সিভিল কন্সট্রাকশনের ছাদ | অধ্যায়-৩ | সিভিল কন্সট্রাকশন ২

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – সিভিল কন্সট্রাকশনের ছাদ যা অধ্যায়-৩ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প- ২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।

সিভিল কন্সট্রাকশনের ছাদ

 

সিভিল কন্সট্রাকশনের ছাদ

 

ছাদ (roof)

দালান বা বাড়ির সবচেয়ে উপরের অংশ, যা কাঠামোর আচ্ছাদন হিসাবে কাজ করে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব থেকে দালান বা বাড়িকে রক্ষা করে তাকে ছাদ বলে। অন্য কথায়, রোদ, ঝড়-বৃষ্টি, তাপ, বরফ, বাতাস ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আবাসিকদের জানমাল হেফাজত করার জন্য দালানের সর্ব উপরে নির্মিত আচ্ছাদন ও তাকে বহনকারী কাঠামোকে ছাদ (roof) বলে।

মেঝে ও ছাদের পার্থক্য

মেঝে ও ছাদের পার্থক্য নিম্নরূপ। যথাঃ

বিষয়মেঝেছাদ
১। অবস্থানইমারতে অবস্থানকারীর পায়ের নিচে।ইমারতের সবচেয়ে উপরের অংশে।
২। কাজবসবাসকারী বা ব্যবহারকারী ও তাদের মালামাল বহন করে।
বসবাসকারী বা ব্যবহারকারী ও তাদের মালামালকে আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে।
৩। সংখ্যাএকটি ইমারতে মেঝের সংখ্যা একাধিক হতে পারে।
যে কোন একটি ইমারতে ছাদের সংখ্যা একটি।
৪। জলছাদ বা লাইম টেরাসিংজলছাদ বা লাইম টেরাসিং ব্যবহার আবশ্যক নয়।
জলছাদ বা লাইম টেরাসিং রুফ ওয়াটার প্রুফিং সিস্টেম ব্যবহার আবশ্যক।

 

বিভিন্ন প্রকার ছাদের নাম

ছাদের প্রকারভেদ (types of floor):

ছাদ প্রধানত তিন প্রকার। যথাঃ

১) ঢালু ছাদ (pitched or sloping roof)

২) সমতল ছাদ (flat roof)

৩) বাঁকানো ছাদ (curved roof)

১) ঢালু ছাদঃ গঠন পদ্ধতি অনুসারে ঢালু ছাদ তিন প্রকার। যথাঃ

ক) সিংগেল ছাদ (single roof)

খ) ডাবল ছাদ (double roof)

গ) ট্রাস ছাদ (truss roof)

ক) সিংগেল ছাদ (single roof) আবার পাঁচ প্রকার। যথাঃ

  • লিন-টু রুফ (lean-to-roof)
  • কাপল রুফ (couple roof)
  • কাপল ক্লোজ ছাদ (Couple close roof)
  • সিজারস রুফ (scissors roof)
  • কলার বিম ছাদ (collar beam roof)

গ) ট্রাস ছাদ (truss roof) আট প্রকার। যথাঃ

  • কিং পোস্ট রুফ ট্রাস (king post roof truss)
  • কুইন পোস্ট রুফ ট্রাস (queen post roof truss)
  • ম্যানসার্ড রুফ ট্রাস (mansard roof truss)
  • কম্পোজিট রুফ ট্রাস (composite roof truss)
  • বেলফাস্ট রুফ ট্রাস (belfast roof truss)
  • লেমিনেটেড রুফ ট্রাস (laminated roof truss)
  • স্টিল রুফ ট্রাস (steel roof truss)
  • ট্রানকেটেড রুফ ট্রাস (truncated roof truss)

২) সমতল ছাদ (flat roof) তিন প্রকার। যথাঃ

  • টালি বর্গার ছাদ (terraced roof)
  • ঢালাই ছাদ (cast roof)
  • ঝুলন্ত খিলানের ছাদ (jack arch roof)

(৩) বাঁকানো ছাদ (Curved roof) দুইপ্রকার। যথাঃ

  • শেল ছাদ (shell roof)
  • ডোম ছাদ (dome)

আর সি সি ছাদ দুইপ্রকার। যথাঃ

১) একমুখী ছাদ (One way slab)

২) দ্বিমুখী ছাদ (Two way slab)

একমুখী ও দ্বিমুখী ছাদের পার্থক্য

বিষয়একমুখী ছাদদ্বিমুখী ছাদ
১। সাপোর্টছাদের শুধুমাত্র দুই দিকে বিম দ্বারা সাপোর্ট থাকে।
এই ছাদের চার পাশেই বিম দ্বারা সাপোর্ট থাকে।
২। স্প্যানের অনুপাতবড় স্প্যান (L) ও ছোট স্প্যান (B) এর অনুপাত ২ এর সমান বা বেশি।
বড় স্প্যান (L) ও ছোট স্প্যান (B) এর অনুপাত ২ এর চেয়ে কম।
৩। প্রধান রড স্থাপনপ্রধান রড শুধু এক দিকে স্থাপন করা হয়।।
প্রধান রড দুই দিকে দিকে স্থাপন করা হয়।
৪। উদাহরণড্রেনের উপর স্লাব।স্কুল ভবনে ক্লাস রুমের ছাদ

 

 

সিভিল কন্সট্রাকশনের ছাদ
চিত্রঃ অন ওয়ে ও টুয়ে স্নাব

ছাদ নির্মাণ কৌশল

নিম্নে আর সি সি ছাদের নির্মাণ কৌশল বর্ণনা করা হলো।

ছাদ নির্মাণ নিম্নোক্ত ধাপে সম্পন্ন করতে হয়।

১) সাটারিং বা ফর্ম ওয়ার্ক নির্মাণ।

২) রড কাটা, বাঁকানো ও সাজানো।

৩) মিশ্রণ তৈরি ও কংক্রিট স্থাপন।

৪) কিউরিং।

ছাদের রড ও কংক্রিটকে যথাস্থানে নকশা অনুযায়ী ধরে রাখার জন্য প্রথমে শাটারিং করতে হবে। কংক্রিটের ঢালাই শুরু করার পূর্বে শাটারিং মজবুত আছে কিনা অর্থাৎ কংক্রিটের ভারে তা ভেঙ্গে বা বসে যাবার সম্ভাবনা আছে কি না তা যাচাই করে নিশ্চিত হতে হবে।
ছাদ ঢালাই করার জন্য সঠিক মাপের মজবুত সাটারিং তৈরির কাজ শেষ করে তার উপর মাপ ও সংখ্যা নিরুপণ করে সে অনুযায়ী রড সাজাতে হবে। রড কাটা নির্ভর করে প্রধানত তার দৈর্ঘ্যের উপর। দৈর্ঘ্য নির্ভর করে রডের আকার, আকৃতি ও কক্ষের সাপের উপর।

একমুখী ছাদে প্রধান রডগুলো কক্ষের প্রন্থ বরাবর এক সারিতে বসানো হয় এবং আড়াআড়ি ভাবে ডিস্ট্রিবিউশন রড বসানো হয়। দ্বি-সুখী ছাদে প্রধান রডপুলো কক্ষের উভয় দিক বরাবর বসানো হয়। প্রধান রড ছাড়াও ছাদে ডিস্ট্রিবিউশন ন্নত ও অতিরিক্ত রত (extra top rod) বসানো হয়। এটা টপ রডগুলো দৈর্ঘ্য বরাবর ছাদের দুপ্রান্তে উপরের দিকে বসবে। প্রধান রডগুলোর উপরে বসবে ডিস্ট্রিবিউশন রডগুলো।

সকল প্রকার রডের সংখ্যা নিরূপণ করে মাপমতো কেটে দুপ্রান্তে হুক করে নিতে হবে। প্রধান রভগুলোর তলায় কভারিং ব্লক দিতে হবে। প্রধান রভ ও ডিস্ট্রিবিউশন রভ জি আই তার দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। একই ভাবে এক্সট্রা টপ রডগুলোকেও ছাদের দুইপ্রান্তে প্রধান রডের সাথে বেঁধে দিতে হবে। (চিত্র দেখ)

দ্বি-মুখী ছাদে যেহেতু উভয় দিকে প্রধান রড থাকে সেহেতু ডিস্ট্রিবিউশন রডের প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র একমুখী ছাদের মতো কক্ষের প্রন্থ বরাবর যে প্রধান রড বসবে তার উপর দৈর্ঘ্য বরাবর প্রধান রডগুলো বসিয়ে জি আই তার দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। এক্ষেত্রেও প্রন্থ বরাবর বসানো প্রধান রডের নিচে কভারিং ব্লক দিয়ে কভারিং এর মাপ ঠিক রাখতে হবে। সাধারণত কমপক্ষে ১৮ মি মি পুরু কংক্রিটের আবরণ দিয়ে মুক্ত কভারিং রাখা হয়।

আর সি সি কাঠামোতে কভারিং না রাখলে বা প্রয়োজনের তুলনায় কম রাখলে রড আর্দ্রতা ও বাতাসের সংস্পর্শে এসে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। উভয় দিকের রডগুলোর কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র দুরত্ব কত হবে তা নকশায় বিশদভাবে উল্লেখ থাকে। উল্লেখ্য ছাদের গভীরতা, রডের ব্যাস, পাশাপাশি রডের কে কে দুরত্ব এসব কিছু নির্ভর করে ছাদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পরিমাপ ও ছাদের উপর আপতিত ভারের উপর।

ছাদের সব রড স্থাপন এবং বাঁধা শেষ হলে কংক্রিট ঢালাই করতে হবে। নির্দিষ্ট স্থানে অনুপাত অনুযায়ী কংক্রিট মিশ্রণ তৈরি করে তা কড়াইয়ে করে ছাদে নিয়ে শাটারিং এর উপর ঢালার পর কর্ণির সাহায্যে সেগুলো রডের ফাঁকে ফাঁকে প্রবেশ করিয়ে তলা পর্যন্ত সুষমভাবে বিস্তৃত করে দিতে হবে।

লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কংক্রিট মিশ্রণ খুব উঁচু থেকে ফেলা না হয় এবং এক জায়গায় স্তূপাকারে জমা করে টেনে নেওয়া না হয়। কারণ এতে কংক্রিটের উপাদানগুলো পৃথক হয়ে যেতে পারে। কংক্রিট ঢালাই কাজে নিয়োজিত লোকজনের চলাচলের কারণে রড যাতে স্থানচ্যুত না হয় সেজন্য তক্তা বিছিয়ে তার উপর দিয়ে চলাচলের পথ করতে হবে। কংক্রিট ঢালাই শেষ হলে পাট্টা দ্বারা দৃঢ়বন্ধ করা হয় ও উপরিতল সমান করা হয়।

২৪ ঘন্টা পর থেকে শুরু করে ১৪ দিন, ২১ দিন বা ২৮ দিন পর্যন্ত কিউরিং করতে হয়। ছাদের উপর খড়কুটা, কচুরিপানা বা কাদামাটি বিছিয়ে সেগুলো ভিজিয়ে রেখেও কিউরিং করা যায়। তাছাড়া ছাদের চারিদিকে বালি- সিমেন্ট মসলার বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে রেখে কিউরিং করা যায়। ২৮ দিন কিউরিং করার পর সাবধানের সাথে শাটারিং খুলে নিতে হয়।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ছাদ নির্মাণে মালামালের নাম

১। স্ক্যাফোল্ডিং

২। ফর্ম ওয়ার্ক (সাটারিং ও সেন্টারিং)

৩। নির্মাণ উপকরণ (সিমেন্ট, বালি, পানি, ইট বা পাথর)

৪। নির্মাণ যন্ত্রপাতি যেমন- মিক্সার মেশিন, কম্প্যাক্টর

৫। মিন্নি ও লেবারদের ব্যবহৃত মালামাল (টেপ, কোদাল, তাগা ইত্যাদি)

ছাদ নির্মাণে নিরাপত্তা

১। ছাদ নির্মাণে ফর্ম ওয়ার্ক (সাটারিং ও সেন্টারিং) যথাযথ হতে হবে।

২। মজবুত, টেকসই স্ক্যাফোল্ডিং ব্যবহার করতে হবে।

৩। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার যন্ত্রপাতি (personal protective equipment (PPE) ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

৪। ঢালু ছাদে বা ছাদের প্রান্তে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত পড়ে যাওয়া রোধক ব্যবস্থা (personal fall arrest system- PFAS) ব্যবহার করতে হবে।

৫। ছাদে চলাচল সহজ ও নিরাপদ হতে হবে।

৬। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং তা মানা হচ্ছে কিনা মনিটরিং করতে হবে।

৭। ঢালাইয়ের সময় মালামাল পড়ে গিয়ে আহত না হয় সে জন্য সাইটের চারিদিকে নিরাপত্তা ক্যানপি (canopy) ব্যবহার করতে হবে।

অনুশীলনী

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। ছাদ কাকে বলে?

২। ছাদ নির্মাণের মালামালের নাম লেখ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। মেঝে ও ছাদের মধ্যে পার্থক্য লেখ। ২। একমুখী ও দ্বিমুখী ছাদের পার্থক্য লেখ। ৩। ছাদ নির্মাণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি?

রচনামূলক প্রশ্ন

১। ছাদের প্রকারভেদ ও ছাদ নির্মাণ কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত লেখ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment