রাইট অব ওয়ে বা হুকুম দখল আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং – ১ [ Civil Engineerng Drawing – 1 ]” এর “সড়কের গঠন” অধ্যায় এর পাঠের অন্তর্ভুক্ত।
রাইট অব ওয়ে বা হুকুম দখল
৭.৩ রাইট অব ওয়ে বা হুকুম দখল (Meaning of right of way) :
হাইওয়ে অ্যালাইনমেন্ট বরাবর যে প্রশস্ত এলাকা হুকুম দখল করা হয়, তাকে রাইট অব ওয়ে বলে। রাস্তার প (Formation level) প্রস্থ, মাটিকাটা এবং ভরাটের ঢাল ও গভীরতা, ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা, অনুভূমিক বাঁকে পর্বি দৃশ্যমান দূরত্ব, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর রাইট অব ওয়ে নির্ভর করে। একে রাস্তার ভূমির প্রস্থ (Land width) ও হয়। দখলকৃত এলাকা এমন হওয়া উচিত, যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।
নিচের তালিকায় রাইট অব ওয়ে এর স্বাভাবিক ও পরিসর (Range) মান দেখানো হলো ঃ
অনুভূমিক বাঁকের স্থানে রাস্তার প্রস্থের অতিরিক্ত চওড়া ভূমি হুকুম দখল করা হয়ে থাকে। তালিকায় প্রদত্ত স্বাভাবিক প্রস্থ তখনই গ্রহণযোগ্য যখন ভূমির মূল্য অত্যধিক বেশি হয়।
রাইট অব ওয়ে এর পরিমাপ নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল :
(ক) যানবাহন চলাচলের বা পেভমেন্টের প্রস্থ
(খ) পায়ে চলা পথের প্রস্থ (Footpath)
(গ) খনন বা ভরাটের পার্শ্বটাল (Side slope)
(খ) ড্রেনের গ্রন্থ রাস্তা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতে মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখার স্থানের প্রস্থ
(চ) বৃক্ষরোপণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান বরো পিটের প্রস্থ
(জ) রাস্তাকে ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান
(ঝ) বার্ম এর প্রস্থ।
বার্ম (Berm) ঃ মাটি ভরাট বাঁধের টো (Toe) এবং বরো পিটের ভিতরের ধার পর্যন্ত যে ভূমি সবসময় ফেলে রাখা হয় এবং যা বাঁধকে ক্ষয়ের হাত হতে রক্ষা করে, তাকে বার্ম বলে। উঁচু বাঁধ বা গভীর খননের ক্ষেত্রে লম্বা পার্শ্বটাল কয়েকটি ধাপে প্রদান করা হয়, যাতে বৃষ্টির পানি দ্রুতগতিতে প্রবাহিত হয়ে বাঁধের ক্ষতিসাধন করতে না পারে।
পার্শ্বটাল (Side slope) : সাধারণ অবস্থায় মাটির স্তূপ অনুভূমিকের সাথে যে কোণ (Angle) সৃষ্টি করে, তাকে অ্যাঙ্গেল অব রিপোজ (Angle of repose) বলে। মাটির রাস্তা, বাঁধ ইত্যাদির পার্শ্ব খাড়াভাবে তৈরি করলে মোটেই স্থায়ী হয় না। এটির ভাঙন বা শিয়ারিং রোধের জন্য এর পার্শ্ব, অ্যাঙ্গেল অব রিপোজ অপেক্ষা কম কোণে তৈরি করতে হয়। মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে সড়কের ক্ষেত্রে সাধারণত ১ : ১ বা ১ : ২ পার্শ্বটাল দেয়া হয়।
গঠন তলের প্রস্থ (Formation width) : চলাচলের জন্য তৈরিকৃত রাস্তার উপরিভাগকে গঠন তল বলা হয়। নিচু এলাকার ক্ষেত্রে মাটি ভরাট করে এবং উঁচু এলাকার ক্ষেত্রে মাটি খনন করে রাস্তার গঠন তল তৈরি করা হয়। একটি রাস্তার যানবাহন চলাচলের পথ, শোল্ডার এবং লেন সেপারেটরের প্রস্থকে একত্রে বলা হয় গঠন তলের প্রস্থ । গঠন তলের প্রস্থ নিম্নের বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে ঃ
১। রাস্তার প্রকার
২। যানবাহনের মাপ এবং ওজন তাত্ত্বিক
৩। যানবাহনের ডিজাইন গতিবেগ
৪ । যানবাহনের পরিমাণ
৫। শোল্ডারের প্রস্থ।
শোল্ডার (Shoulder) ঃ সড়কের পেভমেন্টের দুই পার্শ্বে যে ফালি আকৃতির স্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়, তাকে শোল্ডার বলে । গাড়ি দাঁড়ানোর কাজে, গাড়ি মেরামতের কাজে এটি ব্যবহার করা হয়। শোল্ডারের সর্বনিম্ন প্রস্থ 2.5 মিটার হওয়া উচিত।
ক্যাম্বার (Camber) ঃ সড়ক বা রাস্তার আড়াআড়ি প্রস্থচ্ছেদীয় তল বরাবর যে ঢালু দেয়া হয়, তাকে ক্যাম্বার (Camber) বলে । একে অনেক সময় আড় ঢালও (Cross slope) বলা হয়। রাস্তার তল হতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্যই এটি হয়। সোজা রাস্তার প্রস্থচ্ছেদের কেন্দ্রের সর্বোচ্চ বিন্দুকে চূড়া (Crown) বলে। বরো পিট (Borrow pit) ঃ রাস্তা নির্মাণের সময় ভূপৃষ্ঠের যে স্থান থেকে মাটি খনন করে এনে ফেলা হয়, তাকে বরো পিট বলে। রাস্তার চওড়া, উচ্চতা এবং ঐ স্থানের মাটির স্থিরতা কোণ (Angle of repose) এর উপর এর প্রস্থ ও গভীরতা নির্ভর করে ।
স্পয়েল ব্যাংক (Spoil bank) : পাহাড়ি এলাকার রাস্তা নির্মাণের সময় যে সকল স্থান রাস্তার গঠন তল অপেক্ষা উঁচু থাকে, সকল স্থানের মাটি কেটে যেখানে রাখা হয়, তাকে স্পয়েল ব্যাংক বলে।
ঐ বাঁধ বা ভরাট (Embankment) ঃ রাস্তা নির্মাণের সময় ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত অংশ রাস্তার গঠন তল অপেক্ষা নিচু থাকে, সেখানে বরো পিট থেকে মাটি এনে ভরাট করা হয় । পরে ভালোভাবে দৃঢ়বদ্ধ করে প্রয়োজনীয় লেভেলে আনা হয়। এ কাজকে বাঁধ বা ভরাট বলে । খনন (Cutting) ঃ রাস্তা নির্মাণের সময় ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত অংশ রাস্তার গঠন তল অপেক্ষা উঁচু থাকে, সেখানে মাটি খনন করে প্রয়োজনীয় লেভেলে আনা হয়। এ কাজকে খনন বলে।
আরও পড়ুন: