বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে।

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে

মেঝে (floor)

যে কোনো ইমারতের যে স্থানে মানুষ বসবাস করে, তাকে মেঝে (floor) বলে। অর্থাৎ ঘরের পারের নিচের জায়গাই হলো মেঝে (floor)। যে সমস্ত দালানের অনেকগুলো ফ্লোর থাকে সেক্ষেত্রের ভূমির উপরের প্রথম ফ্লোরকে গ্রাউন্ড ফ্লোর এবং একতলার ছাদকে দোভালার মেৰে বলে। এমনিভাবে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে হিসাব করা হয় ।

মেঝে (floor) -এর প্রকারভেদঃ

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝেবিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে

 

আপার কার (Upper floor) বা মেঝের শ্রেণিবিভাগ :

১) স্টিল জয়েট মেঝে (Steel joist floor )

২) জ্যাক আর্ট মেঝে (Jack Arch floor)

৩) আর.সি.সি মেঝে (RCC floor )

৪) রিজভ বা ফাঁকা টাইল মেঝে (Ribbed floor)

৫) ফিলার জয়েস্ট মেঝে (Filler joist floor)

৬) প্রিকাস্ট কংক্রিট মেঝে (Precast concrete floor )

৭) কাঠের মেঝে (Wooden floor )

মেঝে (floor) তৈরির মালামালঃ

১) মাড বা কাঁদার মেঝে : ভিজা মাটি, গোবর, সিমেন্ট

২) মুরাম মেঝে: মুরাম পাথর, পানি, মুরাম পাউডার, গোবর, সিমেন্ট

৩) ইটের মেঝে: ইট, বালু, সিমেন্ট, পানি

৪) পাথরের মেঝে: পাথর, ইটের টুকরা, চুন/সিমেন্ট, বালু, পানি

৫) সিমেন্ট কংক্রিট মেঝে: সিমেন্ট, খোয়া, সুরকি, বালু, পানি

৬) টেরাজো মেঝে : মার্বেল দানা, সাদা/রঙিন সিমেন্ট, পোর্টল্যান্ড 

৭) মোজাইক মেঝেঃসিমেন্ট, বালু, পাথরকুচি, পানি, অকজালিক এসিড, তেল, মোম সিমেন্ট, বালু, পানি, মার্বেলকুচি, রঙিন সিমেন্ট, চুন, মার্বেল পাউডার 

৮) টাইল মেঝে: টাইল, চুন, সুরকি, বালু, সিমেন্ট, পানি

৯) মার্বেল মেঝে: মার্বেল স্লাব, বালু, সিমেন্ট, পানি

১০) কাঠের মেঝে ঃকাঠ, পেরেক, জু

১১) অ্যাসফাল্ট মেঝে: অ্যাসফাল্ট টাইল, চিকন বালু, খনিজ তেল, অ্যাসবেস্টস

১২) রাবার মেঝে: রাবার, কটন ফাইবার, কর্কের গুঁড়া, অ্যাসবেস্টস ফাইবার, রং

১৩) লিনোলিয়াম মেঝেঃ লিনোলিয়াম শিট, প্লাইউড, তারকাঁটা, আইকা বা আঠা

১৪) কর্ক মেঝে: কর্ক, তিসির তেল, পানি

১৫) গ্লাস মেঝে: কাঁচের ব্লক, ঢালাই-এর মালামাল

১৬) ম্যাগনেসাইট মেঝে: ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড, অ্যাসবেস্টস, কাঠের গুঁড়া, রং।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্সের মেঝে

 

মেঝে (floor) তৈরির কৌশল

ব্রিক ফ্লোরিং ঃ প্রথমে মাটি ভরাট করে ভালোভাবে কমপ্যাকশন করে সমতল করা হয়। তার উপর ৭৫ মি.মি. পুরু বালু বিছানো হয়। বালুর স্তরের উপর ১২ মি.মি. পুরু কম অনুপাতের সিমেন্ট মসলা দিয়ে ইট বিছানো হয়। এক্ষেত্রে ইটের ফ্রগমার্কগুলো নিচের দিকে থাকবে এবং জোড়াগুলো ফ্লাশ করে দিতে হবে। এই মেঝে কমপক্ষে ৭ (সাত) দিন কিউরিং করতে হবে।

সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং : প্রথমে ভিটিতে ভরাটকৃত মাটিকে উত্তমরূপে দুরমুজ করে ভালোভাবে কমপ্যাকশন করে সমতল করা হয়। কমপ্যাকটেড মাটির উপর ১০-১৫ সে.মি. পুরুত্বে বালু দিয়ে তা পানি দিয়ে ডুবিয়ে দিতে হবে। পানি নিচের দিকে গিয়ে বালু বসে গিয়ে উত্তম তল তৈরি হবে।

বালু দিয়ে তৈরি তলের উপর ব্রিক ফ্লাট সলিং (Brick Flat Soling) বসিয়ে তার উপর কংক্রিট ঢালাই করে মেঝে তৈরি করা যাবে। এক্ষেত্রে বালুর উপর পলিথিন বিছিয়ে সিলিং করা যাবে। অথবা বালুর উপর সলিং করে সলিং-এর উপর পলিথিন বিছিয়েও কংক্রিট ঢালাই করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে জোড়াগুলো বালু দিয়ে পূরন করতে হবে। এ স্তর হবে কংক্রিটের বেইজ। সলিং ব্যাবহার না করে ১ : ৩ : ৬ অথবা ১ : ৪ : ৮ অথবা ১ : ৫ : ১০ অনুপাতে লাইম কংক্রিট বা সিমেন্ট কংক্রিট ঢালাই করেও কংক্রিট বেইজ তৈরি করা যায়। কংক্রিট বেইজ তৈরি করার পর মূল ওয়ারিং সারফেস প্রস্তুত করলে প্রয়োজনীয় মেঝে তৈরি হবে।

কংক্রিট বেইজ শক্ত হওয়ার পর ব্রাশ দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে এবং মেঝে শুকিয়ে নিতে হবে। কংক্রিট ঢালাই করার পূর্বে এরিয়াটিকে সুবিধামতো আকারে কতকগুলো আয়তাকার প্যানেলে বিভক্ত করতে হবে।

১ : ২:৪ অনুপাতে কংক্রিট মিশ্রন তৈরি করে অলটারনেট প্যানেলে ঢালাই করতে হবে। ঢালাই এর পূর্বে সিমেন্ট গ্রাউটিং করতে হবে। অন্যথায় বেইজ ও ওয়ারিং সারফেসের সাথে বন্ধন হবে না। কংক্রিট প্রয়োজনীয় পুরুত্বে ঢেলে কর্নি ও পাট্টা দিয়ে পিটিয়ে সমান করে দিতে হবে যাতে পানি উপরে উঠে আসে।

তারপর শুকনো বালু ও সিমেন্টের সুষম মিশ্রন কংক্রিটের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কর্নি দিয়ে সমতল ও মসৃন করে দিতে হবে। একে টপিং বলে। টপিং কিছুটা শক্ত হলে শুধুমাত্র সিমেন্ট ছিটিয়ে কর্নি দিয়ে সমতল করে দিতে হবে। একে নিট সিমেন্ট ফিনিশিং বলে। এভাবে বাকি খালি আয়তাকার প্যানেলগুলোকে ঢালাই করতে হবে।

উত্তম মেঝের গুণাবলি

১) মেঝে পর্যাপ্ত শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।

২) মেঝে পর্যাপ্ত মসৃন ও সমতল পৃষ্ঠ প্রদান করবে। ৩) মেঝে পর্যাপ্ত অগ্নিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন হবে।

৪) মেঝে পর্যাপ্ত শব্দনিরোধক হবে।

৫) মেঝে পর্যাপ্ত আর্দ্রতারোধক হবে।

৬) মেঝে পর্যাপ্ত থার্মাল ইনসুলেশন গুনসম্পন্ন হবে।।

৭) মেঝে পর্যাপ্ত গোপনীয়তা রক্ষা করবে।

৮) মেঝের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম হবে।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অনুশীলনী – ৯

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১। মেঝে কাকে বলে?

২। সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং এ কংক্রিট মিশ্রনের অনুপাত কত?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১। মেঝে বলতে কী বুঝ?

২। মেঝে প্রধানত কত প্রকার ও কী কী?

৩। মেঝের উপাংশ কয়টি ও কী কী?

৪। ব্রিক ফ্লোরিং পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর। ৫। উত্তম মেঝের গুণাবলি ব্যক্ত কর।

রচনামূলক প্রশ্ন :

১। গ্রাউন্ড ফ্লোরের শ্রেণিবিভাগ লেখ।

২। আপার ফ্লোরের শ্রেণিবিভাগ লেখ।

৩। মেঝে তৈরির মালামালের বিস্তৃত তালিকা তৈরি কর ।

৪। সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং বর্ণনা কর।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment