আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিমেন্ট।
বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের সিমেন্ট
সিমেন্টের সংগা
আধুনিক নির্মাণ কাজের মূল উপাদান সিমেন্ট। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সিমেন্টের উদ্ভাবন করেন যোশেফ এসপতিন। তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের ইয়র্কশায়ারের একজন দেয়াল নির্মাতা। পোর্টল্যান্ডের পাথরখনি হতে সংগৃহীত চুনা পাএর দিয়ে প্রথম সিমেন্ট তৈরি করেন। ফলে একে পোর্টল্যান্ড সিমেন্টও বলা হয়। সিমেন্ট উন্নতমানের জোড়ক পদার্থ। এটা তৈরিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যৌগ সংবলিত চুনজাত সামগ্ৰী পুড়িয়ে মিহি পাউডারে পরিণত করা হয়।
সিমেন্টের উপাদানঃ
পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট তৈরিকরণে প্রধানত দুই ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। যথা-
(ক) চুন জাতীয় দ্রব্য : ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যৌগ যেমন- চুনাপাথার, চক, মার্শ ইত্যাদি এ জাতীয় দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।
(খ) ফাঁপা জাতীয় দ্রব্য : প্রধানত সিলিকা, এলুমিনা, আয়রন অক্সাইড যেমন- কাঁদা, প্লেট, শেল ইত্যাদি এ জাতীয় দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।
পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট গঠনের উপাদানসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-
১। খনিজ উপাদান
২। অম্ল ও ক্ষারকীয় উপাদান

সিমেন্টের উপাদানগুলোর কার্যাবলী :
১। লাইম বা চুন : সিমেন্টে প্রায় ৬৩% চুন থাকে। ক্যালসিয়াম সিলিকেট ও ক্যালসিম অ্যালুমিনেট তৈরির জন্য পর্যাপ্ত চুন থাকা আবশ্যক। এর পরিমাণ কম হলে সিমেন্টের শক্তি হ্রাস পায় এবং জমাটবদ্ধতার সময় ত্বরান্বিত করে। চুনের পরিমাণ অধিক হলে সিমেন্ট খুঁতযুক্ত হয় এবং এর প্রসারণ ও শক্তি হারিয়ে ফেলে।
২। সিলিকা : সিমেন্টে প্রায় ২২% সিলিকা থাকে। এটা চুনের উপস্থিতিতে ডাই-ক্যালসিয়াম সিলিকেট ও ট্রাই-ক্যালসিয়াম সিলিকেটে রূপান্তরিত হয়। এটা সিমেন্টের শক্তি বৃদ্ধি করে।
৩। এলুমিনা : সিমেন্টে প্রায় ৭% এলুমিনেট থাকে। এটা ক্লিংকার গঠনের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং
সিমেন্টের অন্যান্য যৌগকে সহজে পানির সঙ্গে সংযুক্ত করে। এটা সিমেন্টের জমাটবদ্ধতা ত্বরান্বিত করে। এটার আধিক্য সিমেন্টকে দুর্বল করে।
৪। ম্যাগনেসিয়াম : সিমেন্টে এর পরিমাণ ২% এর অধিক হওয়া ঠিক নয়। এটার আধিক্য সিমেন্টের জন্য ক্ষতিকর এবং সিমেন্টের শক্তি কমিয়ে দেয়।
৫। আয়রন অক্সাইড : সিমেন্টে এর পরিমাণ প্রায় ৩%। এটা সিমেন্টের কাঠিন্য ও শক্তি উন্নত করে। সিমেন্টের রং ও এটার উপর নির্ভর করে। আয়রন অক্সাইড উচ্চতাপে ক্যালসিয়াম ও এলুমিনার সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রাই ক্যালসিয়াম এলুমিনোফোসাইট গঠন করে। এ যৌগটির উপরেই সিমেন্টের শক্তি ও কাঠিন্য নির্ভর করে।
৬। ক্যালসিয়াম সালফেট : এর পরিমাণ ৪%। এটা জিপসাম হিসেবে সিমেন্ট ক্লিংকারের সহিত মিহি পাউডারে পরিণত হয়। এটা সিমেন্টের জমাটবদ্ধতার গতি মন্থর করে।
৭। সালফার ট্রাই অক্সাইড : এর পরিমাণ ২% এর অধিক হওয়া অনুচিত। এর আধিক্য সিমেন্টকে খুঁতযুক্ত করে।
৮। ক্ষারকীয় দ্রব্য : এর পরিমাণ ১% এর অধিক হওয়া অনুচিত। সিমেন্টের কাঁচামালে যে ক্ষারকীয় দ্রব্য থাকে পোড়ানের সময় তা দূরীভূত হয়। এটার আধিক্য নির্মাণকে লোনাক্রান্ত করে।
সিমেন্টের গুণাগুণ ও ওজন
প্রতি ব্যাগে সাধারণত ১১২ পাউন্ড অথবা ৫০ কেজি সিমেন্ট থাকে। আবার প্রতি ব্যাগে সিমেন্টের আয়তন ১.২৫ ঘনফুট বা ০.০৩৫৪ ঘনমিটার।
বিভিন্ন প্রকার সিমেন্ট এ্যাড মিক্সারের নাম ও মিক্সারের ব্যবহার।
যে সকল পদার্থ সিমেন্টের মধ্যে ব্যবহার করলে সিমেন্টের গুনাগুন বৃদ্ধি পায় তাকে এ্যাড মিক্সার বলে। যেমন- ঠান্ডা আবহাওয়ায় সিমেন্টের বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য সিমেন্টের ওজনের ১.৫% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সিমেন্ট দ্রুত জমাট বন্ধ করার জন্য পাডলো ব্যবহার করা হয়।
এ্যাড মিক্সারের নিম্ন-লিখিত উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হয় :
* পানি নিরোধক গুণাগুণ প্রদান করে।
* কিউরিং ত্বরান্বিত করে।
* কংক্রিটের কার্যোপযোগিতা বৃদ্ধি করে।
* কংক্রিটের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।
* কংক্রিটকে কঠিন ও জমাট বাঁধতে দ্রুততর করে।
* জমাট বাঁধা মন্থর করতেও প্রয়োজন সাপেক্ষে ব্যবহার হয়।
* কাঠিন্য বৃদ্ধি করে।
* পানির সাথে মিশ্রণে সিমেন্টের দানাগুলিকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়।
* জমাট বাঁধার সময় সংকোচন হ্রাস করে।
* বর্ণ প্রদান করে।
* ক্ষতিকারক রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে।
* ক্ষরণ হ্রাস করে।
* পানি যোজনের তাপ হ্রাস করে।
সিমেন্টের পরীক্ষা পদ্ধতিঃ
সিমেন্টের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি নিম্নরূপঃ
১। সিমেন্টের রং ধূসর না হয়ে লাল বা কালচে হলে বুঝতে হবে অপদ্রব্য মিশ্রিত আছে।
২। দুই আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে ঘষা দিলে যদি আঠালো মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে ভালো সিমেন্ট।
৩। কিছু পরিমাণ সিমেন্ট পানিতে ছেড়ে দিলে যদি আঠালো ডুবে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ভালো সিমেন্ট।
৪। সিমেন্টের বস্তার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলে ভালো সিমেন্ট ঠাণ্ডা অনুভূত হবে।
৫। নাকে শুঁকলে মাটি বা পলি থাকলে মাটির গন্ধ পাওয়া যাবে।
৬। গ্লাস প্লেটের উপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে না ফেটে জমাট বাঁধলে বুঝতে হবে ভালো সিমেন্ট।
অনুশীলনী – ৭
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১। সিমেন্ট কী?
২। সিমেন্টের উপাদানগুলি কী কী?
৩। পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট তৈরিকরণে কী কী কাঁচামাল ব্যবহার হয়?
৪। প্রতি ব্যাগে সিমেন্টের আয়তন কত?
৬। পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের প্রকারভেদ লেখ।
৭। সিমেন্টে কী কী এ্যাড মিক্সার ব্যবহার করা হয় ?
৮। পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট কয় প্রকার?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১। সিমেন্টের মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতিগুলো লেখ।
২। পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট তৈরিকরণে যে কাঁচামাল ব্যবহার হয় তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা লেখ।
৩। অ্যাড মিক্সারের কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়?
৪। পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের গঠনে খনিজ উপাদানের তালিকা লেখ ।
৫। পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের রাসায়নিক গঠনে অম্ল ও ক্ষারকীয় উপাদানের তালিকা লেখ ।
৬। পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ । ৭। পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের ব্যবহার লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন :
১। সিমেন্টের উপাদানগুলোর কার্যাবলী লেখ ।
২। পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার লেখ।
আরও দেখুনঃ