আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – প্লাম্বিং ফিকচার যা অধ্যায়-২১ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
প্লাম্বিং ফিকচার
প্লাম্বিং ফিকচার
ইমারত বা স্থাপনায় পানি ব্যবহার করার পর ব্যবহৃত পানি বা অন্যান্য তরল পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য প্লাম্বিং ব্যবস্থায় যে সকল পাত্র ব্যবহার করা হয় তাদেরকে ফিকচার (fixture) বলে। যথাঃ বাথটাব, সিংক, হাত ধোয়ার বেসিন, ওয়াটার ক্রোসেট, ইউরিনালস, লক্ষি-ট্রে ইত্যাদি।
বিভিন্ন প্রকার ফিকচারের তালিকা
বিভিন্ন প্রকার ফিকচারের তালিকা নিম্নরূপঃ
১) হাত ধোয়ার বেসিন (Wash hand basin)
২) শাওয়ার বাথ (Shower bath)
৩) বাথটাব (Bath tub)
৪) ফ্লাশিং সিস্টার্ন (Flushing cistern)
৫) সিংক (Sink)
৬) লক্ষি-এই (Laundry tray)
৭) ওয়াটার ক্রোসেট (Water closet)
৮) ইউরিনালস (Urinals)
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকার প্লাম্বিং ফিকচারের চিত্র


শাওয়ার বাথ

ক্লাসিং সিস্টার্ন

সিংক

ওয়াটার ক্রোসেট

ইউরিনালস

বিভিন্ন প্রকার ফিকচারের ব্যবহার
১) হাত ধোয়ার বেসিন (Wash hand basin): হাত ধোয়ার বেসিন সাধারণত গোসলখানার ভিতরে, গোসলখানা সংলগ্ন দেওয়ালে, খাওয়ার ঘরের দেওয়ালে স্থাপন করা হয়। এটি চিনামাটি, স্টিল, পিতল ও আচ্ছাদিত ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরি করা হয়। কখনও কখনও কংক্রিটের তৈরি বেসিনও ব্যবহৃত হয়। এটি ফ্লোর থেকে উপরে দেওয়াল সংলগ্ন ব্রাকেট, লেগ, প্যাডেস্টাল ও কেবিনেট দ্বারা সংস্থাপন করা হয়। হাত ধোয়ার বেসিন বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যথাঃ-
ক) ওয়াল হ্যাংগ টাইপ (Wall hang type)
খ) লেগ টাইপ (Leg type)
গ) প্যাডেন্টাল টাইপ (Pedestal type)
ঘ) কেবিনেট টাইপ (Cabinet type)
২) শাওয়ার বাথটাব (Shower bath): এটি সাধারণত গোসলখানায় স্থাপন করা হয়। শাওয়ার রোজের অবস্থানের উপরে নির্ভর করে মেঝের উপর দেওয়ালে স্থাপন করা যায়।
৩) বাথটাব (Bath tub): বাথটাব বাথরুমে স্থাপিত এক প্রকার চৌবাচ্চা বিশেষ। এটি এক প্রকার কৃত্রিম গার্হস্থ্য পুকুর, যদিও এতে সাঁতার কাটার সুযোগ নেই। বাথটাবের চারকোণ মসৃণ। এটি মেঝের উপর বাথরুমের সুবিধাজনক কর্ণারে, দুই দেওয়াল বা তিন দেওয়াল সংলগ্ন স্থানে স্থাপন করা হয়। কখনও কখনও দুই দেওয়ালের মাঝে এক দেওয়াল সংলগ্ন স্থানেও স্থাপন করা হয়।
৪) ফ্লাশিং সিস্টার্ন (Flushing cistern): টয়লেটে (Latrine) এটি স্থাপন করা হয়। মলত্যাগ বা প্রস্রাব করার পর এটি ব্যবহার করলে পানি প্রবাহিত হয়ে ধৌত হয়ে যায়। মেঝে থেকে উপরে দেওয়ালে স্থাপন করা হয়। এর ধারণ ক্ষমতা ১০ থেকে ১৫ লিটার পানি। লিভার বা চেইন ব্যবহার করলে স্বংয়ক্রিয় ভাবে ফ্লাশিং হয়ে যায়। ফ্লাশিং সিসটার্ন ২ প্রকার যথাঃ
ক) লো ডাউন ফ্লাশিং ট্যাংক (Low down flushing tank) খ) হাই ফ্লাশিং ট্যাংক (High flushing tank)
৫) সিংক (Sink): রান্নাঘরে ব্যবহৃত থালা, বাটি ও অন্যান্য বাসনকোসন ধৌত করার জন্য যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তাকে কিচেন সিংক বলে। এটি সাধারণত রান্নাঘরেই স্থাপন করা হয়। কোন কোন সিংকের মাঝামাঝি পার্টিশন ব্যবহার করে তাকে দুই অংশে বিভক্ত করা হয়। আবার কোন কোন সিংকের এক পার্শ্বে বা দুই পার্শ্বে বর্ধিত বোর্ড লাগানো থাকে। এই ধরনের সিংককে, সিংক উইথ ট্রে বলে। সিংক ৩ প্রকার। যথাঃ
ক) কেবিনেট সিংক (Cabinet sink)
খ) সোপ স্টোন ট্যাংক (Soap stone sink)
গ) কিচেন সিংক (Kitchen sink)
৬) লন্ডি ট্রে (Laundray tray): সাধারণ মসৃণ ও তরল অশোষক পদার্থ দিয়ে লন্ড্রি ট্রে তৈরি করা হয়। গোসলখানায় পরিধেয় ও অন্যান্য কাপড়-চোপড় ধোয়ার জন্য লন্ড্রি ট্রে ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিব কক (Bib cock) নিয়ন্ত্রিত পানির ধারা সরবরাহ করে দুই বা তিনটি লক্ষি ট্রে একত্রে পাশাপাশি বসিয়ে বুক কাজ সমাধা করা যায়। এক্ষেত্রে একটি ট্যাপই ব্যবহার করা হয়।
৭) ওয়াটার ক্রোসেটঃ (Water closet): পানি বাহিত ব্যবস্থায় পায়খানার যে পাত্রটিতে মলত্যাগ করা হয় সেই মলপাত্র এবং তৎসহ ট্রান্স বা সাইফনটিকে এক সংগে বলা হয় ওয়াটার ক্রোসেট বা সংক্ষেপে ডব্লিউ সি (W.C)| ওয়াটার ক্রোসেট দুই প্রকার। যথাঃ
ক) ভারতীয় টাইপ ওয়াটার ক্রোসেট (Indian type water closet)
খ) ইউরোপীয় টাইপ ওয়াটার ক্লোসেট (European type water closet)

চিত্রঃ ইউরোপীয় টাইপ ওয়াটার ক্রোন্টে
আকার আকৃতি, গঠন ও সাইকোন কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ক্রোমেট আবার চার প্রকার। বাঃ
১) ওয়াশ ভাউন ক্রোসেট (Wash down closet)
২) ওয়াশ আউট ক্রোস্টে (Wash out closet)
৩) সহিষন এ্যাকশন ক্রোলেট (Siphone action closet)
৪) সাইফন জেট ক্লোস্টে (Siphone jet closet)


ক) ভারতীয় টাইপ ওয়াটার ক্রোসেট: ভারতীয় টাইপ ওয়াটার ক্রোসেট চকচকে সাদা চিনামাটির মলপাত্র বিশেষ। এটি লম্বায় ৫০ থেকে ৬০ সে.মি., চওড়ায় ২২ থেকে ৩০ সে. মি. এবং উচ্চতায় ট্রাপসহ ৪০ থেকে ৪৫ সে.মি.। এ ধরনের ক্রোসেট স্থাপনের জন্য বাথরুম বা টয়লেটের মেঝে ঘরের অন্যান্য মেঝে অপেক্ষা নিচু হওয়া উচিত। ফলে সলপাত্রটি স্থাপন করার পর মেঝের ঢাল সব দিক থেকে ঢালু হয়। ঢাল নিচুতে হওয়ায় ব্যবহৃত সব ময়লা পানি মলপাত্রে দিয়ে পড়বে।
এর পায়ে উপরের মুখে একট নলাকৃতির ফ্লাশ রিম থাকে। ক্লাশ রিমের সাথে ২০ থেকে ২৫ সে. মি. উচ্চাভায় ফ্লাশিং সিস্টার্ণ সংযুক্ত থাকে। শিকল টানলে ফ্লাশিং সিস্টার্ণ হতে পানি ফ্লাশ পাইপ ও রিম দিয়ে অবেগে এসে সলপাত্রের সয়লাসমূহ খুরে সলপাত্র সংলগ্ন মূলনদে পৌঁছে দেয়।
খ) ইউরোপীয় টাইপ ওয়াটার ক্লোসেট: এর প্রচলিত নাম কমোড (commod) পায়খানা। মলপাত্রটি আকারে বেশ বড় যা লম্বায় ৬০ থেকে ৬৫ সে.মি. পর্যন্ত হতে পারে। মলপাত্র এবং ট্র্যাপ একই সংগে ঢালাই করে তৈরি করা হয়। কমোডটির পৃষ্ঠদেশ খাড়া থাকে যার ফলে কোন মল পাত্রের গায়ে আটকাতে পারে না। মলপাত্রের নিচে প্রয়োজনে P বা S ট্রাপ সংযুক্ত করা যায়।
মলপাত্রের উপরে থাকে বসার আসন (Seat) ও কাঠ বা প্লাস্টিকের ঢাকনা। মেঝে থেকে পাদানি ও ট্যাপসহ মলপাত্রের উচ্চতা ৩৫ সে.মি.। এর উপরের দিকে মুখ বরাবর বেড় দিয়ে থাকে নলাকৃতি রিম। প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ সে.মি. উচ্চে অবস্থিত ফ্লাশিং সিস্টার্নের সাথে ফ্লাশ পাইপ দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
৮) ইউরিনালস (Urinals): যে পাত্রে আমরা প্রস্রাব ত্যাগ করি তাকে মুত্রাধার (Urinals) বলে। ইউরিনালস্ ২ প্রকার। যথাঃ-
(ক) বাটি টাইপ (Bowl type)
(খ) স্লাব বা স্টল টাইপ (Slab or stall type)
(ক) বাটি আকারের মুত্রাধারঃ বাটি আকারের মুত্রাধার আবার দুই প্রকার, একটির পৃষ্ঠদেশ চ্যাপ্টা যার মাপ সাধারণত ৪৩ সে.মি. x ৩৫ সে.মি. x ২৬ সে.মি.। এটিকে দেওয়ালের যে কোন স্থানে স্থাপন করা যায়। অপরটির পৃষ্ঠদেশ কোণাকুণি। একে দেওয়ালের কোণায় স্থাপন করতে হয় এবং মাপ ৮৩ সে.মি. x৩৪ সে.মি. x ২৬ সে.মি.। বাটি আকৃতির মুত্রাধারগুলো মেঝে হতে ৮০ সে.মি. উপরে স্থাপন করা হয়ে থাকে।
(খ)স্ল্যাব বা স্টল আকারের মুত্রাধারঃ এ মুদ্রাধারগুলোর আকার ৪৫ সে মি x ৬০ সেমি x ১০০ সে মি। এদের তলদেশ দেওয়ালের গা বরাবর ঢাকা ট্রেন থাকে যা সরাসরি মলপাইপের সাথে সংযুক্ত থাকে। বাটি বা স্ল্যাব যাই হোক না কেন এদের ইউরোপিয়ান টাইপ বা স্ট্যান্ডিং টাইপ বা জেন্টস টাইপ বলা হয়।
মেয়েদের ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ইউরিনালস হলো দেওয়ালের কাছাকাছি মেঝেতে বসানো বেসিনের মতো একটি প্যান। এটি দেওয়ালের দিক ক্রমশ ঢালু থাকে।

প্লাম্বিং ফিকচার সমূহে ব্যবহৃত ক্লাসেট বা ভালব
১) বিব কক (Bib cock): সরবরাহ লাইন হতে পানি ফিকচার বা অন্য কোন স্থানে ব্যবহার করার জন্য বিব কক ব্যবহৃত হয়। বিব ককের পানি প্রবাহী নলের এক প্রান্তে প্যাঁচ কাটা থাকে। পানি যাতে নিম্নমুখী হয়ে পড়তে পারে সেজন্য অপর প্রান্ত বাঁকা করা থাকে। এর গঠন প্রণালি অতি সহজ এবং সহজেই ব্যবহার করা যায়। এগুলো বিভিন্ন প্রকার বস্তু যথাঃ- পিতল, প্লাস্টিক ইত্যাদির হতে পারে।
২) পিলার কক (Pillar cock): বেসিন, বাথটাব ও ল্যাভাটেরি ধরনের ফিকচারের উপরি অংশের ছিদ্র দিয়ে তলদেশ থেকে পানি আনার জন্য পিলার কক ব্যবহার করা হয়। সরবরাহ লাইনের সাথে সংযোগ দেওয়ার জন্য পিলার কক ও লাইনের মাঝে লেড (Lead) বা প্ল্যাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করা যায়। এগুলি পিতলের তৈরি হয়ে থাকে।
৩) স্টল কক (Stop cock): এটি সাধারণত সার্ভিস পাইপ বা আউটলেট পাইপে ব্যবহার করা হয়। এর সাহায্যে সার্ভিস লাইনের পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রয়োজনে সরবরাহ বন্ধ করে বাসা-বাড়ির ফিটিংস, ফিকচার, পাইপ ইত্যাদি মেরামত ও নতুন লাইন স্থাপন করা যায়। এগুলো সাধারণত পিতলের তৈরি হয়ে থাকে।
পাইপ ফিটিংস
পাইপ ফিটিংস (Pipe fittings): পাইপ সংযোজন, লাইনের দিক পরিবর্তন, প্রধান লাইন হতে শাখা লাইন স্থাপন, বড় ব্যাসের পাইপের সাথে ছোট ব্যাসের পাইপের সংযোজন ও পাইপ লাইনে প্লাম্বিং ফিকচার বসাতে যে সকল সাজ-সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় এগুলোকেই পাইপ ফিটিংস বলে। ফিটিংস বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য দ্বারা তৈরি। যথাঃ- কান্ট আয়রন, রড আয়রন, গ্যালভানাইজড আয়রন, কংক্রিট, পোড়া মাটি, সিমেন্ট, এসবেস্টস ইত্যাদি।
ফিটিংসগুলোর নাম সকেট, এলবো, বেন্ড, টি, ইউনিয়ন, রেডিউসার, নিপল, ক্রস, প্লাগ, বুশ, স্টপ কক, গেট ভালব, গ্লোব ভালব, চেক ভালব, ওয়াই, টি-ওয়াই, ওয়াই ব্রাঞ্চ ইত্যাদি।
ফিটিংসের প্রয়োজনীয়তা
নিম্নে ফিটিংসের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলোঃ
১) পাইপের সাথে পাইপের সংযোজনের জন্য।
২) লাইনের দিক পরিবর্তনের জন্য।
৩) প্রধান লাইন হতে শাখা লাইন বের করার জন্য।
৪) বড় আকারের পাইপের সাথে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের পাইপ সংযোজনের জন্য।
৫) পাইপ লাইনের ক্ষয়ক্ষতি ব্যতিরেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
৬) পাইপ লাইনে বিভিন্ন প্রকার ফিকচার স্থাপনের জন্য। ৭) লাইনে প্রবাহমান তরল বা গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
৮) বিশেষ পদ্ধতিতে বাগানে পানি দেওয়ার জন্য।
ফিটিংসের ব্যবহার (Uses of fittings)
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ফিটিংসের ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ
১) সকেট (Socket): একে সাধারণত কাপলিংও বলা হয়ে থাকে। সোজা লাইনকে বর্ধিত করার কাজে সকেট ব্যবহার হয়। সকেটের মূল কাজ হলো জোড়া দেওয়া। তাছাড়া বিব কক ও ভালব ইত্যাদি পাইপের
সাথে সংযোজন করার জন্যও সকেট ব্যবহার করা হয়।
২) এলবো (Elbow): এলবো বেন্ডের মতো লাইনের দিক পরিবর্তনে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত ৯০৭ ৬০, ৪৫:২২.৫; ১১.২৫০ (নব্বই ডিগ্রী, ষাঠ ডিগ্রী, পয়তাল্লিশ ডিগ্রী, সাড়ে বাইশ ডিগ্রী, সোয়া এগার ডিগ্রী) কোণের হয়ে থাকে। তাছাড়া ড্রপ এলবো, স্ট্রিট এলবো ইত্যাদি নামেও পাওয়া যায়।
৩) বেন্ড (Bend): বেন্ড দ্বারা পাইপ লাইনের দিক পরিবর্তন করা হয়। বেন্ড ৯০° (নব্বই ডিগ্রী) কোণের বেশি হয়। বেন্ড কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যথাঃ- রিটার্ণ বেন্ড, ক্লোজ বেন্ড, মিডিয়াম বেন্ড, ওয়াই বেন্ড ইত্যাদি। বেন্ড ব্যবহার করলে প্রবাহিত তরল কম বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৪) টি (Tee): কোন পাইপের লাইনের সাথে ৯০° (নব্বই ডিগ্রী) কোণে পাইপ সংযোগ দেওয়ার জন্য ‘টি’ ব্যবহৃত হয়। টি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন- প্লেইন টি, সার্ভিস টি, ড্রপ টি ইত্যাদি।
৫) ইউনিয়ন (Union): সকেট ব্যবহার করে পাইপ সংযোজন করা হলে পরবর্তীতে খুলে নিতে অসুবিধা হয়। পাইপ লাইন যেখানে খোলার প্রয়োজন সেখানে ইউনিয়ন ব্যবহার করা হয়। ইউনিয়ন ব্যবহৃত হলে পাইপ সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন করা উভয়ই সহজ হয়ে যায়।
৬) রিডিউসার (Reducer): পাইপ লাইনে বিভিন্ন ব্যাসের দুইটি পাইপ একত্রে সংযোগ দেওয়ার জন্য যে ফিটিংসটি ব্যবহৃত হয় তাকে রেডিউসার বলে। বড় ব্যাসের পাইপ থেকে ছোট ব্যাসের পাইপ সংযোগ নেওয়ার সময় রেডিউসার ব্যবহার করা হয়।
৭) নিপল (Nipple): নিপল সংযোগকারী ফিটিংস। এর দুই প্রান্তেই বাইরের দিকে প্যাঁচ কাটা থাকে। নিপল তিন প্রকার। যথাঃ- ক্লোজ নিপল, শর্ট নিপল ও লং নিপল।
৮) ফেরুল (Ferrule): ফেরুল একটি প্লাম্বিং আনুষঙ্গিক পিতল বা গান মেটালের তৈরি যার সাহায্যে পানির প্রবাহ সরবরাহ পাইপ থেকে সার্ভিস পাইপে পানি আহরণ করা হয়। ফেরুল স্টপ ককের মতো। এদের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য আছে। পার্থক্য এইটুকু যে ফেরুলের সাহায্যে মোটা পাইপ থেকে সরু পাইপে পানি নেওয়া যায় এবং পানি প্রবাহের গতি পথ বদলে যায় কিন্তু স্টপ ককের দুই দিকের পাইপ একই মাপের এবং পানি প্রবাহের পথ বদলায় না।
৯) ক্রস (Cross): চারটি পাইপ লাইন যখন একই স্থানে মিলিত হয় তখন ক্রস ব্যবহার করা হয়। একই বিন্দু হতে সমকোণে চারদিকে পাইপ সংযোজন করার জন্য ক্রস ব্যবহার হয়।
১০) প্লাগ (Plug): অনেক সময় পাইপ লাইন যদি পরবর্তীতে বাড়াবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে লাইনের সমাপ্তি না ঘটিয়ে আপাতত বন্ধ রাখা হয়। এ ধরনের পাইপের শেষ প্রান্তে প্লাগ ক্যাপ ব্যবহার হয়ে থাকে।
১১) বুশ (Bush) : বেশি অসম ব্যাসের পাইপ স্থাপনে যদি প্রয়োজনীয় ফিটিংস না পাওয়া যায় তখন বুশ ব্যবহার করা হয়।
১২) গেট ভালব (Gate valve): পানির লাইনে প্রধান, উপ-প্রধান ও শাখা লাইনে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গেট ভালভ ব্যবহার করা হয়।
১৩) গ্লোব ভালব (Glove valve): পানির সোজা লাইনে এটি ব্যবহার করা হয়। এর প্রধান কাজ হলো পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।
১৪) পানি মিটার (Water meter): পাইপের ভিতর দিয়ে পানি সরবরাহের পরিমাণ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ যন্ত্রকে পানি মিটার বলে। পানি সরবরাহ লাইনের সংযোগ গ্রহণকারী প্রতিটি বাসগৃহের জন্য আলাদাভাবে এই মিটার সংযোজন করা হয়।
১৫) চেক ভালব (Check valve) : প্রধান কাজ হলো পানির প্রবাহের দিক পরিবর্তন করে অন্যদিকে প্রবাহিত করা।
১৬) ওয়াই বেন্ড (Y-bend) : একটি পাইপ লাইন থেকে দুটি পাইপ লাইন সমান কোণে স্থাপন করার জন্য ওয়াই বেন্ড ব্যবহার হয়।
১৭) স্যানিটারি ক্রস (Sanitary cross): একটি মোটা লাইন থেকে দুটি ছোট ব্যাসের বেন্ড আকারের যে সংযোজন করা হয় তাকে স্যানিটারি ক্রস বলে।
১৮) টি (Tee-Y) ও মোটা ব্যাসের পাইপ থেকে ছোট ব্যাসের পাইপ ওয়াই আকারে স্থাপন করা হয়।
১৯) ওয়াই ব্রাঞ্চ (Y-branch): মোটা ব্যাসের পাইপ থেকে কৌণিকভাবে ওয়াই আকৃতির বেন্ড হিসাবে পাইপ লাইনে ব্যবহার করা হয়।
উপর্যুক্ত ফিটিংসগুলো ছাড়াও পাইপ লাইনে গ্রুপ এলবো (drop elbow), কয়ার-ই-আই square-E- I), কাট-ই-আই (cut-E-I), কাট কার্ড (Cut-Card), রেলি বেড ইত্যাদি ফিটিংস কৌণিক দিক পরিবর্তনে স্তবহার করা হয়।


অনুশীলনী
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। প্লাম্বিং ফিকচার কি?
২। পাইপ ফিটিংস কি?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পাইপ ফিটিংসের প্রয়োজনীয়তা লেখ।
২। প্লাম্বিং ফিকচারসমূহে ব্যবহৃত ক্লাসেট বা ভাল্ডের বর্ণনা দাও।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। পাইপ ফিটিংসের ব্যবহার বর্ণনা কর।
২। বিভিন্ন প্রকার প্লাম্বিং ফিকচারের চিত্রসহ তালিকা তৈরি কর।
আরও দেখুন :