আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – কাঠের কাজে ব্যবহৃত পলিশিং যা অধ্যায়-৮ এর বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষা ম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
কাঠের কাজে ব্যবহৃত পলিশিং
কাঠের কাজে ব্যবহৃত পলিশিং
পলিশ (Polish) : এটা হলো পাতলা গালা (Shellac) লোবান, রুমি মোস্তাকি ও মেথিলেটেড স্পিরিট দ্রবণ যা সৌখিন আসবাবপত্রের এবং উৎকৃষ্টতর কাঠের কাজের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়।
পলিশিং এর প্রকারভেদ।
পলিশ দুই প্রকার। যেমন-
১। ফ্রেঞ্চ পলিশ (French polish) ও
২। মোম পলিশ (Wax polish)।
ফ্রেঞ্চ পলিশ (French polish) :
এই পলিশ তৈরি করার উপাদান প্রতি গ্যালন মেথিলেটেড স্পিরিটের সাথে পাতলা গালা- ০.৫৬ কেজি (১.২৩ পাউন্ড), লোবান- ০.১১২ কেজি (৪ আউন্স) রুমি মোস্তাকি- ০.১১২ কেজি (৪ আউন্স) মিশ্রিত করে দুই/তিন দিন কাচের পাত্রে অথবা চিনামাটির পাত্রে ডুবিয়ে রাখলে দ্রব্যগুলো সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং পলিশ তৈরি হয়। এই পলিশ সাধারণত সাদা থাকে। তাই পছন্দমতো রং মিশ্রিত করে তৈরি করে নিতে হবে।
পছন্দমতো রং মিশ্রণের পরে পলিশ পাতলা কাপড় দিয়ে হেঁকে পরিস্কার বোতলে উত্তমরূপে আটকিয়ে রাখতে হবে। নতুবা স্পিরিট শুকিয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে এক গ্যালন স্পিরিট দিয়ে তৈরি। পলিশ দশ বোতলের বেশি পলিশ হয়। পলিশে সাধারণত মেহগনি, হলুদ রঙ মিশানো হয়। এক বোতল সাদা পলিশের সাথে ৬ গ্রাম তোলা মেহগনি রঙের পাউডার মিশ্রিত করে মেহগনি রঙের পলিশ তৈরি হয়।
মোম পলিশ (Wax polish) :
মৌচাকের মোম (Bees wax) অথবা Paraffin wax তার্পিন তৈলে মিশ্রিত করে মোম পলিশ তৈরি করা হয়। এর উপাদানগুলোর অনুপাত হলো ০.২৮ লিটার তার্পিন তৈলে প্রায় ০.৪৫ কেজি (১ পাউন্ড) মোম মিশাতে হয়। মোম পলিশ করা কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ।
মোম পলিশ ব্যবহার করা বা লাগানো ঠিক ফ্রেঞ্চ পলিশ-এর ন্যায়, তবে এখানে প্যাড কাঠের উপর চাপ প্রয়োগ করে পলিশ করতে হয় এবং তিন চারবার পলিশ লাগানোর পর এক দিন কাজ বন্ধ রাখতে হবে অথবা যত দিন পর্যন্ত পলিশ না শুকায় তত দিন পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
পলিশিং দ্রব্যাদির উপাদান
ফ্রেঞ্চ পলিশ (French polish)
তৈরি করার প্রধান উপাদান প্রতি গ্যালন মেথিলেটেড স্পিরিটের সাথে পাতলা গালা ০.৫৬ কেজি (১.২৩ পাউন্ড), লোবান 0.112 কেজি (৪ আউন্স), রুমি মোস্তাকি- ০.১১২ কেজি (৪ আউন্স)।
মোম পলিশ (Wax polish) তৈরি করার উপাদান
০.২৮ লিটার তার্পিন তৈলে প্ৰায় ০.৪৫ কেজি (১ পাউন্ড) মৌচাকের মোম (Bees wax) অথবা Paraffin Wax মোম মিশাতে হয়।

পলিশিং করার পদ্ধতি
পলিশ লাগানোর পদ্ধতি :
পলিশ লাগাবার আগে বস্তুর উপরিভাগে সেন্ড পেপার বা শিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষে মসৃণ করে নিতে হয়। তারপর বস্তুটিকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে এর উপর ডিস্ক অক্সাইড-এর প্রলেপ বা Filler Mixture এর প্রলেপ দিতে হয়। এতে কাঠের আঁশের মধ্যে যদি কোনো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে তা বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর পুনরায় সেন্ডিং করে নিতে হবে।
যদি কাঠের মধ্যে বড় কোনো ছিদ্র থাকে তবে পুটিং দিয়ে ঐ ছিদ্র বন্ধ করে পুটিং স্কেপার দিয়ে চেঁছে কাঠটিকে মসৃণ করে নিতে হবে এবং ঐ স্থানে শিরিশ কাগজ বা সেন্ড পেপার দিয়ে ঘষে মসৃণ করা উচিত। তারপর প্যাড বা দুটির সাহায্যে বস্তুর উপরে হালকাভাবে পলিশের প্রলেপ দিতে হবে। এভাবে তিন বা ততোধিক প্রলেপ দিলে বস্তুর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। প্যাড বা নুটি সাধারণত নরম কাপড়ে কার্পাস তুলা মুড়িয়ে তৈরি করা হয়।
পলিশ লাগাবার সময় নিম্নের সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা উচিত, যথা :
১। পলিশ ব্যবহারের পূর্বে পলিশের বোতল ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে কাঁচের পাত্র বা চিনামাটির পাত্রে অল্প অল্প ঢেলে নেয়া উচিত।
২। প্যাড বা নুটিতে পরিমাণমতো পলিশ লাগানো উচিত। যেন বেশি পলিশ না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩। প্রলেপ দেয়ার সময় প্যাড বা দুটি বেশি চাপ দেয়া উচিত।
৪। আঁশ বরাবর বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাড ব্যবহার করা উচিত। অনবরত এক স্থানে প্রলেপ লাগানো ঐ স্থানে পলিশ জমে মোটা হয়ে যাবে।
৫। নুটির গতি দ্রুত করার জন্য দুটির অগ্রভাগে হালকা তৈল লাগানো উচিত। (সরিষার তৈল)।
৬। পলিশ প্রথম প্রলেপ দেয়ার পর তা শুকালে সেন্ড পেপার দিয়ে ঘষে অসমভাব দূর করা উচিত। প্রতিটি প্রলেপের পর মসৃণ থেকে মিহি শিরিশ কাগজ বা সেন্ড পেপার দিয়ে বস্তুর উপর ঘষে মসৃণ করে নিতে হয়।
৭। শেষ প্রলেপ লাগাবার সময় পলিশে স্পিরিট মিশ্রণ করে পাতলা করে নিতে হবে।
৮। শেষ প্রলেপ লাগাবার পর শিরিশ কাগজ বা সেন্ড পেপার ব্যবহার করা উচিত নয়।
৯। প্রদেশ যত বেশি দেওয়া যায় বস্তুর সৌন্দর্য তত বৃদ্ধি পায়।
১০। আর্দ্র আবহাওয়ায় পলিশের কাজ করা উচিত নয়।
পলিশিং ও পেইন্টিং-এর মধ্যে পার্থক্য:
অনুশীলনী – ৮
অতি সংক্ষিপ্ত
১। পলিশ কাকে বলে?
২। ফ্রেঞ্চ পলিশ কাকে বলে?
৩। মোম পলিশ কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত
১। পলিশ কত প্রকার ও কী কী?
২। ফ্রেঞ্চ পলিশ কী ? ব্যাখ্যা কর।
৩। মোম পলিশ কী? ব্যাখ্যা কর।
৪। ফ্রেঞ্চ পলিশ কীভাবে তৈরি করা হয়?
৫। মোম পলিশ কীভাবে তৈরি করা হয়?
রচনামূলক
১। পলিশিং করার পদ্ধতি বর্ণনা কর।
২। পলিশ লাগাবার সময় যে সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা উচিত তা বর্ণনা কর।
৩। পলিশিং ও পেইন্টিং-এর মধ্যে পার্থক্য ছকের মাধ্যমে দেখাও।
আরও দেখুন :