গ্লাস ও সিরামিক আজকের ক্লাসের আলোচন্য বিষয়। এই ক্লাসে আলোচনা গ্লাস ও সিরামিক [Glass & Ceramic] এর বিভিন্ন ধরণের বিষয় নিয়ে। গ্লাস ও সিরামিক [Glass & Ceramic] এর এই ক্লাসটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস, ৬৬৪২১ (Civil Engineering Materials, 66421) কোর্সের, ৮ম অধ্যায়ের (Chapter 8) এর পাঠ। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস (৬৬৪২১) কোর্সটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের (Diploma in Engineering), ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (Diploma in Civil Engineering) টেকনোলোজির অংশ।
Table of Contents
গ্লাস ও সিরামিক
গ্লাস
কাচ হলো বহুবিধ ব্যবহারিক, প্রযুক্তিগত এবং আলংকারিক প্রয়োগসমৃদ্ধ অ-স্ফটিক স্বচ্ছ নিরাকার কঠিন বস্তু। জানালা, টেবিল সামগ্রী, আলোকবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাচের ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত গলিত অবস্থা থেকে দ্রুত শীতলীকরণের মাধ্যমে কাচ তৈরি করা হয়, তবে আগ্নেয়গিরির কাচ মূলত প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। কাচের সর্বাধিক পরিচিত এবং প্রাচীনতম প্রকারভেদ হলো বালির প্রাথমিক উপাদান সিলিকা (সিলিকন ডাই অক্সাইড, বা কোয়ার্টজ) ভিত্তিক “সিলিকেট কাচ”।
প্রায় ৭০% সিলিকা সমন্বিত সোডা-লাইম কাঁচ হলো মোট উৎপাদিত কাঁচের প্রায় ৯০%। কাচ শব্দটি প্রায়শই কেবল এইধরনের উপাদানের জন্য ব্যবহৃত হলেও আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ব্যবহারের জন্য কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রায়শই সিলিকা মুক্ত কাচে বিদ্যমান থাকে। কিছু বস্তু, যেমন পানির গ্লাস এবং চশমা, সাধারণত সিলিকেট-ভিত্তিক কাচ দিয়েই তৈরি হয় বলে এগুলোকে কেবল উপাদানটির নামে কাচ/গ্লাস ডাকা হয়।
ভঙ্গুর হলেও সিলিকেট গ্লাস অত্যন্ত টেকসই এবং কাচ নির্মাণকারী প্রাথমিক সংস্কৃতির কাঁচের টুকরোর অনেকগুলো উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, মেসোপটেমিয়া, মিশর বা সিরিয়ায় কমপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ৩,৬০০ বছর পূর্বে কাচ তৈরি শুরু হয়েছিল। প্রাচীনতম কাচের বস্তু হলো পুঁতি, যা সম্ভবত ধাতব কাজ করার সময় বা মাটির পাত্র উৎপাদনের সময় ভুলক্রমে তৈরি হয়েছিল।
যে কোনও আকার দেওয়ার সক্ষমতা থাকার কারনে পাত্রসামগ্রী যেমন বাটি, ফুলদানি, বোতল, জার এবং পানির গ্লাস ইত্যাদিতে ঐতিহাসিকভাবে কাচ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর সর্বাধিক কঠিন অবস্থায় এটি পেপারওয়েট এবং মার্বেলের জন্য ব্যবহৃত হয়। ধাতব লবণ যোগ করে বা কলাইকৃত কাচ হিসাবে রঙ এবং মুদ্রণ করে কাচকে রঙিন করা যায়।কাচের প্রতিসারক, প্রতিফলক এবং প্রেষণ বৈশিষ্ট্যসমূহ কাচকে আলোক লেন্স, প্রিজম এবং আলোকতড়িৎ বিজ্ঞানের সামগ্রী প্রস্তুতের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। কাচ তন্তুসমূহ যোগাযোগ নেটওয়ার্কে অপটিক্যাল ফাইবার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

সিরামিক
দগ্ধমৃত্তিকা বা ইংরেজি পরিভাষায় “সিরামিক” (Ceramic) এমন এক ধরনের ধাতব, অধাতব ও ধাতুকল্প বিভিন্ন অজৈব পদার্থের মিশ্রণে প্রস্তুত কৃত্রিম উপাদান, যাকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে কঠিন পদার্থে পরিণত করে শিল্পকর্ম, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, গৃহস্থালি কাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং চিত্তাকর্ষক সামগ্রী নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। একে কুমোরের মাটিও বলা হতে পারে। দগ্ধমৃত্তিকাজাত পণ্যের মধ্যে আছে কাচ, পোড়ামাটির বাসনপত্র, চীনামাটির বাসন, চীনামাটি, ইটের টালি, টেরাকোটা, রিফ্রাকটরিজ, সিমেন্ট, চুন এবং জিপসাম।
মূল উপাদানগুলো মিশিয়ে উত্তপ্ত করা হয়। ৬০০°-৬৫০°Cএর মাঝে চায়না ক্লের পানি শুকিয়ে অদানাদার পদার্থ অ্যালুমিনা ও সিলিকার মিশ্রণ উৎপন্ন হয়। ১০০০°C তাপমাত্রায় দানাদার অ্যালুমিনা ও সিলিকা ফেলস্পারের উপস্থিতিতে বিগলিত হয়ে মুলাইট গঠন করে। ১৪০০°-১৫০০°C তাপমাত্রায় অবশিষ্ট সিলিকা ক্রিস্টোবেলাইটে পরিণত হয়। মুলাইট ও ক্রিস্টোবেলাইটের মিশ্রণকে বিস্কুট বলে।
(১) চীনামাটি নিরুদন:
Al₂O₃.2SiO₂.2H₂O → Al₂O₃ + 2SiO₂ + 2H₂O (650 °C তাপমাত্রায়)
চায়না ক্লে অ্যালুমিনা সিলিকা
(২) মুলাইট গঠন:
3Al₂O₃ + 4SiO₂ → 3Al₂O₃.2SiO₂ (1000°Cতাপমাত্রায়)
মুলাইট
(৩) ক্রিস্টোবেলাইট গঠন: 4nSiO₂ → n(4SiO₂) (1500°Cতাপমাত্রায়) সিলিকা ক্রিস্টোবেলাইট গ্লেজিং : পোড়া কাদামাটির তৈরি সিরামিক দ্রব্য শক্ত, ভঙ্গুর ও সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত অমসৃণ হয়। সেজন্য দ্রব্য মসৃণ ও উজ্জ্বল করার জন্য গ্লেজিং করা হয়। সাধারণ গ্লেজ মিশ্রণ হল- সিলিকা, এলুমিনা এবং পর্যায় সারণির গ্রুপ-IIA এর ধাতুর অক্সাইড। এসবের মিশ্রণ দিয়ে উত্তপ্ত করে গলিত কাচের পাতলা আবরণ তৈরি করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় NaCl ছিটিয়ে গ্লেজ করা যায়। জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিতে NaCl বিয়োজিত হয়ে Na₂O ও HCl উৎপন্ন করে।
Na₂O+SiO₂ → Na₂SiO₃
গলিত সোডিয়াম সিলিকেট ছিদ্র বন্ধ করে মসৃণ করে।
গ্লাস ও সিরামিক নিয়ে বিস্তারিত :
আরও দেখুনঃ