আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – সিভিল কন্সট্রাকশনের মেঝে যা অধ্যায়-২ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ শিক্ষাবর্ষ হতে সকলস্তরের পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আরও আগ্রহী, কৌতূহলী ও মনোযোগী করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল ও এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের পাঠ্যপুস্তকসমূহ চার রঙে উন্নীত করে আকর্ষণীয়, টেকসই ও বিনামূল্যে বিতরণ করার মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে; যা একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক রচিত ভোকেশনাল স্তরের ট্রেড পাঠ্যপুস্তকসমূহ সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। উন্নতমানের কাগজ ও চার রঙের প্রচ্ছদ ব্যবহার করে পাঠ্যপুস্তকটি প্রকাশ করা হলো।
Table of Contents
সিভিল কন্সট্রাকশনের মেঝে
মেঝে
ইমারতের যে সমতল পৃষ্ঠ মালামাল, যন্ত্রপাতি, পার্টিশন ওয়াল এবং বসবাসকারীদের ধারণ ও বহন করে তাকে মেঝে (floor) বলে। একটি বহুতল দালানে একাধিক মেঝে থাকে।
১) যে মেঝে ভূমিতলে অবস্থিত ভিটি (plinth) লেভেলে নির্মাণ করা হয় তাকে গ্রাউন্ড ফ্লোর বা একতলার মেঝে বলা হয়। প্রত্যেকটি উপর তলার মেঝে নিচ তলার ছাদ হিসাবে কাজ করে। মেঝেই ইমারতকে বিভিন্ন গৃহতলে ভাগ করে। ভূমিতল থেকে নিচের মেঝেকে বেইজমেন্ট ফ্লোর (basement floor) বলে এবং এটিও গ্রাউন্ড ফ্লোরের অন্তর্ভুক্ত।
২) গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে উঁচুতে কলাম বা দেওয়ালের উপর অবস্থিত মেঝেকে আপার ফ্লোর বা মেঝে বলে। গ্রাউন্ড ফ্লোর এবং ইমারতের ছাদ বাদে সকল ফ্লোরই আপার ফ্লোর। এই ফ্লোর ডিজাইন করতে হলে এর উপর চাপান লোড, ফ্লোর স্লাবের নিজস্ব ওজন ও পার্টিশন ওয়ালের ওজন বিবেচনা করতে হয়। নির্মাণ সামগ্রীর নাম অনুযায়ী মেঝের নামকরণ করা হয়।
মেঝের প্রকারভেদ
গ্রাউন্ড ফ্লোর বা আপার ফ্লোর এর দুইটি উপাংশ, যথাঃ
ক) ফ্লোর বেইজ বা সাব ফ্লোর (Floor base or Sub floor)
খ) ফ্লোরিং বা ফ্লোর কভারিং (Flooring or floor covering)
গ্রাউন্ড ফ্লোর বা ভূমিতল মেঝের শ্রেণি বিভাগঃ নির্মাণ উপকরণ অনুযায়ী গ্রাউন্ড ফ্লোরের শ্রেণি বিভাগঃ-
১) কাদার ফ্লোরিং (Mud flooring)
২) মুরাম ফ্লোরিং (Moorum flooring)
৩) ইটের ফ্লোরিং (Brick flooring)
৪) স্টোন বা পাথর ফ্লোরিং (Stone flooring)
৫) সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং (Cement concrete flooring)
৬) টেরাজো ফ্লোরিং (Terrazo flooring)
৭) মোজাইক ফ্লোরিং (Mosaic flooring)
৮) টাইল ফ্লোর (Tile flooring)
৯) মার্বেল ফ্লোর (Marble flooring)
১০) গ্রানোলিথিক ফ্লোরিং (Granolithic flooring)
১১) কাঠের ফ্লোরিং (Timber flooring) ১২) এ্যাসফল্ট ফ্লোরিং (Asphalt flooring)
১৩) রাবার ফ্লোরিং (Rubber flooring)
১৪) লিনোলিয়াম ক্রোয়িং (Linolium flooring)
১৫) কর্ক ক্লোরিং (Cork flooring)
১৬) গ্লাস ফ্লোরিং (Glass flooring)
১৭) পি ভি সি ফ্লোরিং (PVC Flooring)
১৮) ম্যাগনেসাইট ফ্লোরিং (Magnesite flooring)
১৯) এসিড নিরোধক ফ্লোরিং (Acid proof flooring)



















নির্মাণ সামগ্রী অনুযায়ী আাপার ফ্লোরের শ্রেণি বিভাগ আপার ফ্লোর নিম্নলিখিত প্রকারের হয়ে থাকে। যথাঃ-
১) স্টিল জয়েস্ট ফ্লোর (Steel joist floor)
২) জ্যাক-আর্চ ফ্লোর (Jack arch floor)
৩) আর সি সি ক্রোয় (RCC floor)
৪) রিবভ বা ফাঁকা টাইল ফ্লোর (Ribbed or hollow tiled floor)
৫) ফিলার জয়েন্ট ক্লোর (Filler joist floor)
৬) প্রি-কাস্ট কংক্রিট ফ্লোর (Pre-cast concrete block floor)
৭) কাঠের ফ্লোর (Wooden floor)
নিচে বিভিন্ন প্রকার আপার ফ্লোরের ছবি দেখানো হয়েছে।
মেঝে তৈরির মালামাল
নিম্নে মেঝে তৈরির মালামাল উল্লেখ করা হলোঃ
১। মাড বা কাদার মেকে- ভিজা মাটি, গোবর ও সিমেন্ট
২। মুরাম এর মেঝে- মুরাম পাখর, পানি, মুরাম পাউডার, সিমেন্ট ও গোবর।
৩। ইটের মেঝে- ইট, বালি, সিমেন্ট ও পানি।
৪। পাথরের মেঝে-পাখর, ইটের টুকরা, চুন বা সিমেন্ট, বালি পানি।
৫। সিমেন্ট কংক্রিটের মেঝে- বালি, সিমেন্ট, খোয়া, সুরকি, পানি।
৬। টেরাজো মেঝে- মার্বেল পাথরের দানা, সাদা বা রঙিন সিমেন্ট, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, বালি, পাথরকুচি, পানি, অকজেলিক এসিড (oxalic acid), তেল, মোম।
৭। মোজাইক মেঝে- সিমেন্ট, বালি, পানি, মার্বেল কুচি, রঙিন সিমেন্ট, চুন, মার্বেল পাউডার।
৮। টাইল মেঝে- টাইল, চুন, সুরকি, বালি, সিমেন্ট, পানি।
৯। মার্বেল মেঝে- সিমেন্ট, বালি, মার্বেল স্ল্যাব, পানি।
১০। কাঠের মেঝে- কাঠ, পেরেক, ক্রু।
১১। এ্যাসফল্ট মেঝে- এ্যাসফল্ট টাইল, চিকেন বালি, খনিজ তেল, এ্যাসবেস্টস।
১২। রাবার মেঝে- রাবার, কটন ফাইবার, কর্কের গুড়া, এ্যাসবেস্টস ফাইবার (asbestos fibre), রং।
১৩। লিনোলিয়াম মেঝে- লিনোলিয়াম শিট, প্লাইউড, তারকাটা, আইকা বা আঠা(glue)।
১৪। কর্ক মেঝে- কর্ক (ওক গাছের বাইরের বাকল), তিসির তেল, পানি।
১৫। গ্লাস মেঝে- কাঁচের ব্লক, ও ঢালাই এর মালামাল।
১৬। ম্যাগনেসাইট মেঝে- ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড, এ্যাসবেস্টস, কাঠের গুড়া, রঙ (pigment)।

মেঝে তৈরির কৌশল
নিম্নে কয়েকটি প্রচলিত মেঝের (floor) কৌশল বর্ণনা করা হলোঃ
১) কাদার ফ্লোরিং (mud flooring)
প্রথমে নির্বাচিত মাটিকে ২৫ সে মি পুরুত্বে ভিটির উপর বিছিয়ে দিতে হবে। মাটি দুরমুজ করার জন্য পরিমিত জলীয় অংশ (optimum moisture content) মাত্রায় আর্দ্রতা না থাকলে পানি মিশিয়ে দুরমুজ করতে হবে। দুরমুজ চলাকালে পানি মিশানো যাবে না। শুকানোর পর মেঝে যাতে ফেটে না যায় এর জন্য মাঝে মাঝে পানি ও গোবর মিশিয়ে পাতলা প্রলেপ দিতে হবে। সম্ভব হলে পানি গোবরের পরিবর্তে ১:২ থেকে ১:৩ অনুপাতে সিমেন্ট গোবরের প্রলেপ দিতে হবে।
২) ইটের ফ্লোরিং (brick flooring)
প্রথমে মাটি ভরাট করে উত্তমরূপে দুরমুজ করে দৃঢ়াবদ্ধ করতে হবে। তারপর এর উপর ৭.৫ সে মি পুরু বালি বিছিয়ে দিতে হবে। বালির উপর ১২ মি মি সিমেন্ট মসলার দ্বারা ইট বিছাতে হবে। অথবা ১:৮:১৬ অনুপাতে লিন মিক্স কংক্রিট তৈরি করে তা সাববেসের (subbase) উপর বিছিয়ে ১২ মি মি সিমেন্ট মসলার বেডের সাহায্যে ইট বিছাতে হবে। অবশ্য উভয়ক্ষেত্রে জোড়াগুলো ফ্লাশ করে দিতে হবে। ইটের মেঝের ক্ষেত্রে ইটের ফ্রগ মার্ক নিচের দিকে রাখতে হবে। ৭ দিন পানি দিয়ে curing করার পর মেঝে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে।
৩) পাথরের ফ্লোরিং (stone flooring)
মেঝে তৈরি করার পূর্বে ভিটিতে ভরাট করা মাটিকে উত্তমরূপে দুরমুজ করতে হবে। মাটিতে সরাসরি পাথর বিছানোর যোগ্য না হলে ২৫ সে মি পুরু করে ইট বা পাথর টুকরা বিছিয়ে দুরমুজ করতে হবে। দুরমুজ করার ফলে ইট বা পাথর টুকরা মাটিতে প্রবেশ করে একটি শক্ত স্তর তৈরি করবে। এ স্তরের উপর ১০ থেকে ১৫ সে মি পুরু সিমেন্ট বা লাইম কংক্রিট বিছিয়ে মেঝের বেইজ তৈরি করতে হয়। ২ থেকে ৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ২৫ মি মি পুরু মসলার বেডে ফ্লাগ স্টোন বসিয়ে কাজ করতে হবে।
দুই প্রান্তে দুটি পাথর বসিয়ে সুতার সাহায্যে লেভেলিং করে তাদের মাঝে একই লেভেলে পাথর বসাতে হবে। পাথর বসান শেষ হলে জোড়ের মসলা ১০ থেকে ২০ মি মি গভীরতায় বের করে নিতে হবে। একে রেকিং আউট বলে। পরে ১:৩ অনুপাতে তৈরি সিমেন্ট মসলা দ্বারা উক্ত স্থান ভরাট করে দিতে হবে। ভরাট করার সময় জোড়ে ফ্লাশ পয়েন্ট করতে হবে। কিউরিং শেষে পিউমিক পাথর দ্বারা ঘষে মসৃণ করে মোম পালিশ করতে হবে। যেখানে বেশি শেড পড়ে সেখানে এ ধরনের মেঝে তৈরি করা হয়।
৪) সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং (cement concrete flooring)
কংক্রিটের ঢালাই মেঝে বসতবাড়ি, অফিস-আদালত, বাণিজ্যিক ভবন ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। কারণ এই ধরনের মেঝে মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী ও তাড়াতাড়ি নির্মাণ করা যায়।
প্রথমে ভিটিতে ভরাটকৃত মাটিকে উত্তমরূপে দুরমুজ করে দৃঢ়াবদ্ধ করতে হবে। দৃঢ়াবদ্ধ মাটির উপর ১০ থেকে ১৫ সে মি পুরুত্বে বালি দিয়ে তা পানি দ্বারা ডুবিয়ে দিতে হবে। পানি নিচের দিকে যাবে আর বালি বসে যাবে। দেখা যাবে এক সময় বালি বসে গিয়ে দৃঢ়াবদ্ধ উত্তম তল তৈরি করেছে।
বালি দ্বারা তৈরি তলের উপর ব্রিক ফ্লাট সলিং (brick flat soling) বসিয়ে তার উপর কংক্রিট ঢালাই করে মেঝে তৈরি করা যাবে। এক্ষেত্রে বালির উপর পলিথিন বিছিয়ে সলিং করা যাবে। অথবা বালির উপর সলিং করে সলিং এর উপর পলিথিন বিছিয়েও কংক্রিট ঢালাই করা যাবে। তখন জোড়গুলো বালি দ্বারা পুরণ করতে হবে। যাই করা হোক না কেন এ স্তর হবে কংক্রিটের বেইজ।
সলিং ব্যবহার না করে ১:৩:৬ অথবা ১:৫:১০ অনুপাতে লাইম কংক্রিট বা সিমেন্ট কংক্রিট ঢালাই করেও কংক্রিট বেইজ তৈরি করা যায়। কংক্রিট বেইজ তৈরি করার পর মূল ওয়ারিং সারফেস প্রস্তুত করলে প্রয়োজনীয় মেঝে তৈরি হবে। কংক্রিট বেইজ শক্ত হওয়ার পর ব্রাশ দ্বারা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিতে হবে এবং মেঝেকে শুকিয়ে নিতে হবে। কংক্রিট ঢালাই করার পূর্বে ঢালাই এলাকাকে সুবিধামতো আকারের কতকগুলো আয়তাকার প্যানেলে বিভক্ত করতে হবে।
১:২:৪ অনুপাতে কংক্রিট মিশ্রণ তৈরি করে অলটারনেট প্যানেল ঢালাই করতে হবে। ঢালাই এর পূর্বে সিমেন্ট গ্রাউটিং (তরল সিমেন্ট পেন্ট) করতে হবে। অন্যথায় বেইজ ও ওয়্যারিং সারফেসের সাথে বন্ধন হবে না। কংক্রিট প্রয়োজনীয় পুরুত্বে (৪ সে মি) ঢেলে কর্ণি এবং পাট্টা দিয়ে পিটিয়ে সমান করে দিতে হবে যাতে মিশ্রণের পানি উপরে উঠে আসে। তারপর শুকনা বালি ও সিমেন্টের সুষম মিশ্রণ কংক্রিটের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কর্ণি দ্বারা সমতল ও মসৃণ করে দিতে হবে।
একে টপিং বলে। টপিং কিছুটা শক্ত হলে শুধু সিমেন্ট ছিটিয়ে কর্ণি দ্বারা সমতল করে দিতে হবে। একে নীট সিমেন্ট ফিনিশিং বলে। এভাবে বাকি খালি আয়তাকার প্যানেল গুলোকে ঢালাই করতে হবে।
৫) টাইল ফ্লোরিং (tile flooring)
টাইল মেঝের জন্য আর সি সি বা সিমেন্ট কংক্রিটের মত শক্ত পৃষ্ঠ প্রয়োজন। এর উপর ২৫ থেকে ৩০ মি মি পুরুত্বে ১:৩ অনুপাতে চূর্ণক মসলা (lime morter) বিছিয়ে দেওয়া হয়। তরপর ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা যাবত শক্ত হওয়ার জন্য ফেলে রাখা হয়। টাইল বসানোর পূর্বে এর উপর সিমেন্ট পেস্ট বা স্লারি (slury) প্রয়োগ করা হয় এবং টাইল বসিয়ে আস্তে আস্তে কাঠের হাতুড়ির সাহায্যে আঘাত করে স্থির করা হয়। টাইলকে কংক্রিটের উপর বসানোর পূর্বে তার চারপার্শ্বে সিমেন্ট মসলা
লাগানো হয়। এর ফলে দুইটি টাইলের মধ্যে সংযোগ দৃঢ় হয়। পরে দুই টাইলের মধ্যকার জোড় থেকে ৫ মি মি গভীরতায় মসলা তারের ব্রাশ দ্বারা তুলে নেওয়া হয়। সিমেন্ট স্লারির পেস্ট দ্বারা উক্ত জোড় পূরণ করা হয়। জোড় শুকালে বা জমাট বাধার পর ঘষা পাথর দ্বারা ঘষে মসৃণ করা হয়।
৬) কাঠের ফ্লোরিং (timber flooring)
আমাদের দেশে কাঠের মেঝের ব্যবহার কম। পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে কাঠের দাম কম এবং বেশি পরিমাণে কাঠ পাওয়া যায় সেখানে কাঠের মেঝে দেখা যায়। তবে সেগুলোও বিজ্ঞান সম্মতভাবে তৈরি নয়। সাধারণত কাঠের মেঝে দুইপদ্ধতিতে নির্মিত হয়। যথাঃ-
১) ঝুলন্ত ফ্লোরিং (suspended floor) এবং
২) স্থাপিত ফ্লোরিং (supported floor)
পাহারি অঞ্চলে ঝুলন্ত মেঝে নির্মিত হয়। এই সব মেঝে সাধারণত গাছের খুঁটির উপর আড়া দিয়ে তার উপর তক্তা বিছিয়ে পেরেক বা ক্ষু দ্বারা আটকিয়ে নির্মাণ করা হয়। সমতল ভূমিতে এ ধরনের মেঝে তেমন দেখা যায় না। তবে টিনের বা মাটির ঘরের সিলিং হিসাবে কাঠের মেঝে দেখা যায়। জিমনেসিয়াম (যেখানে ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস সহ যাবতীয় ইনডোর গেমস অনুষ্ঠিত হয়), অডিটোরিয়াম (নাটক বা নৃত্যের জন্য মঞ্চ) ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাপোর্টেড টাইপ কাঠের মেঝে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। নিম্নে উক্ত মেঝের নির্মাণ কৌশল বর্ণনা করা হলো।
কাঠের ব্লক ফ্লোরিং
প্রথমে কক্ষের মাটিকে দুরমুজ করে নিতে হবে। ভরাট বা আদি মাটি যাই হোক না কেন দুরমুজ করে এমন পর্যায়ে আনতে হবে যেন মেঝে নির্মাণের পর কোন জায়গায় অসমভাবে বসে যেতে না পারে। মাটি তল নির্মিত হলে তার উপর ১৫ থেকে ২০ সে মি পুরুত্বে সিমেন্ট কংক্রিট বেইজ তৈরি করতে হবে (১:২:৪)। কংক্রিট বেইজ তৈরির পর কিউরিং সময় অতিক্রান্ত হলে মূল কাঠের মেঝে নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। প্রথমে কংক্রিট বেইজের উপর মান্টিক এ্যাম্ফন্ট (mastic asphalt) এর স্তর প্রয়োগ করতে হবে। এ স্তর কাঠকে রক্ষা করবে।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাঠের মেঝে স্থাপন করা যায়। যথাঃ-
ক) স্ট্রিপ ফ্লোর কভারিং
খ) প্লাংকেড ফ্লোর কভারিং
গ) উড ব্লক ফ্লোর কভারিং
ঘ) ফেব্রিকেটেড ফ্লোর কভারিং
ক) স্ট্রিপ ফ্লোর কভারিং
এ পদ্ধতিতে কম চওড়া কাঠকে পর পর পাশাপাশি বিছিয়ে টাং এন্ড গ্রুপ জোড়ের মাধ্যমে আটকিয়ে মেঝে প্রস্তুত করা হয়।
খ) প্লাংকেড ফ্লোর কভারিং
বড় চওড়া কাঠকে প্রথম পদ্ধতির মতো পর পর পাশাপাশি বিছিয়ে টাং এন্ড গ্রুপ জয়েন্টের মাধ্যমে মেঝে প্রস্তুত করা হয়।
গ) উড ব্লক ফ্লোর কভারিং
কংক্রিট বেইজের উপর মাস্টিক এ্যাসফল্ট বিছিয়ে ২ থেকে ৪ সে মি পুরু এবং ২০ সেমি x ৪ সে মি বা ৩০ সেমি X ৮ সেমি আকারের কাঠের ব্লককে পাশাপাশি রেখে মেঝে তৈরি করা হয়।
ঘ) ফেব্রিকেটেড ফ্লোর কভারিং
বর্গাকার বা আয়তাকার কাঠের ব্লককে পাশাপাশি রেখে টাং এন্ড গ্রুপ জয়েন্টের মাধ্যমে মেঝে তৈরি করা হয়।
আপার ফ্লোর নির্মাণে উপরের মেঝেগুলোর মধ্যে আমাদের দেশে আর সি সি মেঝে ছাড়া অন্যগুলো কদাচিৎ ব্যবহৃত হয় বলে শুধু আর সি সি মেঝের নির্মাণ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো। ৩.৫ ছাদ নির্মাণ কৌশল দ্রষ্টব্য।
(বিঃ দ্রঃ আর সি সি ছাদের নির্মাণের অনুকরণে আর সি সি মেঝে নির্মাণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মেঝের ফিনিশিং কাজ যেমন টাইলস, মোজাইক বা নিট সিমেন্ট ফিনিশিং অতিরিক্ত করতে হবে।)
মেঝে তৈরীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাবধানতা
মেঝে তৈরির ক্ষেত্রে নিম্নের প্রয়োজনীয় সাবধানতাগুলো অবলম্বন করতে হয়। যথাঃ-
১) সাটারিং দৃঢ়ভাবে তৈরি করতে হবে। একই উচ্চতায় ও একই সমতলে মজবুত করে নির্মাণ করতে হবে যেন শ্রমিকের মালামাল নিরাপদে বহন করতে পারে।
২) সাটারিং এর উপর অভেদ্য কাটিং লাগাতে হবে এবং যথাযথ ঢাল রাখতে হবে।
৩) রডের পরিমাণ, আকার ও আকৃতি যথাযথ হতে হবে অর্থাৎ ডিজাইন ড্রয়িং এ বর্ণিত রড ব্যবহার করতে হবে।
৪) রডকে মরিচামুক্ত করতে হবে এবং যথাযথ ভাবে জি আই তার দ্বারা বাঁধা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
৫) কংক্রিট ঢালাই এর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সঠিক মানের এবং সঠিক অনুপাতে মালামাল ব্যবহার করা হয়।
৬) কংক্রিট তৈরিতে ব্যাচিং, মিক্সিং, পানি সিমেন্টের অনুপাত, পরিবহণ, ঢালাই, কম্প্যাকশন ইত্যাদি যথাযথ হতে হবে।
৮) ঢালাই চলাকালে গ্রাউটিং করতে হবে যাতে জোড়া লাগে বা পারস্পরিক বন্ধন সৃষ্টি হয়।
৯) সঠিক সময় পর্যন্ত ও সঠিক পদ্ধতিতে কিউরিং করতে হবে।
১০) নিয়ম অনুযায়ী সাটারিং খোলা হয়েছে ও নির্ধারিত সময় পর খোলা হয়েছে কিনা দেখতে হবে।
১১) সাটারিং খোলার পর কোন জায়গায় ত্রুটি থাকলে তা ফিনিশিং কাজের পূর্বেই সারিয়ে ফেলতে হবে।
১২) বিভিন্ন প্রকার মেঝে তৈরিতে ব্যবহৃত মালামাল কাজে লাগানোর পূর্বে এর গুণগত মান আদর্শ টেস্টের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে।
১৩) ঢালাই মেঝের ড্রয়িং এ উল্লেখিত শক্তি অর্জন হলো কিনা তা আদর্শ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।

অনুশীলনী
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। মেঝে কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। মেঝে কত প্রকার ও কি কি?
২। মেঝে তৈরির মালামাল সম্পর্কে লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। মেঝে তৈরির কৌশল বর্ণনা কর।
২। মেঝে তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাবধানতা সম্পর্কে লেখ।
আরও দেখুন :