সেপটিক ট্যাংক | অধ্যায়-১২ | বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – সেপটিক ট্যাংক যা অধ্যায়-১২এর বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২ এ অন্তভুক্ত।  শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষা ম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

সেপটিক ট্যাংক

সেপটিক ট্যাংক-এর পরিচিতি

সেপটিক ট্যাংক যে কোনো ইমারতের বসবাসকারী বা ব্যবহারকারীদের মলমূত্র নিষ্কাশনের জন্য বাড়িঘর অফিস-আদালত ইত্যাদিতে পৃথকভাবে ভূগর্ভে যে পানিরোধী ট্যাংক নির্মাণ করা হয় তাই সেপটিক ট্যাংক। এটা মলমূত্র সংরক্ষণ, শোষন ও পরিশুদ্ধ করে থাকে। সুতরাং মলমুত্র সন্ত্রক্ষণ, শোষন ও পরিশুদ্ধির কাজে ব্যবহৃত ইট বা কংক্রিট নির্মিত ট্যাংকই সেপটিক ট্যাংক।

 

সেপটিক ট্যাংক
চিত্র : সেপটিক ট্যাংক

যে সকল এলাকায় কোনো সিউয়েজ ব্যবস্থা নেই যেমন-প্রামাঞ্চল বা আধা পৌর এলাকা সেখানে মানুষের মলমূত্র নিষ্কাশনের জন্য বাড়িঘর, অফিস-আদালত ইত্যাদিতে পৃথকভাবে ভূগর্ভে যে পানিরোধী ট্যাংক নির্মাণ করা হয় তাই সেপটিক ট্যাংক। এটা মলমূত্র সংরক্ষণ, শোষন ও পরিশুদ্ধ করে থাকে।

সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের উদ্দেশ্য

কোনো এলাকার সিউয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকলে মানুষের মলমূত্র নিষ্কাশনের জন্য বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত ইত্যাদিতে পৃথক পৃথকভাবে সেপাটিক ট্যাংক নির্মাণ প্রয়োজন হয়। সেপটিক ট্যাংকের মাধ্যমে মলমূত্রকে পচিয়ে তরল করে পরিশোধনের ব্যবস্থা করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত মাটিতে শোষণ করানোর ফলে স্বাস্থ্যসম্মত সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকে। দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষতিকারক ও দৃষ্টিকটু পদার্থসমূকে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করে রোগজীবাণুর হাত হতে মানবজীবনকে রক্ষা করার জন্য এটা নির্মাণ করা হয়।

ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী সেপটিক ট্যাংক

ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে সেপটিক ট্যাংকের আকার নির্ভর করে। নিম্নে জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে সেপটিক ট্যাংকের আকার বা সাইজের একটি ছক দেয়া হলো:

ব্যবহারকারীর সংখ্যাদৈর্ঘ্যপ্রস্থস্তরল্যের দৈর্ঘ্যকার্যকর আয়তন
১০১.৮ মি.০.৬ মি.০.৯ মি.০.৯৭ ঘন মি.
৩০২.৭ মি.০.৬ মি.১.৩৫ মি.২.১৮ ঘন মি.
৫০৩.৩ মি.১.১২ মি.১.৩৭ মি.৫.৪২ ঘন মি.
১০০৫.২ মি.১.২ মি.১.৬৫ মি.১০.২৯ জন মি.
২০০৬.২ মি.১.৮ মি১.৭০ মি২০.২০ অন মি.

 

ইন্সপেকশন পিট

ইন্সপেকশন পিট: ভূগর্ভস্থ সিউরারেজ পাইপের এলাইনমেন্টে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর এবং দিক পরিবর্তনের স্থানে (বাঁকের মুখে) পরিদর্শন এবং পরিক্ষারকরণের জন্য যে আরতাকায়/বর্গাকার পিট বা ওপেনিং রাখা হয়, তাকে ইন্সপেকশন পিট বলে।

 

সেপটিক ট্যাংক
চিত্র : ইন্সপেকশন পিট

ইন্সপেকশন পিট অর্থ পরিদর্শন কূপ। বাহুমূল নলের প্রত্যেক বাঁকে বিধবা বিভিন্ন দিক থেকে আগত কয়েকটি (সর্বোচ্চ গুটি) ফল ও বাস্তুমল দলের সংযোগস্থলে আয়তাকারে যে কূপ নির্মাণ করা হয় ভাকে ইন্সপেকশন পিট বলে। এ পিট মাটিয় নিচে নির্মাণ করা হয়। মানুষ বা জীবজন্তর পরিত্যক্ত মলমূত্র নির্বিঘ্নে সেপটিক ট্যাংকে পৌঁছায় অথবা ব্যবহৃত পানি বা অন্যান্য শিউয়েজ নির্দিষ্ট জায়গায় সরবরাহ বা পৌঁছানোর জন্য ইন্সপেকশন চেম্বার বা শিট অত্যন্ত জরুরি।

কোনো কারণে লাইনে বদ্ধতার (Block) সৃষ্টি হলে ইন্সপেকশন পিট পরিদর্শন করে তা জানা যায় এবং বদ্ধতার অবসান ঘটানো যায়। অন্যভাবে বলা যার সমস্ত লাইন পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না বা কাজ করতে সমস্ত লাইন উঠানোর প্রয়োজন হয় না। এ পিটের সাহায্যে বদ্ধতার নির্দিষ্ট স্থানটি চিহ্নিত করা যায়। এ পিট বাঁকের মুখে সিউয়েজকে সহজে প্রবাহ হতে দেয়। এ সকল দিক বিবেচনা করে বলা যায় স্যানিটারি সিস্টেমে ইন্সপেকশন পিটেয় প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

ইন্সপেকশন পিট নির্মাণের উদ্দেশ্য: বাড়ির ভূগর্ভস্থ সিউয়ারেজ পাইপের এলাইনমেন্টের দিক পরিবর্তনের স্থানে (বাঁকের মুখে) ময়লা জমার সম্ভাবনা থাকার কারণে ঐ স্থানটির ময়লা ইন্সপেকশন পিট-এ ফেলে প্রয়োজনবোধে পরিষ্কার করে বা অন্য দিকে প্রবাহিত করানো হয়। সেপটিক ট্যাংকের প্রথম চেম্বার সংলগ্ন অবস্থানে ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ করে সেপটিক ট্যাংক এবং ওয়াটার ক্লোজেট- এর মধ্যবর্তী ময়লাবাহী পাইপটি প্রয়োজনীয় মূহুর্তে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়া ভূগর্ভস্থ মেইন সিউয়ারেজ লাইন পরিদর্শন, মেরামত ও পরিষ্কারকরণের নিমিত্তে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর বড় আকারের বিশেষ ধরনের ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ করা হয়।

 

সেপটিক ট্যাংক
চিত্র : ইন্সপেকশন পিট

ইন্সপেকশন পিট এর ব্যবহার ক্ষেত্র: ভূগর্ভস্থ সিউয়ারেজ পাইপের এলাইনমেন্টের দিক পরিবর্তনের স্থানে (বাঁকের মুখে), ওয়াটার ক্লোজেট-এর আউটলেট পয়েন্ট, সেপটিক ট্যাংক-এর ইনলেট পয়েন্ট ইত্যাদি। তাছাড়া ভূগর্ভস্থ মেইন সিউয়ারেজ লাইন পরিষ্কারকরনের নিমিত্তে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর (প্রতি ৩ মি. অন্তর) বড় আকারের বিশেষ ধরনের ইন্সপেকশন পিট ব্যবহার করা হয়।

সেপটিক ট্যাংক-এর চিত্রসহ পঠনপ্রণালি

সেপটিক ট্যাংক ডিজাইনের বিবেচ্য বিষয়:

১. সিমেন্ট মসলা দিয়ে ইটের পাখুনি করে সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে।

২. সেপটিক ট্যাংকের দৈর্ঘ্য প্রন্থের ২ থেকে ৮ গুণ ধরতে হবে।

৩. ভিত্তিতে ১:৩:৬ অথবা ১:২:৪ অনুপাতে সিসি ঢালাই করতে হবে।

৪. ভিতরের দেয়ালে ১:৩ অনুপাতে ১২ মিমি পুরুত্বে প্লাস্টার করতে হবে।

৫. সেপটিক ট্যাংকের ন্যূনতম প্রন্থ ৬০ সেমি এবং তরলের গভীরতা ১ মিটার ধরতে হবে।

 

সেপটিক ট্যাংক
চিত্র :  সেপটিক ট্যাংক-এর অবস্থান

সেপটিক ট্যাংকের গঠনপ্রণালি :

  • এটি ইট বা কংক্রিটের তৈরি আয়তাকার পানি নিরোধক চৌবাচ্চা বিশেষ।
  • চৌবাচ্চার দৈর্ঘ্য এর প্রন্থের থেকে ৪ গুণ হয়।
  • চৌবাচ্চাটিকে ২/৩ কক্ষে বিভক্ত করা হয়।
  • এর তলদেশ বা মেঝে সমতল থাকে অথবা প্রবেশপথের দিকে কিছুটা ঢালু থাকে।
  • দেয়ালগুলো যত দূর সম্ভব পানি নিরোধক করে নির্মাণ করা হয়।
  • চৌবাচ্চার প্রতিটি কক্ষের উপরিভাগে ম্যানহোল যুক্ত আরসিসি স্ল্যাব ব্যবহার করা হয়।
  • ময়লা সয়েল পাইপের মাধ্যমে প্রথমে ইন্সপেকশন চেম্বারে আসে। এখান থেকে তিন মুখ খোলা টি আকৃতির পাইপের মাধ্যমে ময়লাকে সেপটিক-ট্যাংকের প্রথম কক্ষে আনা হয়।
  • এখানে যে ভাসমান পুরু Scum তৈরি হয়, তাকে অক্ষত রাখার জন্য টি পাইপের মাধ্যমে ময়লাকে উপরিভাগে না ফেলে অনেক নিচে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়।
  • থিতানো ও বিয়োজন কাজ সম্পন্ন করার সুবিধার জন্য ফোকরযুক্ত অবরোধক দেয়াল (Baffle wall) নির্মাণ করা হয়। যাতে অবরোধক দেয়ালের ছিদ্রের মাধ্যমে কক্ষের মধ্যকার যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
  • অবরোধক দেয়ালের ফোকরগুলো নিচের দিকে থাকবে।
  • ট্যাংকের ভিতর গ্যাস চলাচলের জন্য অবরোধক দেয়ালকে সম্পূর্ণ উচ্চতায় নির্মাণ করা যায় না।
  • ট্যাংকের ভিতরের গ্যাস বের করে দেয়ার জন্য গ্যাস নির্গমন পাইপ স্থাপন করা হয়।
  • শেষ কক্ষ হতে ময়লা পানিকে একটি টি পাইপের মাধ্যমে সোকপিটে নিয়ে যাওয়া হয়।
  • ম্যানহোলের ঢাকনা আরসিসি অথবা কাস্ট আয়রনের (C.I) হয়ে থাকে।

ট্যাংকের দৈর্ঘ্য ময়লা বা সিউয়ারেজস্থ ভাসমান কণা থিতিয়ে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত হলে এক কক্ষ বিশিষ্ট ট্যাংকই যথেষ্ট। কিন্তু ট্যাংকের দৈর্ঘ্য সীমিত রাখতে হলে অবরোধক দেয়াল দিয়ে দুই বা তিনটি কক্ষে বিভক্ত করে দেয়া হয়। এতে ভাসমান কণার অতিক্রান্ত হওয়ার পথ বেড়ে যায়, ফলে সিউয়ারেজ সুষ্ঠুভাবে থিতিয়ে পড়তে পারে।

কার্যপ্রণালি:

  • পায়খানা বা বিভিন্ন উৎস হতে সয়েল পাইপের মাধ্যমে সিউয়ারেজ বা তরল ময়লা পরিদর্শন কক্ষ (Inspection chamber) হয়ে সেপটি-ট্যাংকে জমা হয়।
  • এই ময়লা কিছুদিন এখানে অবস্থান করে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে এক প্রকার জীবাণুর সৃষ্টি করে যা ময়লাকে ধ্বংস করে থাকে এবং তরলে পরিণত করে।
  • সেপটিক-ট্যাংকে ময়লা বা সিউয়ারেজ আসার পর দুই ধাপে পচন ক্রিয়া সংঘটিত হয়। যেমনঃ থিতানো ও স্লাজ পরিপাক ক্রিয়া
  • প্রথম ধাপে সিউয়ারেজস্থ জৈব ও উদ্ভিদজাতীয় পদার্থ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দিয়ে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ তরলে বিয়োজিত না হওয়া পর্যন্ত ১-৩ দিন যাবৎ উক্ত আধারে আটক রাখা হয়।
  • এই সময় সিউয়ারেজের অপেক্ষাকৃত ভারী কণাগুলো ৬০%-৭০% স্লাজ (Sludge) রূপে ট্যাংকের তলদেশে জমা হয়।
  • অপেক্ষাকৃত হালকা ভাসমান পদার্থ, চর্বিজাতীয় তৈলাক্ত পদার্থগুলো গাদ (Scum) রূপে উপরে ভেসে উঠে।
  • দ্বিতীয় ধাপে থিতান প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গাদ ও চর্বি ট্যাংকের মধ্যে কয়েক মাস আবদ্ধ রাখা হয়।
  • এই অবস্থায় আর্দ্র ও গরম আবহাওয়ায় এবং মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতির দরুন সহজে বিয়োজিত হয়ে অবাত ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়।
  • এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ময়লার কঠিন অংশকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে।
  • ব্যাকটেরিয়াগুলো ময়লার কঠিন অংশে কাজ করে, তখন ময়লার ভিতর গ্যাস উৎপন্ন হয়।
  • ফলে ঘন ময়লার টুকরা হালকা হয়ে ভেসে উঠে এবং গ্যাসের বুদ্বুদটি উপরে এসে ফেটে যায়। আবার এটা ভারী হয়ে নিচে জমা হয়।
  • ময়লার টুকরাগুলো উপর নিচ করতে করতে সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয় এবং আংশিক তরল ও গ্যাসে রূপান্তরিত হয়।
  • এই সময় রোগজীবাণু ব্যাকটেরিয়া পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়।
  • তরল পদার্থ নির্গমন পথ দিয়ে সোকপিটে চলে যায় এবং গ্যাস ভেন্টপাইপ দিয়ে বের হয়।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অনুশীলনী – ১২

অতি সংক্ষিপ্ত:

১। সেপটিক ট্যাংক কী?

২। ইন্সপেকশন পিট কী?

সংক্ষিপ্ত:

১। সেপটিক ট্যাংকের কাজ কী?

২। ইন্সপেকশন পিট কাকে বলে?

রচনামূলক:

১। সেপটিক ট্যাংক-এর চিত্রসহ গঠনপ্রণালি বর্ণনা কর।

২। ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী সেপটিক ট্যাংক বর্ণনা কর।

৩। সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।

আরও দেখুন :

Leave a Comment