নমনীয় সড়ক এর বিভিন্ন উপাংশ সমূহ চিহ্নিতকরণ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং – ১ [ Civil Engineerng Drawing – 1 ]” এর “সড়কের গঠন” অধ্যায় এর পাঠের অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
নমনীয় সড়ক এর বিভিন্ন উপাংশ সমূহ চিহ্নিতকরণ
৭.৫ নমনীয় সড়ক এর বিভিন্ন উপাংশ সমূহ চিহ্নিতকরণ (Different components of flexible roads )
নমনীয় রাস্তা বা বিটুমেনের রাস্তার উপাংশসমূহ নিম্নরূপ ঃ
১। সাব-গ্রেড সয়েল বা সাব-গ্রেড (Sub-grade soil or sub-grade)
২। সাব- বেস (Sub-base)
৩। বেস কোর্স (Base course)
৪। ওয়্যারিং কোর্স বা সারফেস কোর্স (Wearing course or surface course)।
নির্মাণপদ্ধতিতে উপাংশসমূহের বর্ণনা দেয়া হলো- বিটুমেনের রাস্তা তৈরির ধাপসমূহ (Steps followed in construction of bituminous roads)
সারফেস ড্রেসিং পদ্ধতি (Surface dressing method) : পূর্বে নির্মিত কোনো রাস্তার উপরিভাগ নষ্ট হলে অথবা পৃষ্ঠদেশের উন্নতি সাধনের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। রাস্তাটির সাব-গ্রেড, সাব-বেস ও বেস কোর্স পূর্বেই নির্মাণ করা হয় এবং যথেষ্ট শক্তিশালী বলে রাস্ত।র পৃষ্ঠদেশের উপর খুব পাতলা এক স্তর বা দুই স্তর (Single coat or double coat) ছোট ছোট নুড়িপাথর বা ইটের খোয়া বিটুমেন সহকারে বিছিয়ে রোলিং করা হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বিটুমেন পূর্বেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করে পাতলা করে নেয়া হয়।
যেখানে হালকা যানবাহন চলাচল করে বা যানবাহনের সংখ্যা কম সেখানে এক স্তর এবং ভারী বা বেশি যানবাহন চলাচল করলে সেখানে দুই স্তর বিটুমেন প্রলেপ দেয়া ভালো। সারফেস ড্রেসিং করলে রাস্তা মসৃণ হয়, যানবাহন চলাচলে আরামপ্রদ হয় এবং সর্বোপরি রাস্তার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে। সাধারণভাবে জলাবদ্ধ খোয়ার রাস্তার (Water-bound mecadam) পৃষ্ঠদেশ বা দুরমুশ সহকারে লেভেল করা গ্র্যাভেল (Gravel) বা মাটির বেসের (Stabilized soil) উপর এ স্তরটি স্থাপন করা হয়।
রাস্তার বেস যদি অনেক পূর্বের তৈরি হয়ে থাকে তাহলে উক্ত বেসের উপর বিটুমেন সারফেস প্রয়োগের সময় বেসের উপরিভাগ ভালো করে পরিষ্কার করতে হয়। নতুনভাবে তৈরি জলাবদ্ধ রাস্তা হলে উপরিভাগে ব্লাইন্ডেজ (Blindage) স্তরের কোনো প্রয়োজন হয় না। পূর্বের নির্মিত জলাবদ্ধ খোয়ার রাস্তার উপরিভাগে সারফেস ড্রেসিং পদ্ধতিতে বিটুমেনের রাস্তা তৈরির পদ্ধতি নিম্নরূপ ঃ
নির্মাণপদ্ধতির ধাপসমূহ ঃ
(ক) উপরিভাগের প্রস্তুতি
(খ) প্রাইম কোট স্থাপন
(গ) পাথরকুচি ছড়ানো
(ঘ) রোলিং করা
(ঙ) যাতায়াতের জন্য খুলে দেয়া
(চ) ট্যাক কোট প্রয়োগ
(ছ) পাথরকুচি ছিটানো
(জ) রোলিং করা।
এক স্তর সারফেস ড্রেসিং-এর বেলায় প্রথমবার রোলিং-এর পরই রাস্তা ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হয়। কিন্তু দুই স্তর সারফেস ড্রেসিং করতে হলে এক বা দুই মাস যাতায়াতের জন্য খোলা রাখার পর রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে এর পৃষ্ঠদেশের প্রয়োজনীয় রিপেয়ার কাজ সমাপ্ত এবং রাস্তার উপরিভাগ ধুয়ে পরিষ্কার করে ট্যাক কোট প্রয়োগ, পাথরকুচি ছিটানো, রোলিং করা ইত্যাদি কাজ করতে হবে। রোলিং এর সময় কোনো স্থানে বিটুমেনের পরিমাণ বেশি হলে বালি ছড়িয়ে রোলিং করা উচিত। পরে যাতায়াতের জন্য রাস্তা খুলে দিতে হবে।
পূর্বমিশ্রিত পদ্ধতিতে বিটুমেন বদ্ধ খোয়ার রাস্তার নির্মাণপদ্ধতির ধাপসমূহ
(খ) প্রাইম কোট প্রয়োগ
(ক) রাস্তার উপরিভাগের প্রস্তুতি
(গ) মিশ্রণ তৈরিকরণ এবং প্রয়োগ
(ঘ) রোলিং করা
(চ) রোলিং করা।
(৫) সিল-কোর্ট স্থাপন
পরিপূর্ণ গ্রাউটিং পদ্ধতি (Full grouting method)ঃ
(ক) সাব-গ্রেড তৈরিকরণ
(খ) সাব-বেস দৃঢ়করণ
(গ) প্রাইম কোট তৈরিকরণ
(ঘ) ট্যাক-কোট প্রয়োগ
(ঙ) সিল-কোট দেয়া
(চ) রোলিং করা (পানি ছিটানোসহ)।.
সেমি-গ্রাউটিং পদ্ধতি (Semi-grouting method)
(ক) সাব-গ্রেড তৈরিকরণ
(খ) সাব-বেস দৃঢ়ীকরণ
(অ) রোলিং করা
(গ) মোটা বালি বা মুরাম স্তর (Muram level)
(ঝ) উপরের পৃষ্ঠদেশ স্থায়ী হওয়ার পর সিল-কোট প্রয়োগ।
(ঘ) পাথরকুচির স্তর
(ঙ) রোলিং করা (পানিসহ)
(চ) বিটুমেনের প্রলেপ দিয়ে পৃষ্ঠদেশ বন্ধকরণ
(ছ) ছোট সাইজের পাথরকুচি ছড়ানো
বিটুমিনাস কংক্রিট রোড নির্মাণপদ্ধতির ধাপসমূহ (Steps for construction of bituminous concrete roads)ঃ
(ক) বেস প্রস্তুতকরণ (Preparation of base)
(খ) বিটুমিনাস কংক্রিট মিশ্রণ প্রস্তুতকরণ (Preparation of bituminous concrete mixture)
(গ) রাস্তার পৃষ্ঠদেশে গরম কংক্রিটের মিশ্রণ বিছানো (Laying the hot concrete mixture on the (ঘ) রোলারের দ্বারা দৃঢ়ীকরণ (Compaction by roller)
(ঙ) দৃঢ়ীকরণ যাচাই করা (Checking for compaction)
(চ) রাস্তার উপরিভাগের যথার্থতা পরীক্ষা
(ছ) রাস্তার নির্মাণ জোড় তৈরিকরণ
(জ) যাতায়াতের জন্য রাস্তা খুলে দেয়া (Opening to traffic) ।
বিটুমেনের রাস্তা (Bituminuous road) : যে সকল রাস্তার পেভমেন্ট তৈরির সময় বন্ধনী পদার্থ হিসাবে বিটুমেন পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তাকে বিটুমেনের রাস্তা বলা হয়। এ ধরনের রাস্তা বা সড়ক পৃষ্ঠের রং কালো বলে একে কালো পৃষ্ঠ (Black Top) সড়কও বলা হয়।
বিটুমেনের রাস্তা নির্মাণের ধাপসমূহ হলো-
১। সাব-গ্রেড (Sub-grade) প্রস্তুতকরণ
২। সাব- বেস (Sub-base) প্রস্তুতকরণ
৩। প্রাইম-কোট (Prime coat) তৈরিকরণ
৪। ট্যাক-কোট (Tack-coat)
৫। সিল-কোট (Seal-coat) |
বিভিন্ন ধাপে বিটুমেনের রাস্তার নির্মাণপদ্ধতি বর্ণনা (The construction procedure of a bituminous road in different stages) ঃ যে-কোনো রকমের রাস্তা নির্মাণ করতে হলে প্রতিটি রাস্তার জন্য প্রথমত বাঁধ (Embankment) নির্মাণ করে রাস্তার ভিত্তি (Foundation) বা সাব-গ্রেড তৈরি করতে হয়। পরবর্তীতে সাব-বেস তৈরি করে বিটুমিনাস বা অন্যরকমের রাস্তা বিভিন্ন ধাপে পর্যায়ক্রমে তৈরি করতে হয়। নিম্নে সংক্ষেপে বিটুমেনের রাস্তা নির্মাণের বিভিন্ন ধাপসমূহের আলোচনা করা হলো ।
সাব-গ্রেড প্রস্তুতকরণ ঃ রাস্তার স্ট্রাকচার (Structure) পর্যায়ক্রমে অনেক ধরনের আবরণের (Layer) সমষ্টিতে নির্মিত হয়ে থাকে। সাব-গ্রেড হচ্ছে যে-কোনো রাস্তা বা পেভমেন্টের জন্য সর্বনিম্ন স্তর। সাব-গ্রেডকে রাস্তার ভিত্তি (Foundation) বলা যেতে পারে। সাব-গ্রেডই শেষ পর্যন্ত রাস্তার উপরের সমস্ত ভার বহন করে। এটি মাটির কাজের উপরের অংশ বা আবরণ। তবে এটি মাটি ভরাট বা কাটা (Cutting) উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সাব-গ্রেড যত মজবুত ও শক্তিশালী হয় রাস্তাও ততো টেকসই হয়। সাব-রোডের ভারবহন ক্ষমতার উপর অনেক সময় রাস্তার প্রকারভেদ ও পুরুত্ব নির্ভর করে। অনেক সময় রাস্তার সাব-গ্রেডের পানি নিষ্কাশন
ক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অনেক ধরনের ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হয়। রাস্তার সাব-গ্রেডের মাটি আর্দ্র স্যাঁতসেঁতে হলে এর ভারবহন ক্ষমতা কমে যায়, ফলে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর গভীরতা কয়েক সেমি হতে এক মিটার বা তারও অধিক হতে পারে । এর উপর বেস কোর্স ও ওয়ারিং কোর্সের (Wearing course) পুরুত্ব নির্ভর করে।
অতিরিক্ত কর্দমাক্ত ও Silty মাটিতে বড় বড় পাথর বোল্ডার বা ইটের টুকরার সমন্বয়ে সাব-গ্রেড তৈরি করা উচিত নয় । মোটা দানাযুক্ত মাটির সাথে কিছু অংশ সূক্ষ্ম মাটির কণা মিশ্রিত করে সাব-গ্রেড প্রস্তুত করা উচিত। সাথে সাথে পানি ছিটিয়ে রোলারের দ্বারা এবং দুরমুশের দ্বারা চাপিয়ে সাব-গ্রেড তৈরি করা হয়। সাব-গ্রেডে কোনোপ্রকারের দোষত্রুটি থাকলে রাস্তা নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অথবা নতুনভাবে সাব-গ্রেড তৈরি না করা পর্যন্ত এটা মেরামত (Repair) করা যায় না। তাই প্রথমবারেই খুব সতর্কতার সাথে সাব-গ্রেড প্রস্তুত করতে হবে।
সাব-গ্রেড পানি নিষ্কাশনের জন্য পুরোপুরি সক্ষম না হলে বালির স্তর ব্যবহার করে একে পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। সমতল ভূমির উপর মাটি ভরাট করে নতুন রাস্তা তৈরি করে একে কমপক্ষে ২/৩ বছরের জন্য ফেলে রাখতে হয়। মাটি ভালোভাবে বসে দৃঢ় হলে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। নিচু জলাভূমি বা সমতল ভূমি না হয়ে পাহাড়ি এলাকায় মাটি কেটে রাস্তার সাব-গ্রেড তৈরি করতে হলে ২/৩ বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয় না।
সাব-গ্রেড দৃঢ়ীকরণ (Compaction of sub grade) ঃ মাটিকে ভালোভাবে দুরমুজ বা রোলারের সাহায্যে দৃঢ়ীকরণ করা হলে এর ভিতরের সূক্ষ্ম ছিদ্র (Voids) কমে যাবে এবং ঘনত্ব বাড়বে ফলে সাব-গ্রেডের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। দৃঢ়ীকরণ করা মাটির স্তর ভেদ করে ভিতরে বৃষ্টির পানি, কুয়াশার পানি প্রভৃতি প্রবেশ করতে পারে না বলে সাব-গ্রেড নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। আর্দ্রতাজনিত কারণে সাব-গ্রেডের মিহি মাটির কণাগুলো আয়তনে বাড়তে পারে না বা উপরের দিকে ফুলে উঠতে (Swelling) পারে না। তাপ ও শৈত্যে আর্দ্রতার তারতম্য (Moisture variation) বেশ কমে যায়। মাটিকে দৃঢ়ীকরণের ফলে সাব-গ্রেডের গুণাগুণ ( Properties) অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়, যেমন-
(ক) শক্তি ও ঘনত্ব বাড়ে
(খ) চাপ প্রয়োগে মাটির কোনো পরিবর্তন হয় না বা মাটি নিচের দিকে বসে যাবার আশঙ্কা কমে যায় ।
(গ) মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
(খ) এটা মাটির ঘনত্ব বাড়ায়। ভিতরের সূক্ষ্ম ছিদ্র (Void space) দিয়ে আর্দ্রতা প্রবেশ করতে পারে না।
(চ) মাটির শোষণ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়।
(ছ) ভিতরের মাটির সূক্ষ্ম কণার আকার পরিবর্তনে কোনো আশঙ্কা থাকে না আবার সংকোচন করা প্রসারণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না ।
(জ) এতে মাটির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।
(ঝ) ভালোভাবে দৃঢ়ীকরণ করা (Compacted) সাব-গ্রেড আর্দ্রতার কারণে নিচের অংশে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না। পেভমেন্টের উপর পতিত পানি সাব-গ্রেডে প্রবেশ করতে পারে না ।
(ঞ) দৃঢ়ীকরণের (Compaction) ফলে নরম মাটির ভারবহন ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় এবং পেভমেন্টের দুমড়ানো ভাব কমে যায়, সাব-গ্রেড নষ্ট হয় না ।
(ট) সাধারণ সেমি হতে ৪০ সেমি গভীরতম সাব-গ্রেডের মাটিকে দৃঢ়ীকরণ করা হলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। ৩০ সেমি এর বেশি দৃঢ়ীকরণ করতে হলে দুই স্তরে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সাব-গ্রেড ডিজাইন বা প্রস্তুতকরণে গৃহীত ব্যবস্থাবলি : সাব-গ্রেড যেহেতু রাস্তার ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি হিসাবে কাজ করে সেজন্য প্রকৌশলীগণ রাস্তার সাব-গ্রেড ডিজাইনে বেশি মনোযোগী থাকেন। সাধারণভাবে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ সাব-গ্রেড ডিজাইনে বা সাব-গ্রেড প্রস্তুতকরণে মেনে চলতে হবে ঃ
(ক) নরম কর্দমাক্ত পাতলা মাটির অপসারণ এবং শুকনা নতুন মাটি দ্বারা পুনরায় ভর্তি করা ।
(খ) মাটির ট্রিটমেন্ট ঃ সাব-গ্রেডকে পুরু করে কয়েকটি স্তরে পূর্ণ করে ক্রমশ দৃঢ় করা হলে এটি ভারবহনে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।
(গ) সাব-গ্রেড ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি সাব-গ্রেডের স্তরগুলো রাস্তার কাঠামোর ভিত্তিরূপে কাজ করে বলে এটি রাস্তার উপরিভাগে যানবাহন চলাচলের সমস্ত ভার বহন করতে সমর্থ হবে।
(ঘ) অপরিবর্তনশীল করা : যান্ত্রিক গ্রেডিং বা রোলার দ্বারা মাটিকে ভালোভাবে অপরিবর্তনশীল বা স্থায়ী করতে হবে, যেন উপরিস্থ ভারের কারণে মাটি কোনো সময় স্থানচ্যুত না হয়।
(ঙ) সাব-গ্রেডে পানির অবস্থিতি যে-কোনোভাবে বন্ধ করতে হবে। কেননা পানিই মাটিকে নরম করার একমাত্র পদার্থ। পানি মাটিকে সহজে নরম ও শক্তিহীন করতে পারে।
(চ) পর্যায়ক্রমিকভাবে শুষ্ক ও আর্দ্র আবহাওয়া যেন মাটির কোনো পরিবর্তন না হয় সেদিকে যত্নবান হতে হবে।
(ছ) পানি নিষ্কাশনের জন্য যথোপযুক্ত ড্রেন যেমন- আড়াআড়ি ড্রেন, লম্বালখি ড্রেন, ব্লাইন্ড ড্রেন, মাটির নিচের ড্রেন, ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
(জ) রাস্তার উচ্চতা যথোপযুক্ত হতে হবে যেন শক্ত মজবুত মাটির উপর অবস্থান পেতে পারে।
(ঝ) রাস্তার উপরিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ দ্রব্যাদি, প্রক্ষেপণ দ্রব্যাদির ব্যবহার এবং সর্বোপরি সব ব্যাপারে যত্নবান থাকতে হবে।
(ঞ)সাব-গ্রেডের ৬০ সেমি থেকে ৯০ সেমি নিচে পানিনিরোধক (Water proof) স্তর দিলে নিচের কোনো পানি বা অর্দ্রতা কোনোভাবেই সাব-গ্রেডকে ক্ষতি করতে পারবে না।
সাব-বেস প্রস্তুতকরণ (Construction of sub-base) : সাব-গ্রেড যেখানে নরম থাকে বা অনেক ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও যখন > সাব-মেজের শক্তি যথোপযুক্তভাবে পাওয়া যায় না তখন প্রকৌশলীগণ সাব-গ্রেডের স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য উপরিভাগে ? সেমি হতে ৫২৩সেমি পর্যন্ত পুরুত্বে দানাজাতীয় পদার্থের একটি স্তর স্থাপন করতে হয় এবং পরে এটা রোলার দ্বারা ভালোভাবে দৃঢ় করা হয়। এ স্তরের নামই সাব-বেস। সাব-গ্রেড ভালো হলে সাব-বেসের প্রয়োজন নেই।
এটা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দ্রুততর করে এবং ভারবহনে সহায়তা করে। সাধারণত মোটা দানার বালি, গ্র্যাভেল পাথর, সিন্ডার ইত্যাদি সাববেসে ব্যবহৃত হয়। সিবিআর (CBR) অর্থাৎ ক্যালিফোর্নিয়া বিয়ারিং রেশিও পদ্ধতির সাহায্যে সাব-বেসের এবং উপরিস্থ স্তরগুলোর পুরুত্ব নির্ণয় করা যায়।
প্রাইম-কোট তৈরিকরণ ঃ সাব-বেস তৈরি হওয়ার পরে এর উপরে প্রাইম কোট দিতে হয়। রাস্তার পৃষ্ঠদেশের উপর ৮.৮৮৮ সেমি ৮ উচ্চতায় পাথরকুচি বিছাতে হবে। পরে রোলিং করার ফলে এর উচ্চতা কমে ৫ সেমি পর্যন্ত হয়। এ সকল পাথরকুচি বা প্রথম শ্রেণি ইটের খোয়া বিভিন্ন গ্রেডের যেমন- ৩.৮১ সেমি হতে ১.৯১ সেমি এবং ১.২৭ সেমি হতে ১.৯১ সেমি হলে ভালো ফলদায়ক হবে।
এর উপরে প্রতি ১০০ বর্গমিটারে ৬৮৪ কেজি হতে ৭৩৩ কেজি গরম বিটুমিন ছড়াতে হবে। পরবর্তীতে রোলারের সাহায্যে দৃঢ়বদ্ধ করার পরে উক্ত রাস্তাকে গাড়ি চলাচলের জন্য কিছুদিন উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ফলে রাস্তার পৃষ্ঠদেশে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয় এবং অমসৃণ হয়ে যায়। অনেক সময় রাস্তার পৃষ্ঠদেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিল কোর্ট ব্যবহারের পূর্বে ট্যাক কোট ব্যবহৃত হয়।
ট্যাক-কোট ঃ এটা বিটুমেনের একটি পাতলা আবরণবিশেষ। রাস্তার পৃষ্ঠদেশকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ৩৫০° ফারেনহাইট হতে ৩৭৫° ফা. তাপমাত্রায় উত্তপ্ত বিটুমেন রাস্তার উপরিভাগে প্রয়োগ করা হয়। প্রতি ১০০ বর্গমিটারে ৭০ কেজি হতে ১০০ কেজি উক্ত গরম বিটুমেন সমানভাবে ছিটিয়ে দিয়ে এটা করা হয় ।
সিল-কোট ঃ এটা রাস্তার সর্বোচ্চ অংশবিশেষ। ট্যাক-কোট প্রয়োগের অব্যবহিত পরেই এ কোট প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। কারণ, এ আবরণের জন্য খুব ছোট আকারের পাথর নুড়ি ব্যবহৃত হয়। এসব নুড়িপাথর যাতে ট্যাক কোটে প্রয়োগকৃত বিটুমেনের সাথে ভালোভাবে লেগে থাকে সেজন্য ট্যাক-কোটের বিটুমেন গরম থাকা অবস্থায় সিল-কোট প্রয়োগ করতে হয়।
এ কোটের জন্য ০.৬৪ সেমি থেকে ০.৯৫ সেমি আকারের পাথরকুচি প্রতি ১০০ বর্গমিটারে। হতে ১.৬৭ ঘনমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। এর উপর পূর্ণ উত্তপ্ত বিটুমেন প্রতি শত বর্গমিটারে ১২০ কেজি হতে ১৫০ কেজি হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। এরপর ৬ হতে ৪ টন ওজনের রোলার দ্বারা রোলিং করে রাস্তার পৃষ্ঠদেশকে মসৃণ করতে হবে। মসৃণ করার সময় রাস্তার লম্বালম্বি ও পাশাপাশি ঢাল (ক্যাম্বার) দিয়ে রোলিং করতে হবে। রাস্তা তৈরির একদিন পর গাড়ির জন্য রাস্তাকে উন্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে।
প্রিমিক্স পদ্ধতিতে বিটুমেনবদ্ধ খোয়ার নির্মাণপদ্ধতি (Premix type of construction of bitumen-bound mecadam roads) ঃ ভারী যানবাহনের জন্য এবং অত্যধিক গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে রাস্তার পৃষ্ঠদেশকে বেশিভাবে মজবুত ও শক্ত করে তৈরি করা প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে পাথরকুচিকে প্রথমত বিটুমেন দ্বারা আচ্ছাদিত করে পরে রাস্তার উপরে সমান পুরুত্বে ছড়িয়ে দিয়ে রোলিং করা হয়। বিটুমেন এক্ষেত্রে বন্ধনী পদার্থ হিসারে কাজ করে, পিচ্ছিলকারক পদার্থ হিসাবে নয়। কাজেই বিটুমেনের প্রলেপ সরু হলে চলবে, পুরুত্বের প্রয়োজন হবে না।
যেহেতু পাথরকুচিকে বড় বড় স্টিলের ট্রেতে পূর্বে বিটুমেনের সাথে মিশ্রিত করা হয়, সেহেতু বিটুমেন অনেক কম লাগে। গ্রাউটিং পদ্ধতিতে পাথরকুচির ছিদ্র (Voids) পূরণ করার জন্য অনেক বেশি পরিমাণে বিটুমেনের প্রয়োজন হয়। প্রিমিক্স পদ্ধতিতে খুব কম পরিমাণে বিটুমেনের সাহায্যে ভালো স্থায়িত্বের রাস্তার পৃষ্ঠদেশ তৈরি করা যায়- এ পদ্ধতির উপকারিতা হচ্ছে বন্ধনী পদার্থের খরচ কম ও স্থায়িত্ব বাড়ায়।
মিশ্রণ পদ্ধতি ঃ দুই পদ্ধতিতে পাথরকুচিকে বিটুমেনের সাথে মিশ্রিত করা যায়- (ক) গরম (Hot) মিক্স (Mix), (খ) ঠাণ্ডা (Cold) মিক্স।
(ক) যদি ঠান্ডা পাথরকুচিকে উত্তপ্ত বিটুমেনের সাথে মিশ্রিত করা হয়, তবে উত্তপ্ত বিটুমেনের গরমে পাথরকুচি গরম হয়। একে গরম মিক্স বলা হয়। এ পদ্ধতিতে খরচ বেশি হয় এবং জনপ্রিয়তাও নেই। তা ছাড়া এ পদ্ধতি খুব ঝামেলাপূর্ণ ।
(খ) এ পদ্ধতিতে বিটমেনের প্রকৃতিতে কাঠিন্য পরিবর্তনে কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয় যতক্ষণ মিক্সচারগুলো সাবধানতার সাথে ছড়িয়ে রোলিং করা হয়। এ পদ্ধতি বেশ সহজ এবং খুব কম মিক্সচার প্রয়োজন হয়। একবারই সাধারণত ছড়ানো হয়। মিক্সচারের ঘ বেশি হলে বন্ধনী পদার্থ বেশি প্রয়োজন হয়।
প্রিমিক্স পদ্ধতি : সাধারণভাবে তিন ধরনের প্রিমিক্স পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যথা-
(ক) ম্যাকাডাম পদ্ধতি (Sheel Mecadam)
(খ) কংক্রিট পদ্ধতি (Sheel Concrete)-
(গ) স্যান্ড কার্পেট পদ্ধতি (Sheel Sheet)।
ম্যাকাডাম পদ্ধতি ঃ এ পদ্ধতি প্রায় রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রেই সুবিধাজনক। রাস্তার প্রস্থ বরাবর যদি যানবাহন চলাচল না করে সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার উপদেশমূলক ধরে নেয়া আবশ্যক। ১.২৭ সেমি হতে ৩.৮১ সেমি আকারের অ্যাগ্রিগেট ভালোভাবে বিটুমেনের সাথে মিশ্রিত করে রাস্তার পৃষ্ঠদেশে ছড়ানো হয়। ছড়ানোর সময় নজর রাখতে হবে যেন ফাঁকা জায়গা কম থাকে । অত্যধিক যত্নবান হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু ফাঁকা জায়গা থেকে যায় তখন এর উপর একটি সিল-কোট দেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় ফলস্বরূপ উপরিপৃষ্ঠের পানি নিচের দিকে চুয়াতে পারে না।
সেল ম্যাকাডাম ঃ এটা ৫ সেমি পুরু বেস-কোট এবং ১.২৫ সেমি পরিমাণ সিল-কোটের সমন্বয়ে গঠিত। বেস কোর্সের জন্য প্রতি শত বর্গমিটারে ৩.৮১ সেমি সাইজের ৭ ঘনমিটার ও ২.৫ সেমি সাইজের 2 ঘনমিটার খোয়া প্রয়োজন। সিল-কোটের সারফেস ড্রেসিং এর জন্য ৬ মিমি সাইজের ১.৬৭ ঘনমিটার এবং চিপিং কার্পেট (Chipping carpet) এর জন্য ২.৫ ঘনমিটার খোয়ার প্রয়োজন ।
উপরিভাগের প্রস্তুতি ঃ যে সমস্ত রাস্তার পৃষ্ঠদেশ বিটুমেনবদ্ধ খোয়ার রাস্তার জন্য প্রস্তুত সে সকল রাস্তার উপরিভাগকে তারের ব্রাশ, ঝাড়ু, ইত্যাদির সাহায্যে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। রাস্তার উপরে অবাঞ্ছিত ও আলগা যে-কোনো দ্রব্যাদি ভালোভাবে সরিয়ে ধুয়ে মুছে ঝাড়ু দিতে হবে। গর্ত বা চাকার দাগ থাকলে পূর্বে ছোট নুড়িপাথরে দ্বারা ভর্তি করে রোলিং করতে হবে। রোলিং করার সময় রাস্তার ক্যাম্বার যাতে ৪৮ হারে বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পরে পানি দিয়ে পৃষ্ঠদেশকে ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
মিশ্রণ তৈরিকরণ ঃ বড় বড় রাস্তার কাজে মিক্সিং প্ল্যান্ট (Mixing plant) ব্যবহৃত হয়। ছোট রাস্তার কাজে অবশ্য ড্রাম ব্যবহৃত হয়। বিটুমেন এবং অ্যাগ্রিগেটকে আলাদাভাবে ড্রামে উত্তপ্ত করা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে অ্যাগ্রিগেটকে ৩৫০° ফা. তাপে এবং বিটুমেনকে ৩৫০০০-৩৭৫° ফা. তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়।
প্রতি ঘনমিটার অ্যাগ্রিগেট ১.৯১ সেমি হতে ৩.৭৫ সেমি সাইজের জন্য ৫৬ . কেজি বিটুমিন প্রয়োজন । ০.৬৪ সেমি ছোট আকারের অ্যাগ্রিগেটের জন্য ৬৪ কেজি বিটুমেন প্রয়োজন হয়। বিটুমেন ফিল্ম (Bitumen Film) হিসাবে নদীর মিহি বালি বা গর্তের বালি ৬৪ কেজি পরিমাণ মিশ্রণ করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত মোটা দানার পাথরকুচি বা অ্যাগ্রিগেটগুলোর গায়ে বিটুমেন না লাগে ততোক্ষণ পর্যন্ত মিক্সচার নাড়াচাড়া করতে হবে।
মালামাল হারানো ও রোলিং করা : ভালোভাবে পরিষ্কারকৃত ও শুকনা রাস্তার পৃষ্ঠদেশে সমান পুরুত্বে সমান্তরালভাবে মিশ্রিত অ্যাগ্রিগেট বিছাতে হবে। ৩ সেমি পুরু কার্পেটিং পেতে হলে ৭.৫২ সেমি পরিমাণ পুরুত্বের মালামাল ঠান্ডা হওয়ার পূর্বেই রাস্তার উপর বিছাতে হবে। এরপর ৮ হতে ১০ টন ওজনের রোলার দ্বারা রোলিং করতে হবে। রাস্তার এক কিনারা হতে ক্রমশ রাস্তার কেন্দ্রের দিকে সমান্তরালে রোলিং করতে হবে। কেন্দ্র পর্যন্ত রোলিং শেষ হওয়ার পর রাস্তার অপর কিনারা হতে আবার কেন্দ্রের দিকে রোলিং করে কেন্দ্র বরাবর এসে শেষ করতে হবে।
এতে উভয় পার্শ্বের ক্যাম্বার যথাযথভাবে দেয়া যাবে। রোলিং করার সময় পানি ছিটিয়ে বার বার রোলারকে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পানি ছিটালে বা ভিজালে রোলারের সাথে খোয়া লাগবে না। এরপর সিল-কোট দেয়া যায়। সিল-কোট দেয়ার পূর্বে রাস্তাকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সপ্তাহখানেক পরে সিল-কোট প্রয়োগ করলে বেশি ভালো হয়।
সিল-কোট স্থাপন ও সিল-কোট স্থাপনের পূর্বে রাস্তার ক্রস-সেকশন ঠিক আছে কি না তা যথাযথভাবে দেখে নিতে হবে। ১.২৫ সেমি পুরু সিল-কোর্ট স্থাপনের পূর্বে রাস্তার পৃষ্ঠদেশকে ভালো করে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ট্যাক-কোট হিসাবে প্রতি শত বর্গমিটারে উত্তপ্ত বিটুমেন ৪৮ হতে ৭২ কেজি হারে ছিটিয়ে দিতে হবে।
সিল-কোটের জন্য ছোট আকারের ০.৬৪ সেমি সাইজের পাথরকুচি ও কিছু বালি ২০ কেজি পরিমাণ বিটুমেনের সাথে উত্তপ্ত করে মিশ্রিত করতে হবে। মিশ্রণের জন্য মিশ্রণ মেশিন বা হস্ত মিশ্রণ বা ড্রাম মিশ্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এখন এ মিশ্রণ প্রতি ১০০ বর্গমিটারে ২ হতে ২.৬৭ ঘনমিটার মিশ্রণ ট্যাক- কোট ঠাণ্ডা হবার পূর্বে রাস্তার পৃষ্ঠদেশে বিছিয়ে দিতে হবে।
রোলিং করা ঃ মিশ্রণ ছড়াবার পর পরই ৬ হতে ৪ টন ওজনের রোলারের সাহায্যে রোলিং করে রাস্তার পৃষ্ঠদেশকে ভালোভাবে মসৃণ করতে হবে। রোলিং করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যে, রাস্তার উপরিভাগ যেন সমান্তরাল থাকে, কোনো স্থান উঁচুনিচু না হয়। রোলিং এর কাজ সমাপ্ত হওয়ার একদিন পর যানবাহনের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তবে তার পূর্বে রাস্তার উপরিভাগ ঝাড়ু দিয়ে ছোট ছোট নুড়িপাথর, বালির কণা ইত্যাদি ফেলে দিলে পরবর্তী সময়ে রাস্তা ধুলাবালি হতে মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: