ডিস্ট্রিবিউশন (Temperature or distribution) বারগুলোকে কক্ষের দৈর্ঘ্য বরাবর অর্থাৎ প্রধান রিইনফোর্সমেন্টের সমকোণে স্থাপন করা হয়। প্রত্যেক প্লেইন বার (Plain bar) এর প্রান্তে নিয়মানুযায়ী হুক প্রদান করা হয়। কিন্তু রিবড বার বা টর রিইনফোর্সমেন্ট (Ribbed bar or tor reinforcement) এর প্রান্তে কোনো হুকের প্রয়োজন হয় না।
স্ল্যাবের বিয়ারিং ওয়ালের অর্ধ প্রস্থ অথবা স্ল্যাবের পুরুত্বের কম হবে না। স্প্যান দৈর্ঘ্য ৫ মিটারের মধ্যে হলে একমুখী স্ল্যাব (One-way slab) সুবিধাজনক এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয়ী। সেন্টারিং এবং কভারিংকে ঠিক রাখার জন্য রড এবং সাটারিং এর মধ্যবর্তী স্থানে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর পাথর বা কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করতে হবে। ১ : ২ : ৪ অনুপাতে উপাদানগুলো সঠিকভাবে মিশ্রণ করে সিমেন্ট কংক্রিট প্রস্তুত করা হয়। কংক্রিট স্থাপন করে ভালোভাবে দৃঢ়বদ্ধ (Compact) করা হয়। তারপর সঠিকভাবে কিউরিং করা হয়। পূর্ণ জমাট বাঁধার পর সাটারিং খোলা হয়।
অপরদিকে যখন স্ল্যাবের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ২ বা তার কম হয় তখন তাকে দ্বিমুখী স্ল্যাব (Two way slab) বলে। এক্ষেত্রে প্রধান রডগুলো (সোজা এবং বাঁকা) উভয় দিকে প্রদান করা হয়। প্ল্যাবের কর্নারগুলোকে উপরে উঠার প্রবণতা রোধ করার জন্য রিইনফোর্সমেন্টের জালিকা স্ল্যাবের উপর এবং নিচে প্রদান করা হয়।
বিম-ল্যাব ফোরিং (Beam slab flooring) :
যখন কক্ষের চওড়া বেশি হয়, স্ল্যাবের স্প্যান বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ আরসিসি স্ল্যাব তৈরি করতে খরচ বেশি পড়ে, তখন আরসিসি বিম ব্যবহার করে বিম ও স্ল্যাব একসাথে ঢালাই করা হয়। এ বিষকে টি-বিম বলে এবং বিমগুলো স্ল্যাবের মধ্যবর্তী সাপোর্ট হিসাবে কাজ করে। কক্ষের আকার যখন অনেক বড় হয়, তখন ফ্লোর বিমগুলোকে দৈর্ঘ্য বরাবর বিমের উপর স্থাপন করা হয় এবং যাকে ‘আরসিসি কলাম বা প্রান্ত ওয়াল সাপোর্ট প্রদান করে। তা ছাড়া বড় স্প্যানের ক্ষেত্রে যেখানে অধিক পরিমাণ লোড আরোপিত হবে কিংবা মধ্যবর্তী দেওয়াল নির্মাণ করে কক্ষের স্প্যান কমানো যাবে না, সে সমস্ত ক্ষেত্রে আরসিসি বিম স্ল্যাব ফ্লোর নির্মাণ করা হয়।
রিইনফোর্সড ব্রিক ফ্লোরিং (Reinforced brick flooring) ঃ
রিইনফোর্সড ইটের কাজ এমন এক ধরনের নির্মাণ কৌশল যেখানে ইটের চাপশক্তি ব্যবহার করে স্ল্যাবের চাপ পীড়নকে প্রতিরোধ করা হয়। অপরদিকে টান পীড়নকে প্রতিরোধ করে রড। অন্যকথায় সচরাচর সিমেন্ট কংক্রিটের পরিবর্তে ইট ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে স্থাপিত ইটগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁক সিমেন্ট মর্টার দ্বারা পূরণ করা হয় এবং ইটগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁকে রড স্থাপন করা হয়। স্প্যান ছোট এবং তুলনামূলক হালকা লোড বহনের ক্ষেত্রে এ জাতীয় স্ল্যাব সুবিধাজনক এবং খরচ কম হয় ।
রিইনফোর্সড ব্রিক স্ল্যাব এর পুরুত্ব ইটের উচ্চতা অনুযায়ী হয়। মডুলার ইটের পুরুত্ব ১০ সেমি বিধায় স্ল্যাবের পুরুত্ব ১০ সেমি বা ২০ সেমি হতে পারে। যদি ডিজাইনে স্ল্যাবের পুরুত্ব ১৫ সেমি আসে, তবে ১০ সেমি পুরু ইটের উপর ৫ সেমি পুরুত্বের টালি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে টালি এবং ইটের মধ্যবর্তী ফাঁক সিমেন্ট মর্টার দ্বারা পূরণ করতে হবে।
যখন দুই স্তর ইট বসিয়ে স্ল্যাব তৈরি করা হয়, তখন শিয়ার প্রতিরোধ করার জন্য ইটের খাড়া জোড়া পরিহার করা হয়। এক্ষেত্রে এক ইটের অর্ধেক সাপোর্টের উপর বসিয়ে খাড়া জোড়া পরিহার করা হয়। এ কাজে প্রথম শ্রেণির ইট এবং ১ : ৩ অনুপাতের মসলা ব্যবহার করা হয়। ইটদ্বয়ের মধ্যবর্তী ফাঁক সাধারণত ২ সেমি রাখা হয়। রিইনফোর্সড ইটের কাজে চাপ শক্তি বৃদ্ধি করতে হলে ফাঁকের চওড়া বৃদ্ধি করতে হয় (প্রায় ৪ সেমি) এবং ইটের উপরে ২.৫ সেমি থেকে ৫ সেমি পুরুত্বে কংক্রিট ঢালাই করতে হবে।
ফ্লাট স্ল্যাব ফ্লোরিং (Flat slab flooring) :
যে সমস্ত স্ল্যাব কোনোপ্রকার বিম বা গার্ডার এর উপর স্থাপন না করে সরাসরি কলামের উপর স্থাপন করে নির্মাণ করা হয়, সে সকল স্ল্যাবকে ফ্লাট স্ল্যাব বলে। এতে কোনোপ্রকার বিম বা গার্ডার ব্যবহার করা হয় না বলে একে বিমহীন (Beamless) স্ন্যাবও বলে। এ প্রকার স্ল্যাবের লোড সাধারণত ড্রপ প্যানেল ও কলাম ক্যাপিটালের মাধ্যমে কলামে স্থানান্তরিত হয়। অন্যকথায় ফ্লোর এর ডেড লোড এবং লাইভ লোডকে বিম বা দেওয়ালের উপর স্থানান্তর না করে সরাসরি কলামের উপর স্থানান্তরিত করে যে ফ্লোর নির্মাণ করা হয়, তাকে আরসিসি ফ্ল্যাট স্ল্যাব বলে। এ প্রকার ল্যাব সাধারণত গুদামঘর, কলকারখানা, মিল, থিয়েটার, হলরুম, মসজিদ, পাবলিক দালান ইত্যাদি জায়গায় ব্যবহৃত হয়।
ফ্লাট স্ল্যাবের নিচে কলামের মাথাকে একটু প্রশস্ত করে তৈরি করা হয়। কলামের এ প্রশস্ত অংশকে কলাম ক্যাপিটাল (Colume _capital) বলে। কলাম বৃত্তাকার হলে ক্যাপিটাল বৃত্তাকার এবং কলাম বর্গাকার হলে ক্যাপিটালও বর্গাকার হয়। কলাম ক্যাপিটালের পরিমাপ 0.20L হতে 0.25L এর মধ্যে হয়ে থাকে। এখানে, L = স্ল্যাবের দৈর্ঘ্য।
অপরদিকে স্ল্যাবের ওজনকে সহজে বহন কর জন্য স্ল্যাবের নিচে এবং কলাম ক্যাপিটালের উপরের ছোট স্ল্যাবকে ড্রপ প্যানেল (Drop panel) বা ড্রপ (Drop) বলে। এে আয়তাকার বা বর্গাকারভাবে তৈরি করা হয়। ড্রপ প্যানেলের যে-কোনো দিকের মাপ, সংশ্লিষ্ট দিকের স্ল্যাবের দৈর্ঘ্যের কমপক্ষে ০৩ গুণ হওয়া উচিত ফ্লাট স্ল্যাবকে ড্রপ প্যানেল ছাড়াও তৈরি করা যায়। ফ্লাট স্ল্যাবকে টু-ওয়ে অথবা ফোর-ওয়ে পদ্ধতিতে ডিজাইন করা হয়। ত ফোর-ওয়ে পদ্ধতিই সর্বাধিক প্রচলিত। সাধারণত যে সমস্ত স্ল্যাব প্রায় বর্গাকৃতি এবং যার প্রস্থের মান অপেক্ষা দৈর্ঘ্যের মান ১.৩৩ বেশি হয় না, সেক্ষেত্রে ফ্লাট স্ল্যাব ডিজাইন করা হয়।
রিবড বা হলো টাইল্ড ফ্লোরিং (Ribbed or hollow tiled flooring) :
স্ল্যাবের নিরপেক্ষ অক্ষের নিচের দিকের কংক্রিট কোন লোড বহন করে না বলে কংক্রিটের উক্ত স্থানে ফাঁপা টাইল ব্যবহার করে স্ল্যাবের ওজন কমানো যেতে পারে এবং আর্থিক সাম্র পাওয়া যেতে পারে। এরূপ ফ্লোর এর নির্মাণপদ্ধতি রিইনফোর্সড কংক্রিট ফ্লোর এর মতোই। স্ল্যাবের নিরপেক্ষ অক্ষের নিচে অংশের কংক্রিটকে বাদ দিয়ে সেখানে কিছু দূরত্ব পর পর কতকগুলো রিব (Rib)-এ বিভক্ত করা হয়। এ রিবগুলোর উপরের অংশে কংক্রিটের সাথে মিলে, ‘টি’-বিমের ন্যায় আকার ধারণ করে।
হলো ব্লকের উপর রিব এর দৈর্ঘ্য নির্ভর করে। হলো ব্লকের দৈর্ঘ্য কোনো সময় ৫০ সেমি এর বেশি হওয়া উচিত নয়। রিবের চওড়া ৬ থেকে ১০ সেমি এর মধ্যে হয় এবং স্প্যান দৈর্ঘ্য 7 মিটারের বেশি নয়। প্রধান রিইনফোর্সমেন্ট রিবের তলদেশে এবং নেগেটিভ মোমেন্টকে প্রতিরোধ করতে রিবের উপরের দিকে রিইনফোর্সমেন্ট ব্যবহার করতে হবে। কভারিং কমপক্ষে ২.৫ সেমি। রিবের ন্যূনতম গভীরতা মুক্ত সাপোর্টের L ক্ষেত্রে এবং আবদ্ধ সাপোর্টের ক্ষেত্রে ২০ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: