বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স পেইন্টিং

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স পেইন্টিং।

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স পেইন্টিং

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স পেইন্টিং

 

পেইন্টিং এর উদ্দেশ্য

পেইন্টিং যে কলাকৌশলের মাধ্যমে নির্মাণ অবকাঠামোর দৃশ্যমান পৃষ্ঠদেশে পেইন্ট বা রঙের প্রলেপ দেয়া হয়, তাকে পেইন্টিং বলা হয়।

পেইন্টিং-এর উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

১. কাঠামোর পৃষ্ঠদেশকে সুন্দর ও মনোরম করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার জন্য।

২. কাঠের আসবাবপত্রকে ঘুণে ধরার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। ৩. কাঠের পচন এবং ধাতব পদার্থের ক্ষয় বা মরিচা পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য ।

৪. কাঠামোকে আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য।

৫. আবাস স্থলকে স্বাস্থ্যকর করার জন্য।

৬. কক্ষের আলোকে উজ্জ্বলতর করার জন্য।

৭. সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার জন্য।

পেইন্টিং এর উপকরণ

পেইন্টিং উপকরণ :

১) মূল উপাদান (Base)

২) নিষ্ক্রিয় পূরক (Innert Filler or Extender)

৩) বাহক (Vehicle or Carrier or Binder)

৪) দ্রাবক (Solvent)

৫) শুদ্ধকারী (Drier)

৬) রঞ্জক বা পিগমেন্ট (Pigment )

পেইন্টিং করার জন্য পাত্রতল প্রস্তুত করার পদ্ধতি

পেইন্ট প্রয়োগে কতকগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এর মধ্যে প্রথম এবং প্রধান ধাপ হলো গাত্রতল প্রস্তুত করা। 

গাত্রতল প্রস্তুত করার পদ্ধতি নিম্নরূপ :

পৃষ্ঠতল বিভিন্ন পদার্থের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আসবাব, দরজা-জানালা যদি কাঠের হয়, তাহলে নিম্নলিখিতভাবে কাঠের পৃষ্ঠতল প্রস্তুত করতে হয়। শতকরা পনেরো ভাগের (১৫%) কম আর্দ্রতাযুক্ত এবং উত্তম সিজনকৃত কাঠকে স্যান্ড পেপার দিয়ে ঘষে কাঠের পৃষ্ঠকে ভালোভাবে মসৃন করতে হবে।

যার উপর রং প্রয়োগ করতে হবে সেই কাঠের পৃষ্ঠদেশকে ভালভাবে পরিষ্কার করে শুকনা ন্যাকড়া দিয়ে মুছে ফেলতে হবে, যাতে আগলা ধুলা-বালি লেগে না থাকে। ব্যবহৃত পেরেক বা তারকাঁটার মাথা সারফেসের অভ্যন্তরে কমপক্ষে ৩ মি.মি. প্রবেশ করাতে হবে। তৈলাক্ত দাগ থাকলে বেনজিন বা তারপিন দিয়ে নরম মার্কিন কাপড়ে ভিজিয়ে মুছে ফেলতে হবে এবং ভালোভাবে শুকাতে হবে।

পুরাতন কাঠের কাজে পুনরায় রং করার জন্য ফাটল, কোক্ষা পড়া পুরাতন রং সম্পূর্ণ ঘরে উঠিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। এক কেজি কস্টিক সোডা ও ৫ (পাঁচ) লিটার পানি মিশ্রিত প্রবণ দিয়ে পেইন্টিং পৃষ্ঠকে পরিষ্কার করে নিতে হয়। পুরোপুরি পরিষ্কার না হলে ছবি দিয়ে আঁচড়িয়ে পুরনো রং উঠিয়ে ফেলা হয়।

এক ভাগ নরম সাবান, দুই ভাগ পটাশ এবং এক ভাগ কুইক লাইম একত্রে গরম করে প্রয়োগ করলে পুরাতন বং উঠে যায়। ২৪ ঘণ্টা পরে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। স্যান্ড পেপার, ভাঙ্গা কাঁচ, পিউমিক স্টোন, গ্লাস পেপার, নারিকেলের ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে ঘরে রং উঠাতে হয়।

আয়রন এবং স্টিলের কাজে রং করার জন্য ওয়ার ব্রাস দিয়ে মরিচা, তেল, ছিল ইত্যাদি তৈলাক জাতীয় পদার্থ থাকলে তা পেট্রোল, বেনজিন, চুনের পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। আয়রন ভগ্নার ব্রাস দিয়ে ঘষে পুরনো রং উঠিয়ে ফেলতে হয়। সাধান গানি, কস্টিক সোডা দিয়ে পুরাতন আররন পৃষ্ঠ পরিষ্কার করে নিতে হয়।

প্লাস্টারকৃত পৃষ্ঠদেশ প্রত্য প্লাস্টার পৃষ্ঠদেশ রং করা উচিত নয়। কেননা, দেয়াল আর্দ্রতার লিঙ্ক থাকে। নতুন প্লাস্টার করার ৩-৬ মাস পরে করা যায়। তবে, ১ বছর পরে করাই শ্রেয়। স্যান্ড পেপার, পিউমিক পাথর ইত্যাদি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে দেয়ালটি পানি দিয়ে ধুয়ে শুকাতে হবে। এরপরে লোনা, ভ্যাম্প প্রতিহত করার জন্য ড্যাম্প ক্রাশ ব্যবহার করা উচিত। পুরাতন দেয়ালে রং করার ক্ষেত্রে অব দেয়ালের পুরনো রং ঘষে উঠিয়ে নিতে হবে।

পেইন্টিং করার পদ্ধতি

 

বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স পেইন্টিং

 

ঘরের মধ্যে রং করার পদ্ধতি

ঘরের মধ্যে প্লাস্টারের উপর সাধারণত রং করা হয়ে থাকে। মূলত প্লাস্টিক পেইন্ট করা হয়। এটি চারটি ধাপে করা হয়ে থাকে।

১. সারফেস প্রিপারেশন

২. প্রাইমার আন্তর

৩. শুটি

৪. রঙের কোট

সারফেস প্রিপারেশন:

প্লাস্টার অবশ্যই পর্যাপ্ত শুকনা হতে হবে এবং খুব ভালোভাবে কিউরিং হতে হবে। প্লাস্টার করার ৪৫ দিন পরে এখানে কাজ শুরু করা উচিত। যেকোনো ধরণের ড্যাম্প, স্যাঁতসেতে, ভেজা বা নষ্ট থাকলে তা ঠিক করে নিতে হবে। এর পর পাথর বা স্যান্ড-স্টোন দিয়ে এটা ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে।

প্লাস্টার করা দেয়াল সমতল হতে হবে। সমতল না থাকলে পাথর দিয়ে ঘষে সমতল করতে হবে। এতে কোনো আলগা ময়লা বা অন্য কোনো পদার্থ থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর চুনাপানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ভাল হয়। এতে করে প্লাস্টার ভালোমতো শুকিয়ে যায়। এরপর স্যান্ডপেপার বা সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে নিতে হবে।

প্রাইমার বা আন্তর

সারফেস প্রিপারেশন হয়ে গেলে প্রাইমার বা আস্তর দিতে হয়। এক আস্তর দেয়া হয় এই প্রাইমার। মূলত প্লাস্টার এবং রঙের মধ্যে আঠালো সম্পর্ক তৈরি করে এই প্রাইমার। প্রতি গ্যালনে প্রাইমার ৪৫ স্কয়ার মিটার আস্তর দেয়া যায়। রোলার বা ব্রাশ দিয়ে প্রাইমার দেয়া হয়।

দেয়ার পূর্বে এই প্রাইমার পানি দিয়ে পাতলা করে নেয়া হয়। এর প্রয়োগের ফলে আঠালো সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পাশাপাশি এটি সারফেসকে মসৃণ করে, শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং রং সুন্দরভাবে ও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে দেয়।

পুটি

কোনো ফাটল বা সমস্যা থাকলে পুটি করা হয়। একে ছিটপুটিও বলা হয়। কমপক্ষে চার দিন এই পুটি শুকিয়ে নিতে হবে। বেশি পুটি যেখানে থাকবে সেখানে স্ক্র্যাপ করে নিতে হবে। সারফেস বা রঙের তলকে আরও মসৃণ করতে এই পুটি করা হয়। ১ গ্যালন প্লাস্টিক পেইন্টের সাথে ১ লিটার এনামেল পেইন্ট এবং ২৫ কেজি চকপাউডার মিশিয়ে এই গুটি তৈরি করা হয়।

রঙের কোট

রং ২-৩ বার প্রলেপ দেয়া হয়। প্রথম প্রলেপের পর তা ৭ দিন শুকানোর সময় দিতে হবে। এরপর দ্বিতীয় প্রলেপ দেয়া হয়। এতেও যদি রং ভালো না হয়, যেমন- পরিচ্ছন্ন না হয়ে ছোপছোপ থাকে, বা রং হালকা হয় তাহলে দ্বিতীয় প্রলেপের ৩ দিন পর তৃতীয় প্রলেপ দেয়া হয়।

প্রথম প্রলেপের সাথে সর্বোচ্চ ২০% পানি মেশানো হয়। দ্বিতীয় প্রলেপের সাথে সর্বোচ্চ ১৫% পানি মেশানো হয়। ড্যাম্প, স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা দেয়ালে পেইন্ট করা যাবে না। আর্দ্রতা ২০% থেকে ৫০% এর মধ্যে থাকতে হবে। সরাসরি সুর্যের আলো যেন পেইন্ট দেয়ার সময় না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পলিশের নিয়ম :

ফ্রেন্স পলিশ এবং স্প্রিট পলিশের মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। ফ্রেন্স পলিশ রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায়। আর স্প্রিট পলিশ বানাতে হয়। পলিশ কাঠকে দেখতে সুন্দর করে, চকচকে করে এবং কাঠের নিজস্ব রঙটি দেখা যায়। কেননা পলিশ সাধারণত স্বচ্ছ হয়।

সার্ফেস প্রিপারেশন

সার্ফেস অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। শিরিস কাগজ বা স্যান্ড পেপার দিয়ে ঘষে এর তলা তেলতেলে করতে হবে। এরপরে তুলা দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে যেন কোনো ময়লা বা গুঁড়া না থাকে। যদি কাঠের মধ্যে কোনো ছিদ্র থাকে তাহলে পুঁটি দিয়ে তা বন্ধ করতে হবে। এরপর উড ফিলার দিয়ে এর তলা ভালোভাবে স্মুথ করতে হবে এবং গ্লাস পেপার দিয়ে উপরিভাগ পরিস্কার করতে হবে।

পলিশ দেওয়ার পদ্ধতি :

সাদা কাপড় পলিশে ভিজিয়ে কাঠের তলাতে সুন্দরভাবে এবং সমভাবে ঘষতে হবে ডলা শুকানোর পর আবার আগের মতো সমভাবে পলিশে ভেজা কাপড় দিয়ে ঘষতে হবে। সবশেষে সাদা কাপড় হালকা স্প্রিটে ভিজিয়ে বৃত্তাকার গতিতে খুব দ্রুত ঘষতে হবে। এতে করে বেশ উজ্জ্বল ও সুন্দর দেখাবে। সবশেষে লেকার দিলে ভালো হবে। এতে পলিশের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায় এবং সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়।

পুরাতন কাজের উপর পলিশ

পুরাতন পলিশের উপর নতুন পলিশ করতে হলে প্রথমে তারপিন দিয়ে ময়লা উঠিয়ে ফেলতে হবে। এরপর স্যান্ডপেপার দিয়ে ভালোভাবে ঘষতে হবে। এরপর পলিশ রিমুভার দিয়ে পুরাতন পলিশ উঠিয়ে ফেলতে হবে। এরপর নতুন পলিশের মতো করে একই পদ্ধতিতে পলিশ করতে হবে।

অনুশীলনী – ২৬

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। পেইন্টিং-এর সংজ্ঞা লিখ।

২। প্রাইমার কাকে বলে?

৩। দুটি কাকে বলে?

 

Google_news_logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। পেইন্টিং-এর উদ্দেশ্য লেখ।

২। পেইন্টিং-এর উপকরণ কী কী?

রচনামূলক:

১। পেইন্টিং-এর গাত্রতল প্রস্তুতের পদ্ধতি বর্ণনা কর।

২। পেইন্টিং-এর পদ্ধতি বর্ণনা কর।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment