আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ইমারতের লে আউট।
ইমারতের লে আউট
৪.১ লে-আউটের সংগা
যেকোনো কাজ শুরু করার আগে কাজের একটি রূপরেখা বা লে-আউট তৈরি করা খুবই দরকার। যেমন কোনো দর্জি যখন পোশাক তৈরি করে তখন কাপড় কাটার আগে কাপড়ের উপর একধরনের দাগ দিয়ে নেয়। পরে সেই দাগ অনুসারে কাপড় কাটে সেলাই করার জন্য। এই কাপড় কাটার আগে দাগ দিয়ে নেয়াকে ঐ পোষাকের জন্য লে-আউট দেয়া বলা হয়। ঠিক তেমনি কাগজে আকা ভবনের নকশাকে প্রকৃত মাপ অনুসারে জমিতে স্থানান্তর করাকে প্রকৌশলবিদ্যায় ভবনের লে-আউট দেয়া বোঝায়। জমিতে সুতা, খুটি বা চুনের সাহায্যে মাপ অনুযায়ী চিহ্নিত করা হয়। অংকন অনুযায়ী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াকে লে-আউট বলে।
৪.২ লে আউটের প্রয়োজনীয়তা
ভবনের নকশা, কাগজের উপর ছোট স্কেলে আঁকা থাকে। ডয়িং-এর কাগজটিকে বাস্তব ভূমির ছোট সংস্করণ বলা যেতে পারে। কাগজে আঁকা নকশাটিকে প্রকৃত ফেলে জমিতে চিহ্নিত করতে হয়, যাতে সহজেই প্রতিটি কলামের সঠিক অবস্থান, নির্মানাধীন ভবনের ওরিয়েন্টেশন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভবনটি সীমানার ভিতরে আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।
ভবনের লে আউট দেয়া ভবন নির্মানের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আসলে গণিতের জ্যামিতি বিষয়ের একটি পরিপূর্ণ ব্যবহারিক ঘটনা। ভবনে লে-আউট দিয়ে কাজ করলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন-
* ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভুল হবার সম্ভাবনা কম হয়।
* ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ফোরম্যান বা মিস্ত্রি সঠিক-সুন্দর ভাবে ও নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
* নির্মাণ কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে কলামের অবস্থান পুনঃপরীক্ষার জন্য স্থায়ী লে-আউটের প্রয়োজন হয়।
* ভবনের নকশা বা আসল জমিতে কোনো রকম সমস্যা থাকলে লে-আউট চলাকালীন সময়ে সংশোধন করা যেতে পারে।

৪.৩ লে-আউট করার পদ্ধতি
লে-আউট দেয়ার প্রধান কাজ হলো ড্রয়িং থাকা উপরে বর্ণিত ঐ সমস্ত প্রিডলাইনগুলোকে বাস্তব মাপজোরে মাধ্যমে প্রকৃত জমিতে স্থানান্তর করা। কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সেই কাজটি প্রকৌশলীরা করে থাকেন। যথা-
১) প্রথমে একটি বেসলাইন (Baseline) বা সীমারেখা নির্ধারণ করতে হয়। সীমারেখাটি সাধারণতঃ পার্শ্ববর্তী কোনো ভবন বা রাস্তার মধ্যরেখা (Centerline) -এর সমান্তরালে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে চিহ্নিত করা হয়।
২) বেসলাইনের সমান্তরাল করে ড্রয়িং-এ অঙ্কিত বিভিন্ন গ্রিডলাইনগুলো (a,b,c,d……) কে ভূমিতে স্থানান্তর করা হয়। কিছু অস্থায়ী বাঁশের খুঁটির সাহায্যে এই সমস্ত গ্রিডলাইনগুলোকে চিহ্নিত করা হয়।
৩) এরপর যেকোনো একটি সুবিধামতো গ্রিডলাইনের (১,২,৩,৪) সাথে সমকোণে রেখে আরেকটি গ্রিডলাইন চিহ্নিত করা হয়।
৪) একইভাবে পথ বরাবর যে প্রিডলাইন পাওয়া গেল সেগুলো সমান্তরাল করে আপের মতো আবার গ্রিডলাইন বসানো হয়।
৫) সাময়িক বা অস্থায়ী খুঁটির বললে কংক্রিটের খুঁটি ব্যবহার করে গ্রিডলাইনগুলোকে স্থায়ী করে রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে গ্রিডলাইনগুলো অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
৬) লেভেল মেশিনের সাহায্যে রাস্তার চূড়ার তলের উপর ভিত্তি করে ভবনের প্লিস্থ লেভেল নির্ধারণ করতে হয়। হিছ লেভেলের চিহ্নটি এমন এক স্থানে রাখতে হয় যেখানে সহজে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে, সহজে দেখা যার ও ভবন নির্মাণের শেষ পর্যন্ত ঐ স্থানের অস্তিত্ব থাকবে।
৭) পরস্পর লদ দুইটি গ্রিডলাইনের ছোবিন্দু থেকে কলাম ও ফাউন্ডেশনের সাইজ, অবস্থান এবং গভীরতা নির্ধারণ করা হয়।
৮) কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরস্পর সব চারটি গ্রিডলাইনের দিয়ে আবদ্ধ বর্ণক্ষেত্রের কর্ণের দৈর্ঘ বারবার পরীক্ষা করতে হয় যাতে উক্ত প্রিডলাইনগুলোর মাঝে ৯০ ডিগ্রি থাকে। কারণ আমরা জানি একটি পূর্ণাঙ্গ বর্গক্ষেত্রের কর্ণ দুইটি সবসময় সমান থাকে।
ভবনের লে-আউট দেয়ার জন্য আজকাল টোটাল স্টেশনের বহুল ব্যবহার চোখে পড়ছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু ডিজিটাল সার্ভে কোম্পানি আছে যারা টোটাল স্টেশনের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে ইমারতের লে-আউট দিয়ে থাকে। নিচে লে-আউট দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের নাম দেয়া হলো:
* টোটাল স্টেশন বা লেভেল মেশিন
* নাইলনের সুতা
* পেরেক
* হাতুড়ি
* অস্থায়ী বাঁশের খুঁটি
* স্থায়ী কংক্রিটের খুঁটি
* স্টিলের একটি বড় সমকোণী ত্রিভুজ
* স্টিল টেপ (১০০ ফুট)
* মাঝারি সাইজের প্লান বব বা ওলোন
৪.৪ লে-আউট করার কাজে সতর্কতা
সাইট / প্লট লে-আউট দেয়ার সময় সতর্কতা :
(১) সঠিকভাবে লে-আউট দেয়া না হলে বিল্ডিং-এর আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যাবে, যা পরবর্তীতে ঠিক করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।
২) লে-আউট দেয়ার সময় বাড়ি বাহিরের মাপ ঠিক আছে কিনা ভালোভাবে নজর দিতে হবে।
অনুশীলনী – ৪
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। লে-আউট কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১। লে আউট কী, ব্যাখ্যা কর।
২। লে আউট দেয়ার প্রধান কাজ কী ব্যাখ্যা কর।
৩। লে আউট দেয়ার সময় কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। লে আউটের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
২। লে আউট করার ধাপগুলো বর্ণনা কর।
৩। লে আউট দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের নামের তালিকা লেখ ।
আরও দেখুনঃ