আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – স্কেফোল্ডিং ও শোরিং যা অধ্যায়-৮ এর বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স-২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষা ম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
স্কেফোল্ডিং ও শোরিং
ক্যাফোন্ডিং ও শোরিং-এর সংজ্ঞা
ক্যাফোন্ডিং: কোনো কাঠামোর নির্মাণকাজ বা দেয়ালের গাঁথুনির কাজ করার সময় নির্মাণকাজ যখন ১.৫ মিটারের বেশি উঁচুতে পৌঁছায় তখন নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণকার্য্যে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রেখে মিস্ত্রির কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে কাঠের যা বাঁশের যে অস্থায়ী মাচা বা প্লাটফর্ম তৈরি করা হয় তাকে স্ক্যাফোন্ডিং বলে।
স্ক্যাফোন্ডিং-এর প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার: নিম্নলিখিত কারণে স্ক্যাফোন্ডিং এর প্রয়োজন হয় বা ব্যবহার করা হয়। যেমন-
১। নির্মাণকাজ করার সময় মালামাল রেখে মিস্ত্রির গাঁধুনি করার সুবিধার জন্য।
২। কাঠামোর চারপার্শ্বে পর্যান্ত জায়গা না থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্মাণকাজ করার জন্য।
৩। কাঠামোর বাইরের দিকে রং করা এবং কারুকার্য্যের কাজ করার জন্য।
৪। কাঠামোর মেরামতকাজ করার সুবিধার জন্য।
৫। ভারী নির্মাণসামগ্রী উঠানো বা নামানোর জন্য।

শোরিং: সাময়িকভাবে বিপদগ্রস্ত কাঠামোকে সাপোর্ট প্রদান করার জন্য যে অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করা হয়, তাকে শোরিং বলে। অন্য কথায়, কোনো কাঠামোর বুনিয়াদের মাটি কাটার সময় নিকটবর্তী কাঠামো ধসে যাওয়ার আশঙ্কাকে প্রতিরোধ করার জন্য অথবা নিকটবর্তী কোনো কাঠামো অপসারণের সময় অথবা কোনো ত্রুটিপূর্ণ বুনিয়াদের মেরামতের সময়, কাঠামোকে নিরাপদে রাখার জন্য অস্থায়ীভাবে যে কাঠামো নির্মাণ করা হয়, তাকে শোরিং (Shoring) বলে। এটা দেয়ালের পার্শ্বে সাপোর্ট প্রদান করে।

স্ক্যাফোল্ডিং-এর প্রকারভেদ
ক্ষ্যাফোন্ডিং-এর প্রকারভেদ (Types of scaffolding):
১। সিংঙ্গেল বা ব্রিক লেয়ার স্ক্যাফোন্ডিং (Single or Brick layer’s Scaffolding)
২। ম্যাসন বা ডাবল ক্যাফোল্ডিং (Mason’s or Double Scaffolding)
৩। ক্যান্টিলিভার বা নিডল ক্ষ্যাফোন্ডিং (Cantilever or Needle Scaffolding)
৪। ল্যাডার স্ক্যাফোন্ডিং (Ladder Scaffolding)
৫। চিমনি ক্যাফোল্ডি (Chimney Scaffolding)
৬। সাসপেন্ডেড স্ক্যাফোল্ডিং (Suspended Scaffolding)
৭। স্টিল স্ক্যাফোন্ডিং (Steal Scaffolding)
৮। স্টেজিং (Staging)

বিভিন্ন প্রকার স্ক্যাফোন্ডিং উপাংশ-এর বর্ণনা
ক্যাফোন্ডিং এর উপাংশসমূহ (Components of scaffolding):

১। স্ট্যান্ডার্ড (Standards): ২ হতে ২.৫ মিটার দূরে দূরে মাটিতে খাড়াভাবে যে খুঁটি পোঁতা হয় তাকে স্ট্যান্ডার্ড বলে। অন্য কথায়, অস্থায়ী ফ্রেম ওয়ার্কের ভার্টিক্যাল মেম্বারকে স্ট্যান্ডার্ড বলে।
২। লেজার (Ledgers): এটা বাঁশের বা কাঠের আনুভূমিক মেম্বার। যাকে মাটির সমান্তরালে এবং এক স্ট্যান্ডার্ড থেকে অন্য স্ট্যান্ডার্ড-এ রশির সাহায্যে বাঁধা থাকে তাকে লেজার বলে। এটা ১.২ মিটার হতে ১.৫ মিটার উল্লম্ব দূরত্বে পর পর স্থাপন করা হয়।
৩। পুটলগ (Putlogs): এটা দেয়ালের সমকোণে অবস্থিত ট্রান্সভার্স (Transverse) মেম্বার।
এর এক প্রান্ত লেজারের সাথে এবং অন্য প্রান্ত দেয়ালের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কাঠ বা
বাঁশের যে আনুভূমিক মেম্বার এর এক প্রান্ত লেজারের সাথে এবং অন্য প্রান্ত দেয়ালের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে আবদ্ধ করা হয় তাকে পুটলগ বলে। এর উপর তক্তা বিছিয়ে মালামাল রাখা হয় এবং রাজ মিস্ত্রি বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করে। এটা ১.২ মিটার দূরে স্থাপন করা হয়।
৪। ব্রেইস (Braces): স্ট্যান্ডার্ড এর উপর আবদ্ধকৃত ডায়াগোনাল মেম্বারকে ব্রেইস বলে। স্ক্যাফোল্ডিং নড়াচড়া করে বলে কোনাকুনি ভাবে যে কাঠ বা বাঁশ দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে রশি দিয়ে বাঁধা হয় তাকে ব্রেইস বলে।
৫। টো-বোর্ড (Toe-board): পুটলগের উপর স্থাপিত লেজার-এর সমান্তরালে অবস্থিত- তক্তাগুলোকে টো-বোর্ড বলে। এটা ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম-এর লেভেল শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য- ব্যবহার করা হয়।
৬। গার্ড রেইল (Guard rail): ওয়ার্কিং লেভেল লেজার-এর ন্যায় ব্যবহৃত রেইলকে গার্ড রেইল বলে। মিস্ত্রিদের প্রটেকশন দেওয়ার জন্য এটা ব্যবহার করা হয়।
৭। রেকার (Raker): এটা একটি তির্যক সাপোর্ট। স্ক্যাফোন্ডিংকে খাড়াভাবে ধরে রাখার জন্য এটা ব্যবহার করা হয়।
৮। ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম (Working platform): ওয়ার্কিং হাইট ১.৫ মি এর বেশি হলে যে অস্থায়ী প্লাটফর্মে প্রয়োজনীয় মালামাল রেখে মিস্ত্রি তার কাজ চালিয়ে নিতে পারে তাকে Working platform বলে।
৯। ট্রানসাম (Transoms): যে সমস্ত পুটলগের উভয় প্রান্ত লেজার এর উপর স্থাপন করা হয় সেগুলোকে ট্রানসাম বলে।
শোরিং-এর প্রকারভেদ (Types of shoring)
শোরিং প্রধানত তিন প্রকার। যথা-
১। হেলানো শোর (Raking or inclined shores)
২। আনুভূমিক শোর (Flying or horizontal shores)
৩। উল্লম্ব শোর (Dead or vertical shores)
শোরিং এর উদ্দেশ্য
শোরিং এর উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
১। ত্রুটিপূর্ণ গাঁথুনীর কারণে কোনো দেয়াল বাহিরের দিকে স্ফীত হেলে পড়ার চিহ্ন দেখা দিলে।
২। ভিত্তির অসম বসনের জন্য দেয়ালে ফাটল দেখা দিলে এবং ফাটল মেরামত করার প্রয়োজন হলে।
৩। পার্শ্ববর্তী কাঠামো সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হলে।
৪। দেয়ালের মধ্যে ফোকর নির্মাণ বা ফোকর বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হলে।

অনুশীলনী – ৮
অতি সংক্ষিপ্ত:
১। স্ক্যাফোল্ডিং কাকে বলে?
২। শোরিং কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত:
১। স্ক্যাফোন্ডিং কত প্রকার ও কী কী?
২। শোরিং কত প্রকার ও কী কী?
৩। স্ক্যাফোল্ডিং বলতে কী বুঝ?
৪। শোরিং-এর ব্যবহার লেখ।
রচনামূলক:
১। বিভিন্ন প্রকার স্ক্যাফোল্ডিং-এর বর্ণনা দাও।
২। স্ক্যাফোল্ডিং-এর উপাংশ গুলো ব্যাখ্যা কর।
৩। শোরিং তৈরির পদ্ধতি লেখ।
আরও দেখুন :