আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের ইট।
বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের ইট
ইট
ইট কাদামাটি দিয়ে তৈরি এক প্রকার নির্মাণ উপাদান, যা শুকানো অবস্থায় পাখরের ন্যায় কাজ করে। এটি পাথরের বিকল্প হিসাবে কাজ করে। মাটিতে তৈরি কৃত্রিম পাথরসদৃশ আয়তাকার ঘনবস্তুকে ইট বলে।
ইটের মাটির উপাদানসমূহ । ইটে মাটির উপাদান নিম্নরূপ :
ইটের মাটি অনিষ্টকারী উপাদানসমূহ :
*অতিরিক্ত চুন
*অতিরিক্ত জৈব পদার্থ
* লবণ জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি
* আয়রন পিরাইটসের উপস্থিতি
* নুড়ি পাঘরের উপস্থিতি
ইট তৈরির পদ্ধতি
১। ইটের প্রধান উপাদান মাটি নির্বাচন ও সংগ্রহ ।
২। অন্যান্য উপাদান সহযোগে ইট তৈরি করার কাদা প্রস্তুতকরণ।
৩। সাইজ অনুযায়ী কাচা ইট তৈরি।
৪। কাচা ইটের জলীয় পদার্থ দূর করতে শুকানো।
৫। শুকনো ইটকে তাপ প্রদানের মাধ্যমে শক্ত করতে ইটকে পোড়ানো।
৬। পোড়ানো ইট ঠান্ডাকরণ।
৭। ব্যবহারের জন্যে তৈরিকৃত ইটকে শ্রেণীবিভাজন।
৮। বাজারজাতকরণ।
৫.৪ ইটের শ্রেণি বিভাগ
পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (PWD) মতানুসারে ইটের শ্রেণিবিভাগ চার প্রকার, যথা –
১) প্রথম শ্রেণির ইট
২) দ্বিতীয় শ্রেণির ইট
৩) তৃতীয় শ্রেণির ইট
৪) পিকড ঝামা শ্রেণির ইট
প্রথম শ্রেণির ইট : উত্তমরূপে পোড়ানো গাঢ় লাল বা তাম্র রঙ এবং সুষম আকার বিশিষ্ট ইট-ই প্রথম শ্রেণির ইট। এগুলোকে আঘাত করলে ধাতব বাজনার শব্দ হয়। এগুলোতে ফাটল বা বৃষ্টির দাগ থাকে না । ২৪ ঘণ্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে স্বীয় শুষ্ক ওজনের এর বেশি পানি শোষণ করে না। এর কোণগুলো তীক্ষ্ম এবং ধারগুলো ধারালো। স্থায়ী নির্মাণ কাজে এ শ্রেণি ইট ব্যবহার করা হয়। যেমন- ইমারত, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণের পৃষ্ঠে পয়েন্টিং করতে হলে এ জাতীয় ইট ব্যবহার করা হয় ।
প্রথম শ্রেণির ইট নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করে :
- প্রথম শ্রেণির ইট একই মাপের হয় এবং রংও একই রকম হয়।
- ভালোমতো পোড়ানো হয়।
- হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে ধাতব শব্দ হয়।
- একটি ইট খাড়া অবস্থায় রেখে এর উপর অন্য একটি ইট দিয়ে T এর মতো তৈরি করে ৩.২৮ ফুট বা ১ মিঃ উপর থেকে ফেললে উপরের ইটটি ভাঙবে না।
- নখ দিয়ে বা চাবি দিয়ে ইটের গায়ে দাগ বসানো যাবে না ।
- একটি প্রথম শ্রেণির ইটের আকার ৯.৫” x ৪.৫” x ২.৭৫” ।
- একটি প্রথম শ্রেণির ইটকে ২৪ ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ইটটি তার ওজনের ১৫% এর বেশী পানি শোষণ করবে না।
দ্বিতীয় শ্রেণির ইট : এ জাতীয় ইট প্রথম শ্রেণির ইটের মতোই। তবে ধার ও কিনারগুলোতে সামান্য অসাম্যতা দেখা যায় এবং পানি শোষণ করে প্রায় ২২%। এ শ্রেণির ইট আধাস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী কাজে ব্যবহার করা হয়। নির্মাণে ব্যবহারের পর এ শ্রেণির ইটকে আস্তর করে দিতে হয়।
দ্বিতীয় শ্রেণির ইট নিম্নলিখিত বৈশিষ্টসমূহ:
- অনেকটা প্রথম শ্রেণির মতো, ভালো পোড়ানো থাকে তবে একটু বেশি পোড়ানো থাকে ।
- দুটি ইট পরস্পর আঘাত করলে ধাতব শব্দ হয় না ।
- ২৪ ঘণ্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে এর শুষ্ক ওজনের সর্বোচ্চ ২২% এর বেশি পানি শোষণ করবে না ।
- ভেঙে ফেলার শক্তি কমপক্ষে ৯০% হওয়া উচিত।
- এর আকার আকৃতি এবং রং কিছুটা অসমান এবং ইটের তলা অমসৃণ থাকে।
তৃতীয় শ্রেণির ইট : এ শ্রেণির ইট পর্যাপ্ত পোড়া না হওয়ায় আংশিক শক্ত হয়। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য – এগুলো হলুদ রঙের। এগুলো বাতাস হতে দ্রুত জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে লবাণাক্রান্ত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোর আকার – আকৃতি ঠিক থাকে না। এ জাতীয় ইট গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয় না।
তৃতীয় শ্রেণির ইটের নিরলিখিত বৈশিষ্টসমূহ:
- এই ধরনের ইঁটি অনেকটা কম পোড়ানো থাকে
- সহজে ভেঙ্গে যায় এবং হালকা রংয়ের হরে থাকে।
- যখন দুটি ইট একে অপরকে আঘাত করে তখন দুর্বল শব্দ হয়।
- এর আকার আকৃতি খুবই অসমান থাকে।
- ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর ওজনের সর্বোচ্চ ২৫% এর বেশি পানি শোষণ করবে না ।
পিত জামা শ্রেণির ইট : অত্যধিক পোড়া হওয়ার ফলে ঝামা ইটের উদ্ভব হয়। এ শ্রেণির ইট কাঁচ দ্রব্যের গুণাবলি প্রাপ্ত হয় এবং আকৃতিতে বিকৃতি দেখা যায়। এগুলো রাস্তার খোরার কাজে এবং কংক্রিটের কোর্স এগ্রিগেইট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু ইট মাত্রারিক্ত তাপে পিণ্ডে পরিণত হয়। এগুলো ঝামা ইট নামে পরিচিত এগুলো কঠিন ও ভঙ্গুর।
ইটের পরিমাপ
বাংলাদেশে পি.ডব্লিউ.ডি সিডিউল অনুযায়ী ইটের সাইজ সাধারণত ১২ x ২ x ২ বা ২৪১ X মিমি X 118 মিমি X 70 মিমি)। আরও অনেক আকৃতির ইট আছে তবে এই আকৃতির ইট সবচেরে সুবিধাজনক মর্টারসহ উচ্চ সাইজ হয় ১০ ইঞ্চি X ৫ ইঞ্চি X ৩ ইঞ্চি (২৫৪ মিমি X 129 মিমি X ৭৬ মিমি)।
ইটের ব্যবহার
ইমারত, ব্রিজ, কালভার্ট, সড়ক ইত্যাদিসহ যাবতীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে ইট ব্যবহার করা হয়।
ইটের গুণাগুণ
- ইট শক্ত, টেকসই, দৃঢ়বদ্ধ গঠন, ফাটলমুক্ত, ঝাঁজরাহীন হবে ।
- ইটের রং গাঢ় লাল ভায়া রংয়ের হবে এবং রঙে সাম্যতা থাকে ।
- অপর ইট বা হাতুড়ির আঘাতে ধাতব শব্দ সৃষ্টি হবে ।
- ইটের আকার সাম্য থাকবে এবং পৃষ্ঠসমূহ সমান্তরাল কিন্তু অমসৃর্ণ হবে ।
- নখ বা ছুরি দিয়ে স্বাভাবিক আঁচড় দিলে কোনো দাগ পড়বে না ।
- ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে এটা নিজস্ব ওজনের অংশের বেশি পানি শোষণ করবে না ।
- পানিতে ভিজিয়ে রাখলে আর্দ্রতা পরিবর্তনে ইটের আয়তন পরিবর্তন হবে না ।
- উৎকৃষ্ট ইটের ভাপ পরিবাহিতা ন্যূনতম হবে ।
- আদর্শ ইট দাহ্য নয় এবং দহনে সহায়তা করে না ইটে অতিরিক্ত লাইম বা চুন থাকবে না ।
- ইটে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ ২.৫% এর বেশি হবে না ।
- ইট কম পোড়া বা বেশি পোড়া হবে না ।

একটি কাজের জন্য সঠিক ইট রঙ, পৃষ্ঠ জমিন, ঘনত্ব, গুঞ্জন, শোষণ এবং লোমকূপ কাঠামো, তাপ বৈশিষ্ট্য, তাপ ও আর্দ্রতা এবং অগ্নি প্রতিরোধের একটি পছন্দ থেকে নির্বাচন করা যাবে। ভালো কাজের জন্য ভালো মানের মালামাল দরকার। কনস্ট্রাকশন কাজে ইটের ব্যবহার বহুল। তাই ভালো ইটের বৈশিষ্ট্য যেমন জানা দরকার। তেমনি দরকার ইটের বিষয়ে কিছু পরীক্ষা।
কয়েকটি পরীক্ষার বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
১. ক্র্যাশিং স্ট্রেন্থ : এটা দিয়ে ইটের কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ বা চাপ সহ্য ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়। এর জন্য পাঁচটি ইট স্যাম্পল হিসেবে নেয়া হয়। এরপর এটিকে ক্র্যাশিং মেশিনের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয়। ইটের ভেঙে যেতে সেই বল প্রয়োজন হয়। সেই বল রেকর্ড করা হয়। এভাবে পাঁচটি ইটের শক্তি পরীক্ষা করা হয়। এর পর এই পাঁচটি ইটের কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থের গড় নেয়া হয়, এবং এই গড় মানই হলো ইটের কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ।
২. ইফ্লোরেসেন্স টেস্ট : অ্যালকালির পরিমাণ বা লবণ পরীক্ষা করা হয় এর মাধ্যমে। লবণ কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বাতাসের আর্দ্রতা থেকে পানি নিয়ে, লবণ ইটের বাইরে চলে আসে। এর সার্ফেস বা তল সাদাটে হয়ে যায়। এই পরীক্ষার জন্য কয়েকটি ইটকে ২৪ ঘণ্টা পানিতে চুবিয়ে রাখা হয়। তারপর এই ইটকে ছায়াতে শুকাতে হয়। শুকানোর পর যদি ইটের তলাতে সাদা সাদা ভেসে ওঠে তাহলে বুঝতে হবে লবণ আছে। তলের ১০% পর্যন্ত সাদা হলে সেই ইট ব্যবহার করা যেতে পারে। এর বেশি হলে ব্যবহার না করাই ভালো ।
৩. পানি শোষন ক্ষমতা : ইট কতটুকু পানি শোষণ করে সেটাও জানা জরুরি। খুব বেশি পানি শোষণ করলে সে ইট ভালো নয়। এর জন্য প্রথমে শুকনা ইটের ওজন নেয়া হয়। তারপর এই ইটকে পানিতে ২৪ ঘণ্টা চুবিয়ে রাখতে হয়। পানি থেকে ইট ওঠানোর পর আর উপরিভাগ ভালোভাবে কাপড় দিয়ে মুছে ওজন নিতে হবে। ভেজা ইটের ওজন থেকে শুকনা ইটের ওজন বিয়োগ করলে ইটের শোষিত পানির ওজন পাওয়া যাবে। শোষিত পানির ওজন এবং শুকনা ইটের ওজনের অনুপাত ০.২০ এর বেশি হতে পারবে না। অর্থ্যাৎ ইটের পানি শেষণ ক্ষমতা ২০% পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
৪. হার্ডনেস পরীক্ষা : নখ বা একটু শক্ত কোনোকিছু দিয়ে সাধারণ বল প্রয়োগে যদি কোনো দাগ ফেলানো না যায় তাহলে বুঝতে হবে ইট ভালো ।
৫. সাউন্ড বা শব্দ : এতে দুটি ইট পরস্পরকে টোকা দিয়ে দেখতে হবে। যদি শব্দটা ঠক-ঠক বা তীক্ষ্ণ শব্দ হয় তাহলে ইটের গুণাগুণ ভালো বলে বিবেচিত হবে। আর যদি শব্দ ঢ্যাপ ঢ্যাপ বা ফাপা শব্দ হয় তাহলে বুঝতে হবে ইট তত ভালো নয় ।
৬. স্ট্রাকচার : ইট ভাঙার পর যদি এর মধ্যে কোনো ছিদ্র না থাকে, যদি পাতলাভাবে চলটা না ওঠে, যদি ভেতরের রং সুন্দর থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ইট ভালো ।
অনুশীলনী – ৫
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
১। ইট কী?
২। ইটের সাইজ কত ?
৩। ইটের শ্রেনিবিভাগ কয় প্রকার?
৪। পিকড ঝামা শ্রেনির ইট কী?
৫। প্রথম শ্রেনির ইট কাকে বলে?
৬। দ্বিতীয় শ্রেনির ইট কাকে বলে?
৭। তৃতীয় শ্রেনির ইট কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
১। ইটের মাটি অনিষ্টকারী উপাদান সমূহ কী কী?
২। ইটের উপাদানগুলি কী কী?
৩। বৃটিশ ও মেট্রিক পদ্ধতিতে ইটের মাপ লেখ।
৪। প্রথম শ্রেনির ইটের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ।
৫। দ্বিতীয় শ্রেনির ইটের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ।
৬। তৃতীয় শ্রেনির ইটের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ।
৭। ইটের ব্যবহার ক্ষেত্রসমূহ লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন :
১। ইটের গুণাগুণ গুলোর বর্ণনা লেখ।
২। ইটের পরীক্ষার কার্যাবলি লেখ।
৩। ইটের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর ।
আরও দেখুনঃ