বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স এর মৌলিক বিষয় | Building Maintenance 1 [ 6413 ]

বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স এর মৌলিক বিষয় আজকের ক্লাসের আলোচ্য বিষয়। বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স এর মৌলিক বিষয় ও কাজে সতর্কতা সম্পর্কে ধারনা [ Building maintenance basics & works ] এই ক্লাসটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল ডিসিপ্লিনের, বিল্ডিং মেইনটেনেন্স [৬৪১৩] Building Maintenance [6413] বিষয়ের, ১ম ও ৩য় অধ্যায়ের [Chapter 1 & 3] পাঠ যা ৯ম শ্রেণীতে [ Class 9] পড়ানো হয়।

 

বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স এর মৌলিক বিষয়

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স কাজে সতর্কতা

৩.১ ইমারতের ভিত্তি খননকালে সতর্কতা বিধি

কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টের প্রথমে যে কাজটি শুরু করতে হয় সেটি হলো মাটি কাটার কাজ, আর এ কাজের সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে বা কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। নিচে সেগুলোর কিছু দিক তুলে ধরা হলো :

* মাটির ধরন বুঝে খনন কাজে হাত দেয়া ।

* পানি, গ্যাস, ইলেকট্রিক ও পয়ঃনিষ্কাশন বা অন্য কোনো সরকারি সরবরাহ লাইন প্লটের মধ্য দিয়ে আছে/গেছে কিনা মাটি কাটার আগে তা খুঁজে বের করা।

* মাটি খননের পূর্বে মাটি কাটার জায়গা ঠিকমতো প্রতিরোধক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে সাবধান হওয়া ।

* মাটি খনন করার জন্য নির্বাচিত স্থানের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী/রেলিং দেয়া আছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখা।

*খনন জায়গা থেকে খননকৃত মাটি কমপক্ষে এক মিটার দূরে নিয়ে রাখা। খনন জায়গা থেকে কমপক্ষে ছয় মিটার দূরে ভারী মেশিন রাখা ।

*খনন জায়গার প্রবেশের মুখে বিপদ সংকেতমূলক সাইন বোর্ড সেরা।

*এমন স্থান হতে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জায়গা বা রাজা নিশ্চিত করা।

*খননের স্থানের খনন গভীরতা নিশ্চিত করা, যাতে বেশি বা কম যেন না হয় ।

*খননের স্থানে কোন হালকা বা কাদামাটি থাকলে তা সরিয়ে ফেলা।

* সম্ভব হলে বৃষ্টির মাঝে খনন কাজ না করা।

*খনন কাজের পাশে ভারী যান চলাচলের রাস্তা বা বড় আবাসিক দালান থাকলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে যতদূর সম্ভব দ্রুত খনন এবং তৎপরবর্তী কাজ শেষ করে বিদ্যমান মাটির লেভেলের উপরে চলে আসা।

 

বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স

 

কাঠের সতর্কতা

*কাঠের শিল্প উৎপাদনে দুর্ঘটনার হার সর্বোচ্চ, কাঠের সরঞ্জাম বিপজ্জনক যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হয়। কাজের সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে বা কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। নিচে সেগুলোর কিছু দিক তুলে ধরা হলো :

* কাঠের যে কোনো মেশিন ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হতে হবে তা সঠিকভাবে এবং নিরাপদে ব্যবহার করতে পরীক্ষা করা হয়েছে কি-না।

*মেশিনের ম্যানুয়াল মনোযোগসহ সাবধানে পড়তে হবে।

*নিশ্চিত হতে হবে কোনো হাতিয়ার বা মেশিন ব্যবহার করার পূর্বে নির্দেশাবলি অনুধাবন করা হয়েছে কি-না।

* সর্বদা নিরাপত্তা চশমা বা গগলস বা একটি ফেস শিল্ড (নিরাপত্তা চশমা বা গগলস) পড়তে হবে।

* হ্যান্ডগ্লোবস ব্যবহার করতে হবে যখন কাঠ হ্যান্ডলিং হবে splinters থেকে হাত রক্ষা করার জন্য ।

*প্রতিরক্ষামূলক জুতা পরিধান করতে হবে।

*কোনো সরঞ্জাম বা মেশিন অপারেটিং-এর আগে মেশিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে অন্য সব নিরাপত্তা ডিভাইসের সমন্বয় হয়েছে কি-না।

*সরঞ্জাম ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে সঠিকভাবে গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে।

* নিশ্চিত হতে হবে যেসব মেশিন শুরু এবং বন্ধ করার বোতাম সুবিধাজনক নাগালের মধ্যে আছে কি-না। 

* কর্তনের এলাকার মধ্যে উপাদান পুশ করার জন্য একটি “পুশ লাঠি” ব্যবহার করতে হবে।

*কাজ করার এলাকা গোলমালমুক্ত রাখতে, পরিষ্কার ও মেশিন নিয়ন্ত্রণগুলো পরিষ্কারভাবে দেখা যায় এমন ভালো আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

 

৩.৩ প্লাম্বিং কাজে সতর্কতা।

* Plumbers কে পেশাগত বিভিন্ন কাজ করার সময় কালীন সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে plumbers কে সচেতন হতে হবে:

* বিপজ্জনক পদার্থ এক্সপোজার : সিসা, সালফার ডাই-অক্সাইড, অ্যাসবেসটস, ছাঁচ, চিটে, দ্রাবক, ঝাল, এবং অন্যান্য বিষাক্ত বা ক্যান্সারজনক পদার্থ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

* প্রজ্বলন বা দাহ্য পদার্থ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

*নিকাশী পাইপ বা সেপটিক ট্যাংকের কাজে সতর্ক থাকা ।

* পাখি বা ইঁদুরের মল থেকে সম্ভাব্য সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

*খারাপ অবস্থানের মধ্যে কাজ বা বাজে ম্যানুয়াল কর্ম যাতে আহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

* ভারী বা বাজে বস্তু অপসারণ সঠিক নিয়মে করতে হবে।

* বিদ্যুৎ, চরম তাপমাত্রা অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে।

* আবদ্ধ স্থানে কাজ করার সময় যথাযথ নিরাপত্তা নিতে হবে।

*উড়ন্ত কণা থেকে চোখ আঘাতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা চশমা পরতে হবে।

* ভিজা পরিবেশে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

*গরম সরঞ্জাম অংশ, বাষ্প লাইন এবং গরম জল বা বাষ্প যুক্ত বার্নস ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

* বিভিন্ন সরঞ্জাম (উভয় হাত সরঞ্জাম ও যন্ত্রচালিত টুলস) নিয়ে কাজ করার সময় অবশ্য PPE ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স কাজে সতর্কতা

 

Plumbers -এর জন্য কিছু নিরাপত্তা পদ্ধতিঃ

  • কোম্পানির নিরাপত্তা নিয়ম অনুসরণ করা।
  • নির্ধারিত কাজের সাইটে সম্ভাব্য বিপদ (ঝুঁকি) সম্পর্কে আগাম তথ্য জানা এমনকি সম্ভাব্য বিপদ বা ঝুকির প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দেয়া।
  • রাসায়নিক বিপদ, WHMIS এবং MSDSS সম্পর্কে জানা ।
  • ব্যবহারের উপাদান নিরাপত্তা তথ্য শীট (MSDSS), রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, এবং প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম (PPE) সম্পর্কে জানতে হবে ।
  • গ্লাস, চিলা জামা, রাবার বুট, চোখের সুরক্ষা পৱা ।
  • খাওয়া বা পান করা যাবে না, সম্ভাব্য দূষিত এলাকার কাজ শেষে খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নেয়া। ০ কর্মস্থলসহ যাবতীয় সরঞ্জাম পরিষ্কার রাখা।
  • উপকরণ এবং সরঞ্জাম ব্যবহারে সাবধানী হওরা যাতে নিজের বা অন্য কর্মীদের নাবাত করতে না পারে।
  • ভালো গৃহস্থালি পদ্ধতি অনুসরণ করা, দ্রুত স্পিলস পরিষ্কার; খালি বর্জ্য, তৈলাক্ত নেকড়া এবং অন্যান্য অগ্নিদাহ্য বর্জ্য পদার্থ নিরাপদে অপসারণ করা।

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইমারত নির্মাণ কাজে সতর্কতা

আমাদের সমাজ জীবনে সকল কাজ করতে হয় একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণ করে। ঠিক তেমনি একটি ভবন তৈরির ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণ করতে হয়। যাকে প্রকৌশলীদের ভাষায় “কনস্ট্রাকশন সিকোয়েন্স” বলা হয়। “কনস্ট্রাকশন সিকোরেল” অনুসরণ করলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। তাই কনস্ট্রাকশন কাজে “কনস্ট্রাকশন সিকোয়েন্স” ঠিক রাখার মাধ্যমে ইমারত নির্মাণ কাজে সতর্কতা বজায় রাখা যায় । “কনস্ট্রাকশন সিকোরেল” -কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হল “কাঠামোগত বা স্ট্রাকচারাল কাজ”, আর অপরটি হলো “সৌন্দর্য বর্ধন বা ফিনিশিং কাজ”।

নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপেই কাজের ধরণ অনুযায়ী নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করা উচিত। যেমন- এপ্রোন, সেফটি বুট, হ্যান্ড প্রবস, চশমা, হার্ড ক্যাপ, সেফটি বেল্ট ইত্যাদি PPE গুলো ব্যবহার করা নির্মাণ কাজে সতর্কতার প্রধান শর্ত অবলম্বন করলে দুর্ঘটনা মুক্ত থাকা সম্ভব।

একটি ভবনের কাজের “কনস্ট্রাকশন সিকোয়েন্স” নিম্নে তুলে ধরা হলো :

# কাঠামোগত বা স্ট্রাকচারাল কাজ :

১. প্রথম ধাপ : সাইট মোবিলাইজেশন বা সাইটে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সন্নিবেশ করা;

২. দ্বিতীয় ধাপ : ভূমি জরিপ করে ভূগর্ভস্থ মাটি পরীক্ষা করা;

৩. তৃতীয় ধাপ : আর্কিটেকচারাল, স্ট্রাকচারাল, প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ড্রয়িং তৈরি করা;

৪. চতুর্থ ধাপ : ভবনের প্রয়োজনীয় সকল লে-আউট ও লেভেল দেয়া;

৫. পঞ্চম ধাপ : মাটি কাটা এবং পাইলিং করা (প্রয়োজন হলে)।

৬. ষষ্ঠ ধাপ : ভিওির তলদেশে ব্লাইন্ড বা লীন কংক্রিট ঢালাই ও ইটের সোলিং করা।

৭. সপ্তম ধাপ : ভিত্তির ঢালাই করা ।

৮. অষ্টম ধাপ : কলামের রড বাঁধা এবং ঢালাই করা।

৯. নবম ধাপ : বীম ও ছাদের রড বাঁধা এবং ঢালাই করা।

১০. দশম ধাপ : মেঝেতে ইটের প্রয়োজনীয় লে-আউট দেয়া এবং গাঁথুনির কাজ করা ।

 

# সৌন্দর্যবর্ধন বা ফিনিশিং কাজ :

১. প্রথম ধাপ : দরজায় কাঠের চৌকাঠ লাগানো ।

২. দ্বিতীয় ধাপ : সিঁড়ি, বারান্দা ও জানালার গ্রিল লাগানো ।

৩. তৃতীয় ধাপ : বাথরুম ও কিচেনসহ সকল ধরনের স্যানিটারি ও প্লাম্বিং -এর পাইপ ফিটিং করা।

৪. চতুর্থ ধাপ : ওয়ালের গ্রুভ লাইন কাঁটা ও বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ডের দেয়ালের ভিতরের অংশের কাজ শেষ করা ।

৫. পঞ্চম ধাপ : ভবনের ভিতরের অংশে প্লাস্টার করা।

৬. ষষ্ঠ ধাপ : ভবনের বাইরের অংশে প্লাস্টার করা ।

৭. সপ্তম ধাপ : বাথরুমের ও কিচেনের বেসিন বা সিঙ্কসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্ল্যাব ঢালাই ও কনসিল্ড অংশ লাগানো ।

৮. অষ্টম ধাপ : দরজা, জানালা, বারান্দা ও অন্যান্য অংশের থাই-অ্যালুমিনিয়াম ও গ্লাস লাগানো ।

৯. নবম ধাপ : কিচেন ও বাথরুমের দেয়ালের টাইলস লাগানো ।

৯. নবম ধাপ : কিচেন ও বাথরুমের দেয়ালের টাইলস লাগানো । 

১০. দশম ধাপ : সিলার ও পুটিসহ সিলিং-এ রঙের ১ম কোট দেয়া।

১১. একাদশ ধাপ : ভিতরের বা বাইরের মেঝেতে ও সিঁড়িতে টাইলস বা মার্বেল লাগানো ।

১২. দ্বাদশ ধাপ : বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং করা।

১৩. ত্রয়োদশ ধাপ : ভবনের বাইরের ও ভিতরের দেওয়ালে রঙের ১ম কোট দেয়া।

১৪. চতুর্দশ ধাপ : দরজার বা জানালার পাল্লা ফিটিং করা এবং কাঠের অন্যান্য কাজ করা।

১৫. পঞ্চদশ ধাপ : বাথরুম ও কিচেনের সকল ফিটিংস লাগানো এবং ফিনিশিং করা।

১৬. ষষ্ঠদশ ধাপ : বৈদ্যুতিক সুইচ, সকেট, হুক, সিলিং রোজ ও সার্কিট ব্রেকার লাগানো। 

১৭. সপ্তদশ ধাপ : টাইলস ও মার্বেলের পয়েন্টিং করা ।

১৮. অষ্টাদশ ধাপ : ছাদের উপরের ফিনিশিং কাজ ও সুইমিং পুলের টাইলস লাগানো ।

১৯. ঊনবিংশ ধাপ : পেটেন্ট স্টোন করা। (বেজমেন্ট বা ছাদের উপর)

২০. বিশতম ধাপ : কাঠের বার্নিশ বা পলিশ ও দেয়ালের রঙের ফাইনাল কোট করা ।

২১. একবিংশ তম ধাপ : বৈদ্যুতিক সকল বাতি ও ফ্যান লাগানো ।

২২. দ্বাবিংশতম ধাপ : সকল ধরনের ফার্নিচার সেট করা।

 

মৌলিক বিষয়

 

বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স এর মৌলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত :

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment