আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ওয়ার্কশপে নিরাপত্তা ।
ওয়ার্কশপে নিরাপত্তা
ওয়ার্কশপে নিরাপত্তা
কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে কাজের ক্ষেত্রে অনিরাপদ পরিবেশ, নিরাপত্তামূলক ও ঝুঁকি প্রতিরোধী প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম না থাকা, কর্মী ও মালিক পক্ষের অজ্ঞতা বা অসচেতনতা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে প্রয়োজনীয় ব্যক্তি এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা, কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ ও সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের ছাড়পত্র না নেয়া, কাজের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ও পরিবেশ বিপদমুক্ত না করা ইত্যাদি। ওয়ার্কশপে যে নিরাপত্তার ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তি এবং কর্মস্থল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় তা ওয়ার্কশপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।
বিগত ২০১৫ সালে নির্মাণ খাতে কর্মরত অবস্থায় মারা গেছে ৬১ জন শ্রমিক, আহত হয়েছে ১১৯ জন। অন্যান্য কারখানায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৭ জন, দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা ২৮ জন। এছাড়া বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা, ইটভাটায় পাহাড় কাটা ও নানা খাতে মৃত্যুর সংখ্যাও আছে।
বিলসের গবেষণা প্রতিবেদনে এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ পরিবেশ, জোরপূর্বক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা ইত্যাদি, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় শ্রমিক মারা গেলেও যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পাওয় যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সরকার কর্তৃক প্রণীত কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে, এটির বাস্তবায়নে নজরদারি, জাতীয়ভাবে প্রণীত বিভিন্ন আইন, বিধিবিধান কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর প্রতিবেদনে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ওয়ার্কশপ হচ্ছে এমন একটি কর্মস্থল যেখানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কাজ করা হয়। তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সরঞ্জামের (নিরাপত্তা জুতা, গগলস, হার্ড টুপি, গ্লোভস, ভারী কাপড়ের এপ্রোন) এর পাশাপাশি ওয়ার্কজোন সেফটির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে দুর্ঘটনা এবং ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ওয়ার্কশপে নিরাপত্তা রক্ষার্থে নিম্নলিখিত নিয়মগুলো আবশ্যিকভাবে পালন করা উচিত, যথা :
- না বুঝে কোনো যন্ত্রপাতি, মেশিন ও ইঞ্জিনে হাত না দেয়া।
- ওয়ার্কশপে কাজ করার পূর্বে অ্যাপ্রোন ও জুতা পরিধান এবং প্রয়োজন অনুযায়ী গগলস ব্যবহার করা।
- কোনো কাজ করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষক বা সুপারভাইজারের কাছে থেকে ঐ কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া ।
- সঠিক কাজের জন্য সঠিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা।
- কাজের শেষে কাজের স্থান এবং যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করা।
- মেঝেতে তৈলাক্ত পদার্থ পড়লে তা সাথে সাথে পরিষ্কার করা।
- ওয়ার্কশপে যে কোনো ধরনের মেশিন অন করার পূর্বে ইমারজেন্সি স্টপ সুইচ দেখে নেয়া।
- ব্যাটারির উপর কখনো কোনো রকম টুলস না রাখা।
- ওয়ার্কশপে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রের অবস্থান এবং এর সঠিক ব্যবহার জেনে নেয়া।
- লম্বা চুল, নখ এবং কাজের সময় ঢিলাঢালা পোশাক ও গলায় মাফলার/টাই পরিধান ইত্যাদি পরিহার করা।
- শারিরিক শক্তি প্রয়োগ করে কোনো মেশিন বা ইঞ্জিন বন্ধ করার চেষ্টা না করা।
- কোনো যন্ত্রপাতি এবং মেশিন নষ্ট হলে তা সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষক বা দায়িত্বশীল সুপারভাইজারকে জানানো।
- কোনো বৈদ্যুতিক মেশিন চালানোর সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে সাথে সাথে মেশিনের সুইচ অফ করা ।
- ওয়ার্কশপে দৌড়াদৌড়ি না করা।
- এ কাজের সময় প্রয়োজন ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা না বলা।
- কাঁচামাল ও দাহ্য পদার্থ নির্দিষ্ট স্থানে রাখা।
- কাজের সময় অবশ্যই মনোনিবেশ প্রয়োজন।
নিম্নলিখিত নিয়ম, সব কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য :
- যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম নিয়মিত বা অনিয়মিত ব্যবহারকারী কিনা ।
- সরঞ্জাম ব্যবহার করার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন বা যথোপযুক্তভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিনা।
- অপারেটিং যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম ব্যবহার করার আগে অনুমোদিত দায়িত্বশীল ব্যাক্তির নির্দেশনা ।
- উপযুক্ত পোশাক পরিধান করা ।
- সরঞ্জাম ও সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিষ্কার এবং পরিপাটি রাখা ।
- সবসময় যন্ত্রপাতির একটি অপরিচিত টুকরা ব্যবহার করার আগে নির্দেশনা নেয়া ।
- শুধুমাত্র নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সরঞ্জাম ও যন্ত্র ব্যবহার করা ।
- ক্ষতিগ্রস্ত সরঞ্জামের প্রতিবেদন করা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি দিয়ে মেরামত না করা পর্যন্ত এটি ব্যবহার না করা।
- ৬টি যেখানে মেশিন Safety guard প্রদান করা হয় তাদের সেই জায়গায় থাকা নিশ্চিত করা ।
- অন্য কর্মীর মনোযোগ বিভ্রান্ত না করা।
- সবসময় উপযুক্ত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করা ।
- লম্বা চুল থাকলে চুল বেধে রাখতে হবে।
- পোশাক ও যন্ত্রপাতি পরিষ্কার এর জন্য সংকুচিত হাওয়া ব্যবহার না করা।
- সব বিপদ, অনিরাপদ অবস্থা এবং কাজ চর্চা রিপোর্ট করতে হবে ।
২.২ বিল্ডিং মেইনটেন্যন্স ট্রেডের সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির সুবিন্যাস।
টুলস একটি কাজ সহজতর এবং সক্ষম করার জন্য ডিজাইন করা হয়, যাতে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করা যায়। তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে, ব্যবহারের পর যত্ন না করা হলে, তাদের সুবিধা হারিয়ে যায়। সঠিক সরঞ্জামের ব্যবহার নিজের কাজ দ্রুত, সঠিকভাবে এবং নিরাপদে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করে ।
সঠিক সরঞ্জাম চিহ্নিত এবং তাদের ব্যবহার করার জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সময় অপচয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নতুবা, দক্ষতা হ্রাস এমনকি নিজেকে আঘাত প্রাপ্ত হাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
২.৩ কাজ শুরু করার পূর্বে যন্ত্রপাতির চালনা ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জ্ঞান
নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি টুলসের নির্দিষ্ট টাইপ রয়েছে। যখন ভুল টুল (Tool) ব্যবহার করে রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত করা হয়, তখন সরঞ্জামের ক্ষতি বা নিজের ক্ষতি হতে পারে। “সব কিছুর জন্য একটি জায়গা এবং তার জায়গায় সবকিছু।”
নিজের কাজ সহজ এবং নিরাপদ করতে হলে সঠিক জায়গায় প্রতিটি সঠিক টুল রাখতে হবে। রিকভারি যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ প্রোগ্রাম বা টুল কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ধারণার উপর ভিত্তি করে বিশেষ toolbox এবং প্যাকেটে টুলসের জায়গার জন্য কনফিগার করার আগে প্রতিটি টুল ভালো অবস্থায় রাখা, সেগুলোর মরিচা, নিকেল আচঁড় এবং ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হবে।
২.৪ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা
প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডের ফলে প্রচুর সম্পদ ও ভবনের ক্ষতি হয়ে থাকে। একটি অগ্নি প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসার, কর্মীদের ব্যয়বহুল ক্ষতি এবং সম্ভাব্য প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব অগ্নিকাণ্ডজনিত। জরুরি অবস্থার জন্য কিছু সর্বোত্তম কার্যাভ্যাস প্রস্তুত করার উপায় দেয়া হল।
জরুরি ভবন ত্যাগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন : যখন সবাই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জানে, তখন জরুরি মূহুর্তে প্রতিক্রিয়া সহজ হয়। বিস্তারিত অগ্নি জরুরী ভবন ত্যাগ পরিকল্পনার মাধ্যমে কে কীভাবে কখন সাড়া দিবে এবং জরুরি বহির্গমন পথ চিহ্নিত করে কর্মচারীদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হয় ।
অগ্নি প্রতিরোধ পরিকল্পনা স্থাপন : একটি অগ্নি প্রতিরোধ পরিকল্পনার ডকুমেন্টেশনসহ কর্মচারীদের দাহা পদার্থ, আগুনের বিপদ এবং তাপ উৎপাদক সরঞ্জাম চিহ্নিতকরণের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া সম্ভাব্য জরুরি প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় পদ্ধতি, রূপরেখা, অগ্নি প্রতিরোধ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে কোনো সময়ে পর্যালোচনার জন্য লিখিতভাবে সব কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
ট্রেন টিম সদস্য : একটি বার্ষিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে, অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (OSHA) এবং NFPA require training for fire extinguisher-এর ভিত্তিতে প্রত্যেক কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত।
অগ্নি নির্বাপকে রঙিন কোডিং: ১ম জানুয়ারি ১৯৯৭ -এর আগে, যুক্তরাজ্যের বিএস ৫৪২৩, যা অগ্নি নির্বাপক রঙ কোডিং পরামর্শ নিম্নরূপ:
# রেড
# কেনা ক্রিম –
# শুকনো পাউডার – নীল
# কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ব্ল্যাক
# Halon – সবুজ (এখন যেমন পুলিশ, আর্মড সার্ভিসেস এবং বিমানের মতো কয়েকটি ব্যতিক্র ছাড়া ব্যবহার অবৈধ)।
Fire extinguisher এর মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপন করা হয়। এর ব্যবহারের ধাপ সমূহ নিম্নরূপঃ
১। প্রথমে Fire extinguisher এর উপরের অংশ একটি চাবি (key) থাকে। এই চাবিটি খুলতে হয় ।
২। আগুনের উৎসের দিকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় । এবং Fire extinguisher পাইপ/নজেল নির্দিষ্ট করতে হয় ।
৩| Fire extinguisher এর উপরের অংশের কালো দুটি অংশ সংকোচন করতে হয়।
৪। আগুনের উৎসের লক্ষ্যের উদ্দেশ্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে না রেখে ডান থেকে বাম বা বাম থেকে ভানে ঘুরিয়ে আগুন নিভাতে হয় ।
অনুশীলনী – ২
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১। অগ্নি নির্বাপকে রঙিন কোডিং গুলো কী?
২। ট্রেন টিম সদস্য কী?
৩। CO2 কি রকম অগ্নি নির্বাপক এবং কোথায় ব্যবহার হয়?
৪। ফোম কি রকম অগ্নি নির্বাপক এবং কোথায় ব্যবহার হয়? ৫। ভিজা রাসায়নিক কী রকম আগুনের জন্য বিশেষজ্ঞ নির্বাপক?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা লেখ। ২। ওয়ার্কশপে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
৩। বিল্ডিং মেইনটেন্যন্স ট্রেডের সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির সুবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা লেখ।
৪। অগ্নি নির্বাপণে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির নাম লেখ ।
৫। অগ্নি নির্বাপকের প্রকারভেদ লেখ।
রচনামূলক :
১। ওয়ার্কশপে নিরাপত্তা রক্ষার্থে কোন নিয়মগুলো আবশ্যিক ভাবে পালন করা উচিত?
২। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ধাপগুলো বর্ণনা কর।
আরও দেখুনঃ