আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – পয়েন্টিং কাজে মালামালের পরিমাণ যা অধ্যায়-৬ ও ৭ এর সিভিল কন্সট্রাকশন ২ এ অন্তভুক্ত। শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
Table of Contents
পয়েন্টিং কাজে মালামালের পরিমাণ
পয়েন্টিং কাজে মালামালের পরিমাণ
পয়েন্টিং কাজের মালামালের পরিমাণ হিসাব করতে গেলে আমাদের কাজের পরিমাণ, সিমেন্ট বালির অনুপাত জানতে হবে। ধরি,
কাজের পরিমাণ ১০০ বর্গ মিটার
প্রয়োজনীয় শুভ মসলার পরিমাণ = ০.৬ ঘনমিটার।
সিমেন্ট বালির অনুপাত = ১:২।
এক্ষেত্রে অনুপাতের সমষ্টি- ১+২=৩।

অনুপাত অনুযায়ী নির্ধারিত কাজে সিমেন্টের পরিমাণ
০.৬
সিমেন্টের পরিমাণ = ————– x ১ = ০.২ ঘন মিটার বা ৬ ব্যাপ (৩০ ব্যাগ প্রতি ঘন মিটার সিমেন্ট)
৩
অনুপাত অনুযায়ী নির্ধারিত কাজে বালির পরিমাণ
০.৬
বালির পরিমাণ = ————– x ২ = ০.৪ ঘন মিটার
৩
অনুশীলনী
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পয়েন্টিং এর কাজে অনুপাত অনুযায়ী সিমেন্টের পরিমাণ নির্ণয় কর।
২। পয়েন্টিং এর কাজে অনুপাত অনুযায়ী বালির পরিমাণ নির্ণয় কর।
ডিসটেম্পার
ডিসটেম্পার (Distemper)
ডিস্টেম্পার এক ধরনের পেইন্ট যা রং যাতে দ্রাবক হিসাবে পানি ও ভেল এবং উপাদান হিসাবে টু-রজন ব্যবহার হয়। এগুলির সাথে পন্দনীয় রঞ্জক সহযোগে স্ফীত রংয়ের ডিস্টেম্পার ‘তৈরি করা হয। কক্ষের ফিতরের দেওয়ালের সৌন্দর্য বর্ধক হিসাবে ডিসটেম্পার ব্যবহার হয়। চক পাউডার ও প্রয়োজনীয় পরিমান রংয়ের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা হয়। পানির পরিবর্তে তেলে দ্রবীভূভ ডিসটেম্পার বাজারে বিভিন্ন সাইজের কোটায় কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন নাম ও রঙে এগুলো বাজারজাত করে থাকে।

ডিসটেম্পারের প্রয়োজনীয়কা
১। এটি কক্ষের বা প্রয়োগকৃত স্থানে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে লাগে।
২। জাধুনিক পেইন্টের মধ্যে তুলনামূলক খরচ কম। চুনকাম বা কালার ওয়াশের তুলনায় ডিসটেম্পার বায়বহুল।
৩। অতি দ্রুত নতুন কাজে রং ব্যবহার করতে বেশি উপযোগী।
৪। নতুন প্লাস্টার করা দেয়ালে সহজে প্রয়োগ করা যায়।
৫। ডিসটেম্পার করা দেয়াল সহজে পরিষ্কার রাখা যায়।
৬। যেখানে আর্দ্রতা বেশি সেখানে ডিসটেম্পার গাত্রফলকে আর্দ্রতা হতে রক্ষা করে।
৭। ভৈল বেইজত রং ফরার আগে ডিসটেম্পার ব্যবহার করা ভালো এতে প্লাস্টারে থাকা লাইম বিক্রিয়া করতে না পারে।
৮। সাধারণত শোবার ঘর, বসবার ঘর, বারান্দা, হোটেল, রেস্তোরা, অফিস আদালত, সিনেমা হল সহ অনেক স্থানে দেওয়াল ও সিলিং-এ ক্রিসটেম্পার ব্যবহার করা হয়।
ডিসটেম্পার প্রয়োগের জন্য পাত্রতল প্রস্তুত
ডিসটেম্পার প্রয়োগের জন্য পৃষ্ঠতল প্রস্তুতকরণ যে দেয়াল পাত্রে ডিসটেম্পার করতে হবে তা সম্পূর্ণ শুকনো হতে হবে। ভিজা বা স্যাঁতস্যাঁতে গাত্রতলে ডিসটেম্পার ভালো হয় না। সাধারণত চুন প্লাস্টার করা দেওয়াল শুকাতে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। এর আগে ডিসটেম্পার করা ঠিক হবে না। দেওয়ালের গায়ে কোন গর্ত বা ফাটল থাকলে সেগুলো জিপসাম বা লাইম পুটিং দ্বারা বন্ধ করতে হবে। গাত্রতল সম্পূর্ণরূপে শুকানোর পর গাত্র পরিষ্কার ও মসৃণ করা হয়।
পুরাতন ডিসটেম্পার করা দেওয়ালে পুনরায় ডিসটেম্পার করতে হলে পুরাতন ডিসটেম্পার শিরিষ কাগজ ও ব্রাশ দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। যদি পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে তোলা হয় তাহলে গাত্রতল শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ডিসটেম্পার কাজে ব্যবহৃত মালামাল
ডিসটেম্পার দুই প্রকার। যথা-
(১) পানিবন্ধ ডিসটেম্পার (Water bound Distemper)
(২) তৈলবদ্ধ ডিসটেম্পার (Oil bound Distemper)
(১) পানিবন্ধ ডিসটেম্পারঃ এই ডিসটেম্পার বাজারে পাউডার বা গুড়া হিসাবে পাওয়া যায়। প্রথমে গরম পানিতে পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করা হয়। তারপর পানি মিশিয়ে প্রয়োজনমতো পাতলা করা হয়। সাধারণতো ৬০ লিটার পানিতে এক কেজি ডিসটেম্পার পাউডার মিশাতে হয়।
(২) তৈলবদ্ধ ডিসটেম্পারঃ হোয়াইটিং বা চকপাউডার এবং রঙিন পিগমেন্ট প্রথমে শুকনো অবস্থায় মিশিয়ে নিতে হয়। তারপর পানি বা তৈল মিশিয়ে পেস্ট এর ন্যায় করে কোটাজাত করে বাজারে বিক্রি হয়। কতটুকু পেস্ট কি পরিমাণ পানি মিশাতে হবে তা কৌটার গায়ে লেখা থাকে।
ডিসটেম্পারের উপাদানসমূহঃ
(ক) হোয়াইটিং বা চক পাউডার (মূল উপাদান)- ১০০০ গ্রাম
(খ) পানি (বাহক)-৪০০ মিলিলিটার
(গ) গ্লু বা রেজিন (binder)- ৫০ গ্রাম
(ঘ) রঙিন পিগমেন্ট (coloring pigment)- প্রয়োজনমতো।
ডিসটেম্পার প্রয়োগের কৌশল ও সতর্কতা
ডিসটেম্পার প্রয়োগ কৌশল
সাধারণত তিন ধাপে ডিসটেম্পার প্রয়োগের কাজ করা যায়। যথা-
(১) দেওয়ালের পৃষ্ঠতল প্রস্তুত। (সেকশন ৭.৩ দেখি)
(২) চুনের প্রাথমিক স্তর লেপন বা প্রাইম কোর্ট প্রদান।
(৩) ডিসটেম্পার প্রলেপ প্রয়োগ।
২) চুনের প্রাথমিক কোট (Prime coat) লেপন
পৃষ্ঠতল প্রস্তুতির পর চুনের একটি প্রাইম কোটের প্রলেপ দিতে হবে। এ চুনকামে নীল ব্যবহার করা উচিত নয়। চুনকাম ভালোভাবে শুকানোর পর শিরিষ কাগজ ঘষে গাত্রতল মসৃণ করে পরিস্কার শুকনো কাপড় দিয়ে ঝেড়ে মুছে নিতে হবে। ঘরে তৈরি ডিসটেম্পারের ক্ষেত্রে ১০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের জন্য ১ লিটার ব্যবহার করা যায়।
(৩) ডিসটেম্পার প্রয়োগ
চুনের প্রাথমিক স্তর শুকানোর পর ডিসটেম্পার প্রলেপ প্রয়োগ করতে হবে। কৌটার পেস্ট আকারের ডিসটেম্পার গরম পানি মিশিয়ে কার্যপোযোগী তারল্যে আনতে হয়। কি পরিমাণ পানি মিশাতে হবে তা সাধারণত কৌটার গায়ে লেখা থাকে। পানি মিশাবার পর ডিসটেম্পার এক বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত নাড়তে হবে। এক কোট বা প্রলেপ শুকাবার পর দ্বিতীয় কোট প্রয়োগ করতে হবে।
দুই কোট প্রয়োগের ক্ষেতে প্রথম কোট হালকা রংয়ের হলেও চলবে। ব্রাশ বা পৌঁচড়ার সাহায্যে ডিসটেম্পারের প্রলেপ প্রয়োগ করার সময় প্রথমে উপর থেকে নিচে এবং নিচে থেকে উপরে পরে ডানে বায়ে করে প্রয়োগ করা উচিত। ব্রাশের পরিবর্তে বর্তমানে সেপ্র-গান বা সেপ্র রোলার ব্যবহার করেও ডিসটেম্পার প্রয়োগ করা যায়। এতে প্রলেপ খুব হালকা, সুষম ও সুন্দর হয়।
ডিসটেম্পার প্রয়োগে সতর্কতা
ডিসটেম্পার পেইন্টিং করার সময় নিম্নের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো নিতে হয়-
(১) ডিসটেম্পার তৈরিতে পানির পরিমাণ যেন কম বেশি না হয়।
(২) গাত্রতল সম্পূর্ণরূপে না শুকানো পর্যন্ত ডিসটেম্পারের প্রলেপ প্রয়োগ করা যাবে না।
(৩) দেওয়াল গাত্রের ফাটল বা গর্ত লাইম পুটি দ্বারা পুরণ করতে হবে।
(৪) পুরাতন পৃষ্ঠের ক্ষেত্রে পুরাতন ডিসটেম্পার সম্পূর্ণরূপে তুলে না নেওয়া পর্যন্ত প্রলেপ প্রয়োগ করা যাবে না।
(৫) একদিনে যতটুকু ডিসটেম্পার প্রয়োগ করা যাবে তার অধিক তৈরি করা উচিত হবে না।
(৬) এক কোট শুকানোর আগেই পরবর্তী কোট দিতে হবে।

অনুশীলনী
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ডিসটেম্পার কাকে বলে?
২। ডিসটেম্পারের উপাদানসমূহ লেখ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ডিসটেম্পারের প্রয়োজনীয়তা কি?
২। ডিসটেম্পার প্রয়োগের জন্য গাত্রতল প্রস্তুত প্রণালী বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ডিসটেম্পার কাজে ব্যবহৃত মালামালের বিস্তারিত বিবরণ দাও।
২। ডিসটেম্পার প্রয়োগ কৌশল ও সতর্কতা সম্পর্কে লেখ।
আরও দেখুন :